রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ১৪০
ভূমিকা অধ্যায়
সৎকর্মের বহুবিধ পন্থা।
পানাহারের পর আলহামদুলিল্লাহ বলার ফযীলত
হাদীছ নং: ১৪০

হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন যখন সে একটু খাবার খায়, তারপর সেজন্য আল্লাহর প্রশংসা (শোকর) করে এবং একটু পানীয় পান করে, তারপর সেজন্য আল্লাহর প্রশংসা (শোকর) করে। -মুসলিম. (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৭৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১১৯৭৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৮১৬; বাগাবী, হাদীছ নং ২৮৩১)
مقدمة الامام النووي
13 - باب في بيان كثرة طرق الخير
140 - الرابع والعشرون: عن أنس - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «إنَّ اللهَ لَيَرْضَى عَنِ العَبْدِ أَنْ يَأكُلَ الأَكْلَةَ، فَيَحمَدَهُ عَلَيْهَا، أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ، فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا». (1) رواه مسلم. (2)
وَ «الأَكْلَةُ» بفتح الهمزة: وَهيَ الغَدْوَةُ أَو العَشْوَةُ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছ দ্বারা পানাহার করার পর আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায়ের ফযীলত জানা যায় এবং শোকর আদায় করা যে কত সহজ তাও বোঝা যায়। বলা হয়েছে একটু খাবার খেয়ে বা একটু পানি পান করে যদি আল্লাহর প্রশংসা করা হয়, তবে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করা অতি সহজ কাজ। শুধু আলহামদুলিল্লাহ (الحمد لله) বলার দ্বারাই তা হয়ে যায়। এটা বলার উদ্দেশ্য আল্লাহ তা'আলার শোকর ও কৃতজ্ঞতা আদায় করা। শোকর আদায় করলে আল্লাহ তা'আলা খুশি হন।

পানাহার করার পর আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করার প্রয়োজন এ কারণে যে, পানাহার সামগ্রী কেবলই আল্লাহ তা'আলার দান। আমরা যা-কিছু খাই ও পান করি, আল্লাহ তা'আলা যদি তা সৃষ্টি না করতেন তবে শত চেষ্টা করেও আমরা তা অর্জন করতে পারতাম না। আমাদের তা পাওয়ার কোনও অধিকারও ছিল না। একান্তই নিজ মেহেরবানীতে তিনি তা আমাদের দিয়েছেন। তাই তাঁর শোকর আদায় করা আমাদের অবশ্যকর্তব্য।

শোকর আদায় দ্বারা আমাদের সে কর্তব্যই পালন হয়। কর্তব্য পালন না করা অপরাধ। কাজেই শোকর আদায় দ্বারা যখন কর্তব্য পালন করা হয়েছে, তখন এর বিনিময়েও কিছু পাওয়া জরুরি নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তার বিনিময় দিয়ে থাকেন। এটা একান্তই তাঁর মেহেরবানী।

পানাহারের পর শোকর আদায় করলে আল্লাহ তা'আলা সন্তুষ্ট হন। আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভ করার চেয়ে বড় কোনও প্রাপ্তি আর হতে পারে না। এত বড় প্রাপ্তি মাত্র দু'টি শব্দের ছোট্ট একটি বাক্য- আলহামদুলিল্লাহ'র দ্বারাই হাসিল হয়ে যায়। অতি সামান্য দানের বিনিময়ে অতি বড় লাভ! লক্ষ করলে দেখা যায় এস্থলে সবটাই কেবল লাভই লাভ। যা পানাহার করে থাকি তাও আল্লাহর দান, এর বিনিময়ে শোকরস্বরূপ আলহামদুলিল্লাহ বলাটাও তাঁর এক দান, তিনি যাকে তাওফীক না দেন সে এটা বলতে পারে না, আলহামদুলিল্লাহ বলার দ্বারা মনে যে শান্তি ও পরিতৃপ্তি লাভ হয় তাও আল্লাহর এক দান, তদুপরি এটা বলার কারণে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল হয়ে যাওয়া সে তো অনেক বড় দান। এতকিছু দানের বিপরীতে কী শোকর আমরা আদায় করতে পারি?

প্রকাশ থাকে যে, পানাহার করার পর শোকর আদায়ের সর্বাপেক্ষা সংক্ষিপ্ত বাক্য হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। এর আরও বিভিন্ন দু'আ আছে। সামনে 'খাদ্যের আদব' অধ্যায়ে তা আসবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারাও শিক্ষা পাওয়া গেল যে, কোনও নেক আমলকেই তুচ্ছ মনে করতে নেই। আলহামদুলিল্লাহ একটি অতি সংক্ষিপ্ত বাক্য, অথচ এর প্রাপ্তি কত বড়! এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলা বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান।

খ. পানাহার করার পর অবশ্যই আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করা উচিত। মুখে আলহামদুলিল্লাহ বলাও শোকরেরই একটি ভাষা।

গ. আলহামদুলিল্লাহ বলা উচিত অতি সামান্য কিছু খাবার বা অতি সামান্য কিছু পান করার পরও। এ হাদীছে সে কথাই বলা হয়েছে। কাজেই বেশি পরিমাণ পানাহারের পর এটা বলার গুরুত্ব যে আরও বেশিই হবে তা তো বলাই বাহুল্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ১৪০ | মুসলিম বাংলা