মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৪. নামায অধ্যায়

হাদীস নং: ১৯৩
কবরে প্রশ্ন ও উত্তর
১৯৩। হযরত সা'দ ইবনে উবাদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন : যখন একজন মুমিনকে তার কবরে রাখা হয়, তখন তার নিকট ফিরিশতা আগমণ করেন এবং বসানোর পর তাকে বলেন তোমার রব কে? তখন তিনি বলেন: আল্লাহ। ফিরিশতা পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, তোমার নবী কে? তিনি বলেনঃ মুহাম্মাদ (ﷺ)। অতঃপর ফিরিশতা জিজ্ঞাসা করেন, তোমার দীন কি ? মুমিন বলেনঃ ইসলাম। হুযূর (ﷺ) বলেন : অতঃপর তার কবর চওড়া ও বিস্তৃত করা হয় এবং বেহেশতে তার যে আসন রয়েছে, তাকে তা দেখানো হয়।
কিন্তু ঐ মৃত ব্যক্তি যদি কাফির হয়, তাহলে ফিরিশতা তাকে বসানোর পর জিজ্ঞাসা করেন, তোমার রব কে? তখন সে একজন ভুলে যাওয়া লোকের মত বলে, আফসোস, আমি জানি না। অতঃপর ফিরিশতা জিজ্ঞাসা করেন, তোমার নবী কে? সে বলে, আফসোস, আমি জানি না। এরপর (তৃতীয়বারের মত) ফিরিশতা তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার দীন কি? তখন ঐ কাফির আতঙ্কিত অবস্থায় বলবে, আফসোস, আমি জানি না। অতঃপর তার কবর সংকীর্ণ করে দেওয়া হয় এবং দোযখে তার স্থানটি দেখানো হয়। এরপর ফিরিশতা তার উপর এমন জোরে আঘাত করেন যে, যার আওয়াজ মানুষ ও জ্বীন ব্যতীত সবকিছুই শুনতে পায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) পবিত্র কুরআনের এই আয়াত তিলাওয়াত করেন
يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ
عَنْ رَجُلٍ، عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِذَا وُضِعَ الْمُؤْمِنُ فِي قَبْرِهِ أَتَاهُ الْمَلَكُ، فَأَجْلَسَهُ، فَقَالَ: مَنْ رَبُّكَ؟ فَقَالَ: اللَّهُ، قَالَ: وَمَنْ نَبِيُّكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: وَمَا دِينُكَ؟ قَالَ: الْإِسْلَامُ، قَالَ: فَيُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ، وَيُرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ، فَإِذَا كَانَ كَافِرًا أَجْلَسَهُ الْمَلَكُ، فَقَالَ: مَنْ رَبُّكَ؟ قَالَ: هَاهْ لَا أَدْرِي، كَالْمُضِلِّ هُوَ شَيْئًا، فَيَقُولُ: مَنْ نَبِيُّكَ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ لَا أَدْرِي، كَالْمُضِلِّ شَيْئًا، فَيَقُولُ: مَا دِينُكَ؟ فَيُقَالُ: هَاهْ، لَا أَدْرِي، قَالَ: فَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ، وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ، فَيَضْرِبُهُ ضَرْبَةً يَسْمَعُهُ كُلُّ شَيْءٍ إِلَّا الثَّقَلَيْنِ: الْجِنَّ وَالْإِنْسَ، ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: {يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ} [إبراهيم: 27]

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে যে আয়াতটি উল্লেখ করা হয়েছে তা দ্বারা বোঝা যায়, যারা সুদৃঢ় কথা অর্থাৎ কালেমায়ে তায়্যিবার উপর ঈমান আনবে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে দুনিয়ায়ও দীনের উপর মজবুত রাখবেন অর্থাৎ প্রকৃত ঈমানদার কোনও পরিস্থিতিতেই বিভ্রান্তির শিকার হবে না। বিপথগামিতার কোনও ডাকে তারা সাড়া দেবে না। এমনিভাবে কবর ও হাশর তথা আখিরাতের প্রতিটি ঘাঁটিতে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে অবিচল রাখবেন। কবরের প্রশ্ন ও হাশরের ময়দানের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি, কোনও অবস্থায়ই তারা দিশেহারা হবে না। আল্লাহ তা'আলা প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদেরকে সাহায্য করবেন। কবর আখিরাতের প্রথম ঘাঁটি। এখানে যে ব্যক্তি মুনকার নাকীরের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে, কবর তার জন্য জান্নাতের টুকরায় পরিণত হবে। এখানে যে শান্তি পেয়ে যাবে, পরবর্তী সকল ঘাঁটি তার জন্য আসান হয়ে যাবে। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা তা বোঝা যায়। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে ওই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে শামিল রাখুন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কবরের সাওয়াল-জাওয়াব সত্য। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।

খ. কবরে মুনকার-নাকীরের প্রশ্নের যাতে সঠিক উত্তর দেওয়া যায়, সে লক্ষ্যে আমাদের কর্তব্য কালেমায়ে তায়্যিবার প্রতি অবিচল ঈমান রাখা এবং এর দাবি অনুযায়ী শরী'আত মোতাবেক জীবনযাপন করা। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তাওফীক দিন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান