মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
১৯. পানাহারের দ্রব্যাদি, কুরবানী, শিকার এবং যবেহ সম্পর্কে বর্ণনা
হাদীস নং: ৪২১
স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পান করা নিষিদ্ধ
হাদীস নং- ৪২১
হযরত বুরায়দা (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, নবী করীম (ﷺ) বলেন : আমরা তোমাদেরকে কবর যিয়ারত থেকে নিষেধ করেছি, কিন্তু যখন হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে তাঁর সম্মানিত মাতার কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে, সুতরাং এবার তোমরা কবর যিয়ারত কর কিন্তু কাদর্য অসৌজন্যমূলক কথা বল না। এবং (আমরা তোমাদেরকে) কুরবানীর গোশত তিন দিনের অধিক জমা করে রাখতে নিষেধ করেছি। আর এ জন্য নিষেধ করেছি যাতে তোমাদের সম্পদশালী ব্যক্তিগণ তোমাদের দরিদ্রদেরকে গোশত দিয়ে তাদের মধ্যে গোশত খাওয়ার আনন্দ সৃষ্টি করতে পারে। এখন যেহেতু আল্লাহ তা'আলা সবাইকে প্রশস্ততা দিয়েছেন, তাই খাও এবং সংরক্ষণ কর এবং (আমরা তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম) হানতাম ও মুযাফফাত বা কদুর খোল থেকে তৈরী পাত্র দ্বারা পান করা থেকে।
অন্য এক রিওয়ায়েতে আছে নাকির ও দুব্বায় পান করা থেকে। সুতরাং এবার যে পাত্রে ইচ্ছা, পান কর। কেননা পাত্র বা থালা কোন বস্তুকে হালাল ও হারাম করে না। হ্যাঁ, নেশা সৃষ্টি করে এরূপ দ্রব্য পান করো না।
অন্য এক রিওয়ায়েতে আছে, আমরা তোমাদেরকে তিনটি কাজ থেকে নিষেধ করেছি।
প্রথম, কবর যিয়ারত থেকে, এখন থেকে যিয়ারত কর। দ্বিতীয়, আমরা তোমাদেরকে নিষেধ করেছি, কুরবানীর গোশত তিনদিনের চেয়ে বেশী জমা রাখার ব্যাপারে। এখন থেকে জমা রাখ এবং সংরক্ষণ কর। আমরা তোমাদেরকে নিষেধ করেছি, দুব্বা ও মুযাফফাতে পান করা থেকে। এখন থেকে যে পাত্রে ইচ্ছা, পান কর। কেননা পাত্র বস্তুকে না হালাল করতে পারে এবং না হারাম। তবে নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য পান করো না।
অন্য এক রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, আমরা নিষেধ করেছি তোমাদেরকে দুব্বা, হানতাম ও মুযাফফাতে নাবীয তৈরী করা থেকে। এখন সমস্ত পাত্রে পান কর কিন্তু নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু পান কর না।
হযরত বুরায়দা (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, নবী করীম (ﷺ) বলেন : আমরা তোমাদেরকে কবর যিয়ারত থেকে নিষেধ করেছি, কিন্তু যখন হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে তাঁর সম্মানিত মাতার কবর যিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে, সুতরাং এবার তোমরা কবর যিয়ারত কর কিন্তু কাদর্য অসৌজন্যমূলক কথা বল না। এবং (আমরা তোমাদেরকে) কুরবানীর গোশত তিন দিনের অধিক জমা করে রাখতে নিষেধ করেছি। আর এ জন্য নিষেধ করেছি যাতে তোমাদের সম্পদশালী ব্যক্তিগণ তোমাদের দরিদ্রদেরকে গোশত দিয়ে তাদের মধ্যে গোশত খাওয়ার আনন্দ সৃষ্টি করতে পারে। এখন যেহেতু আল্লাহ তা'আলা সবাইকে প্রশস্ততা দিয়েছেন, তাই খাও এবং সংরক্ষণ কর এবং (আমরা তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম) হানতাম ও মুযাফফাত বা কদুর খোল থেকে তৈরী পাত্র দ্বারা পান করা থেকে।
অন্য এক রিওয়ায়েতে আছে নাকির ও দুব্বায় পান করা থেকে। সুতরাং এবার যে পাত্রে ইচ্ছা, পান কর। কেননা পাত্র বা থালা কোন বস্তুকে হালাল ও হারাম করে না। হ্যাঁ, নেশা সৃষ্টি করে এরূপ দ্রব্য পান করো না।
অন্য এক রিওয়ায়েতে আছে, আমরা তোমাদেরকে তিনটি কাজ থেকে নিষেধ করেছি।
প্রথম, কবর যিয়ারত থেকে, এখন থেকে যিয়ারত কর। দ্বিতীয়, আমরা তোমাদেরকে নিষেধ করেছি, কুরবানীর গোশত তিনদিনের চেয়ে বেশী জমা রাখার ব্যাপারে। এখন থেকে জমা রাখ এবং সংরক্ষণ কর। আমরা তোমাদেরকে নিষেধ করেছি, দুব্বা ও মুযাফফাতে পান করা থেকে। এখন থেকে যে পাত্রে ইচ্ছা, পান কর। কেননা পাত্র বস্তুকে না হালাল করতে পারে এবং না হারাম। তবে নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য পান করো না।
অন্য এক রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, আমরা নিষেধ করেছি তোমাদেরকে দুব্বা, হানতাম ও মুযাফফাতে নাবীয তৈরী করা থেকে। এখন সমস্ত পাত্রে পান কর কিন্তু নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু পান কর না।
عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «نَهَيْنَاكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ، فَقَدْ أُذِنَ لِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ، فَزُورُوهَا، وَلَا تَقُولُوا هُجْرًا، وَعَنْ لُحُومِ الْأَضَاحِي، أَنْ تُمْسِكُوهَا فَوْقَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، وَإِنَّا نَهَيْنَاكُمْ، لِيُوَسِّعَ مُوسِرُكُمْ عَلَى فَقِيرِكُمْ، وَالْآنَ قَدْ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ، فَكُلُوا وَتَزَوَّدُوا، وَعَنِ الشُّرْبِ فِي الْحَنْتَمِ وَالْمُزَفَّتِ» ، وَفِي رِوَايَةٍ: «وَعَنِ النَّقِيرِ، وَالدُّبَّاءِ، فَاشْرَبُوا فِي كُلِّ ظَرْفٍ شِئْتُمْ، فَإِنَّ الظَّرْفَ لَا يُحِلُّ شَيْئًا، وَلَا يُحَرِّمُهُ، وَلَا تَشْرَبُوا مُسْكِرًا» .
وَفِي رِوَايَةٍ، قَالَ: إِنَّا نَهَيْنَاكُمْ عَنْ ثَلاثَةٍ: عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا، وَنَهَيْنَاكُمْ أَنْ تُمْسِكُوا لُحُومَ الْأَضَاحِي فَوْقَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، فَأَمْسِكُوهَا وَتَزَوَّدُوا، وَإِنَّمَا نَهَيْنَاكُمْ، لِيُوَسِّعَ غَنِيُّكُمْ عَلَى فَقِيرِكُمْ، وَنَهَيْنَاكُمْ أَنْ تَشْرَبُوا فِي الدُّبَّاءِ، وَالْمُزَفَّتِ، فَاشْرَبُوا فِيمَا بَدَا لَكُمْ، فَإِنَّ الظَّرْفَ لَا يُحِلُّ شَيْئًا، وَلَا يُحَرِّمُهُ، وَلَا تَشْرَبُوا مُسْكِرًا ".
وَفِي رِوَايَةٍ نَحْوَهُ، وَفِيهِ: وَعَنِ النَّبِيذِ فِي الدُّبَّاءِ، وَالْحَنْتَمِ، وَالْمُزَفَّتِ، فَاشْرَبُوا فِي كُلِّ ظَرْفٍ، وَلَا تَشْرَبُوا مُسْكِرًا "
وَفِي رِوَايَةٍ، قَالَ: إِنَّا نَهَيْنَاكُمْ عَنْ ثَلاثَةٍ: عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا، وَنَهَيْنَاكُمْ أَنْ تُمْسِكُوا لُحُومَ الْأَضَاحِي فَوْقَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، فَأَمْسِكُوهَا وَتَزَوَّدُوا، وَإِنَّمَا نَهَيْنَاكُمْ، لِيُوَسِّعَ غَنِيُّكُمْ عَلَى فَقِيرِكُمْ، وَنَهَيْنَاكُمْ أَنْ تَشْرَبُوا فِي الدُّبَّاءِ، وَالْمُزَفَّتِ، فَاشْرَبُوا فِيمَا بَدَا لَكُمْ، فَإِنَّ الظَّرْفَ لَا يُحِلُّ شَيْئًا، وَلَا يُحَرِّمُهُ، وَلَا تَشْرَبُوا مُسْكِرًا ".
وَفِي رِوَايَةٍ نَحْوَهُ، وَفِيهِ: وَعَنِ النَّبِيذِ فِي الدُّبَّاءِ، وَالْحَنْتَمِ، وَالْمُزَفَّتِ، فَاشْرَبُوا فِي كُلِّ ظَرْفٍ، وَلَا تَشْرَبُوا مُسْكِرًا "
হাদীসের ব্যাখ্যা:
১. মুযাফফাত (مزفت) রৌগন লাগান পাত্র, নাকির (نقير) কাঠ চিরে তৈরি করা পাত্র।
২. প্রথমদিকে কবর যিয়ারত করা নিষেধ ছিল। শাহ ওয়ালিয়্যুল্লাহ রহ.-এর মতে এর কারণ ছিল শিরকের পথ বন্ধ করা। তিনি বলেন, কবর যিয়ারত কবর পূজার দুয়ার খোলে। পরে যখন ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং মানুষের চিন্তা-চেতনায় গায়রুল্লাহর ইবাদত হারাম হওয়ার বিষয়টি বদ্ধমূল হয়ে যায়, তখন (কবরপূজার আশঙ্কা দূর হয়ে যায়, ফলে) কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়।
এ হাদীছে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, আগে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ ছিল বটে, কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা রহিত করে দেওয়া হয়েছে এবং যিয়ারত করার অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন অনুমতি দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন হাদীছে তার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে এরকম-
فَإِنَّهَا تُذَكَّرُنَا الْآخِرَةَ (কারণ তা আমাদেরকে আখিরাত স্মরণ করিয়ে দেয়)। অর্থাৎ কবরস্থানে গেলে সামনাসামনি লক্ষ করা যায় যারা একদিন এ মাটির উপর বিচরণ করত, দুনিয়ার হাজারও নি'আমত ভোগ ও উপভোগ করত, কীভাবে তারা সবকিছু থেকে চিরবিদায় নিয়ে একদম খালিহাতে মাটির নিচে চলে গেছে! সেখানে তারা সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ। মাটির অন্ধকার কক্ষে সম্পূর্ণ অসহায়। যাদের চলে যাওয়া পুরোনো হয়ে গেছে, তারা তো মাটিতে মিশেই গেছে। একদিন আমারও এ দশা হবে। অতএব শুধু শুধু কেন লম্বা-চওড়া স্বপ্নের জাল বোনা? এভাবে চিন্তা করতে থাকলে দুনিয়ার লোভ-লালসা ঘুচে যায় এবং মন আখিরাতের দিকে ঝোঁকে। মন আখিরাতমুখী হলে আমলে তার আছর পড়ে। তখন মন্দকাজের প্রবণতা কমে এবং সৎকাজের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। সৎকাজ দ্বারাই আখিরাতে মুক্তিলাভ হয়। সুতরাং কবর যিয়ারত আখিরাতের মুক্তিলাভের পক্ষে খুব সহায়ক। তাই এটা মাঝেমধ্যেই করা উচিত।
কবর যিয়ারতের এ অনুমতি নারী-পুরুষ সকলের জন্যই। হযরত ফাতিমা রাযি. প্রতি জুমু'আর দিন হযরত হামযা রাযি.-এর কবর যিয়ারত করতে যেতেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কবর যিয়ারতে গিয়ে কী বলব? তিনি বলেছিলেন-
قُوْلِي : السَّلَامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْن
‘তুমি বলবে, হে মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীগণ! তোমাদের প্রতি সালাম। আল্লাহ তা'আলা আমাদের মধ্যে যারা অগ্রগামী ও যারা পশ্চাদবর্তী, সকলের প্রতি দয়া করুন। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব।’(সহীহ মুসলিম: ৯৭৪; মুসনাদে আহমাদ: ২৫৮৫৫; সহীহ ইবন হিব্বান: ৭১১০; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৬৭১২; সুনানে নাসাঈ ২০৩৭; তাবারানী, আদ-দু'আ: ১২৪৬)
কোনও কোনও হাদীছে যে মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারতের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায়, সে নিষেধাজ্ঞা সকলের জন্য সাধারণ নয়। তা কেবল তাদের জন্যই প্রযোজ্য, যারা বারবার কবরস্থানে যায়, সেখানে গিয়ে বিলাপ করে, পর্দারও বরখেলাফ করে ও নানারকম সীমালঙ্ঘনে লিপ্ত হয়। যারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় এবং কোনওরকম সীমালঙ্ঘনে লিপ্ত হয় না, এরকম মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত নিষেধ নয়। কবর যিয়ারতের যে দীনী উপকারিতা, তা যেমন পুরুষের জন্য প্রয়োজন, তেমনি নারীদের জন্যও প্রয়োজন বটে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
দুনিয়ার মোহ ঘুচানো ও আখিরাতের ফিকির বাড়ানোর লক্ষ্যে মাঝেমাঝে কবর যিয়ারত করা চাই।
২. প্রথমদিকে কবর যিয়ারত করা নিষেধ ছিল। শাহ ওয়ালিয়্যুল্লাহ রহ.-এর মতে এর কারণ ছিল শিরকের পথ বন্ধ করা। তিনি বলেন, কবর যিয়ারত কবর পূজার দুয়ার খোলে। পরে যখন ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং মানুষের চিন্তা-চেতনায় গায়রুল্লাহর ইবাদত হারাম হওয়ার বিষয়টি বদ্ধমূল হয়ে যায়, তখন (কবরপূজার আশঙ্কা দূর হয়ে যায়, ফলে) কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়।
এ হাদীছে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, আগে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ ছিল বটে, কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা রহিত করে দেওয়া হয়েছে এবং যিয়ারত করার অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন অনুমতি দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন হাদীছে তার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে এরকম-
فَإِنَّهَا تُذَكَّرُنَا الْآخِرَةَ (কারণ তা আমাদেরকে আখিরাত স্মরণ করিয়ে দেয়)। অর্থাৎ কবরস্থানে গেলে সামনাসামনি লক্ষ করা যায় যারা একদিন এ মাটির উপর বিচরণ করত, দুনিয়ার হাজারও নি'আমত ভোগ ও উপভোগ করত, কীভাবে তারা সবকিছু থেকে চিরবিদায় নিয়ে একদম খালিহাতে মাটির নিচে চলে গেছে! সেখানে তারা সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ। মাটির অন্ধকার কক্ষে সম্পূর্ণ অসহায়। যাদের চলে যাওয়া পুরোনো হয়ে গেছে, তারা তো মাটিতে মিশেই গেছে। একদিন আমারও এ দশা হবে। অতএব শুধু শুধু কেন লম্বা-চওড়া স্বপ্নের জাল বোনা? এভাবে চিন্তা করতে থাকলে দুনিয়ার লোভ-লালসা ঘুচে যায় এবং মন আখিরাতের দিকে ঝোঁকে। মন আখিরাতমুখী হলে আমলে তার আছর পড়ে। তখন মন্দকাজের প্রবণতা কমে এবং সৎকাজের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। সৎকাজ দ্বারাই আখিরাতে মুক্তিলাভ হয়। সুতরাং কবর যিয়ারত আখিরাতের মুক্তিলাভের পক্ষে খুব সহায়ক। তাই এটা মাঝেমধ্যেই করা উচিত।
কবর যিয়ারতের এ অনুমতি নারী-পুরুষ সকলের জন্যই। হযরত ফাতিমা রাযি. প্রতি জুমু'আর দিন হযরত হামযা রাযি.-এর কবর যিয়ারত করতে যেতেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কবর যিয়ারতে গিয়ে কী বলব? তিনি বলেছিলেন-
قُوْلِي : السَّلَامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْن
‘তুমি বলবে, হে মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীগণ! তোমাদের প্রতি সালাম। আল্লাহ তা'আলা আমাদের মধ্যে যারা অগ্রগামী ও যারা পশ্চাদবর্তী, সকলের প্রতি দয়া করুন। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব।’(সহীহ মুসলিম: ৯৭৪; মুসনাদে আহমাদ: ২৫৮৫৫; সহীহ ইবন হিব্বান: ৭১১০; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৬৭১২; সুনানে নাসাঈ ২০৩৭; তাবারানী, আদ-দু'আ: ১২৪৬)
কোনও কোনও হাদীছে যে মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারতের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায়, সে নিষেধাজ্ঞা সকলের জন্য সাধারণ নয়। তা কেবল তাদের জন্যই প্রযোজ্য, যারা বারবার কবরস্থানে যায়, সেখানে গিয়ে বিলাপ করে, পর্দারও বরখেলাফ করে ও নানারকম সীমালঙ্ঘনে লিপ্ত হয়। যারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় এবং কোনওরকম সীমালঙ্ঘনে লিপ্ত হয় না, এরকম মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত নিষেধ নয়। কবর যিয়ারতের যে দীনী উপকারিতা, তা যেমন পুরুষের জন্য প্রয়োজন, তেমনি নারীদের জন্যও প্রয়োজন বটে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
দুনিয়ার মোহ ঘুচানো ও আখিরাতের ফিকির বাড়ানোর লক্ষ্যে মাঝেমাঝে কবর যিয়ারত করা চাই।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: