রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ২৯৯
পরিবার-পরিজনকে, সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা ভালোমন্দ পার্থক্য করার বয়সে উপনীত হয়েছে তাদেরকে এবং নিজ দায়িত্বভুক্ত সকলকে আল্লাহ তা'আলার আনুগত্যের আদেশ দেওয়া, তাঁর নাফরমানি করতে নিষেধ করা, প্রয়োজনে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে তাদেরকে বিরত রাখার আবশ্যকীয়তা।
পানাহার করার ইসলামী তরিকা
হাদীছ নং : ২৯৯
হযরত উমর ইবন আবূ সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রবীব (স্ত্রীর প্রাক্তন স্বামীর ঔরসজাত সন্তান), তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিপালনাধীন এক বালক ছিলাম। আমার হাত খাবার পাত্রে ঘোরাফেরা করত। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, ওহে খোকা! আল্লাহ তা'আলার নাম নাও, ডান হাতে খাও এবং তোমার কাছের থেকে খাও। তখন থেকে আমার খাবার এভাবেই হয়ে থাকে -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০২২; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৮৫৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৭৭৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ৩২৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৬৩৩০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ১৬৩৩৭: নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৭২৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ২৪৪৪১)
হাদীছ নং : ২৯৯
হযরত উমর ইবন আবূ সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রবীব (স্ত্রীর প্রাক্তন স্বামীর ঔরসজাত সন্তান), তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিপালনাধীন এক বালক ছিলাম। আমার হাত খাবার পাত্রে ঘোরাফেরা করত। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, ওহে খোকা! আল্লাহ তা'আলার নাম নাও, ডান হাতে খাও এবং তোমার কাছের থেকে খাও। তখন থেকে আমার খাবার এভাবেই হয়ে থাকে -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫৩৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০২২; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৮৫৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৭৭৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ৩২৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৬৩৩০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ১৬৩৩৭: নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৭২৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ২৪৪৪১)
38 - باب وجوب أمره أهله وأولاده المميزين وسائر من في رعيته بطاعة الله تعالى ونهيهم عن المخالفة وتأديبهم ومنعهم من ارتكاب مَنْهِيٍّ عَنْهُ
299 - وعن أَبي حفص عمر بن أَبي سلمة عبد الله بن عبد الأسدِ ربيبِ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: كُنْتُ غلاَمًا في حجر رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - وَكَانَتْ يَدي تَطِيشُ في الصَّحْفَةِ، [ص:116] فَقَالَ لي رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «يَا غُلامُ، سَمِّ الله تَعَالَى، وَكُلْ بيَمِينكَ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ» فَمَا زَالَتْ تِلْكَ طِعْمَتي بَعْدُ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
«وَتَطِيشُ»: تدور في نواحِي الصحفة.
«وَتَطِيشُ»: تدور في نواحِي الصحفة.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বালক উমরকে খানা খাওয়ার কয়েকটি আদব শিক্ষা দিয়েছেন। তার মধ্যে প্রথম হচ্ছে- بسم الله الرحمن الرحيم বলা।
পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা
পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত। পূর্ণ বাক্যটি বললে ভালো। শুধু বিসমিল্লাহ বললেও সুন্নত আদায় হয়ে যায়। যদি শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে মনে না থাকে, তবে মাঝখানে যখন স্মরণ হয় তখন বলা চাই-- بسم الله أوله وآخره । এ প্রসঙ্গে হযরত উমাইয়া ইবন মাখশী রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদিন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বসা ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি খাবার খাচ্ছিল। সে শুরুতে বিসমিল্লাহ বলেনি। যখন খাবারের মাত্র এক লোকমা অবশিষ্ট থাকে, তখন তার বিসমিল্লাহ না বলার কথা মনে পড়ে। অমনি বলে ওঠে بسم الله أوله وآخره এবং এই বলে শেষ লোকমাটি মুখে দেয়। তা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেসে দেন। তারপর বলেন-
ما زال الشيطان يأكل معه، فلما ذكر اسم الله عز وجل استقاء ما في بطنه
“এতক্ষণ শয়তান তার সঙ্গে খেয়ে যাচ্ছিল। যেই না সে আল্লাহর নাম নিল, অমনি সে তার পেটে যা ছিল সব বমি করে ফেলে দিল।৪১৮
বোঝা গেল বিসমিল্লাহ না বললে শয়তান পানাহারে শরীক হয়ে যায়। হযরত হুযায়ফা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, একবার আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে খানা খাওয়ায় উপস্থিত ছিলাম। এ অবস্থায় একটি বালিকা খাদ্যে হাত দিতে গেলে তিনি তার হাত ধরে ফেললেন। তারপর এক বেদুঈন এসে হাত দিতে গেলে তিনি তারও হাত ধরে ফেললেন। তারপর বললেন-
إن الشيطان يستحل الطعام أن لا يذكر اسم الله عليه، وإنه جاء بهذه الجارية ليستحل بها فأخذت بيدها، فجاء بهذا الأعرابي ليستحل به فأخذت بيده، والذي نفسي بيده، إن يده في يدي مع يديهما
'আল্লাহর নাম নেওয়া না হলে শয়তান খাবারে ঢুকে পড়ে। সে এই বালিকাটির সঙ্গে এসে খাবারে শরীক হতে চেয়েছিল। তাই আমি তার হাত ধরে ফেললাম। তারপর সে এই বেদুঈনের সঙ্গে এসে খাবারে শরীক হতে চাইল। তাই আমি তারও হাত ধরে ফেললাম। সেই আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! এদের দুজনের হাতের সঙ্গে তার হাতও আমার হাতের মধ্যে আছে।৪১৯
বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা যেমন শয়তানকে তাড়ানো হয়, তেমনি এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার নিআমতের একরকম মূল্যায়ন ও শোকরও আদায় করা হয়। আল্লাহ তাআলাই মাখলুকের রিযিকদাতা। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন ও সংগ্রহে মানুষের যতই চেষ্টা থাকুক না কেন, তার প্রকৃত দাতা আল্লাহ তাআলাই। তাই যে-কোনও খাবার বা পানীয় মুখে নেওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা চাই। এর দ্বারা যেন আল্লাহ তাআলাকে লক্ষ্য করে বলা হয় যে, হে আল্লাহ! এ খাবার ও পানীয় তোমারই দান। তাই আমি তোমার নামেই খাওয়া শুরু করছি। তুমি এতে বরকত দিও এবং একে আমার জন্য উপকারী করো।
বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা খাওয়ার কাজটি ছাওয়াবের কাজে পরিণত হয়ে যায়, কেবল দুনিয়ারী কাজ থাকে না।
ডান হাতে পানাহার করা
দ্বিতীয় শিক্ষা দিয়েছেন ডান হাতে খাওয়া। ডান হাতে পানাহার করাও সুন্নত। কারও কারও মতে খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা এবং ডান হাতে খাওয়া ওয়াজিব। ডান হাতে খাওয়া মুমিন-মুসলিমের বৈশিষ্ট্য। বাম হাতে খায় শয়তান এবং তার অনুসরণে অমুসলিমগণ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
إذا أكل أحدكم فليأكل بيمينه، وإذا شرب فليشرب بيمينه فإن الشيطان يأكل بشماله، ويشرب بشماله
তোমাদের কেউ যখন খায়, যেন ডান হাতে খায়। আর যখন পান করে, যেন ডান হাতে পান করে। শয়তান বাম হাতে খায় ও বাম হাতে পান করে।৪২০
শয়তান যখন বাম হাতে পানাহার করে, তখন কোনও মুসলিম ব্যক্তি এটা করতে পারে কি? এটা যে করবে সে শয়তানের বন্ধুতে পরিণত হবে। ইদানীং অনেকেই মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও বাম হাতে পানাহার করাকে ফ্যাশন বানিয়ে নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারা শয়তানেরই অনুসরণ করছে। পানাহার করার দ্বারা আল্লাহ তাআলার নিআমত ভোগ করা হয়। এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ কাজ। এরূপ কাজে ডান হাত ব্যবহারই সঙ্গতিপূর্ণ। দুই হাতের মধ্যে বাম হাত অপেক্ষা ডান হাতের মর্যাদা বেশি। এর জন্য আরবী প্রতিশব্দ হল يمين যার অর্থ বরকতময় ও কল্যাণময়। শরীআত ও ভদ্র সমাজও ডান হাতকে মর্যাদার স্থান দেয়। ভদ্র ও দীনদার মহল কোনওকিছু দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে ডান হাতই ব্যবহার করে থাকে। সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য পানাহারে ডান হাত ব্যবহার করা। এমনিভাবে কোনওকিছু দেওয়া ও নেওয়ার ক্ষেত্রেও। হাঁ, ওজর থাকলে ভিন্ন কথা। যার ডান হাতে বিশেষ কোনও সমস্যা আছে, সে অপারগতাহেতু বাম হাতে পানাহার করলে তা দূষণীয় হবে না।
নিজের সম্মুখ থেকে খাওয়া
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমর ইবন আবূ সালামা রাযি.-কে তৃতীয় যে বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন তা হচ্ছে নিজের কাছ থেকে খাওয়া। অর্থাৎ কয়েকজন মিলে এক পাত্রে খেতে বসলে প্রত্যেকে যার যার সম্মুখ থেকে খাবে, একজন আরেকজনের সম্মুখ থেকে নয়। উমর ইবন আবূ সালামা রাযি. অল্পবয়সের বালক ছিলেন। খাওয়ার আদব-কায়দা জানা ছিল না। তাই একবার এখান থেকে, একবার ওখান থেকে পসন্দ মত নিয়ে নিচ্ছিলেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা দিলেন, খোকা, নিজের সামনে থেকে খাও।
সম্মিলিত খাবারের পাত্রে এখানে-ওখানে হাত দিলে তা দেখতে যেমন খারাপ দেখা যায়, তেমনি তা লোভেরও পরিচায়ক। এটা অন্যের পক্ষেও অরুচিকর। অবশ্য একই পাত্রে বিভিন্নরকম খাবার থাকলে ভিন্ন কথা। তখন রুচিমত বিভিন্ন স্থান থেকে খাওয়া যাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় যে, ছেলেমেয়েকে ছোটবেলা থেকেই ইসলামী আদব-কায়দা শিক্ষা দেওয়া চাই।
খ. খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত।
গ. শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে মাঝখানে যখন স্মরণ হয় তখন بسم الله أوله وآخره বলে নেওয়া চাই।
ঘ. পানাহারে ডান হাত ব্যবহার করা সুন্নত। বাম হাত ব্যবহার করা শয়তানের কাজ।
ঙ. কয়েকজন এক পাত্রে খেতে বসলে প্রত্যেকের উচিত নিজের নিজের কাছ থেকে খাওয়া।
চ. কাউকে কোনও ভুলচুক করতে দেখলে তা সংশোধন করে দেওয়া চাই, এমনকি খাবারের সময়ও।
ছ. যেসকল কাজ শয়তান ও অমুসলিমদের বৈশিষ্ট্য, মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য তা পরিহার করে চলা।
১৮. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৭৬৮; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৮৫৪; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫৪৪৬; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৭২৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৯৬৩
১৯. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০১৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৭৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৩২৪৯; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, হাদীছ নং ১০৭৮; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫৪৪৪
৪২০. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০২০; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৭৭৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৭৯৯; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩২৬৬; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ১১৮৯; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ২০৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৪৫৩৭; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৪৪৩৮; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫২২৬
পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা
পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত। পূর্ণ বাক্যটি বললে ভালো। শুধু বিসমিল্লাহ বললেও সুন্নত আদায় হয়ে যায়। যদি শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে মনে না থাকে, তবে মাঝখানে যখন স্মরণ হয় তখন বলা চাই-- بسم الله أوله وآخره । এ প্রসঙ্গে হযরত উমাইয়া ইবন মাখশী রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদিন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বসা ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি খাবার খাচ্ছিল। সে শুরুতে বিসমিল্লাহ বলেনি। যখন খাবারের মাত্র এক লোকমা অবশিষ্ট থাকে, তখন তার বিসমিল্লাহ না বলার কথা মনে পড়ে। অমনি বলে ওঠে بسم الله أوله وآخره এবং এই বলে শেষ লোকমাটি মুখে দেয়। তা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেসে দেন। তারপর বলেন-
ما زال الشيطان يأكل معه، فلما ذكر اسم الله عز وجل استقاء ما في بطنه
“এতক্ষণ শয়তান তার সঙ্গে খেয়ে যাচ্ছিল। যেই না সে আল্লাহর নাম নিল, অমনি সে তার পেটে যা ছিল সব বমি করে ফেলে দিল।৪১৮
বোঝা গেল বিসমিল্লাহ না বললে শয়তান পানাহারে শরীক হয়ে যায়। হযরত হুযায়ফা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, একবার আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে খানা খাওয়ায় উপস্থিত ছিলাম। এ অবস্থায় একটি বালিকা খাদ্যে হাত দিতে গেলে তিনি তার হাত ধরে ফেললেন। তারপর এক বেদুঈন এসে হাত দিতে গেলে তিনি তারও হাত ধরে ফেললেন। তারপর বললেন-
إن الشيطان يستحل الطعام أن لا يذكر اسم الله عليه، وإنه جاء بهذه الجارية ليستحل بها فأخذت بيدها، فجاء بهذا الأعرابي ليستحل به فأخذت بيده، والذي نفسي بيده، إن يده في يدي مع يديهما
'আল্লাহর নাম নেওয়া না হলে শয়তান খাবারে ঢুকে পড়ে। সে এই বালিকাটির সঙ্গে এসে খাবারে শরীক হতে চেয়েছিল। তাই আমি তার হাত ধরে ফেললাম। তারপর সে এই বেদুঈনের সঙ্গে এসে খাবারে শরীক হতে চাইল। তাই আমি তারও হাত ধরে ফেললাম। সেই আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! এদের দুজনের হাতের সঙ্গে তার হাতও আমার হাতের মধ্যে আছে।৪১৯
বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা যেমন শয়তানকে তাড়ানো হয়, তেমনি এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার নিআমতের একরকম মূল্যায়ন ও শোকরও আদায় করা হয়। আল্লাহ তাআলাই মাখলুকের রিযিকদাতা। খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন ও সংগ্রহে মানুষের যতই চেষ্টা থাকুক না কেন, তার প্রকৃত দাতা আল্লাহ তাআলাই। তাই যে-কোনও খাবার বা পানীয় মুখে নেওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা চাই। এর দ্বারা যেন আল্লাহ তাআলাকে লক্ষ্য করে বলা হয় যে, হে আল্লাহ! এ খাবার ও পানীয় তোমারই দান। তাই আমি তোমার নামেই খাওয়া শুরু করছি। তুমি এতে বরকত দিও এবং একে আমার জন্য উপকারী করো।
বিসমিল্লাহ বলার দ্বারা খাওয়ার কাজটি ছাওয়াবের কাজে পরিণত হয়ে যায়, কেবল দুনিয়ারী কাজ থাকে না।
ডান হাতে পানাহার করা
দ্বিতীয় শিক্ষা দিয়েছেন ডান হাতে খাওয়া। ডান হাতে পানাহার করাও সুন্নত। কারও কারও মতে খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা এবং ডান হাতে খাওয়া ওয়াজিব। ডান হাতে খাওয়া মুমিন-মুসলিমের বৈশিষ্ট্য। বাম হাতে খায় শয়তান এবং তার অনুসরণে অমুসলিমগণ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
إذا أكل أحدكم فليأكل بيمينه، وإذا شرب فليشرب بيمينه فإن الشيطان يأكل بشماله، ويشرب بشماله
তোমাদের কেউ যখন খায়, যেন ডান হাতে খায়। আর যখন পান করে, যেন ডান হাতে পান করে। শয়তান বাম হাতে খায় ও বাম হাতে পান করে।৪২০
শয়তান যখন বাম হাতে পানাহার করে, তখন কোনও মুসলিম ব্যক্তি এটা করতে পারে কি? এটা যে করবে সে শয়তানের বন্ধুতে পরিণত হবে। ইদানীং অনেকেই মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও বাম হাতে পানাহার করাকে ফ্যাশন বানিয়ে নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারা শয়তানেরই অনুসরণ করছে। পানাহার করার দ্বারা আল্লাহ তাআলার নিআমত ভোগ করা হয়। এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ কাজ। এরূপ কাজে ডান হাত ব্যবহারই সঙ্গতিপূর্ণ। দুই হাতের মধ্যে বাম হাত অপেক্ষা ডান হাতের মর্যাদা বেশি। এর জন্য আরবী প্রতিশব্দ হল يمين যার অর্থ বরকতময় ও কল্যাণময়। শরীআত ও ভদ্র সমাজও ডান হাতকে মর্যাদার স্থান দেয়। ভদ্র ও দীনদার মহল কোনওকিছু দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে ডান হাতই ব্যবহার করে থাকে। সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য পানাহারে ডান হাত ব্যবহার করা। এমনিভাবে কোনওকিছু দেওয়া ও নেওয়ার ক্ষেত্রেও। হাঁ, ওজর থাকলে ভিন্ন কথা। যার ডান হাতে বিশেষ কোনও সমস্যা আছে, সে অপারগতাহেতু বাম হাতে পানাহার করলে তা দূষণীয় হবে না।
নিজের সম্মুখ থেকে খাওয়া
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমর ইবন আবূ সালামা রাযি.-কে তৃতীয় যে বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন তা হচ্ছে নিজের কাছ থেকে খাওয়া। অর্থাৎ কয়েকজন মিলে এক পাত্রে খেতে বসলে প্রত্যেকে যার যার সম্মুখ থেকে খাবে, একজন আরেকজনের সম্মুখ থেকে নয়। উমর ইবন আবূ সালামা রাযি. অল্পবয়সের বালক ছিলেন। খাওয়ার আদব-কায়দা জানা ছিল না। তাই একবার এখান থেকে, একবার ওখান থেকে পসন্দ মত নিয়ে নিচ্ছিলেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা দিলেন, খোকা, নিজের সামনে থেকে খাও।
সম্মিলিত খাবারের পাত্রে এখানে-ওখানে হাত দিলে তা দেখতে যেমন খারাপ দেখা যায়, তেমনি তা লোভেরও পরিচায়ক। এটা অন্যের পক্ষেও অরুচিকর। অবশ্য একই পাত্রে বিভিন্নরকম খাবার থাকলে ভিন্ন কথা। তখন রুচিমত বিভিন্ন স্থান থেকে খাওয়া যাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় যে, ছেলেমেয়েকে ছোটবেলা থেকেই ইসলামী আদব-কায়দা শিক্ষা দেওয়া চাই।
খ. খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত।
গ. শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে মাঝখানে যখন স্মরণ হয় তখন بسم الله أوله وآخره বলে নেওয়া চাই।
ঘ. পানাহারে ডান হাত ব্যবহার করা সুন্নত। বাম হাত ব্যবহার করা শয়তানের কাজ।
ঙ. কয়েকজন এক পাত্রে খেতে বসলে প্রত্যেকের উচিত নিজের নিজের কাছ থেকে খাওয়া।
চ. কাউকে কোনও ভুলচুক করতে দেখলে তা সংশোধন করে দেওয়া চাই, এমনকি খাবারের সময়ও।
ছ. যেসকল কাজ শয়তান ও অমুসলিমদের বৈশিষ্ট্য, মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য তা পরিহার করে চলা।
১৮. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৭৬৮; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীছ নং ৮৫৪; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫৪৪৬; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৭২৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৮৯৬৩
১৯. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০১৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৭৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৩২৪৯; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার, হাদীছ নং ১০৭৮; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৫৪৪৪
৪২০. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২০২০; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৭৭৬; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৭৯৯; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩২৬৬; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীছ নং ১১৮৯; সুনানে দারিমী, হাদীছ নং ২০৭৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৪৫৩৭; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ২৪৪৩৮; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫২২৬
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
