রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং:
অধ্যায় : ৩ সবর।
৩৫। মৃগীরোগে সবরের ফযীলত

হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ রহ. বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. আমাকে বললেন, তোমাকে কি একজন জান্নাতবাসী নারী দেখাব না? আমি বললাম, অবশ্যই। তিনি বললেন, ওই কালো মহিলা। তিনি একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, আমি মৃগীরোগে ভুগছি এবং তাতে আমার কাপড়-চোপড় খুলে যায়। আপনি আল্লাহ তাআলার কাছে আমার জন্য দু'আ করুন। তিনি বললেন, চাইলে তুমি সবর কর। তাতে তুমি জান্নাত লাভ করবে। আর যদি চাও, তো আমি আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করব, যেন তিনি তোমাকে আরোগ্য দান করেন। তিনি বললেন, আমি সবরই করব। তারপর বললেন, আমার যে কাপড়-চোপড় খুলে যায়, আল্লাহ তাআলার কাছে আমার জন্য দুআ করুন, যেন তা খুলে না যায়। তিনি তার জন্য দুআ করলেন - বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৩৪৭৭,মুসলিম হাদীস নং ১৭৯২)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে যে কৃষ্ণাঙ্গিনী মহিলার কথা বলা হয়েছে, তার নাম সু’আইরা। উপনাম উম্মু যুফার। তিনি মৃগীরোগে আক্রান্ত ছিলেন। যখন রোগের প্রকোপ দেখা দিত, মূর্ছিত হয়ে পড়ে যেতেন। অনেক সময় তাতে সতর খুলে যেত। এমনিতেই মহিলাদের লজ্জা- শরম বেশি থাকে। তাছাড়া লজ্জাশীলতা ঈমানের অঙ্গও বটে। তদুপরি তিনি একজন সাহাবিয়া। ঈমানের এ শাখা সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই বেশি সচেতন ছিলেন। সতর ঢাকা ফরয। ফরযসহ শরী'আতের সকল বিধান পালনের প্রতি সাহাবীগণ বেশি যত্নবান থাকতেন। এই সাহাবিয়া খুবই চিন্তিত ছিলেন যে, একে তো সতর খুলে যাওয়ায় ফরয বিধান লঙ্ঘন হয়, তদুপরি এই বিবস্ত্র অবস্থায় কার না কার চোখে পড়ে যান। তাই পেরেশান হয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্যে আল্লাহ তা'আলার কাছে দুআর আবেদন জানালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দু'টি অবস্থার একটি বেছে নিতে বললেন। (ক) দোয়ার মাধ্যমে এ রোগ থেকে মুক্তিলাভ; (খ) রুগ্ন অবস্থায়ই থেকে ধৈর্যধারণ ও তার বিনিময়ে জান্নাত লাভ। সাহাবিয়া দ্বিতীয়টি বেছে নিলেন। জন্নাত লাভের আশায় তিনি যতদিন বেঁচে থাকেন, রোগের কষ্ট সয়ে যাবেন। সুবহানাল্লাহ, জান্নাতের প্রতি নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল সাহাবীর কী বিপুল আকাঙ্ক্ষা ছিল। তার জন্য পার্থিব জীবনের যে-কোনও রকমের ত্যাগস্বীকারে তারা সদা প্রস্তুত থাকতেন। মৃগীরোগের তো সময়ের কোনও বাছ-বিচার নেই। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যে-কোনও সময় যে-কোনও স্থানে মূর্ছিত হয়ে পড়তে পারে। রোগের কষ্ট ছাড়াও তাতে ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার আশংকা থাকে। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় পড়ে মৃত্যুর ভয়ও থাকে। কিন্তু এ সাহাবিয়ার তাতে কোনও পরওয়া নেই। জান্নাতলাভের জন্যে সবরকম ঝুঁকিগ্রহণে তিনি প্রস্তুত। তবে হাঁ, লজ্জা-শরমের ব্যাপারটা আলাদা। বিশেষত সতর খুলে যাওয়ার লজ্জা থেকে আত্মরক্ষা করা ঈমান-আমলের হেফাজতের জন্যও জরুরি। এটা কোনও অবস্থায়ই ত্যাগ করা যায় না। তাই তিনি অনুরোধ করলেন, রোগের ব্যাপারে তো আমি ধৈর্যধারণ করব, তবে সতর খুলে না যায় সেজন্য দু'আ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দু'আ করলেন।

যেহেতু রোগে সবর করলে জান্নাত পাওয়ার প্রস্তাবকে তিনি গ্রহণ করে নিয়েছেন, তাই এ হাদীছে তাঁকে একজন জান্নাতবাসী নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি একজন কালো রঙের নারী ছিলেন। ইসলামে কোনও বর্ণবৈষম্য নেই। সাদা-কালো নির্বিশেষে যে-কেউ আল্লাহ তা'আলার হুকুম মেনে চলবে এবং সবর ও শোকরের সাথে পার্থিব জীবন অতিবাহিত করবে, তার জন্যই জান্নাতের দুয়ার খোলা। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে জান্নাতের পথের পথিক বানিয়ে দিন - আমীন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মৃগীসহ যে-কোনও কঠিন রোগে ধৈর্যধারণ করলে আখিরাতে অশেষ ছওয়াব দানের আশা করা যায়।

খ. নারী-পুরুষ সকলের জন্যই সতর ঢাকা ফরয। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি।

গ. আল্লাহ তা'আলার কাছে দু'আ করা বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির অন্যতম প্রধান উপায়। এ ব্যাপারে বুযুর্গানে দীনের কাছে দু'আ চাওয়াও জায়েয ও উত্তম।

ঘ. গায়ের রঙ ও বাহ্যিক আকার-আকৃতি দেখে কাউকে তুচ্ছ মনে করতে নেই। ইসলামে বর্ণবৈষম্যের কোনো স্থান নেই।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন