মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৪. নামায অধ্যায়

হাদীস নং: ১৯২
জানাযার বর্ণনা
১৯২। হযরত বুরায়দা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেনঃ নবী করীম (ﷺ)-এর জন্য লহদ (কবর) তৈরী করা হয়েছে এবং তাঁকে কিবলার দিকে করে নামানো হয়েছে এবং তাঁর কবরের উপর কাঁচা ইট স্থাপন করা হয়েছে।
عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «أُلْحِدَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأُخِذَ مِنْ قِبَلِ الْقِبْلَةِ، وَنُصِبَ عَلَيْهِ اللَّبِنُ نَصْبًا»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এই হাদীসে দু'টি বিষয় উল্লেখযোগ্য এবং এ বিষয় দু’টি নিয়ে ইমামদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। প্রথম লহদ (لحد) এবং দ্বিতীয় হলো শক্ (شق) অর্থাৎ মৃতের জন্য লহদ (বগলী) কবর উত্তম অথবা সিন্দুকী কবর উত্তম এটা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মতে বগলী কবর এবং ইমাম শাফিঈ (র) -এর মতে সিন্দুকী কবর উত্তম ।
ইমাম আবূ হানীফা (র) স্বীয় মাযহাবের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত হাদীস পেশ করেন- اللحد لنا والشق لغيرنا "অর্থাৎ লহদ কবর আমাদের জন্য এবং শক্ বা সিন্দুকী কবর অন্যদের জন্য।" কেননা ইয়াহুদীদের মধ্যে এ ধরনের কবরের প্রচলন ছিল। দ্বিতীয় দলীল হলো এই যে, আঁ হযরত (সা)-এর জন্য লহদ বা বগলী কবর তৈরি করা হয়েছিল। সুতরাং লহদ কবরের ফযীলত সম্পর্কে এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে? অবশ্য সাহাবায়ে কিরাম (রা) দু'প্রকার কবর খননের জন্যই লোক ডেকেছিলেন এবং বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছিল যে, যে দল প্রথম আসবে, তারা কাজ করবে। অবশেষে লহদ কবর খননকারী লোকজন প্রথম আগমণ করে, তাই হুযূর (সা)-এর জন্য লহদ কবর তৈরি করা হয়। তৃতীয় দলীল হলো এই যে, মুসলিম শরীফের রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, হযরত সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা) নিজের জন্য লহদ কবর তৈরি করার ব্যাপারে ওসীয়ত করেছেন। এরূপ একজন সম্মানিত ও শীর্ষস্থানীয় সাহাবীর নিজের জন্য লহদ কবর পসন্দ করা এর উত্তম হওয়ার প্রমাণ বহন করে। সুতরাং উপরোক্ত দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, লহদ কবর সুন্নত।
হযরত ইমাম শাফিঈ (র) দ্বিতীয় প্রকার অর্থাৎ সিন্দুক কবর উত্তম হওয়ার স্বপক্ষে মুসনাদে ইমাম শাফিঈ-এর মধ্যে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করেনঃ سل رسول الله صلى الله عليه وسلم من قبل رأسه "রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে মাথার দিক থেকে বের করা হয়েছে এবং কবরে নামানো হয়েছে। এর পদ্ধতি এই যে, জানাযা কবরের কিনারায় এভাবে রাখতে হবে যাতে মৃতের মাথার দিক থেকে সহজেই কবরে নামানো যায়। এই পদ্ধতি এরূপও হতে পারে যে, জানাযা কবরের শিয়রে রাখতে হবে এবং মৃতের পা কবরের শিয়রে থাকবে এবং মৃতকে পা-এর দিক থেকে কবরে নামাতে হবে । কেউ কেউ এই মত গ্রহণ করেছেন এবং তাদের মাযহাবের পক্ষে কিছু রিওয়ায়েত রয়েছে। কিন্তু ইমাম শাফিঈ (র) থেকে সিন্দুকের রিওয়ায়েত বর্ণিত আছে। শাফিঈ মাযহাবের জওয়াবে হানাফী মাযহাবের দলীল হলো এই যে, হুযুর (সা)-এর দাফন সংক্রান্ত বিষয়ে যে সমস্ত হাদীস বর্ণিত আছে, এগুলোর মধ্যে মত্যনৈক্য রয়েছে। কেননা তাঁকে কিবলার দিক থেকে কবরে নামানো হয়েছে বলেও সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে। অধিকন্তু ইবনে আবী শায়বা স্বীয় মুসান্নাফ নামক গ্রন্থে এবং আবূ দাউদ স্বীয় মারাসিলে ইবরাহীম নখঈ (র) থেকে মরফূ' মুরসাল হাদীস বর্ণনা করেন যে, আঁ হযরত (সা)-কে কবরে কিবলার দিকে মুখ করে নামানো হয়েছে, মাথার দিক থেকে বের করা হয়নি। ইসতিকবালের নিয়ম বা পদ্ধতি হলো এই যে, জানাযা কবর থেকে কিবলার দিকে মুখ করে রাখা হবে এবং মৃতকে কবরে যে ব্যক্তি নামাবে, তিনি কিবলার দিকে হয়ে মৃতকে কবরে নামাবেন।
এমনিভাবে ইমাম ইবনে মাজাহ স্বীয় হাদীস গ্রন্থ সুনানে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে মরফু' হাদীস বর্ণনা করেন যে, হুযুর (সা)-কে কবরে কিবলামুখী করে নামানো হয়েছিল। যখন হাদীসসমূহের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, তখন বাধ্য হয়ে কিয়াসের উপর নির্ভর করতে হবে। কিয়াস হানাফী মাযহাবকে সমর্থন করে। কেননা সমস্ত উত্তম কাজে কিবলামুখী হওয়া উত্তম বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
যদি কেউ বলে, শাফিঈ মাযহাবের স্বপক্ষে সহীহ হাদীস রয়েছে, তা হলে এর জওয়াবে বলা যায় যে, ঐ সময় একটি বিশেষ ওযর বিদ্যমান ছিল, যার ফলে কিবলামুখী হওয়ার সুন্নতের উপর আমল করা হয়নি। কারণ পবিত্র কবর দেওয়ালের মিলিত হওয়ার ফলে কিবলার দিকে জানাযা রাখা সম্ভব হয়নি। হানাফী মাযহাবের পক্ষে হুযূর (সা)-এর আমলের সহীহ হাদীস তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। ইমাম তিরমিযী (র) হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সা) রাতে কবরে নামেন এ জন্য আলোর ব্যবস্থা করা হয়। তিনি মৃতকে কিবলার দিক থেকে গ্রহণ করেন এবং বলেন : আল্লাহ্ তোমার উপর রহম করুন, তুমি আল্লাহর ভয়ে অনেক ক্রন্দন করতে এবং অধিক পরিমাণে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতকারী ছিলে, অতঃপর চার তাকবীর বলেন। এই হাদীসকে ইমাম তিরমিযী হাসান বলেছেন। সুতরাং এই হাদীসকে কিভাবে অস্বীকার করা যাবে? অতঃপর সাহাবায়ে কিরামের আমল এরজন্য দলীল হিসেবে রয়েছে। কেননা ইবনে আবী শায়বা বর্ণনা করেন যে, হযরত আলী (রা) ইয়াযীদ ইবনে মুকাফ্ফাফ-এর জানাযায় চার তাকবীর বলেছেন এবং তাঁকে কিবলার দিক থেকে নামান হয়েছে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ১৯২ | মুসলিম বাংলা