মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
৪. নামায অধ্যায়
হাদীস নং: ১৯৫
কবরে প্রশ্ন ও উত্তর
১৯৫। হযরত বুরায়দা (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, আমরা নবী করীম (ﷺ)-এর সাথে এক জানাযায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। (মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর) তিনি তাঁর মা'-এর কবরে গমন করেন এবং ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন, যেন মনে হয় তাঁর পবিত্র দেহ থেকে রূহ বের হয়ে যাবে। আমরা আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)। আপনি এভাবে কেন কাঁদছেন ? তিনি বললেন : আমি আল্লাহর কাছে আমার 'মা -এর কবর যিয়ারতের অনুমতি চেয়েছিলাম, আমাকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। এরপর আমি তাঁর শাফায়াতের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করি কিন্তু তা দেয়া হয়নি।
অন্য এক রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, নবী করীম (ﷺ) তাঁর মা-এর কবর যিয়ারতের জন্য আল্লাহর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেন। অনুমতি দেওয়া হলে তিনি কবরের নিকট গমন করেন। কিছুসংখ্যক মুসলমান (সাহাবায়ে কিরাম) তাঁর সাথে ছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় কবরের নিকট অবস্থান করেন এবং ঐ সময় তিনি অঝোরে ক্রন্দন করতে থাকেন যে, মনে হয় তিনি আর থামবেন না। অতঃপর ক্রন্দনরত অবস্থায় আমাদের দিকে ফিরেন। তখন হযরত উমর (রাযিঃ) বলেন: হে নবী (ﷺ)! আমার পিতামাতা আপনার উপর কুরবান হোক, কি বিষয় আপনাকে এমনভাবে কাঁদিয়েছে? তিনি বললেন : আমি আল্লাহর নিকট আমার 'মা'-এর কবর যিয়ারতের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করি। অনুমতি দেওয়া হয়। অতঃপর তাঁর শাফায়াতের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করি। কিন্তু তা মঞ্জুর করা হয়নি। তাই 'মা'-এর মহব্বত আমাকে কাঁদিয়েছে। সাহাবায়ে কিরাম নবী করীম (ﷺ)-এর মহব্বতে কেঁদে ফেলেন।
অন্য এক রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, নবী করীম (ﷺ) তাঁর মা-এর কবর যিয়ারতের জন্য আল্লাহর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেন। অনুমতি দেওয়া হলে তিনি কবরের নিকট গমন করেন। কিছুসংখ্যক মুসলমান (সাহাবায়ে কিরাম) তাঁর সাথে ছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় কবরের নিকট অবস্থান করেন এবং ঐ সময় তিনি অঝোরে ক্রন্দন করতে থাকেন যে, মনে হয় তিনি আর থামবেন না। অতঃপর ক্রন্দনরত অবস্থায় আমাদের দিকে ফিরেন। তখন হযরত উমর (রাযিঃ) বলেন: হে নবী (ﷺ)! আমার পিতামাতা আপনার উপর কুরবান হোক, কি বিষয় আপনাকে এমনভাবে কাঁদিয়েছে? তিনি বললেন : আমি আল্লাহর নিকট আমার 'মা'-এর কবর যিয়ারতের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করি। অনুমতি দেওয়া হয়। অতঃপর তাঁর শাফায়াতের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করি। কিন্তু তা মঞ্জুর করা হয়নি। তাই 'মা'-এর মহব্বত আমাকে কাঁদিয়েছে। সাহাবায়ে কিরাম নবী করীম (ﷺ)-এর মহব্বতে কেঁদে ফেলেন।
عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي جَنَازَةٍ، فَأَتَى قَبْرَ أُمِّهِ، وَهُوَ يَبْكِي أَشَدَّ الْبُكَاءِ، حَتَّى كَادَتْ نَفْسُهُ تَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ جَنْبَيْهِ، قَالَ: قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا يُبْكِيكَ؟ قَالَ: «اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي فِي زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّ مُحَمَّدٍ، فَأَذِنَ لِي، وَاسْتَأْذَنْتُهُ فِي الشَّفَاعَةِ فَأَبَى عَلَيَّ» ، وَفِي رِوَايَةٍ، قَالَ: " اسْتَأْذَنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ، فَأُذِنَ لَهُ، فَانْطَلَقَ وَانْطَلَقَ مَعَهُ الْمُسْلِمُونَ حَتَّى انْتَهَوْا إِلَى قَرِيبٍ مِنَ الْقَبْرِ، فَمَكَثَ الْمُسْلِمُونَ، وَمَضَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَكَثَ طَوِيلًا، ثُمَّ اشْتَدَّ بُكَاؤُهُ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ لَا يَسْكُنُ، فَأَقْبَلَ، وَهُوَ يَبْكِي، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ: مَا أَبْكَاكَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي؟ قَالَ: اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي فِي زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّي، فَأَذِنَ لِي، وَاسْتَأْذَنْتُهُ فِي الشَّفَاعَةِ، فَأَبَى، فَبَكَيْتُ رَحْمَةً لَهَا، وَبَكَى الْمُسْلِمُونَ رَحْمَةً لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাদীসে বর্ণিত বিষয়টি অত্যন্ত নাজুক ও বিতর্কিত হওয়ায় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উলামায়ে কিরাম (علماء متقدمين و متأخرين) বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন। পূর্ববর্তী (متقدمين) আলিমদের মতে হুযূর (সা)-এর পিতামাতা ইসলামের উপর ইনতিকাল করেননি। পরবর্তী (متأخرين) আলিমদের মতে তাঁরা ইসলামের উপর ইনতিকাল করেছেন। পূর্ববর্তী আলিমগণ উপরে বর্ণিত হাদীস সহ অন্যান্য হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। এই হাদীস দ্বারা উভয়ের কাফির অবস্থায় মৃত্যু হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে তাঁরা পবিত্র কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতসমূহ পেশ করে থাকেন। আল্লাহ বলেছেন :
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَى
"নবী করীম (সা) এবং মুমিনদের জন্য উচিত নয় যে, কোন মুশরিকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, যদি তারা নিকট-আত্মীয়ও হয়।”
অন্যত্র বলা হয়েছে : وَلَا تُسْأَلُ عَنْ أَصْحَابِ الْجَحِيمِ “জাহান্নামীদের সম্পর্কে তোমাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না।"
পরবর্তী (متأخرين) আলিমগণ এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করেছেন এবং তাঁদের মতে আঁ হযরত (সা)-এর পিতামাতা মুসলমান ছিলেন। তাঁদের মতামতের স্বপক্ষে তিনটি ব্যাখ্যা পেশ করা যায়। প্রথমত আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে জীবিত করে ঈমান দাম করেছেন। এ সম্পর্কে তাঁদের নিকট অনেক হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। এগুলো তারা সহীহ ও হাসান বলে প্রমাণ করে থাকেন। হয়ত পূর্ববর্তী আলিমগণের এতটুকু চিন্তা ও গবেষণা করার অবকাশ হয়নি। কেননা আল্লাহ বলেছেন :
وَاللَّهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَنْ يَشَاءُ
দ্বিতীয়ত হুযূর (সা)-এর পিতামাতা সর্বশেষ নবীর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী যুগ পেয়েছেন এবং আল্লাহ তা'আলা তাওহীদবাদী ও আনুগত্য প্রকাশকারীকে শাস্তি প্রদান করেন না। যেমন পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেঃ أَنَّ الْعَذَابَ عَلَى مَنْ كَذَّبَ وَتَوَلَّى
“নিশ্চয়ই শাস্তি তার জন্য, যে দীনকে মিথ্যা বলে এবং এর থেকে ফিরে থাকে।
তৃতীয়ত তাঁরা হযরত ইবরাহীম আলাইহি সালামের দীনে বিশ্বাসী ছিলেন, যার ফলে তাঁরা আযাব থেকে মুক্তি পাবেন। মোট কথা এটা অত্যন্ত আদব ও সতর্কতার বিষয়। প্রকাশ্যভাবে তাঁদেরকে কুফরীর দিকে ইঙ্গিত করা উচিত নয়। যদি এ বিষয়ে কেউ কোন দলীলও পেয়ে থাকে, তবুও কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা শ্রেয়। বলা বাহুল্য, বিশ্বের সকল মানুষ হুযূর (সা)-এর পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ। সুতরাং তাঁদের প্রতি কিভাবে কুফরীর অভিযোগ উত্থাপন করা সম্ভব ? পক্ষান্তরে এটা এরূপ কোন মাসয়ালা নয় যে, যার উপর প্রত্যেক মুসলমানকে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে; এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়া ঈমান পূর্ণাঙ্গ হবে না। সুতরাং কোন অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে চিন্তা করে অন্তরে সন্দেহ পোষণ করা এবং ঈমানের মধ্যে ত্রুটি সৃষ্টি করার কোন প্রয়োজন নেই।
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَى
"নবী করীম (সা) এবং মুমিনদের জন্য উচিত নয় যে, কোন মুশরিকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, যদি তারা নিকট-আত্মীয়ও হয়।”
অন্যত্র বলা হয়েছে : وَلَا تُسْأَلُ عَنْ أَصْحَابِ الْجَحِيمِ “জাহান্নামীদের সম্পর্কে তোমাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না।"
পরবর্তী (متأخرين) আলিমগণ এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করেছেন এবং তাঁদের মতে আঁ হযরত (সা)-এর পিতামাতা মুসলমান ছিলেন। তাঁদের মতামতের স্বপক্ষে তিনটি ব্যাখ্যা পেশ করা যায়। প্রথমত আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে জীবিত করে ঈমান দাম করেছেন। এ সম্পর্কে তাঁদের নিকট অনেক হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। এগুলো তারা সহীহ ও হাসান বলে প্রমাণ করে থাকেন। হয়ত পূর্ববর্তী আলিমগণের এতটুকু চিন্তা ও গবেষণা করার অবকাশ হয়নি। কেননা আল্লাহ বলেছেন :
وَاللَّهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَنْ يَشَاءُ
দ্বিতীয়ত হুযূর (সা)-এর পিতামাতা সর্বশেষ নবীর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী যুগ পেয়েছেন এবং আল্লাহ তা'আলা তাওহীদবাদী ও আনুগত্য প্রকাশকারীকে শাস্তি প্রদান করেন না। যেমন পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেঃ أَنَّ الْعَذَابَ عَلَى مَنْ كَذَّبَ وَتَوَلَّى
“নিশ্চয়ই শাস্তি তার জন্য, যে দীনকে মিথ্যা বলে এবং এর থেকে ফিরে থাকে।
তৃতীয়ত তাঁরা হযরত ইবরাহীম আলাইহি সালামের দীনে বিশ্বাসী ছিলেন, যার ফলে তাঁরা আযাব থেকে মুক্তি পাবেন। মোট কথা এটা অত্যন্ত আদব ও সতর্কতার বিষয়। প্রকাশ্যভাবে তাঁদেরকে কুফরীর দিকে ইঙ্গিত করা উচিত নয়। যদি এ বিষয়ে কেউ কোন দলীলও পেয়ে থাকে, তবুও কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা শ্রেয়। বলা বাহুল্য, বিশ্বের সকল মানুষ হুযূর (সা)-এর পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ। সুতরাং তাঁদের প্রতি কিভাবে কুফরীর অভিযোগ উত্থাপন করা সম্ভব ? পক্ষান্তরে এটা এরূপ কোন মাসয়ালা নয় যে, যার উপর প্রত্যেক মুসলমানকে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে; এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়া ঈমান পূর্ণাঙ্গ হবে না। সুতরাং কোন অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে চিন্তা করে অন্তরে সন্দেহ পোষণ করা এবং ঈমানের মধ্যে ত্রুটি সৃষ্টি করার কোন প্রয়োজন নেই।


বর্ণনাকারী: