রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৩৫
পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
খালার মর্যাদা
হাদীছ নং : ৩৩৫
হযরত বারা' ইবন আযিব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, খালা মায়ের মত -তিরমিযী।
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ হাদীছ।
জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯০৪; সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৬৯৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২২৮০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৮৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৩১; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ৩০২৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩১১১৮; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২২২১; শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২২৩০
এ অধ্যায় সম্পর্কিত আরও কিছু হাদীছ
ইমাম নববী রহ. বলেন, এ অধ্যায়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিশুদ্ধ বর্ণনায় আরও বহু হাদীছ আছে। যেমন গুহায় আশ্রয়গ্রহণকারীদের ঘটনা সম্পর্কিত হাদীছ ও জুরাইজের ঘটনা সম্বলিত হাদীছ। এ হাদীছদু'টি পেছনে গত হয়েছে। (দ্রঃ যথাক্রমে, হাদীছ নং ১১ ও, হাদীছ নং ২০৭)।
এছাড়াও বিশুদ্ধ বর্ণনায় আরও অনেক প্রসিদ্ধ হাদীছ আছে, এ গ্রন্থের সংক্ষিপ্ততা রক্ষার স্বার্থে যা আমি উল্লেখ করিনি। তার মধ্যে হযরত আমর ইবন আবাসা রাখি, থেকে বর্ণিত সুদীর্ঘ হাদীছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে হাদীছটি অনেকগুলি বাক্য সম্বলিত। তাতে ইসলামের অনেক মূলনীতি ও আদব-কায়দার উল্লেখ আছে। ইনশাআল্লাহ باب الرجاء (আশা) অধ্যায়ে সম্পূর্ণ হাদীছটি উল্লেখ করব। তার অংশবিশেষ এরকম-
হযরত আমর ইবন আবাসা রাযি. বলেন, নবুওয়াতের প্রথমদিকে আমি মক্কা মুকাররামায় এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাত করলাম। জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বললেন, নবী। বললাম, নবী কী? তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে পাঠিয়েছেন। জিজ্ঞেস করলাম, কী জিনিস দিয়ে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন, তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন আত্মীয়তা রক্ষা, প্রতিমা বিনাশ এবং এক আল্লাহর ইবাদত করা ও তাঁর সঙ্গে কোনওকিছুকে শরীক না করার নির্দেশ দিয়ে।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৮৩২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৭০১৯; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৪৩৮৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৭৭৭
হাদীছ নং : ৩৩৫
হযরত বারা' ইবন আযিব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, খালা মায়ের মত -তিরমিযী।
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ হাদীছ।
জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯০৪; সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৬৯৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২২৮০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৮৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৩১; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ৩০২৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩১১১৮; বায়হাকী, আস্সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১২২২১; শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ২২৩০
এ অধ্যায় সম্পর্কিত আরও কিছু হাদীছ
ইমাম নববী রহ. বলেন, এ অধ্যায়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিশুদ্ধ বর্ণনায় আরও বহু হাদীছ আছে। যেমন গুহায় আশ্রয়গ্রহণকারীদের ঘটনা সম্পর্কিত হাদীছ ও জুরাইজের ঘটনা সম্বলিত হাদীছ। এ হাদীছদু'টি পেছনে গত হয়েছে। (দ্রঃ যথাক্রমে, হাদীছ নং ১১ ও, হাদীছ নং ২০৭)।
এছাড়াও বিশুদ্ধ বর্ণনায় আরও অনেক প্রসিদ্ধ হাদীছ আছে, এ গ্রন্থের সংক্ষিপ্ততা রক্ষার স্বার্থে যা আমি উল্লেখ করিনি। তার মধ্যে হযরত আমর ইবন আবাসা রাখি, থেকে বর্ণিত সুদীর্ঘ হাদীছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে হাদীছটি অনেকগুলি বাক্য সম্বলিত। তাতে ইসলামের অনেক মূলনীতি ও আদব-কায়দার উল্লেখ আছে। ইনশাআল্লাহ باب الرجاء (আশা) অধ্যায়ে সম্পূর্ণ হাদীছটি উল্লেখ করব। তার অংশবিশেষ এরকম-
হযরত আমর ইবন আবাসা রাযি. বলেন, নবুওয়াতের প্রথমদিকে আমি মক্কা মুকাররামায় এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাত করলাম। জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বললেন, নবী। বললাম, নবী কী? তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে পাঠিয়েছেন। জিজ্ঞেস করলাম, কী জিনিস দিয়ে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন, তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন আত্মীয়তা রক্ষা, প্রতিমা বিনাশ এবং এক আল্লাহর ইবাদত করা ও তাঁর সঙ্গে কোনওকিছুকে শরীক না করার নির্দেশ দিয়ে।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৮৩২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৭০১৯; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৪৩৮৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৭৭৭
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
335 - وعن البراءِ بن عازب رضي اللهُ عنهما، عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «الخَالةُ بِمَنْزِلَةِ الأُمِّ». رواه الترمذي، (1) وَقالَ: «حديث حسن صحيح».
وفي الباب أحاديث كثيرة في الصحيح مشهورة؛ مِنْهَا حديث أصحاب الغار (2)، وحديث جُرَيْجٍ (3) وقد سبقا، وأحاديث مشهورة في الصحيح حذفتها اختِصَارًا، وَمِنْ أهَمِّهَا حديث عَمْرو بن عَبسَة - رضي الله عنه - الطَّويلُ المُشْتَمِلُ عَلَى جُمَلٍ كَثيرةٍ مِنْ قَواعِدِ الإسْلامِ وآدابِهِ، وَسَأذْكُرُهُ بتَمَامِهِ إنْ شَاءَ اللهُ تَعَالَى في باب الرَّجَاءِ (4)، قَالَ فِيهِ:
دَخَلْتُ عَلَى النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - بمَكَّةَ - يَعْني: في أوَّلِ النُّبُوَّةِ - فقلتُ لَهُ: مَا أَنْتَ؟
قَالَ: «نَبيٌّ»، فَقُلْتُ: وَمَا نَبِيٌّ؟ قَالَ: «أرْسَلنِي اللهُ تَعَالَى»، فقلت: بأيِّ شَيءٍ أرْسَلَكَ؟ قَالَ: «أرْسَلَنِي بِصِلَةِ الأَرْحَامِ، وَكَسْرِ الأَوثَانِ، وَأَنْ يُوَحَّدَ اللهُ لاَ يُشْرَكَ بِهِ شَيء ... » وَذَكَرَ تَمَامَ الحَدِيث. والله أعلم.
وفي الباب أحاديث كثيرة في الصحيح مشهورة؛ مِنْهَا حديث أصحاب الغار (2)، وحديث جُرَيْجٍ (3) وقد سبقا، وأحاديث مشهورة في الصحيح حذفتها اختِصَارًا، وَمِنْ أهَمِّهَا حديث عَمْرو بن عَبسَة - رضي الله عنه - الطَّويلُ المُشْتَمِلُ عَلَى جُمَلٍ كَثيرةٍ مِنْ قَواعِدِ الإسْلامِ وآدابِهِ، وَسَأذْكُرُهُ بتَمَامِهِ إنْ شَاءَ اللهُ تَعَالَى في باب الرَّجَاءِ (4)، قَالَ فِيهِ:
دَخَلْتُ عَلَى النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - بمَكَّةَ - يَعْني: في أوَّلِ النُّبُوَّةِ - فقلتُ لَهُ: مَا أَنْتَ؟
قَالَ: «نَبيٌّ»، فَقُلْتُ: وَمَا نَبِيٌّ؟ قَالَ: «أرْسَلنِي اللهُ تَعَالَى»، فقلت: بأيِّ شَيءٍ أرْسَلَكَ؟ قَالَ: «أرْسَلَنِي بِصِلَةِ الأَرْحَامِ، وَكَسْرِ الأَوثَانِ، وَأَنْ يُوَحَّدَ اللهُ لاَ يُشْرَكَ بِهِ شَيء ... » وَذَكَرَ تَمَامَ الحَدِيث. والله أعلم.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটির একটি প্রেক্ষাপট আছে। তা এরকম-
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬ষ্ঠ হিজরীতে উমরা আদায়ের লক্ষ্যে মক্কা মুকাররামার সফর করেছিলেন। কিন্তু হুদায়বিয়ায় পৌঁছার পর মক্কার মুশরিকদের পক্ষ থেকে তিনি বাধার সম্মুখীন হন। ফলে তার পক্ষে উমরা আদায় করা সম্ভব হয়নি। তিনি তাদের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মদীনা মুনাউওয়ারায় ফিরে আসেন। এটিই বিখ্যাত 'হুদায়বিয়ার সন্ধি' নামে পরিচিত। এ সন্ধির একটি শর্ত ছিল পরবর্তী বছর তিনি উমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে মক্কা মুকাররামায় যেতে পারবেন। সেমতে পরের বছর সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে তিনি উমরা আদায় করেন। উমরা আদায়ের পর তিনি যখন মক্কা থেকে মদীনা মুনাউওয়ারায় ফিরে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হন, তখন হযরত হামযা রাযি.-এর শিশুকন্যা 'চাচা চাচা' বলে ছুটে আসল।
হযরত হামযা রাযি. হিজরী ৩য় সনে উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী সালমা বিনতে উমায়স রাযি. তখনও হিজরত করেননি। এ কারণে তাঁর কন্যা উমারা বর্ণনান্তরে উমামা মায়ের সঙ্গে মক্কা মুকাররামায় থেকে গিয়েছিলেন। এবার তিনি মদীনা মুনাউওয়ারায় যেতে চাইলেন এবং সে উদ্দেশ্যে চাচা চাচা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে ছুটে চললেন।
উমারা যদিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাতো বোন ছিলেন, তা সত্ত্বেও চাচা বলার কারণ হয়তো তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অথবা তা বলেছিলেন এ কারণে যে, তার পিতা হযরত হামযা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা হলেও তাঁরা দু'জন একই দুধমায়ের দুধ পান করেছিলেন। সে হিসেবে তাঁরা দুধভাইও।
যাহোক হযরত আলী রাযি. উমারাকে সঙ্গে নিয়ে নিলেন। তিনি তাকে নিয়ে হযরত ফাতিমা রাযি.-এর হাতে তুলে দিলেন। বললেন, এ তোমার চাচাতো বোন। এর যত্ন নিও। তিনি তাকে নিজের সাথে বাহনে তুলে নিলেন। তারপর সেখানেই অথবা মদীনায় আসার পর তার লালন-পালনের অধিকার নিয়ে হযরত আলী রাযি.. হযরত জা'ফর রাযি. ও যায়দ ইবন হারিছা রাযি.-এর মধ্যে বিরোধ দেখা দিল। তাদের প্রত্যেকেই সে মেয়ের লালন-পালনের অধিকার দাবি করলেন। হযরত আলী রাযি. বললেন, সে আমার চাচাতো বোন এবং আমিই তাকে সঙ্গে করে এনেছি। হযরত জাফর রাযি. বলছিলেন, সে আমার চাচাতো বোন এবং তার খালা আমার স্ত্রী। হযরত যায়দ রাযি. বলছিলেন, সে আমার ভাইয়ের মেয়ে। ভাইয়ের মেয়ে এ হিসেবে যে, হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে পরস্পর ভ্রাতৃবন্ধন স্থাপন করেন, তখন হযরত যায়দ রাযি.-কে হযরত হামযা রাযি.-এর ভাই বানিয়ে দিয়েছিলেন। সে হিসেবেই উমারা হযরত যায়দ রাযি.-এর ভাতিজী হন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সে দাবি-দাওয়ার মধ্যে যখন ফয়সালা দান করেন, তখনই এ নীতিবাক্যটি উচ্চারণ করেন যে-
الخَالَةُ بِمَنْزِلَةِ الأُمِّ (খালা মায়ের সমতুল্য)। কাজেই একে এর খালার হাতে ন্যস্ত করা হোক। এই বলে তিনি উমারাকে তার খালা এবং হযরত জা'ফর রাযি.-এর স্ত্রী আসমা বিনতে উমায়স রাযি.-এর কাছে সমর্পণ করেন। তারপর তাদের তিনওজনের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করলেন। হযরত আলী রাযি.-কে বললেন, আমি তোমার সঙ্গে এবং তুমি আমার সঙ্গে রয়েছ। হযরত জাফর রাযি.-কে বললেন, তুমি আকৃতি ও প্রকৃতিতে আমারই মত। আর হযরত যায়দ রাযি.-কে বললেন, তুমি আমার ভাই ও মাওলা (আদাযকৃত গোলাম বা বন্ধু)।
এর দ্বারা জানা গেল, প্রতিপালনের অধিকার খালারই জন্য সংরক্ষিত; আসাবা (যাবিল ফুরূয ব্যতীত অন্যান্য উত্তরাধিকারী)-এর জন্য নয়। হযরত হামযা রাযি.-এর আপন বোন সাফিয়্যা রাযি. তখনও জীবিত ছিলেন। যদিও জানা যায় না, তিনি লালন- পালন করতে চেয়েছিলেন কি না, কিন্তু তাঁর বর্তমান থাকা সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খালা মায়েরই মত। এ কথা বলেননি যে, ফুফুর দাবি না করার কারণে খালা মায়ের মত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. খালা মায়ের মত। কাজেই মায়ের মতই তার খেদমত ও ভক্তি-সম্মান করা উচিত।
খ. বিচারকের উচিত ন্যায়সম্মত ফয়সালা দানের পর বাদী-বিবাদী উভেয়ের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করা।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬ষ্ঠ হিজরীতে উমরা আদায়ের লক্ষ্যে মক্কা মুকাররামার সফর করেছিলেন। কিন্তু হুদায়বিয়ায় পৌঁছার পর মক্কার মুশরিকদের পক্ষ থেকে তিনি বাধার সম্মুখীন হন। ফলে তার পক্ষে উমরা আদায় করা সম্ভব হয়নি। তিনি তাদের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মদীনা মুনাউওয়ারায় ফিরে আসেন। এটিই বিখ্যাত 'হুদায়বিয়ার সন্ধি' নামে পরিচিত। এ সন্ধির একটি শর্ত ছিল পরবর্তী বছর তিনি উমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে মক্কা মুকাররামায় যেতে পারবেন। সেমতে পরের বছর সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে তিনি উমরা আদায় করেন। উমরা আদায়ের পর তিনি যখন মক্কা থেকে মদীনা মুনাউওয়ারায় ফিরে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হন, তখন হযরত হামযা রাযি.-এর শিশুকন্যা 'চাচা চাচা' বলে ছুটে আসল।
হযরত হামযা রাযি. হিজরী ৩য় সনে উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী সালমা বিনতে উমায়স রাযি. তখনও হিজরত করেননি। এ কারণে তাঁর কন্যা উমারা বর্ণনান্তরে উমামা মায়ের সঙ্গে মক্কা মুকাররামায় থেকে গিয়েছিলেন। এবার তিনি মদীনা মুনাউওয়ারায় যেতে চাইলেন এবং সে উদ্দেশ্যে চাচা চাচা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে ছুটে চললেন।
উমারা যদিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাতো বোন ছিলেন, তা সত্ত্বেও চাচা বলার কারণ হয়তো তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অথবা তা বলেছিলেন এ কারণে যে, তার পিতা হযরত হামযা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা হলেও তাঁরা দু'জন একই দুধমায়ের দুধ পান করেছিলেন। সে হিসেবে তাঁরা দুধভাইও।
যাহোক হযরত আলী রাযি. উমারাকে সঙ্গে নিয়ে নিলেন। তিনি তাকে নিয়ে হযরত ফাতিমা রাযি.-এর হাতে তুলে দিলেন। বললেন, এ তোমার চাচাতো বোন। এর যত্ন নিও। তিনি তাকে নিজের সাথে বাহনে তুলে নিলেন। তারপর সেখানেই অথবা মদীনায় আসার পর তার লালন-পালনের অধিকার নিয়ে হযরত আলী রাযি.. হযরত জা'ফর রাযি. ও যায়দ ইবন হারিছা রাযি.-এর মধ্যে বিরোধ দেখা দিল। তাদের প্রত্যেকেই সে মেয়ের লালন-পালনের অধিকার দাবি করলেন। হযরত আলী রাযি. বললেন, সে আমার চাচাতো বোন এবং আমিই তাকে সঙ্গে করে এনেছি। হযরত জাফর রাযি. বলছিলেন, সে আমার চাচাতো বোন এবং তার খালা আমার স্ত্রী। হযরত যায়দ রাযি. বলছিলেন, সে আমার ভাইয়ের মেয়ে। ভাইয়ের মেয়ে এ হিসেবে যে, হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে পরস্পর ভ্রাতৃবন্ধন স্থাপন করেন, তখন হযরত যায়দ রাযি.-কে হযরত হামযা রাযি.-এর ভাই বানিয়ে দিয়েছিলেন। সে হিসেবেই উমারা হযরত যায়দ রাযি.-এর ভাতিজী হন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সে দাবি-দাওয়ার মধ্যে যখন ফয়সালা দান করেন, তখনই এ নীতিবাক্যটি উচ্চারণ করেন যে-
الخَالَةُ بِمَنْزِلَةِ الأُمِّ (খালা মায়ের সমতুল্য)। কাজেই একে এর খালার হাতে ন্যস্ত করা হোক। এই বলে তিনি উমারাকে তার খালা এবং হযরত জা'ফর রাযি.-এর স্ত্রী আসমা বিনতে উমায়স রাযি.-এর কাছে সমর্পণ করেন। তারপর তাদের তিনওজনের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করলেন। হযরত আলী রাযি.-কে বললেন, আমি তোমার সঙ্গে এবং তুমি আমার সঙ্গে রয়েছ। হযরত জাফর রাযি.-কে বললেন, তুমি আকৃতি ও প্রকৃতিতে আমারই মত। আর হযরত যায়দ রাযি.-কে বললেন, তুমি আমার ভাই ও মাওলা (আদাযকৃত গোলাম বা বন্ধু)।
এর দ্বারা জানা গেল, প্রতিপালনের অধিকার খালারই জন্য সংরক্ষিত; আসাবা (যাবিল ফুরূয ব্যতীত অন্যান্য উত্তরাধিকারী)-এর জন্য নয়। হযরত হামযা রাযি.-এর আপন বোন সাফিয়্যা রাযি. তখনও জীবিত ছিলেন। যদিও জানা যায় না, তিনি লালন- পালন করতে চেয়েছিলেন কি না, কিন্তু তাঁর বর্তমান থাকা সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খালা মায়েরই মত। এ কথা বলেননি যে, ফুফুর দাবি না করার কারণে খালা মায়ের মত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. খালা মায়ের মত। কাজেই মায়ের মতই তার খেদমত ও ভক্তি-সম্মান করা উচিত।
খ. বিচারকের উচিত ন্যায়সম্মত ফয়সালা দানের পর বাদী-বিবাদী উভেয়ের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
