রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৩১
পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও আত্মীয়তা রক্ষা করা
যে আমল দ্বারা জান্নাত লাভ করা যায়
হাদীছ নং : ৩৩১
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমল সম্পর্কে অবহিত করুন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কোনওকিছুকে শরীক করবে না, নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে ও আত্মীয়তা রক্ষা করবে -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৩৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৪৬৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৩৫২৮; আল- আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৪৯; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩৯২৪; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ২৫৪৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৯
হাদীছ নং : ৩৩১
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমল সম্পর্কে অবহিত করুন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কোনওকিছুকে শরীক করবে না, নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে ও আত্মীয়তা রক্ষা করবে -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৩৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৪৬৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৪৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৩৫২৮; আল- আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ৪৯; তাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৩৯২৪; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ২৫৪৩; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৯
40 - باب بر الوالدين وصلة الأرحام
331 - وعن أَبي أيوب خالد بن زيد الأنصاري - رضي الله عنه: أنَّ رجلًا قَالَ: يَا رَسُول الله، أخْبِرْني بِعَمَلٍ يُدْخِلُني الجَنَّةَ، وَيُبَاعِدُني مِنَ النَّارِ. فَقَالَ النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم: «تَعْبُدُ اللهَ، وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلاةَ، وتُؤتِي الزَّكَاةَ، وتَصِلُ الرَّحمَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাদীছে যে ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে তিনি জান্নাতে প্রবেশের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি কে, সুনির্দিষ্টভাবে কোনও বর্ণনায় তার উল্লেখ পাওয়া যায় না। কারও কারও মতে তিনি এ হাদীছটির বর্ণনাকারী আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি. নিজেই। বিশেষ কোনও কারণে তিনি নিজের নাম প্রকাশ করেননি। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক বর্ণনায় কোনও বেদুঈন সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, সে বেদুঈন এরকম প্রশ্ন করেছিলেন। সে বেদুঈনের নাম ইবনুল মুনতাফিক। কারও মতে লাকীত ইবন সাবিরা। হযরত আবূ আইয়ূব রাযি. যেহেতু বেদুঈন ছিলেন না তাই বলতে হবে যে, একই প্রশ্ন দু'বার দুই ব্যক্তি করেছিলেন। এটা অসম্ভব নয়। এর আরও নজির আছে।
প্রশ্নকর্তা যেই হোক না কেন এতটুকু কথা স্পষ্ট যে, তার অন্তরে জান্নাতলাভের অদম্য প্রেরণা ছিল। তাই যে আমল করলে জান্নাত পাওয়া যাবে, তা করতে তিনি সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। সে কারণেই তার জিজ্ঞাসা। এটা আমাদের মত গাফেলদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা, যাতে আমরাও জান্নাতলাভের আশায় তার জন্য প্রয়োজনীয় আমলসমূহ জেনে নিই এবং তা পালন করতেও সচেষ্ট থাকি।
প্রশ্নকর্তা যখন জানতে চাইলেন কোন্ আমল দ্বারা জান্নাতে যাওয়া যাবে, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চারটি আমলের কথা বললেন। সর্বপ্রথম বললেন تعبد الله ولا تشرك به شيئا (তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না)। এ দু'টি কথা পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। কেননা ইবাদত গ্রহণযোগ্য হয় কেবল তখনই, যখন তাতে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা না হয়। কেউ আল্লাহ তাআলার ইবাদত করল আবার মূর্তিপূজাও করল, তার ইবাদতের কোনও মূল্য নেই। মুশরিক হওয়ার কারণে সে স্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে। এমনিভাবে ইবাদত রিয়া থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। রিয়া অর্থ মানুষকে দেখানোর ইচ্ছা। এটা গুপ্ত শিরক। যে ইবাদত রিয়ার সঙ্গে করা হয় তাও আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ‘সুতরাং যে-কেউ নিজ মালিকের সাথে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ মালিকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে।১১০
অর্থাৎ তাঁর যেহেতু কোনও শরীক নেই, তাই ইবাদত করতে হবে ইখলাসের সাথে। তাতে স্থুল তো নয়ই, সূক্ষ্ম শিরকও পরিত্যাজ্য। অর্থাৎ নিয়ত থাকবে কেবল আল্লাহ তাআলাকে খুশি করা। রিয়া বা মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত করলে তাও এর ধরনের শিরক, তাতে ইবাদতের ভেতর সূক্ষ্মভাবে মানুষকে শরীক করা হয়। আর যে ইবাদতে অন্যকে শরীক করা হয়, তা ইবাদতকারীর মুখের উপর ছুঁড়ে মারা হয়।
হাদীছটিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসাকারীকে প্রথমে সাধারণভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করতে বলেছেন। তারপর বিশেষভাবে দু'টি ইবাদতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ইরশাদ করেন وتقيم الصلاة ، وتؤتي الزكاة (নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে)। নামায কায়েম করার অর্থ এর যাবতীয় শর্ত, রুকন ও সুন্নাত-মুস্তাহাবের প্রতি লক্ষ রেখে খুশূ-খুযূর সঙ্গে আদায় করতে সচেষ্ট থাকা। শারীরিক ইবাদতসমূহের মধ্যে নামায সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর আর্থিক ইবাদতসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ যাকাত। তাই হাদীছটিতে বিশেষভাবে এ দু'টির উল্লেখ করা হয়েছে। নয়তো জান্নাতে যাওয়ার জন্য সর্বপ্রকার ইবাদত-বন্দেগী আদায় করাই জরুরি, কেবল এ দু'টি আদায় করাই যথেষ্ট নয়। নিয়মিত রোযা রাখতে হবে। যার সামর্থ্য আছে তার হজ্জও করতে হবে। এমনিভাবে সদাকায়ে ফিতর, মানত, কাফ্ফারা, কুরবানী ইত্যাদিতেও অবহেলা করার সুযোগ নেই।
আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী দুই প্রকার- ক. প্রত্যক্ষ ও সরাসরি ইবাদত, যেমন নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত। এগুলোকে 'হাক্কুল্লাহ'ও বলে। খ. পরোক্ষ ইবাদহ, যেমন আত্মীয়তা রক্ষা, প্রতিবেশীর হক আদায়, অতিথির সেবা, ইয়াতীম-মিসকীনের প্রতি সদ্ব্যবহার ইত্যাদি। এগুলোকে 'হাক্কুল ইবাদ' বলা হয়। হাক্কুল ইবাদ দ্বারা সরাসরি বান্দার অধিকার আদায় করা হয়। তবে তা আদায় করা যেহেতু আল্লাহ তাআলার হুকুম। তাই পরোক্ষভাবে এটা আল্লাহ তাআলার ইবাদতও। সুতরাং 'আল্লাহ তাআলার ইবাদত কর' এ আদেশের মধ্যে হাক্কুল ইবাদ আদায় করার বিষয়টিও রয়েছে।
হাক্কুল ইবাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ আত্মীয়তা রক্ষা। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নকর্তাকে লক্ষ্য করে বলেন وتصل الرحم (এবং আত্মীয়তা রক্ষা করবে)। এর অর্থ এমন নয় যে, নামায-রোযা ইত্যাদির পাশাপাশি কেবল আত্মীয়তা রক্ষা করলেই জান্নাত লাভ হবে। এটির কথা বলা হয়েছে বিশেষ গুরুত্বের কারণে, নয়তো বান্দার আরও যতরকম হক আছে তা আদায় করাও অবশ্যকর্তব্য। আল্লাহ তাআলা যেসকল বান্দার জন্য যেসব হক নির্দিষ্ট করেছেন, তার যে-কোনও একটি যদি খর্ব করা হয়, তবে কিয়ামতে সেটির কারণে জবাবদিহি করতে হবে। যতক্ষণ না তার পাওনাদারকে সন্তুষ্ট করা যাবে, ততক্ষণ জান্নাতে যাওয়াও বিলম্বিত হবে। সুতরাং জান্নাত প্রত্যাশীর কর্তব্য আল্লাহ তাআলার যাবতীয় হক আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বান্দার যাবতীয় হক আদায় করতেও সচেষ্ট থাকা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. জান্নাতলাভের জন্য আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক না করা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
খ. জান্নাতলাভের আশাবাদীকে অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামায যথাযথভাবে আদায় করতে হবে এবং সঠিকভাবে হিসাব করে মালের যাকাত দিতে হবে।
গ. জান্নাতলাভের জন্য আত্মীয়তা রক্ষা করাও অবশ্যপালনীয় শর্ত।
ঘ. প্রত্যেক মুমিনের অন্তরে জান্নাতলাভের তীব্র আশা থাকা চাই এবং তা লাভের জন্য যেসমস্ত আমল করা জরুরি, পূর্ণ উদ্দীপনার সঙ্গে তা করতেও সচেষ্ট থাকা চাই।
১১০. সূরা কাহফ (১৮), আয়াত ১১০
প্রশ্নকর্তা যেই হোক না কেন এতটুকু কথা স্পষ্ট যে, তার অন্তরে জান্নাতলাভের অদম্য প্রেরণা ছিল। তাই যে আমল করলে জান্নাত পাওয়া যাবে, তা করতে তিনি সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। সে কারণেই তার জিজ্ঞাসা। এটা আমাদের মত গাফেলদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা, যাতে আমরাও জান্নাতলাভের আশায় তার জন্য প্রয়োজনীয় আমলসমূহ জেনে নিই এবং তা পালন করতেও সচেষ্ট থাকি।
প্রশ্নকর্তা যখন জানতে চাইলেন কোন্ আমল দ্বারা জান্নাতে যাওয়া যাবে, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চারটি আমলের কথা বললেন। সর্বপ্রথম বললেন تعبد الله ولا تشرك به شيئا (তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না)। এ দু'টি কথা পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। কেননা ইবাদত গ্রহণযোগ্য হয় কেবল তখনই, যখন তাতে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা না হয়। কেউ আল্লাহ তাআলার ইবাদত করল আবার মূর্তিপূজাও করল, তার ইবাদতের কোনও মূল্য নেই। মুশরিক হওয়ার কারণে সে স্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে। এমনিভাবে ইবাদত রিয়া থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। রিয়া অর্থ মানুষকে দেখানোর ইচ্ছা। এটা গুপ্ত শিরক। যে ইবাদত রিয়ার সঙ্গে করা হয় তাও আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ‘সুতরাং যে-কেউ নিজ মালিকের সাথে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ মালিকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে।১১০
অর্থাৎ তাঁর যেহেতু কোনও শরীক নেই, তাই ইবাদত করতে হবে ইখলাসের সাথে। তাতে স্থুল তো নয়ই, সূক্ষ্ম শিরকও পরিত্যাজ্য। অর্থাৎ নিয়ত থাকবে কেবল আল্লাহ তাআলাকে খুশি করা। রিয়া বা মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত করলে তাও এর ধরনের শিরক, তাতে ইবাদতের ভেতর সূক্ষ্মভাবে মানুষকে শরীক করা হয়। আর যে ইবাদতে অন্যকে শরীক করা হয়, তা ইবাদতকারীর মুখের উপর ছুঁড়ে মারা হয়।
হাদীছটিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসাকারীকে প্রথমে সাধারণভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করতে বলেছেন। তারপর বিশেষভাবে দু'টি ইবাদতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ইরশাদ করেন وتقيم الصلاة ، وتؤتي الزكاة (নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে)। নামায কায়েম করার অর্থ এর যাবতীয় শর্ত, রুকন ও সুন্নাত-মুস্তাহাবের প্রতি লক্ষ রেখে খুশূ-খুযূর সঙ্গে আদায় করতে সচেষ্ট থাকা। শারীরিক ইবাদতসমূহের মধ্যে নামায সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর আর্থিক ইবাদতসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ যাকাত। তাই হাদীছটিতে বিশেষভাবে এ দু'টির উল্লেখ করা হয়েছে। নয়তো জান্নাতে যাওয়ার জন্য সর্বপ্রকার ইবাদত-বন্দেগী আদায় করাই জরুরি, কেবল এ দু'টি আদায় করাই যথেষ্ট নয়। নিয়মিত রোযা রাখতে হবে। যার সামর্থ্য আছে তার হজ্জও করতে হবে। এমনিভাবে সদাকায়ে ফিতর, মানত, কাফ্ফারা, কুরবানী ইত্যাদিতেও অবহেলা করার সুযোগ নেই।
আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী দুই প্রকার- ক. প্রত্যক্ষ ও সরাসরি ইবাদত, যেমন নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত। এগুলোকে 'হাক্কুল্লাহ'ও বলে। খ. পরোক্ষ ইবাদহ, যেমন আত্মীয়তা রক্ষা, প্রতিবেশীর হক আদায়, অতিথির সেবা, ইয়াতীম-মিসকীনের প্রতি সদ্ব্যবহার ইত্যাদি। এগুলোকে 'হাক্কুল ইবাদ' বলা হয়। হাক্কুল ইবাদ দ্বারা সরাসরি বান্দার অধিকার আদায় করা হয়। তবে তা আদায় করা যেহেতু আল্লাহ তাআলার হুকুম। তাই পরোক্ষভাবে এটা আল্লাহ তাআলার ইবাদতও। সুতরাং 'আল্লাহ তাআলার ইবাদত কর' এ আদেশের মধ্যে হাক্কুল ইবাদ আদায় করার বিষয়টিও রয়েছে।
হাক্কুল ইবাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ আত্মীয়তা রক্ষা। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নকর্তাকে লক্ষ্য করে বলেন وتصل الرحم (এবং আত্মীয়তা রক্ষা করবে)। এর অর্থ এমন নয় যে, নামায-রোযা ইত্যাদির পাশাপাশি কেবল আত্মীয়তা রক্ষা করলেই জান্নাত লাভ হবে। এটির কথা বলা হয়েছে বিশেষ গুরুত্বের কারণে, নয়তো বান্দার আরও যতরকম হক আছে তা আদায় করাও অবশ্যকর্তব্য। আল্লাহ তাআলা যেসকল বান্দার জন্য যেসব হক নির্দিষ্ট করেছেন, তার যে-কোনও একটি যদি খর্ব করা হয়, তবে কিয়ামতে সেটির কারণে জবাবদিহি করতে হবে। যতক্ষণ না তার পাওনাদারকে সন্তুষ্ট করা যাবে, ততক্ষণ জান্নাতে যাওয়াও বিলম্বিত হবে। সুতরাং জান্নাত প্রত্যাশীর কর্তব্য আল্লাহ তাআলার যাবতীয় হক আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বান্দার যাবতীয় হক আদায় করতেও সচেষ্ট থাকা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. জান্নাতলাভের জন্য আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক না করা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
খ. জান্নাতলাভের আশাবাদীকে অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামায যথাযথভাবে আদায় করতে হবে এবং সঠিকভাবে হিসাব করে মালের যাকাত দিতে হবে।
গ. জান্নাতলাভের জন্য আত্মীয়তা রক্ষা করাও অবশ্যপালনীয় শর্ত।
ঘ. প্রত্যেক মুমিনের অন্তরে জান্নাতলাভের তীব্র আশা থাকা চাই এবং তা লাভের জন্য যেসমস্ত আমল করা জরুরি, পূর্ণ উদ্দীপনার সঙ্গে তা করতেও সচেষ্ট থাকা চাই।
১১০. সূরা কাহফ (১৮), আয়াত ১১০
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
