ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার

৩. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১১৭৯
শহীদকে গোসল ব্যতিরেকে তার রক্তসহ কবর দেওয়া
(১১৭৯) জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উহুদ যুদ্ধে নিহতদের মধ্য থেকে দুইজনকে এক কাপড়ে একত্র করছিলেন। অতঃপর তিনি বলছিলেন, এদের মধ্যে কে কুরআন বেশী শিখেছিল? দুইজনের মধ্যে একজনের দিকে ইশারা করা হলে তিনি তাকে পাশ-কবরের মধ্যে আগে রাখছিলেন এবং বলছিলেন, আমি এদের জন্য সাক্ষী। আর তিনি তাদেরকে তাদের রক্তসহ কবরস্থ করার নির্দেশ দেন এবং তিনি তাদের জন্য সালাতুল জানাযা আদায় করেন নি এবং তাদের গোসল করান নি।
عن جابر بن عبد الله رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يجمع بين الرجلين من قتلى أحد في ثوب واحد ثم يقول أيهم أكثر أخذا للقرآن؟ فإذا أشير له إلى أحدهما قدمه في اللحد وقال أنا شهيد على هؤلاء وأمر بدفنهم بدمائهم ولم يصل عليهم ولم يغسلهم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে উহুদ যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের দাফনকার্য সম্পর্কিত একটি বিশেষ তথ্য দেওয়া হয়েছে। উহুদের যুদ্ধ হয়েছিল হিজরী ৪র্থ সনে। এতে ৭০ জন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেন। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন অনেকেই। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও ভীষণভাবে আহত হন। যখন দাফন-কাফনের পালা আসে, তখন সাহাবায়ে কেরামকে যে কঠোর-কঠিন সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তারা ছিলেন নেহায়েত গরীব। সকল শহীদের পূর্ণাঙ্গ কাফনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছিল না। সকলেই ছিলেন আহত ও ক্ষত-বিক্ষত। এতগুলো কবর তাদের পক্ষে কিভাবে খনন করা সম্ভব? আনসারগণ এসে আরয করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো ক্ষত-বিক্ষত, সংকটাপন্ন। তিনি বললেন, তোমরা একটু প্রশস্ত গর্ত কর এবং প্রতি কবরে দুই-তিনজন করে দাফন কর। তা-ই করা হয়েছিল। এমনকি একই কবরে পুরুষ ও নারীকেও স্থান দেওয়া হয়েছিল। মাঝখানে মাটি দিয়ে আড়াল করা হয়েছিল। একেকজনের কাফন এতই ছোট ছিল যে,মাথা ঢাকলে পা ঢাকে না, পা ঢাকলে মাথা ঢাকে না। অগত্যা মাথা ঢেকে পায়ের উপর ঘাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

যাহোক যখন দু-দু'জনকে একেক কবরে দাফন করা হচ্ছিল, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে জেনে নিচ্ছিলেন যে, তাদের মধ্যে কুরআন বেশি কে জানে। যার দিকে ইশারা করা হত যে সে বেশি জানে, তাকে কেবলার দিকে সামনে রাখা হতো। অপরজনকে রাখা হত তার পেছনে। অর্থাৎ এ অগ্রগণ্যতা বয়স বা অন্য কোনও বিচারে বিবেচনা করা হত না; তা বিবেচনা করা হত কুরআন কম-বেশি জানার ভিত্তিতে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. প্রয়োজনে একাধিক ব্যক্তিকে এক কবরে দাফন করা যেতে পারে।

খ. কুরআন যে বেশি জানে তার মর্যাদাও বেশি। এমনকি দাফনের ক্ষেত্রেও সে মর্যাদা বিবেচনাযোগ্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
ফিকহুস সুনান - হাদীস নং ১১৭৯ | মুসলিম বাংলা