রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ১৩৯
ভূমিকা অধ্যায়
সৎকর্মের বহুবিধ পন্থা।
অতি সামান্য দান ও একটি ভালো কথাও হতে পারে জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়
হাদীছ নং: ১৩৯
হযরত 'আদী ইবন হাতিম রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচ, যদি তা খেজুরের একটি অংশ দিয়েও হয়। -বুখারী ও মুসলিম
বুখারী ও মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় হযরত আদী রাযি. থেকেই বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই তার প্রতিপালক কথা বলবেন। তার ও তার প্রতিপালকের মাঝখানে কোনও দোভাষী থাকবে না। সে তার ডান দিকে তাকাবে। সেদিকে কেবল ওই সকল আমলই দেখতে পাবে, যা সে অগ্রিম পাঠিয়েছে। সে তার বাম দিকে তাকাবে। সেদিকে কেবল ওই সকল (মন্দ) আমলই দেখতে পাবে, যা সে অগ্রিম পাঠিয়েছে। তারপর সে তার সম্মুখ দিকে তাকাবে। সেদিকে সে কেবল জাহান্নামই দেখতে পাবে। সুতরাং তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচ, যদিও খেজুরের একটি অংশ দিয়ে হয়। যে ব্যক্তি তা না পায়, সে উত্তম কথা দ্বারা (বাঁচার চেষ্টা করবে)। সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০১৬। সুনানে নাসাঈ, হাদীছ ন ২৫৫২: বায়হাকী, হাদীছ নং ১০১৩১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৩৬৭৯; তবারানী, আল- মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৮০১৭
হাদীছ নং: ১৩৯
হযরত 'আদী ইবন হাতিম রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচ, যদি তা খেজুরের একটি অংশ দিয়েও হয়। -বুখারী ও মুসলিম
বুখারী ও মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় হযরত আদী রাযি. থেকেই বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই তার প্রতিপালক কথা বলবেন। তার ও তার প্রতিপালকের মাঝখানে কোনও দোভাষী থাকবে না। সে তার ডান দিকে তাকাবে। সেদিকে কেবল ওই সকল আমলই দেখতে পাবে, যা সে অগ্রিম পাঠিয়েছে। সে তার বাম দিকে তাকাবে। সেদিকে কেবল ওই সকল (মন্দ) আমলই দেখতে পাবে, যা সে অগ্রিম পাঠিয়েছে। তারপর সে তার সম্মুখ দিকে তাকাবে। সেদিকে সে কেবল জাহান্নামই দেখতে পাবে। সুতরাং তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচ, যদিও খেজুরের একটি অংশ দিয়ে হয়। যে ব্যক্তি তা না পায়, সে উত্তম কথা দ্বারা (বাঁচার চেষ্টা করবে)। সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০১৬। সুনানে নাসাঈ, হাদীছ ন ২৫৫২: বায়হাকী, হাদীছ নং ১০১৩১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৩৬৭৯; তবারানী, আল- মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৮০১৭
مقدمة الامام النووي
13 - باب في بيان كثرة طرق الخير
139 - الثالث والعشرون: عن عَدِي بنِ حَاتمٍ - رضي الله عنه - قَالَ: سمعت النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - يقول: «اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بشقِّ (1) تَمْرَةٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (2)
وفي رواية لهما عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إلاَّ سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ لَيْسَ بَينَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجُمَانٌ، فَيَنْظُرُ أَيْمَنَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إلاَّ مَا قَدَّمَ، وَيَنْظُرُ أَشْأَمَ مِنْهُ فَلاَ يَرى إلاَّ مَا قَدَّمَ، وَيَنظُرُ بَيْنَ يَدَيهِ فَلاَ يَرَى إلاَّ النَّار تِلقَاءَ وَجْهِهِ، فَاتَّقُوا النَّارَ وَلَو بِشِقِّ تَمْرَةٍ، فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ».
وفي رواية لهما عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إلاَّ سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ لَيْسَ بَينَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجُمَانٌ، فَيَنْظُرُ أَيْمَنَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إلاَّ مَا قَدَّمَ، وَيَنْظُرُ أَشْأَمَ مِنْهُ فَلاَ يَرى إلاَّ مَا قَدَّمَ، وَيَنظُرُ بَيْنَ يَدَيهِ فَلاَ يَرَى إلاَّ النَّار تِلقَاءَ وَجْهِهِ، فَاتَّقُوا النَّارَ وَلَو بِشِقِّ تَمْرَةٍ، فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ».
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে বলেছেন। জাহান্নাম পাপীদের ঠিকানা। সেখানে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা আছে। তার প্রধান শাস্তিالنار (আগুন)। তাই জাহান্নামের অপর নামই। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা বার বার মানুষকে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং এর থেকে বাঁচার তাগিদ দিয়েছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছেঃ-
فاتقوا النار التي وقودها الناس والحجارة
অর্থ : তোমরা বাঁচ ওই আগুন থেকে, যার ইন্ধন মানুষ ও পাথর। সূরা বাকারা, আয়াত ২৪.
জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার আদেশ-নিষেধ পালন করা। অর্থাৎ সৎকর্ম করতে থাকা ও অসৎকর্ম পরিহার করে চলা। সৎকর্ম আছে বিভিন্ন রকম, যেমন পূর্বের হাদীছসমূহ দ্বারা আমরা জানতে পেরেছি। তার মধ্যে একটা সৎকর্ম বলা হয়েছে আল্লাহর পথে দান-সদাকা করা।
এ হাদীছেও প্রধানত সদাকার কথাই বলা হয়েছে যে, একটা খেজুরের একটি অংশ সদাকা করে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচ। এর দ্বারা সর্বনিম্ন সামর্থ্যের কথা বোঝানো হয়েছে। কারও অবস্থা যদি এমন হয় যে, সে কোনও ক্ষুধার্তকে একটা মাত্র খেজুর দেওয়ারও সামর্থ্য রাখে না, অর্থাৎ দেওয়ার মত একটা খেজুরও তার কাছে নেই, একটা খেজুরের অর্ধেক মাত্র আছে, তবে সে সে অর্ধেকটুকুই দিয়ে দেবে। আল্লাহ তা'আলা মানুষের দানের অঙ্ক দেখেন না। তিনি দেখেন তার মন। অর্থাৎ তার মনে দেওয়ার ইচ্ছা আছে কি না। যদি দেওয়ার ইচ্ছা থাকে, তবে তার সামর্থ্য অনুযায়ী যা দেবে তা-ই আল্লাহর কাছে মূল্যবান। তাকেই আল্লাহ তার জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে কবূল করে নেবেন।
এরপর বলা হয়েছে যদি কারও অর্ধেকটুকু দেওয়ারও ক্ষমতা না থাকে, তবে তার যে আর জাহান্নাম থেকে বাঁচার কোনও উপায় রইল না এমন নয়, সে এর জন্য অন্য কোনও উপায় অবলম্বন করতে পারে। সেরকম একটি উপায় হচ্ছে উত্তম কথা বলা।পূর্বে আমরা জানতে পেরেছি উত্তম কথা বলাও সদাকাতুল্য। অর্থাৎ এর দ্বারাও সদাকার ছাওয়াব পাওয়া যায়। সুতরাং যে ব্যক্তি দান-সদাকা করার সামর্থ্য রাখে না, সে যদি উত্তম কথা বলে, তবে এর মাধ্যমেও সে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারবে।
উত্তম কথা অতি ব্যাপক। এর মধ্যে যেমন কুরআন তিলাওয়াত ও যিকর-তাসবীহ ইত্যাদি রয়েছে, তেমনি মানুষকে সুপরামর্শ দেওয়া, সৎকাজের আদেশ করা, অসৎকাজে নিষেধ করা, বৈধ সুপারিশ করা, দীনী ইলম শেখানো, শোকার্তকে সান্ত্বনা দেওয়া ইত্যাদিও এর অন্তর্ভুক্ত।
এ হাদীছের দ্বিতীয় বর্ণনায় বলা হয়েছে কিয়ামতে আল্লাহ তা'আলা মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন এবং তাতে আল্লাহ ও বান্দার মাঝখানে কোনও দোভাষী (ترجمان) থাকবে না।কেননা বান্দাকে নিজ কথা বোঝাতে আল্লাহর কোনও দোভাষীর প্রয়োজন নেই। সকল ভাষা আল্লাহরই সৃষ্টি। তিনি যে-কোনও ভাষায় বান্দার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। বান্দার সঙ্গে সেদিন তিনি কেমন কেমন কথা বলবেন, কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে তা বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীছও আছে। যেমন এক হাদীছে আছে, আল্লাহ তা'আলা কোনও মু'মিন বান্দাকে কাছে ডেকে নেবেন। তারপর তাকে বলবেন, বান্দা! তোমার কি মনে আছে, তুমি অমুক দিন এই কাজ করেছিলে, অমুক দিন এই কাজ করেছিলে? এভাবে তাকে দিয়ে তার সকল অন্যায় কাজের স্বীকারোক্তি করিয়ে নেবেন। বান্দা যখন তা সব স্বীকার করে নেবে এবং মনে করবে ধ্বংসই তার পরিণতি, তখন আল্লাহ বলবেনঃ-
إني قد سترتها عليك في الدنيا وأنا أغفرها لك اليوم
“আমি দুনিয়ায় তোমার এসব অপরাধ গোপন রেখেছিলাম। আজ আমি এসব ব্যাপারে তোমাকে ক্ষমাই করে দিলাম।” সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৪৪১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৭৬৮.
সুবহানাল্লাহ! কতই না দয়াময় মহান আল্লাহ!!
কেউ কেউ বলেন, এখানে ترجمان দ্বারা দূত বা মধ্যস্থ বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আখিরাতে আল্লাহ বান্দার সঙ্গে কথা বলবেন সরাসরি। মাঝখানে কেউ থাকবে না।দুনিয়ায় যেমন আল্লাহ তা'আলা মানুষের কাছে নিজ বাণী পৌঁছান নবী-রাসূলের মাধ্যমে, আখিরাতে তেমন হবে না। সেখানে বান্দাকে যা বলার সরাসরি নিজে বলবেন। এ হাদীছে বলা হয়েছে বান্দা আখিরাতে তার কৃতকর্মসমূহ দেখতে পাবে। ডান দিকে দেখতে পাবে নেক আমল এবং বাম দিকে বদ আমল। তার ছোট-বড় এবং ভালো-মন্দ কোনও আমলই বাদ যাবে না। সবই সেখানে নিজ চোখে দেখতে পাবে। যেমন ইরশাদ হয়েছেঃ-
فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ
অর্থ : সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করে থাকলে সে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করে থাকলে তাও দেখতে পাবে।সূরা যিলযাল, আয়াত ৭-৮.
এটা মোটেই অসম্ভব নয় যে, দুনিয়ায় মানুষ যে অবস্থায় ও যে রূপে সৎকাজ ও অসৎকাজ করে থাকে, আখিরাতে হুবহু সেই রূপেই তাকে তা দেখিয়ে দেওয়া হবে। অথবা এর দ্বারা আমলনামা দেখানোর কথা বোঝানো হয়েছে। বান্দা আমলনামায় তার ভালোমন্দ প্রতিটি কাজ লিখিতরূপে দেখতে পাবে।
সামনে দেখতে পাবে বিভীষিকাময় জাহান্নাম। জাহান্নামের উপর থাকবে পুলসিরাত। প্রত্যেককে তার উপর দিয়ে যেতে হবে। যার নেকীর পরিমাণ বেশি থাকবে সে অক্ষতভাবে তা পার হয়ে জান্নাতে চলে যাবে। আর যার নেকী কম হবে তার পক্ষে পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে পৌঁছা সম্ভব হবে না। কেটে টুকরো হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। তাই এ হাদীছে বলা হয়েছে জাহান্নাম থেকে বাঁচার চেষ্টা কর। বেশি বেশি নেক আমলই জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়, দান-সদাকা করা ও উত্তম কথা বলা যার অন্যতম।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ভালো ও মন্দ কোনও আমলকেই অবহেলা করতে নেই। আখিরাতে সবই নিজ চোখে দেখতে পাওয়া যাবে এবং তার পুরোপুরি প্রতিফলও দেওয়া হবে।
খ. দান-সদাকা জাহান্নাম থেকে বাঁচার একটি উপায়। কাজেই যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব দান-সদাকা করা উচিত।
গ. নিতান্ত গরীব ব্যক্তি যদি অতি সামান্য কিছুও দান করে, তবে তাও তার জাহান্নাম থেকে বাঁচার কারণ হতে পারে। কাজেই সামান্য বলে তাকে তুচ্ছ মনে করতে নেই।
ঘ. উত্তম কথা বলাও যেহেতু জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়, তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত যথাসম্ভব ভালো ভালো কথা বলতে সচেষ্ট থাকা এবং কোনও অবস্থাতেই কোনও মন্দ কথা না বলা।
فاتقوا النار التي وقودها الناس والحجارة
অর্থ : তোমরা বাঁচ ওই আগুন থেকে, যার ইন্ধন মানুষ ও পাথর। সূরা বাকারা, আয়াত ২৪.
জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার আদেশ-নিষেধ পালন করা। অর্থাৎ সৎকর্ম করতে থাকা ও অসৎকর্ম পরিহার করে চলা। সৎকর্ম আছে বিভিন্ন রকম, যেমন পূর্বের হাদীছসমূহ দ্বারা আমরা জানতে পেরেছি। তার মধ্যে একটা সৎকর্ম বলা হয়েছে আল্লাহর পথে দান-সদাকা করা।
এ হাদীছেও প্রধানত সদাকার কথাই বলা হয়েছে যে, একটা খেজুরের একটি অংশ সদাকা করে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচ। এর দ্বারা সর্বনিম্ন সামর্থ্যের কথা বোঝানো হয়েছে। কারও অবস্থা যদি এমন হয় যে, সে কোনও ক্ষুধার্তকে একটা মাত্র খেজুর দেওয়ারও সামর্থ্য রাখে না, অর্থাৎ দেওয়ার মত একটা খেজুরও তার কাছে নেই, একটা খেজুরের অর্ধেক মাত্র আছে, তবে সে সে অর্ধেকটুকুই দিয়ে দেবে। আল্লাহ তা'আলা মানুষের দানের অঙ্ক দেখেন না। তিনি দেখেন তার মন। অর্থাৎ তার মনে দেওয়ার ইচ্ছা আছে কি না। যদি দেওয়ার ইচ্ছা থাকে, তবে তার সামর্থ্য অনুযায়ী যা দেবে তা-ই আল্লাহর কাছে মূল্যবান। তাকেই আল্লাহ তার জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে কবূল করে নেবেন।
এরপর বলা হয়েছে যদি কারও অর্ধেকটুকু দেওয়ারও ক্ষমতা না থাকে, তবে তার যে আর জাহান্নাম থেকে বাঁচার কোনও উপায় রইল না এমন নয়, সে এর জন্য অন্য কোনও উপায় অবলম্বন করতে পারে। সেরকম একটি উপায় হচ্ছে উত্তম কথা বলা।পূর্বে আমরা জানতে পেরেছি উত্তম কথা বলাও সদাকাতুল্য। অর্থাৎ এর দ্বারাও সদাকার ছাওয়াব পাওয়া যায়। সুতরাং যে ব্যক্তি দান-সদাকা করার সামর্থ্য রাখে না, সে যদি উত্তম কথা বলে, তবে এর মাধ্যমেও সে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারবে।
উত্তম কথা অতি ব্যাপক। এর মধ্যে যেমন কুরআন তিলাওয়াত ও যিকর-তাসবীহ ইত্যাদি রয়েছে, তেমনি মানুষকে সুপরামর্শ দেওয়া, সৎকাজের আদেশ করা, অসৎকাজে নিষেধ করা, বৈধ সুপারিশ করা, দীনী ইলম শেখানো, শোকার্তকে সান্ত্বনা দেওয়া ইত্যাদিও এর অন্তর্ভুক্ত।
এ হাদীছের দ্বিতীয় বর্ণনায় বলা হয়েছে কিয়ামতে আল্লাহ তা'আলা মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন এবং তাতে আল্লাহ ও বান্দার মাঝখানে কোনও দোভাষী (ترجمان) থাকবে না।কেননা বান্দাকে নিজ কথা বোঝাতে আল্লাহর কোনও দোভাষীর প্রয়োজন নেই। সকল ভাষা আল্লাহরই সৃষ্টি। তিনি যে-কোনও ভাষায় বান্দার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। বান্দার সঙ্গে সেদিন তিনি কেমন কেমন কথা বলবেন, কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে তা বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীছও আছে। যেমন এক হাদীছে আছে, আল্লাহ তা'আলা কোনও মু'মিন বান্দাকে কাছে ডেকে নেবেন। তারপর তাকে বলবেন, বান্দা! তোমার কি মনে আছে, তুমি অমুক দিন এই কাজ করেছিলে, অমুক দিন এই কাজ করেছিলে? এভাবে তাকে দিয়ে তার সকল অন্যায় কাজের স্বীকারোক্তি করিয়ে নেবেন। বান্দা যখন তা সব স্বীকার করে নেবে এবং মনে করবে ধ্বংসই তার পরিণতি, তখন আল্লাহ বলবেনঃ-
إني قد سترتها عليك في الدنيا وأنا أغفرها لك اليوم
“আমি দুনিয়ায় তোমার এসব অপরাধ গোপন রেখেছিলাম। আজ আমি এসব ব্যাপারে তোমাকে ক্ষমাই করে দিলাম।” সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৪৪১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৭৬৮.
সুবহানাল্লাহ! কতই না দয়াময় মহান আল্লাহ!!
কেউ কেউ বলেন, এখানে ترجمان দ্বারা দূত বা মধ্যস্থ বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আখিরাতে আল্লাহ বান্দার সঙ্গে কথা বলবেন সরাসরি। মাঝখানে কেউ থাকবে না।দুনিয়ায় যেমন আল্লাহ তা'আলা মানুষের কাছে নিজ বাণী পৌঁছান নবী-রাসূলের মাধ্যমে, আখিরাতে তেমন হবে না। সেখানে বান্দাকে যা বলার সরাসরি নিজে বলবেন। এ হাদীছে বলা হয়েছে বান্দা আখিরাতে তার কৃতকর্মসমূহ দেখতে পাবে। ডান দিকে দেখতে পাবে নেক আমল এবং বাম দিকে বদ আমল। তার ছোট-বড় এবং ভালো-মন্দ কোনও আমলই বাদ যাবে না। সবই সেখানে নিজ চোখে দেখতে পাবে। যেমন ইরশাদ হয়েছেঃ-
فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ
অর্থ : সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করে থাকলে সে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করে থাকলে তাও দেখতে পাবে।সূরা যিলযাল, আয়াত ৭-৮.
এটা মোটেই অসম্ভব নয় যে, দুনিয়ায় মানুষ যে অবস্থায় ও যে রূপে সৎকাজ ও অসৎকাজ করে থাকে, আখিরাতে হুবহু সেই রূপেই তাকে তা দেখিয়ে দেওয়া হবে। অথবা এর দ্বারা আমলনামা দেখানোর কথা বোঝানো হয়েছে। বান্দা আমলনামায় তার ভালোমন্দ প্রতিটি কাজ লিখিতরূপে দেখতে পাবে।
সামনে দেখতে পাবে বিভীষিকাময় জাহান্নাম। জাহান্নামের উপর থাকবে পুলসিরাত। প্রত্যেককে তার উপর দিয়ে যেতে হবে। যার নেকীর পরিমাণ বেশি থাকবে সে অক্ষতভাবে তা পার হয়ে জান্নাতে চলে যাবে। আর যার নেকী কম হবে তার পক্ষে পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে পৌঁছা সম্ভব হবে না। কেটে টুকরো হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। তাই এ হাদীছে বলা হয়েছে জাহান্নাম থেকে বাঁচার চেষ্টা কর। বেশি বেশি নেক আমলই জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়, দান-সদাকা করা ও উত্তম কথা বলা যার অন্যতম।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ভালো ও মন্দ কোনও আমলকেই অবহেলা করতে নেই। আখিরাতে সবই নিজ চোখে দেখতে পাওয়া যাবে এবং তার পুরোপুরি প্রতিফলও দেওয়া হবে।
খ. দান-সদাকা জাহান্নাম থেকে বাঁচার একটি উপায়। কাজেই যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব দান-সদাকা করা উচিত।
গ. নিতান্ত গরীব ব্যক্তি যদি অতি সামান্য কিছুও দান করে, তবে তাও তার জাহান্নাম থেকে বাঁচার কারণ হতে পারে। কাজেই সামান্য বলে তাকে তুচ্ছ মনে করতে নেই।
ঘ. উত্তম কথা বলাও যেহেতু জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়, তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত যথাসম্ভব ভালো ভালো কথা বলতে সচেষ্ট থাকা এবং কোনও অবস্থাতেই কোনও মন্দ কথা না বলা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
বর্ণনাকারী: