রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ২৯৮
অধ্যায়ঃ৩৮
পরিবার-পরিজনকে, সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা ভালোমন্দ পার্থক্য করার বয়সে উপনীত হয়েছে তাদেরকে এবং নিজ দায়িত্বভুক্ত সকলকে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের আদেশ দেওয়া, তাঁর নাফরমানি করতে নিষেধ করা, প্রয়োজনে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে তাদেরকে বিরত রাখার আবশ্যিকতা
এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েসহ যারাই কারও তত্ত্বাবধানে থাকে, তাদের দীনী তরবিয়াত করার অপরিহার্যতা সম্পর্কে সচেতন করা।অধিকাংশ অভিভাবক ও গৃহকর্তা তাদের দুনিয়াবী প্রয়োজন সমাধা করেই ক্ষান্ত হয়ে যায়। তাদের থাকা-খাওয়া, পোশাক-আশাক ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করাকেই তারা একমাত্র দায়িত্ব মনে করে। এরই জন্য তাদের যত চেষ্টা।এ চেষ্টাও জরুরি বটে এবং এ ক্ষেত্রে অবহেলা করার কোনও অবকাশ নেই এ কথাও সত্য, কিন্তু নিজ দায়িত্বকে কেবল এরই মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাটা ভুল। কেননা সকল অভিভাবক ও তাদের পোষ্যবর্গের যিনি সৃষ্টিকর্তা, তিনি এ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দীনী তরবিয়াত করারও হুকুম দিয়েছেন।
নিজ অধীনস্থদের দীনী তরবিয়াত করার অর্থ তাদেরকে মুত্তাকী ও পরহেযগাররূপে গড়ে তোলার চেষ্টা করা তথা আল্লাহ তাআলার দীন ও শরীআত মোতাবেক পরিচালনা করা। এর জন্য প্রথমে দরকার তাদেরকে দীন ও শরীআতের জরুরি ইলম শেখানো, তারপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা যাতে তারা সে শিক্ষা অনুযায়ী চলতে সচেষ্ট থাকে। অর্থাৎ তারা যেন আল্লাহ তাআলা যা কিছু করতে আদেশ করেছেন তা পালন করে এবং যা-কিছু করতে নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাকে। তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলাই হচ্ছে তাঁর আনুগত্য করা আর তা না মানাই হল তাঁর নাফরমানি করা। সুতরাং লক্ষ রাখতে হবে তারা যেন নামায, রোযা ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী যথাযথভাবে পালন করে। তারা যেন সত্য কথা বলে, বড়কে সম্মান করে, ছোটকে স্নেহ করে, ওয়াদা রক্ষা করে। মিথ্যা বলা, অন্যকে কষ্ট দেওয়া, চুরি করা, ফাঁকি দেওয়া ইত্যাদি থেকে যেন বিরত থাকে।
এ ব্যাপারে কেউ কোনও গাফলাতি করলে তাকে সতর্ক করবে, প্রয়োজনে পরিমিত শাস্তিদানও করবে। একে তা'দীব বলে। দীনী তরবিয়াতের ক্ষেত্রে তা'দীবেরও প্রয়োজন আছে। শরীআতের অনুসরণে স্ত্রী বা ছেলেমেয়ে গাফলাতি করলে মায়া-মমতার বশে তা উপেক্ষা করা কিছুতেই সমীচীন নয়। এ জাতীয় মায়া কল্যাণকামিতার পরিপন্থী। কেননা এ জাতীয় মায়ার পরিণামে তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সমূহ অকল্যাণ বয়ে আনে।
প্রত্যেক অভিভাবক ও গৃহকর্তা যাতে এ দায়িত্ব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে, সেজন্য কুরআন ও হাদীছে বিশেষ তাকিদ করা হয়েছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করেছেন। নিচে তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করা যাচ্ছে।
পরিবার-পরিজনকে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের আদেশদান সম্পর্কিত দু'টি আয়াত
এক নং আয়াত
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا
অর্থ : ‘এবং নিজ পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ কর এবং নিজেও তাতে অবিচলিত থাক।৪০৯
ব্যাখ্যা
অর্থাৎ নিজ পরিবারভুক্ত সকলকে নিয়মিত নামায আদায়ে যত্নবান থাকার হুকুম দাও। সেইসঙ্গে নিজেও নিয়মিত নামায পড়। সরাসরি যদিও এ আদেশ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি, তবে এ হুকুমের ব্যাপকতায় তাঁর উম্মতও অন্তর্ভুক্ত। বরং বলা যায় তাঁকে আদেশদানের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে উম্মতকেই আদেশ করা হয়েছে। কেননা তিনি ও তাঁর পরিবারবর্গ তো এ আদেশ নিয়মিত পালন করতেনই। এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোনও অবহেলা থাকার প্রশ্নই আসে না। তা সত্ত্বেও যখন তাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, এর দ্বারা বোঝা যায় উদ্দেশ্য হচ্ছে উম্মত। আর তাদেরকে লক্ষ্য করে আদেশ করার দ্বারা উম্মতের মনে বিষয়টির গুরুত্ব সঞ্চার করা হয়েছে, যাতে উম্মত বোঝে যে, এ ক্ষেত্রে যাদের বিন্দুমাত্র অবহেলা ছিল না সেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গকেই যখন এ আদেশ করা হয়েছে, তখন আমাদের তো এ আদেশ পালনের ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্ক ও সচেতন থাকা উচিত। অর্থাৎ প্রত্যেক অভিভাবকের কর্তব্য তার সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়মিত নামায আদায় করতে বলা আর তাদেরও উচিত অভিভাবকের সে হুকুম মেনে চলা। হযরত উমর রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন রাতে নামাযের জন্য উঠতেন, তখন পরিবারবর্গকেও জাগিয়ে দিতেন এবং তখন এ আয়াতটি পাঠ করতেন।
আয়াতটিতে এর পরে আছে-
لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى
(আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না। রিযিক তো আমিই দেব। আর শুভ পরিণাম তো তাকওয়ারই)। অর্থাৎ বান্দার নামাযে আল্লাহর কোনও ফায়দা নেই। ফায়দা বান্দার নিজেরই। কেননা নামাযের বরকতে আল্লাহ তাআলা রিযিকেরও ফয়সালা করেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا (2) وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
‘যে-কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের কোনও পথ তৈরি করে দেবেন। এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিযিক দান করবেন, যা তার ধারণার বাইরে।৪১০
এর দ্বারা রিযিকের দুনিয়াবী চেষ্টা করতে নিষেধ করা হয়নি; বরং সে চেষ্টা যাতে নামাযের জন্য বাধা না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। উদ্দেশ্য এ কথা বোঝানো যে, তোমাদের চেষ্টাতেই সব হয়ে যায় না। প্রকৃতপক্ষে রিযিক আমিই দিয়ে থাকি। তোমাদের চেষ্টার ফল আমার ইচ্ছাতেই ঘটে। তোমরা যে চেষ্টা কর তাও আমার ইচ্ছারই প্রকাশ। কাজেই সবকিছুর মূলে যখন আমার ইচ্ছা, তখন আমার হুকুম পালনে গাফলাতি করবে কেন? তোমরা আমার হুকুম যথাযথভাবে পালন কর, ঠিকভাবে নামায পড় এবং তাকওয়া-পরহেযগারীর সঙ্গে চল, তাহলে দুনিয়া ও আখেরাত সব জায়গায় তোমাদের চেষ্টা সুফল বয়ে আনবে। এমনও হতে পারে যে, তোমরা চেষ্টা করছ এক জায়গায়, কিন্তু আমি অন্য জায়গা থেকে অকল্পনীয়ভাবে তোমাদের রিযিক দিয়ে দেব। সেইসঙ্গে রিযিকের বরকত ও জীবনের শান্তি ও স্বস্তির ব্যাপার তো আলাদা আছেই। এক হাদীছে আছে-
(كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا نَزَلَ بِأَهْلِهِ شِدَّةٌ أَوْ قَالَ: ضِيْقٌ أَمَرَهُمْ بِالصَّلَاةِ وَتَلَا (وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারে যখন কোনও কষ্ট বা সংকট দেখা দিত, তখন তাদেরকে নামাযের হুকুম দিতেন এবং তিলাওয়াত করতেন-...... وَأْمُرْ أَهْلَكَ।
একদিন উমাইয়া বংশীয় খলিফা হিশাম ইবন আব্দুল মালিক (শাসনকাল ১০৫হি.-১২৫হি.) জুমুআর দিন মসজিদে তার এক পুত্রকে দেখতে পেলেন না। পরে তিনি তাকে ডাকলেন। জিজ্ঞেস করলেন, মসজিদে গেলে না কেন? বলল, আমার খচ্চরটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই যেতে পারিনি। তিনি তিরস্কার করে বললেন, হেঁটে যেতে পারলে না? তারপর তিনি তাকে হুকুম দিলেন, এক বছর কোনও বাহনে চড়তে পারবে না এবং এ এক বছর তুমি হেঁটে হেঁটে জুমুআয় যাবে।
দুই নং আয়াত
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
অর্থ : 'হে মুমিনগণ! নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা কর সেই আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।
ব্যাখ্যা
জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করা ও তাঁর নাফরমানি থেকে বেঁচে থাকা। এককথায় শরীআতের অনুসরণ করা। প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য এ পন্থায় নিজেকেও জাহান্নাম থেকে বাঁচানো এবং পরিবারবর্গকেও বাঁচানো। কাজেই পরিবারের প্রত্যেকে যাতে শরীআতের যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা পরিবারের কর্তার জন্য ফরয। তাদেরকে এ সম্পর্কে আন্তরিকতার সঙ্গে বোঝাতে হবে এবং জাহান্নামের আযাব সম্পর্কে সতর্ক করতে হবে। তারা অবহেলা করলে শাসন করাও কর্তব্য। সেজন্য মারার প্রয়োজন হলে মারাটাও তাদের প্রতি কল্যাণকামিতারই পরিচায়ক হবে। বিষয়টা আমরা যত ভালোভাবে বুঝতে চেষ্টা করব, ততই আমাদের কল্যাণ। অন্যথায় শরীআত অমান্য করার কারণে পরিবারের কেউ যদি জাহান্নামে যায়, তবে তাদের প্রতি দীনী দায়িত্ব পালনে অবহেলা করার কারণে নিজেরও জাহান্নামের শাস্তিভোগের আশঙ্কা আছে।
এ আয়াত নাযিল হলে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নিজেকে কিভাবে জাহান্নাম থেকে বাঁচাব তা তো বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু পরিবারবর্গকে কিভাবে বাঁচাব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যেসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তোমরা তাদেরকেও তা থেকে বিরত রাখবে। আর তোমাদেরকে যে কাজ করতে হুকুম দিয়েছেন, তোমরা তাদেরকেও তা করার হুকুম দেবে।
এভাবে নিজেকে ও পরিবারবর্গকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো গেলে জান্নাতেও সবাই একসঙ্গে থাকার সুযোগ হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُمْ مِنْ عَمَلِهِمْ مِنْ شَيْءٍ
'যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের সন্তান-সন্ততিগণ ঈমানের ক্ষেত্রে তাদের অনুগামী হয়েছে, আমি তাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে তাদের সাথে মিলিয়ে দেব এবং তাদের কর্ম হতে কিছুমাত্র হ্রাস করব না।৪১৩
জাহান্নামের শাস্তি হালকাভাবে নেওয়ার বিষয় নয়। এ আয়াত বলছে-
وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
(যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর)।
অর্থাৎ পাথর ও জাহান্নামীদেরকে দিয়ে জাহান্নামের আগুন উত্তপ্ত করা হবে। যারা জাহান্নামে যাবে তারা কেবল জাহান্নামের আগুনে পুড়ে শাস্তি পাবে তাই নয়; শাস্তি পাবে জ্বালানী হয়েও। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাজত করুন।
আয়াতে এর পরে আছে-
عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
(তাতে নিয়োজিত আছে কঠোর স্বভাব, কঠিন-হৃদয় ফিরিশতাগণ, যারা আল্লাহর কোনও হুকুমে তাঁর অবাধ্যতা করে না এবং সেটাই করে, যার নির্দেশ তাদেরকে দেওয়া হয়)।
অর্থাৎ সে ফিরিশতাগণ এমন যে, একে তো কোনও অবস্থায়ই আল্লাহর অবাধ্যতা করে না, তদুপরি তারা অত্যন্ত কঠোর স্বভাব ও কঠিন-হৃদয়ের। তাদের তোষামোদ করে বা তাদের উপর জোর খাটিয়ে জাহান্নাম থেকে বাঁচার কোনও উপায় নেই। বাঁচা যাবে না তাদেরকে উৎকোচ দিয়েও। জাহান্নামে নিযুক্ত ফিরিশতাদের 'যাবানিয়া' বলা হয়। তাদের মধ্যে যিনি প্রধান দায়িত্বশীল তার নাম মালিক।
৪০৯. সূরা তোয়াহা (২০), আয়াত ১৩২
৪১০. সূরা তালাক (৬৫), আয়াত ২-৩
৪১১. মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ৪৭৪৪; তবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৮৮৬; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ২৯১১
৪১২. সূরা তাহরীম (৬৬), আয়াত ৬
৪১৩. সূরা তূর (৫২), আয়াত ২১
পরিবার-পরিজনকে, সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা ভালোমন্দ পার্থক্য করার বয়সে উপনীত হয়েছে তাদেরকে এবং নিজ দায়িত্বভুক্ত সকলকে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের আদেশ দেওয়া, তাঁর নাফরমানি করতে নিষেধ করা, প্রয়োজনে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে তাদেরকে বিরত রাখার আবশ্যিকতা
এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েসহ যারাই কারও তত্ত্বাবধানে থাকে, তাদের দীনী তরবিয়াত করার অপরিহার্যতা সম্পর্কে সচেতন করা।অধিকাংশ অভিভাবক ও গৃহকর্তা তাদের দুনিয়াবী প্রয়োজন সমাধা করেই ক্ষান্ত হয়ে যায়। তাদের থাকা-খাওয়া, পোশাক-আশাক ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করাকেই তারা একমাত্র দায়িত্ব মনে করে। এরই জন্য তাদের যত চেষ্টা।এ চেষ্টাও জরুরি বটে এবং এ ক্ষেত্রে অবহেলা করার কোনও অবকাশ নেই এ কথাও সত্য, কিন্তু নিজ দায়িত্বকে কেবল এরই মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাটা ভুল। কেননা সকল অভিভাবক ও তাদের পোষ্যবর্গের যিনি সৃষ্টিকর্তা, তিনি এ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দীনী তরবিয়াত করারও হুকুম দিয়েছেন।
নিজ অধীনস্থদের দীনী তরবিয়াত করার অর্থ তাদেরকে মুত্তাকী ও পরহেযগাররূপে গড়ে তোলার চেষ্টা করা তথা আল্লাহ তাআলার দীন ও শরীআত মোতাবেক পরিচালনা করা। এর জন্য প্রথমে দরকার তাদেরকে দীন ও শরীআতের জরুরি ইলম শেখানো, তারপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা যাতে তারা সে শিক্ষা অনুযায়ী চলতে সচেষ্ট থাকে। অর্থাৎ তারা যেন আল্লাহ তাআলা যা কিছু করতে আদেশ করেছেন তা পালন করে এবং যা-কিছু করতে নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাকে। তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলাই হচ্ছে তাঁর আনুগত্য করা আর তা না মানাই হল তাঁর নাফরমানি করা। সুতরাং লক্ষ রাখতে হবে তারা যেন নামায, রোযা ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী যথাযথভাবে পালন করে। তারা যেন সত্য কথা বলে, বড়কে সম্মান করে, ছোটকে স্নেহ করে, ওয়াদা রক্ষা করে। মিথ্যা বলা, অন্যকে কষ্ট দেওয়া, চুরি করা, ফাঁকি দেওয়া ইত্যাদি থেকে যেন বিরত থাকে।
এ ব্যাপারে কেউ কোনও গাফলাতি করলে তাকে সতর্ক করবে, প্রয়োজনে পরিমিত শাস্তিদানও করবে। একে তা'দীব বলে। দীনী তরবিয়াতের ক্ষেত্রে তা'দীবেরও প্রয়োজন আছে। শরীআতের অনুসরণে স্ত্রী বা ছেলেমেয়ে গাফলাতি করলে মায়া-মমতার বশে তা উপেক্ষা করা কিছুতেই সমীচীন নয়। এ জাতীয় মায়া কল্যাণকামিতার পরিপন্থী। কেননা এ জাতীয় মায়ার পরিণামে তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সমূহ অকল্যাণ বয়ে আনে।
প্রত্যেক অভিভাবক ও গৃহকর্তা যাতে এ দায়িত্ব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে, সেজন্য কুরআন ও হাদীছে বিশেষ তাকিদ করা হয়েছে। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করেছেন। নিচে তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করা যাচ্ছে।
পরিবার-পরিজনকে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের আদেশদান সম্পর্কিত দু'টি আয়াত
এক নং আয়াত
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا
অর্থ : ‘এবং নিজ পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ কর এবং নিজেও তাতে অবিচলিত থাক।৪০৯
ব্যাখ্যা
অর্থাৎ নিজ পরিবারভুক্ত সকলকে নিয়মিত নামায আদায়ে যত্নবান থাকার হুকুম দাও। সেইসঙ্গে নিজেও নিয়মিত নামায পড়। সরাসরি যদিও এ আদেশ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি, তবে এ হুকুমের ব্যাপকতায় তাঁর উম্মতও অন্তর্ভুক্ত। বরং বলা যায় তাঁকে আদেশদানের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে উম্মতকেই আদেশ করা হয়েছে। কেননা তিনি ও তাঁর পরিবারবর্গ তো এ আদেশ নিয়মিত পালন করতেনই। এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোনও অবহেলা থাকার প্রশ্নই আসে না। তা সত্ত্বেও যখন তাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, এর দ্বারা বোঝা যায় উদ্দেশ্য হচ্ছে উম্মত। আর তাদেরকে লক্ষ্য করে আদেশ করার দ্বারা উম্মতের মনে বিষয়টির গুরুত্ব সঞ্চার করা হয়েছে, যাতে উম্মত বোঝে যে, এ ক্ষেত্রে যাদের বিন্দুমাত্র অবহেলা ছিল না সেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গকেই যখন এ আদেশ করা হয়েছে, তখন আমাদের তো এ আদেশ পালনের ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্ক ও সচেতন থাকা উচিত। অর্থাৎ প্রত্যেক অভিভাবকের কর্তব্য তার সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়মিত নামায আদায় করতে বলা আর তাদেরও উচিত অভিভাবকের সে হুকুম মেনে চলা। হযরত উমর রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন রাতে নামাযের জন্য উঠতেন, তখন পরিবারবর্গকেও জাগিয়ে দিতেন এবং তখন এ আয়াতটি পাঠ করতেন।
আয়াতটিতে এর পরে আছে-
لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى
(আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না। রিযিক তো আমিই দেব। আর শুভ পরিণাম তো তাকওয়ারই)। অর্থাৎ বান্দার নামাযে আল্লাহর কোনও ফায়দা নেই। ফায়দা বান্দার নিজেরই। কেননা নামাযের বরকতে আল্লাহ তাআলা রিযিকেরও ফয়সালা করেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا (2) وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
‘যে-কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের কোনও পথ তৈরি করে দেবেন। এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিযিক দান করবেন, যা তার ধারণার বাইরে।৪১০
এর দ্বারা রিযিকের দুনিয়াবী চেষ্টা করতে নিষেধ করা হয়নি; বরং সে চেষ্টা যাতে নামাযের জন্য বাধা না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। উদ্দেশ্য এ কথা বোঝানো যে, তোমাদের চেষ্টাতেই সব হয়ে যায় না। প্রকৃতপক্ষে রিযিক আমিই দিয়ে থাকি। তোমাদের চেষ্টার ফল আমার ইচ্ছাতেই ঘটে। তোমরা যে চেষ্টা কর তাও আমার ইচ্ছারই প্রকাশ। কাজেই সবকিছুর মূলে যখন আমার ইচ্ছা, তখন আমার হুকুম পালনে গাফলাতি করবে কেন? তোমরা আমার হুকুম যথাযথভাবে পালন কর, ঠিকভাবে নামায পড় এবং তাকওয়া-পরহেযগারীর সঙ্গে চল, তাহলে দুনিয়া ও আখেরাত সব জায়গায় তোমাদের চেষ্টা সুফল বয়ে আনবে। এমনও হতে পারে যে, তোমরা চেষ্টা করছ এক জায়গায়, কিন্তু আমি অন্য জায়গা থেকে অকল্পনীয়ভাবে তোমাদের রিযিক দিয়ে দেব। সেইসঙ্গে রিযিকের বরকত ও জীবনের শান্তি ও স্বস্তির ব্যাপার তো আলাদা আছেই। এক হাদীছে আছে-
(كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا نَزَلَ بِأَهْلِهِ شِدَّةٌ أَوْ قَالَ: ضِيْقٌ أَمَرَهُمْ بِالصَّلَاةِ وَتَلَا (وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারে যখন কোনও কষ্ট বা সংকট দেখা দিত, তখন তাদেরকে নামাযের হুকুম দিতেন এবং তিলাওয়াত করতেন-...... وَأْمُرْ أَهْلَكَ।
একদিন উমাইয়া বংশীয় খলিফা হিশাম ইবন আব্দুল মালিক (শাসনকাল ১০৫হি.-১২৫হি.) জুমুআর দিন মসজিদে তার এক পুত্রকে দেখতে পেলেন না। পরে তিনি তাকে ডাকলেন। জিজ্ঞেস করলেন, মসজিদে গেলে না কেন? বলল, আমার খচ্চরটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই যেতে পারিনি। তিনি তিরস্কার করে বললেন, হেঁটে যেতে পারলে না? তারপর তিনি তাকে হুকুম দিলেন, এক বছর কোনও বাহনে চড়তে পারবে না এবং এ এক বছর তুমি হেঁটে হেঁটে জুমুআয় যাবে।
দুই নং আয়াত
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
অর্থ : 'হে মুমিনগণ! নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা কর সেই আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।
ব্যাখ্যা
জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করা ও তাঁর নাফরমানি থেকে বেঁচে থাকা। এককথায় শরীআতের অনুসরণ করা। প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য এ পন্থায় নিজেকেও জাহান্নাম থেকে বাঁচানো এবং পরিবারবর্গকেও বাঁচানো। কাজেই পরিবারের প্রত্যেকে যাতে শরীআতের যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা পরিবারের কর্তার জন্য ফরয। তাদেরকে এ সম্পর্কে আন্তরিকতার সঙ্গে বোঝাতে হবে এবং জাহান্নামের আযাব সম্পর্কে সতর্ক করতে হবে। তারা অবহেলা করলে শাসন করাও কর্তব্য। সেজন্য মারার প্রয়োজন হলে মারাটাও তাদের প্রতি কল্যাণকামিতারই পরিচায়ক হবে। বিষয়টা আমরা যত ভালোভাবে বুঝতে চেষ্টা করব, ততই আমাদের কল্যাণ। অন্যথায় শরীআত অমান্য করার কারণে পরিবারের কেউ যদি জাহান্নামে যায়, তবে তাদের প্রতি দীনী দায়িত্ব পালনে অবহেলা করার কারণে নিজেরও জাহান্নামের শাস্তিভোগের আশঙ্কা আছে।
এ আয়াত নাযিল হলে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নিজেকে কিভাবে জাহান্নাম থেকে বাঁচাব তা তো বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু পরিবারবর্গকে কিভাবে বাঁচাব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যেসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তোমরা তাদেরকেও তা থেকে বিরত রাখবে। আর তোমাদেরকে যে কাজ করতে হুকুম দিয়েছেন, তোমরা তাদেরকেও তা করার হুকুম দেবে।
এভাবে নিজেকে ও পরিবারবর্গকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো গেলে জান্নাতেও সবাই একসঙ্গে থাকার সুযোগ হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَا أَلَتْنَاهُمْ مِنْ عَمَلِهِمْ مِنْ شَيْءٍ
'যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের সন্তান-সন্ততিগণ ঈমানের ক্ষেত্রে তাদের অনুগামী হয়েছে, আমি তাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে তাদের সাথে মিলিয়ে দেব এবং তাদের কর্ম হতে কিছুমাত্র হ্রাস করব না।৪১৩
জাহান্নামের শাস্তি হালকাভাবে নেওয়ার বিষয় নয়। এ আয়াত বলছে-
وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
(যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর)।
অর্থাৎ পাথর ও জাহান্নামীদেরকে দিয়ে জাহান্নামের আগুন উত্তপ্ত করা হবে। যারা জাহান্নামে যাবে তারা কেবল জাহান্নামের আগুনে পুড়ে শাস্তি পাবে তাই নয়; শাস্তি পাবে জ্বালানী হয়েও। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেফাজত করুন।
আয়াতে এর পরে আছে-
عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
(তাতে নিয়োজিত আছে কঠোর স্বভাব, কঠিন-হৃদয় ফিরিশতাগণ, যারা আল্লাহর কোনও হুকুমে তাঁর অবাধ্যতা করে না এবং সেটাই করে, যার নির্দেশ তাদেরকে দেওয়া হয়)।
অর্থাৎ সে ফিরিশতাগণ এমন যে, একে তো কোনও অবস্থায়ই আল্লাহর অবাধ্যতা করে না, তদুপরি তারা অত্যন্ত কঠোর স্বভাব ও কঠিন-হৃদয়ের। তাদের তোষামোদ করে বা তাদের উপর জোর খাটিয়ে জাহান্নাম থেকে বাঁচার কোনও উপায় নেই। বাঁচা যাবে না তাদেরকে উৎকোচ দিয়েও। জাহান্নামে নিযুক্ত ফিরিশতাদের 'যাবানিয়া' বলা হয়। তাদের মধ্যে যিনি প্রধান দায়িত্বশীল তার নাম মালিক।
৪০৯. সূরা তোয়াহা (২০), আয়াত ১৩২
৪১০. সূরা তালাক (৬৫), আয়াত ২-৩
৪১১. মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ৪৭৪৪; তবারানী, আল-মু'জামুল আওসাত, হাদীছ নং ৮৮৬; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ২৯১১
৪১২. সূরা তাহরীম (৬৬), আয়াত ৬
৪১৩. সূরা তূর (৫২), আয়াত ২১
নাতি হাসান রাযি.-কে সদাকার খেজুর খেতে বারণ করা
হাদীছ নং : ২৯৮
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাসান ইবন আলী রাযি. সদাকার খেজুর থেকে একটি খেজুর নিয়ে মুখে দিলেন। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ছি, ছি, এটা ফেলে দাও। তুমি জানো না যে আমরা সদাকা খাই না? -বুখারী ও মুসলিম।৪১৪
অপর এক বর্ণনায় আছে, আমাদের জন্য সদাকা হালাল নয়।
ইমাম নববী রহ. বলেন, كَخ كَخ শব্দটিকে এর خ হরফে জয়মের সঙ্গেও পড়া যায় এবং দুই যেরের সঙ্গেও পড়া যায়। শিশুদের দ্বারা কোনও ঘৃণ্য কাজ হয়ে গেলে তখন তাদের তিরস্কার করার জন্য শব্দটি ব্যবহার হয়। হযরত হাসান রাযি. তখন শিশু ছিলেন।
(৪১৪. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪৯১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৩০৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৩২৯৪; নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৮৫৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ নং ৩৬৫২৪; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩২৩১; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬০৫)
হাদীছ নং : ২৯৮
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাসান ইবন আলী রাযি. সদাকার খেজুর থেকে একটি খেজুর নিয়ে মুখে দিলেন। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ছি, ছি, এটা ফেলে দাও। তুমি জানো না যে আমরা সদাকা খাই না? -বুখারী ও মুসলিম।৪১৪
অপর এক বর্ণনায় আছে, আমাদের জন্য সদাকা হালাল নয়।
ইমাম নববী রহ. বলেন, كَخ كَخ শব্দটিকে এর خ হরফে জয়মের সঙ্গেও পড়া যায় এবং দুই যেরের সঙ্গেও পড়া যায়। শিশুদের দ্বারা কোনও ঘৃণ্য কাজ হয়ে গেলে তখন তাদের তিরস্কার করার জন্য শব্দটি ব্যবহার হয়। হযরত হাসান রাযি. তখন শিশু ছিলেন।
(৪১৪. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪৯১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৩০৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৩২৯৪; নাসাঈ, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৮৫৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীছ নং ৩৬৫২৪; বায়হাকী, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৩২৩১; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ১৬০৫)
38 - باب وجوب أمره أهله وأولاده المميزين وسائر من في رعيته بطاعة الله تعالى ونهيهم عن المخالفة وتأديبهم ومنعهم من ارتكاب مَنْهِيٍّ عَنْهُ
قَالَ الله تَعَالَى: {وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا} [طه: 132]، وَقالَ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا} [التحريم: 6].
قَالَ الله تَعَالَى: {وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا} [طه: 132]، وَقالَ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا} [التحريم: 6].
298 - عن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: أخذ الحسن بن علي رضي الله عنهما تَمْرَةً مِنْ تَمْر الصَّدَقَةِ فَجَعَلَهَا في فِيهِ، فَقَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «كَخْ كَخْ إرْمِ بِهَا، أمَا عَلِمْتَ أنَّا لا نَأكُلُ الصَّدَقَةَ!؟». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وفي رواية: «أنَّا لا تَحِلُّ لَنَا الصَّدَقَةُ».
وقوله: «كَخْ كَخْ» يقال: بإسكان الخاء، ويقال: بكسرها مَعَ التنوين وهي كلمة زجر للصبي عن المستقذراتِ، وكان الحسن - رضي الله عنه - صبِيًّا.
وفي رواية: «أنَّا لا تَحِلُّ لَنَا الصَّدَقَةُ».
وقوله: «كَخْ كَخْ» يقال: بإسكان الخاء، ويقال: بكسرها مَعَ التنوين وهي كلمة زجر للصبي عن المستقذراتِ، وكان الحسن - رضي الله عنه - صبِيًّا.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, হযরত হাসান রাযি. যখন সদাকার খেজুর মুখে দিয়েছিলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে সদাকার খেজুর বণ্টন করছিলেন। সদাকা বলতে সাধারণত যাকাত বোঝানো হয়ে থাকে। হযরত হাসান রাযি. তখন খুব ছোট ছিলেন। বণ্টন শেষে তিনি তাকে কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাঁর মুখ থেকে লালা পড়ছিল। সে লালা পবিত্র শরীরে লাগতেই তিনি নাতির দিকে তাকান। তখনই তাঁর মুখে খেজুর দেখতে পান। মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় আছে, তাকে খেজুর চুষতে দেখে গালে নাড়া দিয়ে বলেছিলেন,'বাছা এটা ফেলে দাও। বাছা এটা ফেলে দাও'। এখানকার বর্ণনায় আছে, তিনি তাকে ছি, ছি, বলে সেটি ফেলে দিতে বলেছিলেন। সম্ভবত প্রথমে আদর করে বলেছিলেন। কিন্তু তারপরও সেটি না ফেলায় একটু তিরস্কার করেন। শেষে বলেন, 'তুমি জানো না, আমরা সদাকা খাই না?' মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, 'জানো না সদাকা আমাদের জন্য হালাল নয়?'
অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধর ও বনূ হাশেমের জন্য সদাকা যাকাত খাওয়া হালাল নয়। এটা তাদের উচ্চমর্যাদার কারণে।
উল্লেখ্য, কন্যার সন্তানদের বেলায়ও 'বংশধর' শব্দ প্রযোজ্য হয়। কুরআন মাজীদে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস্ সালামের এর বংশধর বলা হয়েছে। এটা তো তাঁর মায়ের সূত্রেই হয়েছে, যেহেতু তাঁর পিতা ছিল না।
এ প্রসঙ্গে দুর্দান্ত প্রতাপশালী শাসক হাজ্জাজ ইবন ইয়ুসুফ ও ইমাম ইয়াহইয়া ইবন ইয়া'মার রহ.-এর একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
হযরত হাসান রাযি. ও হুসাইন রাযি, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছেলের ঘরের নাতি নয় বলে হাজ্জাজ ইবন ইয়ুসুফ তাদেরকে তাঁর বংশধর বলে স্বীকার করত না। তিনি কোনও সূত্রে জানতে পারলেন যে, ইমাম ইয়াহইয়া ইবন ইয়া'মার রহ. তাঁদেরকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধর বলে উল্লেখ করে থাকেন। কাজেই হাজ্জাজ তাকে তলব করলেন। তিনি সামনে আসতেই ধমক দিয়ে বললেন, তুমি কি সেই, যার ধারণা হাসান ও হুসাইন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধর? এটা প্রমাণ কর, নয়তো কঠিন শাস্তির জন্য প্রস্তুত হও। তিনি বললেন, প্রমাণ করতে পারলে আমি নিরাপদ? তিনি বললেন, হাঁ, নিরাপদ। তখন ইয়াহইয়া ইবন ইয়া'মার রহ. কুরআন মাজীদ থেকে তিলাওয়াত করলেন-
وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ كُلًّا هَدَيْنَا وَنُوحًا هَدَيْنَا مِنْ قَبْلُ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَى وَهَارُونَ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ وَزَكَرِيَّا وَيَحْيَى وَعِيسَى
“আমি ইবরাহীমকে দান করেছিলাম ইসহাক (-এর মত পুত্র) ও ইয়াকুব (-এর মত পৌত্র)। তাদের প্রত্যেককে আমি হিদায়াত দান করেছিলাম। আর নূহকে আমি আগেই হিদায়াত দিয়েছিলাম এবং তার বংশধরদের মধ্যে দাউদ, সুলায়মান, আইয়ূব, ইয়ুসুফ, মূসা ও হারুনকেও। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। এবং যাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ঈসা।৪১৫
তিনি বললেন, এ আয়াতে ঈসা আলাইহিস সালামকে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বংশধর বলা হয়েছে। তিনি তাঁর বংশধর হয়েছিলেন মায়ের দিক থেকে। তাও হযরত হাসান রাযি. ও হুসাইন রাযি. এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাঝখানে দূরত্ব মাত্র এক ধাপের। অথচ হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ও হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মাঝখানে দূরত্ব বহু ধাপের। হাজ্জাজ বললেন, আমি মনে করি তুমি তোমার দাবি প্রমাণ করতে পেরেছ। তারপর আরও কিছু কথাবার্তা হয় এবং সে মজলিসেই হাজ্জাজ তাকে খুরাসানের বিচারপতি করে পাঠান।৪১৬
যাহোক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রিয় নাতিকে তরবিয়াত করলেন। তাকে সদাকার খেজুর খাওয়া থেকে বিরত রাখলেন। ছোট্ট বলে প্রশ্রয় দিলেন না। এত আদর-স্নেহ করতেন, তাও এরকম আহ্লাদ দেখালেন না যে, আহা, বাছা মুখে দিয়ে ফেলেছে, এবারের মত খেয়ে নিক, সতর্ক থাকতে হবে, এরপর যেন আর না খায়। না, এরকম মায়া তিনি দেখালেন না। কারণ, বড়দের জন্য যা খাওয়া হারাম, তা ছোটদেরকে খাওয়ানোও হারাম। মায়া করে হারাম খাওয়ানো এক তো শিশুর প্রতি জুলুম, দ্বিতীয়ত শরীআতের হুকুম অমান্য করায় নিজের জন্যও সরাসরি পাপ।
তিনি প্রিয় নাতিকে তিরস্কার করে বললেন, জানো না, আমরা সদাকা খাই না?' কোলের শিশুর তো এটা জানার কথা নয়। তা সত্ত্বেও তাকে এ কথা বলার উদ্দেশ্য বিষয়টির গুরুত্ব ও সুবিদিত হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা। অর্থাৎ আমাদের বংশের লোকদের জন্য যাকাত সদাকা যে হালাল নয়, এটা সকলেরই জানার কথা এবং এ বিধানটি এমনই গুরুত্বপূর্ণ যে, এ ব্যাপারে শিথিলতার কোনও অবকাশ নেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায়, ছেলেমেয়েদেরকে শৈশব থেকেই দীনী তরবিয়াত দেওয়া চাই, যাতে ছোটবেলা থেকেই ইসলামী রীতিনীতি ও আদব কায়দা পালনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।
খ. শিশুদেরকে অন্যায়-অনুচিত কাজে প্রশ্রয় দিতে নেই। এ জাতীয় প্রশ্রয় দেওয়া অন্যায়। এতে তারা অনুচিত কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
গ. সায়্যিদ অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধর ও বনূ হাশেমের জন্য সদাকা যাকাত খাওয়া হালাল নয়।
ঘ. এ হাদীছ দ্বারা শিশুদের আদর-সোহাগ করারও শিক্ষা পাওয়া যায়।
৪১৫. সূরা আন'আম (৬), আয়াত ৮৪-৮৫
৪১৬. ইবন খাল্লিকান, ওয়াফায়াতুল আ'ইয়ান, ৬ খণ্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠা।
অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধর ও বনূ হাশেমের জন্য সদাকা যাকাত খাওয়া হালাল নয়। এটা তাদের উচ্চমর্যাদার কারণে।
উল্লেখ্য, কন্যার সন্তানদের বেলায়ও 'বংশধর' শব্দ প্রযোজ্য হয়। কুরআন মাজীদে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস্ সালামের এর বংশধর বলা হয়েছে। এটা তো তাঁর মায়ের সূত্রেই হয়েছে, যেহেতু তাঁর পিতা ছিল না।
এ প্রসঙ্গে দুর্দান্ত প্রতাপশালী শাসক হাজ্জাজ ইবন ইয়ুসুফ ও ইমাম ইয়াহইয়া ইবন ইয়া'মার রহ.-এর একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
হযরত হাসান রাযি. ও হুসাইন রাযি, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছেলের ঘরের নাতি নয় বলে হাজ্জাজ ইবন ইয়ুসুফ তাদেরকে তাঁর বংশধর বলে স্বীকার করত না। তিনি কোনও সূত্রে জানতে পারলেন যে, ইমাম ইয়াহইয়া ইবন ইয়া'মার রহ. তাঁদেরকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধর বলে উল্লেখ করে থাকেন। কাজেই হাজ্জাজ তাকে তলব করলেন। তিনি সামনে আসতেই ধমক দিয়ে বললেন, তুমি কি সেই, যার ধারণা হাসান ও হুসাইন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধর? এটা প্রমাণ কর, নয়তো কঠিন শাস্তির জন্য প্রস্তুত হও। তিনি বললেন, প্রমাণ করতে পারলে আমি নিরাপদ? তিনি বললেন, হাঁ, নিরাপদ। তখন ইয়াহইয়া ইবন ইয়া'মার রহ. কুরআন মাজীদ থেকে তিলাওয়াত করলেন-
وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ كُلًّا هَدَيْنَا وَنُوحًا هَدَيْنَا مِنْ قَبْلُ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَى وَهَارُونَ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ وَزَكَرِيَّا وَيَحْيَى وَعِيسَى
“আমি ইবরাহীমকে দান করেছিলাম ইসহাক (-এর মত পুত্র) ও ইয়াকুব (-এর মত পৌত্র)। তাদের প্রত্যেককে আমি হিদায়াত দান করেছিলাম। আর নূহকে আমি আগেই হিদায়াত দিয়েছিলাম এবং তার বংশধরদের মধ্যে দাউদ, সুলায়মান, আইয়ূব, ইয়ুসুফ, মূসা ও হারুনকেও। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। এবং যাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ঈসা।৪১৫
তিনি বললেন, এ আয়াতে ঈসা আলাইহিস সালামকে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বংশধর বলা হয়েছে। তিনি তাঁর বংশধর হয়েছিলেন মায়ের দিক থেকে। তাও হযরত হাসান রাযি. ও হুসাইন রাযি. এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাঝখানে দূরত্ব মাত্র এক ধাপের। অথচ হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ও হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মাঝখানে দূরত্ব বহু ধাপের। হাজ্জাজ বললেন, আমি মনে করি তুমি তোমার দাবি প্রমাণ করতে পেরেছ। তারপর আরও কিছু কথাবার্তা হয় এবং সে মজলিসেই হাজ্জাজ তাকে খুরাসানের বিচারপতি করে পাঠান।৪১৬
যাহোক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রিয় নাতিকে তরবিয়াত করলেন। তাকে সদাকার খেজুর খাওয়া থেকে বিরত রাখলেন। ছোট্ট বলে প্রশ্রয় দিলেন না। এত আদর-স্নেহ করতেন, তাও এরকম আহ্লাদ দেখালেন না যে, আহা, বাছা মুখে দিয়ে ফেলেছে, এবারের মত খেয়ে নিক, সতর্ক থাকতে হবে, এরপর যেন আর না খায়। না, এরকম মায়া তিনি দেখালেন না। কারণ, বড়দের জন্য যা খাওয়া হারাম, তা ছোটদেরকে খাওয়ানোও হারাম। মায়া করে হারাম খাওয়ানো এক তো শিশুর প্রতি জুলুম, দ্বিতীয়ত শরীআতের হুকুম অমান্য করায় নিজের জন্যও সরাসরি পাপ।
তিনি প্রিয় নাতিকে তিরস্কার করে বললেন, জানো না, আমরা সদাকা খাই না?' কোলের শিশুর তো এটা জানার কথা নয়। তা সত্ত্বেও তাকে এ কথা বলার উদ্দেশ্য বিষয়টির গুরুত্ব ও সুবিদিত হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা। অর্থাৎ আমাদের বংশের লোকদের জন্য যাকাত সদাকা যে হালাল নয়, এটা সকলেরই জানার কথা এবং এ বিধানটি এমনই গুরুত্বপূর্ণ যে, এ ব্যাপারে শিথিলতার কোনও অবকাশ নেই।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায়, ছেলেমেয়েদেরকে শৈশব থেকেই দীনী তরবিয়াত দেওয়া চাই, যাতে ছোটবেলা থেকেই ইসলামী রীতিনীতি ও আদব কায়দা পালনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।
খ. শিশুদেরকে অন্যায়-অনুচিত কাজে প্রশ্রয় দিতে নেই। এ জাতীয় প্রশ্রয় দেওয়া অন্যায়। এতে তারা অনুচিত কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
গ. সায়্যিদ অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধর ও বনূ হাশেমের জন্য সদাকা যাকাত খাওয়া হালাল নয়।
ঘ. এ হাদীছ দ্বারা শিশুদের আদর-সোহাগ করারও শিক্ষা পাওয়া যায়।
৪১৫. সূরা আন'আম (৬), আয়াত ৮৪-৮৫
৪১৬. ইবন খাল্লিকান, ওয়াফায়াতুল আ'ইয়ান, ৬ খণ্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
