ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার

৬. হজ্ব - উমরার অধ্যায়

হাদীস নং: ১৫৪২
মদীনা মুনাওয়ারার মর্যাদা
(১৫৪২) আনাস ইবন মালিক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন সকল মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যবহারের অধিকারী । আমার একটি ভাই ছিল, তাকে আবু উমাইর' নামে ডাকা হত। তিনি সম্ভবত বলেন, সে কেবল দুধ ছেড়েছিল । তিনি যখন আমাদের বাড়িতে আসতেন তখন বলতেন, হে আবু উমাইর, কী করছে নুগাইর? ‘নুগার' ছিল একটি ছোট্ট পাখি যা নিয়ে সে খেলত।
عن أنس رضي الله عنه قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم أحسن الناس خلقا وكان لي أخ يقال له أبو عمير قال أحسبه فطيما وكان إذا جاء قال يا أبا عمير ما فعل النغير؟ نغر كان يلعب به

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি. প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশ্রেষ্ঠ চরিত্রবান মানুষরূপে উল্লেখ করেছেন। এটা স্বাভাবিক যে, তাঁর চরিত্র সর্বশ্রেষ্ঠই হবে। কেননা তাঁর শিক্ষক ও তারবিয়াতকারী ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা। ইরশাদ হয়েছে-
وَأَنْزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا (113)
আল্লাহ তোমার প্রতি কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন এবং তোমাকে এমনসব বিষয়ে জ্ঞান দিয়েছেন, যা তুমি জানতে না। বস্তুত তোমার প্রতি সর্বদাই আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে।(সূরা নিসা (৪), আয়াত ১১৩)

সুতরাং আল্লাহ তা'আলা তাঁকে নীতি-নৈতিকতা ও আখলাক-চরিত্রে কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষের আদর্শরূপে গড়ে তুলেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا (21)
বস্তুত রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ- এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখিরাত-দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে।(সূরা আহযাব (৩৫), আয়াত ২১)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কতটা উন্নত আখলাক-চরিত্রের অধিকারী ছিলেন, তা তাঁর ঘনিষ্ঠ সাহাবীদের সাক্ষ্য দ্বারাই বোঝা যায়। আখলাক-চরিত্রে যারা উন্নত নয়, তাদের ঘনিষ্ঠজনেরা ক্রমান্বয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি হারায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষেত্রে দেখি যে ব্যক্তি তাঁর যত বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছে, সে তাঁর ততো বেশি ভক্ত হয়েছে। ঘনিষ্ঠতার ক্রমোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শ্রদ্ধা-ভক্তি ও ভালোবাসারও ক্রমোন্নতি ঘটেছে। হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি. ছিলেন তাঁর দশ বছরের খাদেম। আলোচ্য এ হাদীছটি তাঁরই বর্ণিত। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি., হযরত উমর ফারুক রাযি. তথা আশারায়ে মুবাশশারাসহ আরও যত সাহাবী তাঁর ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাঁরা সকলেই তাঁর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তাঁর সবচে' বেশি ঘনিষ্ঠ যারা, সেই উম্মাহাতুল মুমিনীনও জীবনভর তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসা বজায় রেখেছিলেন। এটা তাঁর মধুর চরিত্রের পরিপূর্ণতারই নিদর্শন। সাহাবায়ে কেরাম বর্ণনা করেছেন-
أَجْوَدُ النَّاسِ صَدْرًا ، وَأَصْدَقُ النَّاسِ لَهْجَةً، وَأَلْيَنهُمْ عَرِيكَةً، وَأَكْرَمُهُمْ عِشْرَةً، مَنْ رَآهُ بَدِيهَةً هَابَهُ، وَمَنْ خَالَطَهُ مَعْرِفَةً أَحَبَّهُ ، يَقُوْلُ نَاعِتُهُ : لَمْ أَرَ قَبْلَهُ وَلَا بَعْدَهُ مِثْلَهُ
তিনি ছিলেন মনের দিক থেকে শ্রেষ্ঠতম দাতা, কথায় সর্বাপেক্ষা বেশি সত্যবাদী, ব্যবহারে সর্বাপেক্ষা বেশি কোমল, সাহচর্যে সর্বাপেক্ষা বেশি মহানুভব। যে ব্যক্তি হঠাৎ করেই তাঁকে দেখত, সে ভয় পেয়ে যেত। কিন্তু যে ব্যক্তি মেলামেশা করে তাঁকে চিনত, সে তাঁকে ভালোবেসে ফেলত। তাঁর পরিচয়দাতা বলে থাকে, তাঁর আগে ও পরে তাঁর মতো কাউকে দেখিনি।(জামে' তিরমিযী: ৩৬৩৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩১৮০৫; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩৭০৭; শু'আবুল ঈমান : ১৩৫০; ইবন শাব্বাহ, তারীখুল মাদীনাহ, ২ খণ্ড, ৬০৪ পৃষ্ঠা।)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন, তাই তাঁর উম্মত হিসেবে আমাদেরও কর্তব্য উত্তম চরিত্র অর্জনের সাধনা করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
ফিকহুস সুনান - হাদীস নং ১৫৪২ | মুসলিম বাংলা