মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
৪. নামায অধ্যায়
হাদীস নং: ৯৯
নামায শুরু করার বর্ণনা
৯৯। হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে এক ব্যক্তি মদীনার এই ঘোষণা প্রদান করে যে, কোন সূরা পাঠ করা ব্যতীত কোন নামায (সহীহ) হবে না। যদিও পঠিত সূরা ফাতিহাতুল কিতাব (الحمد) হোক না কেন।
عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: نَادَى مُنَادِي رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ: «لَا صَلَاةَ إِلَّا بِقِرَاءَةٍ وَلَوْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আল্লামা তিবরানী আওসাত নামক গ্রছে ইমাম আবু বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ আমাকে হুযুর (সা) মদীনাবাসীদের নিকট ঘোষণা দেওয়ার জন্য নির্দেশ। প্রদান করেছেন। দারে কুতনীও প্রায় একই ধরনের বাক্যের দ্বারা হাদীস বর্ণনা করেছেন امرني رسول الله صلى الله عليه وسلم ان انادي في اهل المدينة নামাযের মধ্যে আলহামদু পাঠ করা এবং এর সাথে সূরা মিলানো ফরয, ওয়াজিব অথবা সুন্নত এটা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম শাফিঈ (র) এবং ইমাম মালিক (র)-এর মতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা। ফরয এবং এর সাথে সূরা মিলানো সুন্নত। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে সূরা ফাতিহা পড়া এবং এর সাথে সূরা মিলানো ওয়াজিব। সূরা ফাতিহা ফরয হওয়া সম্পর্কে ইমাম শাফিঈ (র) ও ইমাম মালিক (র)-এর দলীল মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীস من صلى صلاة لم يقرأ فيها بام القرآن فهي خداج غير تمام "যে ব্যক্তি একরূপ নামায আদায় করবে যাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা হয়নি, তাহলে এরূপ নামায অসম্পূর্ণ (خداج) হবে।" এ কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। সূরা মিলানো সুন্নত হওয়া সম্পর্কে এই দলীল পেশ করেন যে, হুযূর সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম দু'রাকাআতে সর্বদা সূরা মিলিয়েছেন।
ইমাম আবূ হানীফা (র) স্বীয় মাযহাবে কিরাআত ফরয হওয়া সম্পর্কে কয়েকটি দলীল পেশ করেছেন। প্রথম দলীল পবিত্র কুরআনের আয়াত فاقرؤا ما تيسر من القرآن “যতটুকু সম্ভব পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত কর।" এখানে কুরআনের আয়াতকে নির্দিষ্ট করা হয়নি এবং কমপক্ষে একটি পূর্ণাঙ্গ আয়াত এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অতঃপর হাদীস দ্বারা পবিত্র কুরআনের অকাট্য নির্দেশের মধ্যে ফাতিহাকে অন্তর্ভুক্ত করে এর সাধারণ (عام) প্রয়োগকে কিভাবে ভঙ্গ করা যায়? কেননা এটা এক প্রকার রহিতকরণ অর্থাৎ এই প্রয়োগের দ্বারা একটি বস্তুকে সামগ্রিকভাবে অবস্থান থেকে কোন অংশের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে তা স্বীয় সামগ্রিকতার মর্যাদা হারিয়ে ফেলে। সুতরাং এটা রহিতকরণ হয়ে যায় এবং রহিতকারী বস্তু রদকৃত বস্তু থেকে শক্তিশালী হওয়া উচিত। অথচ হাদীস পবিত্র কুরআন থেকে স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল। সুতরাং আবূ হানীফা (র) পবিত্র কুরআনের আয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকে সাধারণভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা ফরয বলে মতামত পেশ করেছেন। পক্ষান্তরে হাদীস যেহেতু আমল ওয়াজিব করে থাকে, তাই এই দৃষ্টিকোণ থেকে ফাতিহা পাঠ করা এবং সূরা মিলানো ওয়াজিব বলে ঘোষণা করেছেন। ফলে পবিত্র কুরআন ও হাদীস উভয়ের উপর আমল হয়ে যায়। অপরপক্ষে যাঁরা সূরা ফাতিহা পাঠ করা ফরয বলে মনে করেন, তাঁদের মাযহাবমতে কুরআনের আয়াত পরিত্যাগ বাধ্যতামূলক হয়ে যায় এবং সুন্নতের উপর আমল হয়ে থাকে।
দ্বিতীয় দলীল হিসেবে তিনি ঐ হাদীস পেশ করেন যাতে হুযূর (সা) একজন আরববাসীকে সমস্ত আহকামের সাথে নামাযের তালীম দিয়েছেন কিন্তু এতে ফাতিহার উল্লেখ নেই। যদি সূরা ফাতিহা পাঠ করা ফরয হতো, তাহলে এটা ত্যাগ করা কিভাবে সম্ভব হলো? হ্যাঁ, তবে এতটুকু বলা হয়েছেঃ ثم اقرأ ما تيسر معك من القرآن (অতঃপর যতটুকু সম্ভব পবিত কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত কর)।
তৃতীয় দলীল হিসেবে তিনি হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-এর হাদীস পেশ করেছেন। এই হাদীস সূরা ফাতিহাকে ফরয বলে মতামত প্রদানকারী দলও তাঁদের দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন, কিন্তু হাদীসের বাক্য প্রকৃতপক্ষে তাঁদের পক্ষ সমর্থন করে না, বরং হানাফী মাযহাবের পক্ষ সমর্থন করে থাকে। হাদীসে বলা হয়েছে فهي خداج অর্থাৎ সূরা ফাতিহা ব্যতীত নামায খিদাজ হবে। অভিধানে خداج -এর অর্থ নাকিস বা অসম্পূর্ণ। হাদীসে غيرتام বলে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, যার অর্থ অসম্পূর্ণ। কিন্তু এখানে جداج নামায ফাসিদ হওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করা না হলে ওয়াজিব ত্যাগ করা হয়। এতে নামায অসম্পূর্ণ হয়। যদি ফাতিহা পাঠ করা ফরয হতো তাহলে তা পরিত্যাগ করার ফলে নামায ফাসিদ ও বাতিল হয়ে যেত। হাদীসে غير تام বলা হতো না।। চতুর্থ দলীল বর্ণিত হাদীস। এতে বলা হয়েছে ولو بفاتحة الكتاب (যদিও কেবল সূরা ফাতিহা হয়) এতে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এখানে ফাতিহার তিলাওয়াতকে নির্দিষ্ট করা হয়নি। অর্থাৎ কুরআনের যে কোন অংশ হোক এবং যদিও তা সূরা ফাতিহা হোক না কেন।
পঞ্চম দলীল হলো এই যে, যদি সূরা ফাতিহাকে ফরয মেনে নিয়ে হাদীসের এই অর্থ গ্রহণ
করা হয় যে, নামায শুরু থেকে সহীহ হবে না, তা হলে এখানে এটাও বলা যায় যে, হুযুর (সা) আরো বলেছেন:
لا صلاة لجار المسجد إلا في المسجد ولا صلاة للعبد الآبق حتى يرجع
“মসজিদের প্রতিবেশীর নামায মসজিদ ব্যতীত হবে না" অথবা "পলাতক গোলামের নামায হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে ফিরে না আসে," لا وضوء لمن لم يسم الله "যে ব্যক্তি উযুর পূর্বে বিসমিল্লাহ বলবে না, তার উযু হবে না।" অথচ এই সবগুলো হাদীসেই বর্ণিত কাজগুলো পূর্ণাঙ্গ (كمال) না হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিন্তু মূল বিষয় না হওয়ার কথা বলা হয়নি।
ষষ্ঠ দলীল হলো এই যে, সূরা ফাতিহা ফরয হওয়ার মতামতের উপর অপর একটি প্রশ্ন হতে পারে। তা হলো এই যে, কোন সুরা মিলানো এর সাথে সাথে ফরয হয়ে যায়। কেননা لا صلاة إلا بفاتحة الكتاب এর সাথে وسورة معها রয়েছে। এমতাবস্থায় ফাতিহার ফরযের সাথে সূরা মিলানোকে ফরয স্বীকার করতে হয়। কিন্তু অপর পক্ষ এটা মেনে নিতে সম্মত নন।
ইমাম আবূ হানীফা (র) স্বীয় মাযহাবে কিরাআত ফরয হওয়া সম্পর্কে কয়েকটি দলীল পেশ করেছেন। প্রথম দলীল পবিত্র কুরআনের আয়াত فاقرؤا ما تيسر من القرآن “যতটুকু সম্ভব পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত কর।" এখানে কুরআনের আয়াতকে নির্দিষ্ট করা হয়নি এবং কমপক্ষে একটি পূর্ণাঙ্গ আয়াত এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অতঃপর হাদীস দ্বারা পবিত্র কুরআনের অকাট্য নির্দেশের মধ্যে ফাতিহাকে অন্তর্ভুক্ত করে এর সাধারণ (عام) প্রয়োগকে কিভাবে ভঙ্গ করা যায়? কেননা এটা এক প্রকার রহিতকরণ অর্থাৎ এই প্রয়োগের দ্বারা একটি বস্তুকে সামগ্রিকভাবে অবস্থান থেকে কোন অংশের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে তা স্বীয় সামগ্রিকতার মর্যাদা হারিয়ে ফেলে। সুতরাং এটা রহিতকরণ হয়ে যায় এবং রহিতকারী বস্তু রদকৃত বস্তু থেকে শক্তিশালী হওয়া উচিত। অথচ হাদীস পবিত্র কুরআন থেকে স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল। সুতরাং আবূ হানীফা (র) পবিত্র কুরআনের আয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকে সাধারণভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা ফরয বলে মতামত পেশ করেছেন। পক্ষান্তরে হাদীস যেহেতু আমল ওয়াজিব করে থাকে, তাই এই দৃষ্টিকোণ থেকে ফাতিহা পাঠ করা এবং সূরা মিলানো ওয়াজিব বলে ঘোষণা করেছেন। ফলে পবিত্র কুরআন ও হাদীস উভয়ের উপর আমল হয়ে যায়। অপরপক্ষে যাঁরা সূরা ফাতিহা পাঠ করা ফরয বলে মনে করেন, তাঁদের মাযহাবমতে কুরআনের আয়াত পরিত্যাগ বাধ্যতামূলক হয়ে যায় এবং সুন্নতের উপর আমল হয়ে থাকে।
দ্বিতীয় দলীল হিসেবে তিনি ঐ হাদীস পেশ করেন যাতে হুযূর (সা) একজন আরববাসীকে সমস্ত আহকামের সাথে নামাযের তালীম দিয়েছেন কিন্তু এতে ফাতিহার উল্লেখ নেই। যদি সূরা ফাতিহা পাঠ করা ফরয হতো, তাহলে এটা ত্যাগ করা কিভাবে সম্ভব হলো? হ্যাঁ, তবে এতটুকু বলা হয়েছেঃ ثم اقرأ ما تيسر معك من القرآن (অতঃপর যতটুকু সম্ভব পবিত কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত কর)।
তৃতীয় দলীল হিসেবে তিনি হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-এর হাদীস পেশ করেছেন। এই হাদীস সূরা ফাতিহাকে ফরয বলে মতামত প্রদানকারী দলও তাঁদের দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন, কিন্তু হাদীসের বাক্য প্রকৃতপক্ষে তাঁদের পক্ষ সমর্থন করে না, বরং হানাফী মাযহাবের পক্ষ সমর্থন করে থাকে। হাদীসে বলা হয়েছে فهي خداج অর্থাৎ সূরা ফাতিহা ব্যতীত নামায খিদাজ হবে। অভিধানে خداج -এর অর্থ নাকিস বা অসম্পূর্ণ। হাদীসে غيرتام বলে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, যার অর্থ অসম্পূর্ণ। কিন্তু এখানে جداج নামায ফাসিদ হওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করা না হলে ওয়াজিব ত্যাগ করা হয়। এতে নামায অসম্পূর্ণ হয়। যদি ফাতিহা পাঠ করা ফরয হতো তাহলে তা পরিত্যাগ করার ফলে নামায ফাসিদ ও বাতিল হয়ে যেত। হাদীসে غير تام বলা হতো না।। চতুর্থ দলীল বর্ণিত হাদীস। এতে বলা হয়েছে ولو بفاتحة الكتاب (যদিও কেবল সূরা ফাতিহা হয়) এতে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এখানে ফাতিহার তিলাওয়াতকে নির্দিষ্ট করা হয়নি। অর্থাৎ কুরআনের যে কোন অংশ হোক এবং যদিও তা সূরা ফাতিহা হোক না কেন।
পঞ্চম দলীল হলো এই যে, যদি সূরা ফাতিহাকে ফরয মেনে নিয়ে হাদীসের এই অর্থ গ্রহণ
করা হয় যে, নামায শুরু থেকে সহীহ হবে না, তা হলে এখানে এটাও বলা যায় যে, হুযুর (সা) আরো বলেছেন:
لا صلاة لجار المسجد إلا في المسجد ولا صلاة للعبد الآبق حتى يرجع
“মসজিদের প্রতিবেশীর নামায মসজিদ ব্যতীত হবে না" অথবা "পলাতক গোলামের নামায হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে ফিরে না আসে," لا وضوء لمن لم يسم الله "যে ব্যক্তি উযুর পূর্বে বিসমিল্লাহ বলবে না, তার উযু হবে না।" অথচ এই সবগুলো হাদীসেই বর্ণিত কাজগুলো পূর্ণাঙ্গ (كمال) না হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিন্তু মূল বিষয় না হওয়ার কথা বলা হয়নি।
ষষ্ঠ দলীল হলো এই যে, সূরা ফাতিহা ফরয হওয়ার মতামতের উপর অপর একটি প্রশ্ন হতে পারে। তা হলো এই যে, কোন সুরা মিলানো এর সাথে সাথে ফরয হয়ে যায়। কেননা لا صلاة إلا بفاتحة الكتاب এর সাথে وسورة معها রয়েছে। এমতাবস্থায় ফাতিহার ফরযের সাথে সূরা মিলানোকে ফরয স্বীকার করতে হয়। কিন্তু অপর পক্ষ এটা মেনে নিতে সম্মত নন।
