রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৩৪
পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
মায়ের হুকুম পালনার্থে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া
হাদীছ নং : ৩৩৪

হযরত আবূদ্ দারদা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলল, আমার এক স্ত্রী আছে। আমার মা আমাকে আদেশ করছেন যেন তাকে তালাক দিয়ে দিই। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, পিতা জান্নাতের শ্রেষ্ঠতম দরজা। এখন তুমি চাইলে সে দরজাটি ভেঙে ফেল কিংবা চাইলে হেফাজত কর – তিরমিযী।১১৬
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ হাদীছ।
জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯০০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ২০৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৭৫১১; মুসনাদুল হুমাইদী, হাদীছ নং ৩৯৯; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৭৪৬৪; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৩৪২১
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
334 - وعن أَبي الدرداءِ - رضي الله عنه: أن رجلًا أتاه، قَالَ: إنّ لي امرأةً، وإنّ أُمِّي تَأمُرُنِي بِطَلاقِهَا؟ فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «الوَالِدُ أَوْسَطُ أَبْوَابِ الجَنَّةِ، فَإنْ شِئْتَ، فَأَضِعْ ذلِكَ البَابَ، أَو احْفَظْهُ». رواه الترمذي، (1) وَقالَ: «حديث حسن صحيح».

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছের মূল বিষয়বস্তু আগের হাদীছটির মতই। ওখানে ছিল পিতার পক্ষ থেকে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নির্দেশ, আর এখানে মায়ের পক্ষ থেকে। এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে ভালোবাসত। কিন্তু মায়ের সে বধূ পসন্দ নয়। তাই ছেলেকে হুকুম করছেন যেন সে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়। কিন্তু সে কী করবে বুঝতে পারছে না। তাই এ বিষয়ে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবুদ দারদা রাযি.-এর কাছে বিধান জানতে আসল। তিনি ফয়সালাস্বরূপ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীছ শুনিয়ে দিলেন। সে হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- الوَالِدُ أَوْسَطُ أَبْوَابِ الجَنَّةِ (পিতা জান্নাতের শ্রেষ্ঠতম দরজা)। অর্থাৎ পিতার আনুগত্য দ্বারা শ্রেষ্ঠতম দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করা যায়। আর এটা তো জানা কথা যে, মায়ের হক পিতার তিনগুণ। কাজেই মায়ের আনুগত্য করা জান্নাতলাভের পক্ষে যে আরও বেশি সহায়ক হবে তা অতি স্পষ্ট। আকূলী রহ. বলেন, এর অর্থ- যেসকল উপায়ে জান্নাতে প্রবেশ করা যায় তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হলো পিতা-মাতার আনুগত্য।

এ হাদীছ শোনানোর পর হযরত আবুদ দারদা রাযি. ওই ব্যক্তিকে বললেন- فَإِنْ شِئْتَ فَأَضِعْ ذَلِكَ البَابَ أَوْ احْفَظْهُ (এখন তুমি চাইলে সে দরজাটি ভেঙে ফেল কিংবা চাইলে হেফাজত কর)। অর্থাৎ তুমি চাইলে মায়ের অবাধ্যতা করে ও তার হুকুম অমান্য করে জান্নাতের সে দুয়ার নষ্ট করে ফেলতে পার অথবা চাইলে তার আনুগত্য করে ও তাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে সে দরজা রক্ষাও করতে পার। তোমার ক্ষেত্রে ধারণা তো এটাই যে, তুমি জান্নাতে যাওয়ার দুয়ার রক্ষাই করবে। সুতরাং তোমার কর্তব্য মায়ের কথা শোনা।

উল্লেখ্য, মায়ের কথামত স্ত্রীকে তালাক দেওয়া অবশ্যকর্তব্য হবে তখনই, যখন মায়ের সে হুকুম ন্যায়সঙ্গত হয়। এ প্রসঙ্গে পূর্বের হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সন্তানের কর্তব্য সর্বাবস্থায় মাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করা।

খ. পিতা-মাতার আনুগত্য জান্নাতলাভের শ্রেষ্ঠতম উপায়।

গ. দীনী কোনও বিষয়ে নিজ কর্তব্য স্থির করতে না পারলে কোনও সুদক্ষ ও পরহেযগার আলেমের পরামর্শ গ্রহণ করা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৩৩৪ | মুসলিম বাংলা