রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ২৭০
ইয়াতীম, কন্যাসন্তান, সর্বপ্রকার দুর্বল, গরীব-মিসকীন ও দুস্থ লোকদের প্রতি সদয় আচরণ, তাদের প্রতি অনুগ্রহ ও মায়া-মমতা প্রদর্শন এবং তাদের সঙ্গে নম্র-কোমল আচরণ প্রসঙ্গ
ইয়াতীম ও নারীর হক আদায়ের গুরুত্ব
হাদীছ নং : ২৭০

হযরত আবু শুরাইহ খুওয়াইলিদ ইবন আমর আল-খুযা‘ঈ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হে আল্লাহ! ইয়াতীম ও নারী- এ দুই দুর্বলের অধিকার নষ্ট করার গুনাহ সম্পর্কে আমি মানুষকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিলাম-নাসাঈ।
নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৯১০৪; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৬৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৯৬৬৬; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ২০৪৫২; খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক, হাদীছ নং ৬৫৪
33 - باب ملاطفة اليتيم والبنات وسائر الضعفة والمساكين والمنكسرين والإحسان إليهم والشفقة عليهم والتواضع معهم وخفض الجناح لهم
270 - وعن أَبي شُرَيحٍ خُوَيْلِدِ بن عمرو الخزاعِيِّ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم: «اللَّهُمَّ إنِّي أُحَرِّجُ حَقَّ الضَّعِيفَينِ: اليَتِيم وَالمَرْأةِ» حديث حسن رواه النسائي بإسناد جيد. (1)
ومعنى «أُحَرِّجُ»: أُلْحِقُ الحَرَجَ وَهُوَ الإثْمُ بِمَنْ ضَيَّعَ حَقَّهُمَا، وَأُحَذِّرُ مِنْ ذلِكَ تَحْذِيرًا بَليغًا، وَأزْجُرُ عَنْهُ زجرًا أكيدًا.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি মূলত একটি ফরিয়াদ ও অনুযোগ। ইয়াতীম ও মহিলাদের হক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার দরবারে আর্জি পেশ করেন যে- اللَّهُمَّ إِنِّي أُحَرِّجُ حَقَّ الضَّعِيفَيْنِ الْيَتِيمِ وَالْمَرْأَةِ (হে আল্লাহ! ইয়াতীম ও নারী- এ দুই দুর্বলের অধিকার নষ্ট করার গুনাহ সম্পর্কে আমি মানুষকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিলাম)। أُحَرِّجُ ক্রিয়াপদটির উৎপত্তি حرج থেকে। এর অর্থ অসুবিধা, গুনাহ।أُحَرِّجُ অর্থ অসুবিধা ও গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করছি এবং এ ব্যাপারে যতটা কঠোরভাবে সাবধান করা প্রয়োজন, আমি তা করছি। অর্থাৎ ইয়াতীম ও নারীর হক নষ্ট করে কেউ যাতে গুনাহগার না হয় সে ব্যাপারে আমি চূড়ান্ত পর্যায়ে মানুষকে সাবধান করে দিয়েছি। এখন তা মানা-না মানা তাদের ব্যাপার।
যে দুই দুর্বলের হক আদায় সম্পর্কে তিনি বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন, তারা হচ্ছে ইয়াতীম ও নারী। ইয়াতীম বলে পিতা হারানো মানবশিশুকে। বালেগ হওয়া পর্যন্ত তাকে ইয়াতীম বলা হয়। বালেগ হওয়ার পর সে ইয়াতীম থাকে না।
মেয়েশিশু বালেগা হওয়ার পর ইয়াতীম গণ্য না হলেও নারী হিসেবে তার হক আদায়ে যত্নবান থাকা পুরুষদের তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সাধারণত পুরুষগণ সক্ষম ও শক্তিশালী থাকায় আত্মনির্ভরশীল হয়ে থাকে। নিজের অধিকার নিজেই আদায় করে নিতে পারে। কিন্তু মহিলাগণ স্বভাবতই দুর্বল ও নরম মনের হওয়ায় তা পারে না। কাজেই দায়িত্বশীলগণকে নিজ উদ্যোগেই তাদের অধিকারসমূহ আদায় করতে হয়। তারা দাবি করে না বলে অবহেলা করা হলে দুনিয়ায় হয়তো কোনওভাবে বাঁচা গেল, কিন্তু আখেরাতে বাঁচার কোনও উপায় থাকবে না। সেখানকার কঠিন ধরা হতে রেহাই পাওয়ার লক্ষ্যে এখনই সচেতন থাকা জরুরি। তা যে কতটা জরুরি, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ফরিয়াদ দ্বারাই অনুমান করা যায়। তিনি যে এ ব্যাপারে চূড়ান্তরূপে সতর্ক করে দিয়েছেন ও নিজ যিম্মাদারী পুরোপুরি আদায় করে ফেলেছেন, আল্লাহ তাআলার কাছে সে কথা নিবেদন করছেন। যেন বলছেন, হে আল্লাহ! আমি তো আমার দায়িত্ব পালন করলাম, এখন কে তা মানে আর কে মানে না। তা তুমিই দেখো।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছ দ্বারা জানা গেল ইয়াতীম ও মহিলাদের হক আদায়ে অবহেলা কঠিন গুনাহ। এ ব্যাপারে আমাদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া অতীব জরুরি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ২৭০ | মুসলিম বাংলা