মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

১৮. ফযীলত ও সম্মানের বর্ণনা

হাদীস নং: ৩৭৩
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.)-এর ফযীলত
হাদীস নং- ৩৭৩

হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাযিঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় ঘরে প্রবেশ করতেন তখন আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাযিঃ) তাঁর মা উম্মে আব্দকে নবী করীম (ﷺ)-এর ব্যক্তিত্ব, চরিত্র ও আকৃতি প্রত্যক্ষ করার জন্য ভিতরে প্রেরণ করতেন। সুতরাং তিনি সবকিছু দেখে এসে হযরত ইব্ন মাসউদকে বলতেন এবং তিনি আঁ হযরত (ﷺ)-এর অনুপম চরিত্র মাধুর্য অনুকরণ ও অনুসরণ করতেন।
عَنْ عَوْنٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ: «أَنَّهُ كَانَ إذَا دَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْتَهُ، أَرْسَلَ وَالِدَتَهُ أُمَّ عَبْدٍ تَنْظُرُ إِلَى هَدْيِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَدَلِّهِ، فَتُخْبِرُهُ بِذَلِكَ، فَيَتَشَبَّهُ بِهِ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আসওয়াদ ইব্ন ইয়াযীদ বর্ণনা করেন, আবূ মূসা (রা) বলেছেন, আমি এবং আমার ভাই যখন ইয়েমেন থেকে আগমণ করি এবং কিছুদিন মদীনায় অবস্থান করি, তখন আমরা এটা মনে করতাম যে, হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রা) আহলে বায়ত বা নবী পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। কেননা আমরা তাকে এবং তার আম্মাকে নবী করীম (সা)-এর খিদমতে কোন লৌকিকতা ছাড়াই যাতায়াত করতে দেখেছি। এমনিভাবে আবদুর রহমান ইব্ন ইয়াযীদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হযরত হুযায়ফা (রা)-এর নিকট এরূপ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি যার ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রের নবী করীম (সা)-এর সাথে সাদৃশ্য রয়েছে এবং যাতে আমরা তার কাছ থেকে তা শিখতে পারি। হযরত হুযায়ফা (রা) বলেন, আমার মতে রাসুলুল্লাহ (সা)-এর চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের সাথে ইব্ন উম্মে আবন অর্থাৎ হযরত ইব্ন মাসউদের কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে।
তিরমিযী যাযান (র)-এর সূত্রে হযরত হুযায়ফা (রা) থেকে বর্ণনা করেন, সাহাবাগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আপনি খলীফা নিয়োগ করে যেতেন। তিনি বললেন, যদি আমি তোমাদের উপর খলীফা নিয়োগ করে যাই এবং তোমরা তার নাফরমানী কর, তাহলে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হবে। তবে হুযায়ফা তোমাদের নিকট যে হাদীস বর্ণনা করে তা তোমরা সত্য মনে কর এবং আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ তোমাদেরকে যেভাবে (পবিত্র কুরআন) শিক্ষাদান করে, তোমরা সেভাবে তিলাওয়াত কর। এ হাদীসকে ইমাম তিরমিযী (র) হাসান বলেছেন। সুতরাং এ সমস্ত হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রা)-এর মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব কত ঊর্ধ্বে তা অনুধাবন করা যায়। কেননা হাদীসের দ্বারা এটাও প্রতীয়মান হয় যে, আঁ হযরত (সা)-এর দরবারে তাঁর এবং তাঁর আম্মার কিরূপ অধিকার ছিল। বেশি যাতায়াতের ফলে প্রত্যক্ষদর্শীরা মনে করতো যে, তাঁরা নবী পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এটাও প্রতীয়মান হয় যে, সম্মানিত সাহাবী হযরত হুযায়ফা (রা)-এর দৃষ্টিতে হযরত ইব্ন মাসউদ (রা)-এর চেয়ে বেশি নবী করীম (সা)-এর চরিত্র মাধুর্যের সাদৃশ্য ও নিকটতম আর কেউ ছিল না। তাঁর উক্তি বা বক্তব্য মানদন্ড হিসেবে গণ্য হতো। শেষে হাদীসের দ্বারা এটাও জানা যায় যে, আঁ হযরত (সা) খলীফা নির্বাচনের বিষয়টি এজন্য প্রয়োজন মনে করেন নি যে, হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রা) এবং হযরত হুযায়ফা (রা)-এর মত ব্যক্তিত্ব মুসলমানদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলেন, যাঁদের পথ-নির্দেশ ও পরিচালনার দ্বারা ইহকাল ও পরকালের যাবতীয় কার্যক্রম সুন্দরভাবে প্রতিপালন করা যেতে পারে। যেমন খিলাফতের কার্যক্রম। প্রথমত আল্লাহর কিতাব কুরআন ও রাসূলের সুন্নাত তথা হাদীস বিদ্যমান এবং এর সাথে তাঁদের মত এরূপ সন্মানিত ও সুবিখ্যাত সাহাবী ও বিদ্যমান, তাই খলীফা নির্বাচনের এতটুকু প্রয়োজন নেই। উক্ত আলোচনার দ্বারা এ ফলাফল লাভ করা যায় যে, সম্মানের দিক দিয়ে সর্বজন স্বীকৃত চার খলীফার পর ইলম ও রিওয়ায়েত, চরিত্র মাধুর্য ও ব্যক্তিত্বের দিক দিয়ে আঁ হযরত (সা)-এর সঠিক আদর্শের প্রতীক হলেন হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রা)।
হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ (রা) আঁ হযরত (সা)-এর বাড়িতে অবস্থান এবং সফর, আভ্যন্তরীন ও বাইরের যাবতীয় কাজকর্মে সাথী ও সহচর ছিলেন। নবী করীম (সা)-এর চাদরের হিফাযত এবং মাদুর ও বিছানা, লাঠির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাঁরই উপর ন্যস্ত ছিল। এ ছাড়া হুযূর (সা)-এর সওয়ারীর হিফাযত, তাঁর মিসওয়াক বহন করার গৌরবও তিনি অর্জন করেন। উযুর লোটা ও জুতা বহন করার দায়িত্বও তাঁর উপরই ন্যস্ত ছিল। মোট কথা যে সৌভাগ্যবান মানুষকে আঁ হযরত (সা)-এর এত অধিক খিদমতের দায়িত্ব একই সময় অর্পণ করা হয়, এমন ব্যক্তির কাছ থেকে রাসূল করীম (সা)-এর সীরাত সম্পর্কে অবগত না হলে আর কার কাছ থেকে অবগত হওয়া যাবে এবং তাঁর উক্তি মানদন্ড না হলে আর কার উক্তি মানদন্ড হবে। এ কারণেই হযরত ইমাম আযম আবূ হানীফা (র) শরীয়তের অধিকাংশ বিধান ফিকহর মাসয়ালা হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রা)-এর মত ও বর্ণনার উপর ভিত্তি করে লিপিবদ্ধ করেছেন।
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ৩৭৩ | মুসলিম বাংলা