রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ২৬৯
ইয়াতীম, কন্যাসন্তান, সর্বপ্রকার দুর্বল, গরীব-মিসকীন ও দুস্থ লোকদের প্রতি সদয় আচরণ, তাদের প্রতি অনুগ্রহ ও মায়া-মমতা প্রদর্শন এবং তাদের সঙ্গে নম্র-কোমল আচরণ প্রসঙ্গ
প্রত্যেক মায়ের জন্য সুসংবাদ
হাদীছ নং : ২৬৯

উম্মুল-মু'মিনীন হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, এক নিঃস্ব মহিলা তার দুটি কন্যাসন্তান সঙ্গে নিয়ে আমার কাছে আসল। আমি তাকে তিনটি খেজুর খেতে দিলাম। সে তাদের প্রত্যেককে একটি করে খেজুর দিল এবং একটি খেজুর নিজে খাওয়ার জন্য মুখের দিকে তুলল। অমনি মেয়ে দুটি তার কাছে আরও খাবার চাইল। তখন সে নিজে যেটি খেতে চেয়েছিল সেটিও দু'টুকরো করে তাদের মধ্যে ভাগ করে দিল। তার এ কাজ আমাকে অভিভূত করল। অতঃপর সে এই যা করল তা আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে জান্নাত ওয়াজিব করেছেন। অথবা (বললেন) তাকে জাহন্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন —মুসলিম।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৬৩০; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৪৬১১; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১০৫০৮; তাবারানী, আল মুজামুল আওসাত, হাদীছ নং ৪০৯৩
33 - باب ملاطفة اليتيم والبنات وسائر الضعفة والمساكين والمنكسرين والإحسان إليهم والشفقة عليهم والتواضع معهم وخفض الجناح لهم
269 - وعن عائشة رضي الله عنها، قَالَتْ: جَاءتني مِسْكينةٌ تَحْمِلُ ابْنَتَيْنِ لَهَا، فَأطْعَمْتُها ثَلاثَ تَمرَات، فَأعْطَتْ كُلَّ وَاحِدَة مِنْهُمَا تَمْرَةً وَرَفَعتْ إِلَى فِيها تَمْرَةً لِتَأكُلها، فَاسْتَطعَمَتهَا ابْنَتَاهَا، فَشَقَّتِ التَّمْرَةَ الَّتي كَانَتْ تُريدُ أَنْ تَأكُلَهَا بَيْنَهُما، فَأعجَبَنِي شَأنُهَا، فَذَكَرْتُ الَّذِي صَنَعَتْ لرسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: «إنَّ الله قَدْ أوْجَبَ لَهَا بها الجَنَّةَ، أَوْ أعتَقَهَا بِهَا مِنَ النَّارِ». رواه مسلم. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর আরেকটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এ ঘটনায় বলা হয়েছে, কোনও এক মিসকীন মহিলা তার দু'টি মেয়ে নিয়ে আসলে তিনি তাকে তিনটি খেজুর দিলেন। সে তা থেকে দু'টি তার দুই মেয়েকে দিল এবং একটি নিজে খাওয়ার জন্য মুখের কাছে তুলল। সে যখন খেজুরটি খেতে যাচ্ছিল, তখন মেয়েদু'টি তার কাছে আবার খাবার চাইল। তখন সে নিজে যেটি খেতে চেয়েছিল সেটি দু'ভাগ করে দুই মেয়েকে দিয়ে দিল, নিজে কিছুই খেল না। আমরা যারা দিবারাত্র তিন-চার-পাঁচবার খাই তাদের কাছে এ ঘটনা বিশেষ কিছু মনে হবে না। কিন্তু আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. আশ্চর্য হয়ে গেছেন। ক্ষুধার কষ্ট তাঁর জানা ছিল। তাঁর চুলায় দিনের পর দিন আগুন জ্বলত না। এমন বহু দিন গেছে, যখন খাওয়ার জন্য একটি খেজুরও মিলত না। ওই মা'ও সেরকমই ছিল। না হয় তার মেয়েদের নিয়ে খাবার চাইতে আসবে কেন? কে জানে কত বেলা তার না খেয়ে কেটেছে! এ অবস্থায় কথা তো ছিল দু'টি খেজুর নিজে খাবেন আর একটি দুই ভাগ করে দুই মেয়েকে দেবেন। তা না করে তিনটি খেজুর সমান তিন ভাগ করে তিনজনে নিয়েছেন। তারপরও মেয়েদু'টি আবারও চাইলে নিজের খেজুরটিও তাদের দিয়ে দিলেন। মুখের কাছে নিয়েও সেটি খেলেন না। এ হচ্ছে মাতৃমমতা। আম্মাজান মুগ্ধ ও অভিভূত দৃষ্টিতে তা দেখছিলেন। সে মুগ্ধতা লুকিয়ে রাখতে পারেননি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে আসলে তাঁকে তা জানালেন।
তিনি তা শুনে সুসংবাদ দিলেন-

إِنَّ اللهَ قَدْ أَوْجَبَ لَهَا بِهَا الْجَنَّةَ، أَوْ أَعْتَقَهَا بِهَا مِنَ النَّارِ

(আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে জান্নাত ওয়াজিব করেছেন। অথবা (বললেন) তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন)। অর্থাৎ সন্তানের প্রতি ওই মা যে মমত্ব দেখিয়েছে তা বৃথা যাবে না। সে নিজে অভুক্ত থেকেছে, নিজ ক্ষুধার কথা ভুলে সন্তানের ক্ষুধাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এ ত্যাগ ও মায়ার পুরস্কারস্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে জান্নাতে দাখিল করবেন। এটা দয়ামায়ার পুরস্কার। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

الرَّاحِمُوْنَ يَرْحَمُهُمُ الرَّحْمنُ، اِرْحَمُوْا أَهْلَ الْأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ

‘যারা দয়ামায়াওয়ালা, দয়াময় আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করেন। যারা পৃথিবীতে আছে তাদের প্রতি দয়া কর, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।৩০৪

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছ দ্বারাও উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর বদান্যতার পরিচয় পাওয়া গেল, মাতৃমমতা সম্পর্কে ধারণা লাভ হল এবং জানা গেল- যে মা তার সন্তানদের জন্য এরূপ ত্যাগ স্বীকার করে, তার জন্য জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মায়েদের মর্যাদা বোঝার তাওফীক দান করুন।

৩০৪. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৯৪১; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৯২৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৬৪৯৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৭৯০৫; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১০৫৩৭
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ২৬৯ | মুসলিম বাংলা