মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৪. নামায অধ্যায়

হাদীস নং: ১০০
নামাযে উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পড়বে না
১০০। হযরত আনাস (রাযিঃ) বলেন : নবী করীম (ﷺ), হযরত আবু বকর (রাযিঃ) এবং হযরত উমর (রাযিঃ) উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম পাঠ করতেন না।
عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَبُو بَكْرٍ، وَعُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا «لَا يَجْهَرُونَ بِبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আলহামদু লিল্লাহ্-এর পূর্বে উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পড়া বা না পড়া সম্পর্কে ইমাম
শাফিঈ (র) এবং ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইমাম আবু হানীফা (র) বর্ণিত হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে বিসমিল্লাহ উচ্চস্বরে না পড়ার পক্ষে মতামত পেশ করেছেন। সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈনের মধ্যে হযরত ইবনে মাসউদ (রা), হযরত ইবনে যুবায়র (রা), হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফা (রা). হযরত হাসান (রা), হযরত শা'বা (র), হযরত ইবরাহীম নখঈ (র), ইমাম আওযাঈ (র), ইমাম সুফিয়ান সওরী (র), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (র), হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীয (র), হযরত আমাস (র), ইমাম যুহরী (র), হযরত মুজাহিদ (র), হযরত হাম্মাদ (র), ইমাম আহমদ (র) এবং হযরত ইসহাক (র) এই মত পোষণ করতেন। এই বিষয়ে ইমাম বুখারী (র) হযরত আনাস (রা) থেকে এক হাদীস বর্ণনা করেছেনঃ
أن النبي صلى الله عليه وسلم وأبا بكر وعمر كانوا يفتتحون الصلاة بالحمد لله رب العالمين
নবী করীম (সা) এবং হযরত আবূ বকর (রা) ও হযরত উমর (রা) আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন দ্বারা নামায শুরু করতেন। মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে :
صليت خلف النبي صلى الله عليه وسلم وأبي بكر وعمر وعثمان فلم أسمع أحدا منهم يقرأ بسم الله الرحمن الرحيم
“আমি নবী করীম (সা), হযরত আবূ বকর (রা), হযরত উমর (রা) ও হযরত উসমান (রা)-এর পিছনে নামায পড়েছি, কিন্তু তাঁদের কাউকে বিসমিল্লাহ পড়তে শুনিনি।
ইমাম শাফিঈ (র) স্বীয় দলীল হিসেবে দারে কুতনী নামক গ্রন্থে মুহাম্মদ ইবনে সিরীন থেকে বর্ণিত হাদীস পেশ করেছেন। এতে বর্ণিত আছে, আমি মুজমার ইবনে সুলায়মান-এর পিছনে সকাল-সন্ধ্যা অনেক নামায পড়েছি। কিন্তু এই হাদীসের ব্যাখ্যা ইবনে খুযায়মা ও তিবরানী (র)-এর রিওয়ায়েতের পরস্পর বিরোধী যা মু'তামার (র)-এর সূত্রে হযরত হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযূর (সা) নিম্নস্বরে বিসমিল্লাহ পড়তেন।
সুতরাং উভয় প্রকারের হাদীসের মধ্যে এইভাবে সমন্বয় করা যায় যে, উচ্চস্বরে সম্পর্কিত হাদীসসমূহ শুধু তালীমের জন্য অথবা এটাও বলা যায় যে, এরূপ স্বল্প আওয়ায যা নিকটবর্তী কোন ব্যক্তি শুনতে পারে। মুকতাদী যদি ইমামের নিকটবর্তী হয়, তা হলে স্বল্প আওয়াযও উচ্চস্বরের মত শুনা যায়; কিন্তু বাস্তবে তা উচ্চস্বর (جهر) নয়। যেমন কোন কোন রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, হুযূর (সা) যোহরের নামাযে দু'-এক আয়াত এরূপভাবে তিলাওয়াত করতেন যে, মুকতাদী সাহাবাগণ তা কখনো কখনো শুনে ফেলতেন। অথবা এটাও বলা যায় যে, প্রথমত উচ্চস্বরে পড়ান বিধান ছিল, অতঃপর তা রহিত হয়ে যায়। কেননা আবূ দাউদ শরীফে হযরত সাঈদ ইবনে যুবায়র (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসের দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয়। এই হাদীসের শেষ অংশ বলা হয়েছে أمر الله رسوله بإخفائها فما جهر حتى مات "অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর রাসূলকে নিম্ন বা অনুচ্চ আওয়াযে পড়ার নির্দেশ দেন। সুতরাং তিনি ইনতিকালের পূর্ব পর্যন্ত উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পড়েন নি।”
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান