ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার

১২. জিহাদ অধ্যায়

হাদীস নং: ১৯১৮
যুদ্ধক্ষেত্রে হত্যাকৃত শত্রু থেকে ছিনিয়ে নেওয়া অস্ত্র, বাহন, পোশাক ইত্যাদি হত্যাকারী গাযি লাভ করবে
(১৯১৮) আনাস ইবন মালিক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হুনাইনের যুদ্ধের দিনে বলেন, যে ব্যক্তি কোনো কাফিরকে হত্যা করবে, তার নিকট থেকে সংগৃহীত দ্রব্যাদি সেই লাভ করবে। সেই দিন আবু তালহা বিশজন কাফিরকে হত্যা করেন এবং তাদের দ্রব্যাদি গ্রহণ করেন।
عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم حنين: من قتل كافرا فله سلبه فقتل أبو طلحة يومئذ عشرين رجلا وأخذ أسلابهم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

গ্রন্থকার বলেন, যুদ্ধলব্ধ গনীমতের সম্পদ যোদ্ধাদের মধ্যে বণ্টন ছাড়াও রাষ্ট্রপ্রধান যোদ্ধাদেরকে অতিরিক্ত কিছু অনুদান প্রদান করতে পারেন। নিহত শত্রু সৈন্যের দ্রব্যাদি হত্যাকারী গাযিকে প্রদানের বিধান এই 'অতিরিক্ত অনুদান' হিসাবে, আবশ্যকীয় শরীআতের স্থায়ী বিধান হিসাবে নয় । অর্থাৎ এই বিধানটি সর্বদা বলবৎ রাখা রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। ইচ্ছা করলে কোনো যুদ্ধে সেনাপতি এই ব্যবস্থা ‘অতিরিক্ত অনুদান হিসাবে' প্রদান করতে পারেন। না দিলে শরীআত লঙ্ঘিত হবে না।
এই ব্যবস্থা যে শরীআতের বাধ্যতামূলক বিধান নয়, বরং 'অতিরিক্ত অনুদান' তা বিভিন্ন হাদীস থেকে বোঝা যায়। বুখারি ও মুসলিম সঙ্কলিত আব্দুর রাহমান ইবন আউফ রা. বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বদরের যুদ্ধে মুআয ইবন আফরা এবং মুআয ইবন আমর ইবন জামূহ নামক দুই যুবক একত্রে আবু জাহলকে আঘাত করে এবং তাকে হত্যা করে। এরপর তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে ফিরে তাকে খবরটি প্রদান করে তখন তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কে তাকে হত্যা করেছ? তারা উভয়েই বলেন, আমিই তাকে হত্যা করেছি। তখন তিনি বলেন, তোমরা কি তোমাদের তরবারি মুছে ফেলেছ? তারা বলে, না। তখন তিনি উভয়ের তরবারিদ্বয় দেখে বলেন তোমরা দুজনেই তাকে হত্যা করেছ। অতঃপর তিনি আবু জাহল থেকে সংগৃহীত দ্রব্যাদি দুইজনের একজন মুআয ইবন আমর ইবন জামূহকে প্রদান করেন। যদি হত্যার দ্বারা নিহতের দ্রব্যাদি ‘পাওনা' হয়ে যেত তাহলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উভয়ের একজনকে তা প্রদান করতেন না।
আউফ ইবন মালিকের সূত্রে মুসলিম সঙ্কলিত অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, এক যুদ্ধে এক ইয়ামানি সাহাবি এক কাফিরকে হত্যা করেন। বিশেষ কারণে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেনাপতি খালিদ ইবন ওয়ালীদকে নিষেধ করেন উক্ত ইয়ামানি সাহাবিকে উক্ত নিহত কাফিরের দ্রব্যাদি প্রদান করতে ।
তাবারানি তাবিয়ি শা’বি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, সাহাবি জারীর ইবন আব্দুল্লাহ বাজালি রা. পারস্য সেনাপতি মিহরানের সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং তাকে হত্যা করেন। মিহরানের দেহের জামাটির মূল্য নির্ণয় করলে তার দাম হয় ত্রিশ হাজার রৌপ্যমূদ্রা। নিয়ম ছিল, যে ব্যক্তি যার সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে হত্যা করবেন নিহতের দ্রব্যাদি তিনিই পাবেন। এজন্য মিহরানের জামাটি জারীরকে রা. প্রদানের বিষয়ে তারা খলীফা উমার রা.র নিকট পত্র লিখেন। উত্তরে উমার জানান যে, এই জামা সাধারণ দ্রব্যাদির অন্তর্ভুক্ত নয়, যা হত্যাকারী যোদ্ধাকে প্রদান করা হয়। তিনি উক্ত জামা জারীরকে প্রদান না করে তা গনীমতের সম্পদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন । ইবনুত তুরকমানি তার 'আল জাওহারুন নাকি' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, নিহতের দ্রব্যাদি গনীমতের সাথে পাঁচভাগ করার বর্ণনা উমার থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে । ইবন আবী শাইবা দুইটি পৃথক সনদে তা উদ্ধৃত করেছেন ।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান