মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
৪. নামায অধ্যায়
হাদীস নং: ৯৫
নামায শুরু করার বর্ণনা
৯৫। হযরত ওয়ায়েদ ইবনে হুজর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে তাকবীরের সময় হাত উঠাতে দেখেছি এবং তিনি (নামায শেষে) জ্ঞান ও বাঁ দিকে সালাম ফিরাতেন।
عَنْ عَاصِمٍ، عَنْ عَبْدِ الْجَبَّارِ بْنِ وَائِلٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: «رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ عِنْدَ التَّكْبِيرِ، وَيُسَلِّمُ عَنْ يَمِينِهِ وَيَسَارِهِ»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীসের মধ্যে প্রথমতঃ দু'টি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি হল হাত উঠানো এবং সাথে সাথে তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলা, অথবা একটার পর একটা বলা। অতঃপর এর মধ্যে অপর একটি বিষয় হলো এই যে, প্রথমে হাত উঠাতে হবে, পরে তাকবীর বলতে হবে, অথবা প্রথম তাকবীর বলতে হবে, পরে হাত উঠাতে হবে?
দ্বিতীয়টি হলো এই যে, দুটি সালাম দিতে হবে, না একটি। উপরে বর্ণিত প্রথম বিষয় (হাত উঠানো ও তাকবীর বলা) সম্পর্কে হানাফী মাযহাবের অধিকাংশ ফিকহবিদ যেমন : তাহাবী, কাযীখান ও হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ (র) প্রথম পদ্ধতিটি গ্রহণ করেছেন। এ মতের সমর্থনে হযরত ওয়ায়েল (রা), হযরত আবূ হুরায়রা (রা), হযরত ইবনে উমর (রা), হযরত আলী ইবনে আবূ তালিব (রা) এবং হযরত বারা ইবনে আযিব (রা) বর্ণিত হাদীস রয়েছে। এর মধ্যে বর্ণিত আছে যে, হুযুর (সা) যখন তাকবীর বলতেন, তখন কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাতেন অথবা যখন নামায় শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং হাত উঠাতেন। এখানে তাকবীর বলা এবং হাত উঠানোর সময়ের সূক্ষ্ম মিলনের কারণে একটি অপরটির শর্তবিশেষ। এছাড়া উপরোক্ত দল আরো একটি দলীল পেশ করে বলেন যে, হাত উঠানো তাকবীরের সুন্নত। সুতরাং এর সাথেই তা আদায় করতে হবে।
হযরত ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মতে প্রথম হাত উঠাতে হবে এরপর তাকবীর বলতে হবে। তাঁর যুক্তি হলো এই যে, হাত উঠানোর দ্বারা গায়রুল্লাহকে অস্বীকার করা বুঝায় এবং তাকবীর ও হাত উঠানোর মধ্যে এর স্বীকৃতি (اثبات) রয়েছে। যেহেতু নীতি অনুযায়ী অস্বীকৃতি (نفى) স্বীকৃতির (اثبات) উপর প্রাধান্য পেয়ে থাকে, তাই তাকবীরের পূর্বে হাত উঠানো প্রয়োজন। যেমন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু-এর মধ্যে (نفى) লা-ইলাহা (اثبات) ইল্লাল্লাহ-এর উপর অগ্রগামী হয়েছে। ইমাম নাসাঈ এটাকে সঠিক বলেছেন। অনেক উলামা ও মাশায়েখ এ মত গ্রহণ করেছেন এবং তাঁদের মাযহাবের সমর্থনে আবূ দাউদ ও নাসাঈ শরীফে হযরত ইবনে উমর (রা)-এর বর্ণিত মরফূ' হাদীস পেশ করেছেন। উক্ত হাদীসে বর্ণিত আছে كان يرفع يديه حذاء منكبيه ثم يكبر অর্থাৎ হযরত (সা) কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাতেন অতঃপর তাকবীর বলতেন। এখানে ثم শব্দটি দ্বারা বিলম্ব বা সামান্য দেরী করা বুঝায়। আবূ হুমাইদ সায়েদী (রা) বর্ণিত হাদীসেও ثم শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লামা ইবনে হুমাম তৃতীয় পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। একদল উলামায়ে কিরাম তা সমর্থন করেছেন। তাঁদের দলীল হলো বায়হাকী শরীফে হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত মারফু হাদীস اذا افتتح الصلاة كبر ثم رفع অর্থাৎ হুযূর (সা) যখন নামায শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন অতঃপর হাত উঠাতেন। এছাড়া হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রা) বর্ণিত হাদীসে আছে, فكبر فرفع يديه হযরত (সা) তাকবীর বলতেন, অতঃপর হাত উঠাতেন। উপরোক্ত হাদীসসমূহের মধ্যে ,
হুযুর (সা) বিভিন্ন সময় এর উপর বিভিন্ন আমল করেছেন। সুতরাং এর মধ্যে যে কোন একট আমল করা বাঞ্ছনীয়।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সালাম। অর্থাৎ নামায় শেষে কয়বার সালাম ফিরাতে হবে। এ ব্যাপারে ইমাম মালিক (র) ব্যতীত সমস্ত উলামায়ে কিরাম একমত যে, দু'বার সালাম ফিরাতে হবে। প্রায় পনেরজন সাহাবী সহীহ ও নির্ভুলভাবে হুযূর (সা) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এর উপর হযরত (সা) সর্বদা আমল করতেন এবং সাহাবা ও তাবেঈগণ এ আমল করতেন। একমাত্র ইমাম মালিক (র) এক সালামের উপর আমল করতেন। যেমন কোন ব্যক্তি যদি একা নামায আদায় করে, তখন আসসালামু আলাইকুম বলবে এবং মাথা সামান্য সোজা করে ফিরাবে অতঃপর সামনের দিকে নিয়ে আসবে। যদি মুকতাদী হয়, তাহলে সামান্য সোজা দিকে ফিরাবে। অতঃপর ইমামের দিকে মাথা রেখে ইশারা করবে। হযরত আয়েশা (রা)-এর হাদীসে এর প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু সনদের দিক দিয়ে এর মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। যদি তা সহীহ বলে গণ্য করা হয়, তবুও এর দ্বারা উদ্দেশ্য সফল হবে না। কেননা ঐ হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা) এত উচ্চস্বরে এক সালাম ফিরাতেন যে, আমাদেরকে ঘুম থেকে জাগ্রত করে দিত। কিন্তু এর দ্বারা দ্বিতীয় সালামকে অস্বীকার করা বুঝায় না। হয়ত সালাম ফিরাতেন কিন্তু তা এত জোরে নয়। কেননা জাগ্রত করার জন্য প্রথম সালামই যথেষ্ট।
দ্বিতীয়টি হলো এই যে, দুটি সালাম দিতে হবে, না একটি। উপরে বর্ণিত প্রথম বিষয় (হাত উঠানো ও তাকবীর বলা) সম্পর্কে হানাফী মাযহাবের অধিকাংশ ফিকহবিদ যেমন : তাহাবী, কাযীখান ও হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ (র) প্রথম পদ্ধতিটি গ্রহণ করেছেন। এ মতের সমর্থনে হযরত ওয়ায়েল (রা), হযরত আবূ হুরায়রা (রা), হযরত ইবনে উমর (রা), হযরত আলী ইবনে আবূ তালিব (রা) এবং হযরত বারা ইবনে আযিব (রা) বর্ণিত হাদীস রয়েছে। এর মধ্যে বর্ণিত আছে যে, হুযুর (সা) যখন তাকবীর বলতেন, তখন কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাতেন অথবা যখন নামায় শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং হাত উঠাতেন। এখানে তাকবীর বলা এবং হাত উঠানোর সময়ের সূক্ষ্ম মিলনের কারণে একটি অপরটির শর্তবিশেষ। এছাড়া উপরোক্ত দল আরো একটি দলীল পেশ করে বলেন যে, হাত উঠানো তাকবীরের সুন্নত। সুতরাং এর সাথেই তা আদায় করতে হবে।
হযরত ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মতে প্রথম হাত উঠাতে হবে এরপর তাকবীর বলতে হবে। তাঁর যুক্তি হলো এই যে, হাত উঠানোর দ্বারা গায়রুল্লাহকে অস্বীকার করা বুঝায় এবং তাকবীর ও হাত উঠানোর মধ্যে এর স্বীকৃতি (اثبات) রয়েছে। যেহেতু নীতি অনুযায়ী অস্বীকৃতি (نفى) স্বীকৃতির (اثبات) উপর প্রাধান্য পেয়ে থাকে, তাই তাকবীরের পূর্বে হাত উঠানো প্রয়োজন। যেমন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু-এর মধ্যে (نفى) লা-ইলাহা (اثبات) ইল্লাল্লাহ-এর উপর অগ্রগামী হয়েছে। ইমাম নাসাঈ এটাকে সঠিক বলেছেন। অনেক উলামা ও মাশায়েখ এ মত গ্রহণ করেছেন এবং তাঁদের মাযহাবের সমর্থনে আবূ দাউদ ও নাসাঈ শরীফে হযরত ইবনে উমর (রা)-এর বর্ণিত মরফূ' হাদীস পেশ করেছেন। উক্ত হাদীসে বর্ণিত আছে كان يرفع يديه حذاء منكبيه ثم يكبر অর্থাৎ হযরত (সা) কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাতেন অতঃপর তাকবীর বলতেন। এখানে ثم শব্দটি দ্বারা বিলম্ব বা সামান্য দেরী করা বুঝায়। আবূ হুমাইদ সায়েদী (রা) বর্ণিত হাদীসেও ثم শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লামা ইবনে হুমাম তৃতীয় পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। একদল উলামায়ে কিরাম তা সমর্থন করেছেন। তাঁদের দলীল হলো বায়হাকী শরীফে হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত মারফু হাদীস اذا افتتح الصلاة كبر ثم رفع অর্থাৎ হুযূর (সা) যখন নামায শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন অতঃপর হাত উঠাতেন। এছাড়া হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রা) বর্ণিত হাদীসে আছে, فكبر فرفع يديه হযরত (সা) তাকবীর বলতেন, অতঃপর হাত উঠাতেন। উপরোক্ত হাদীসসমূহের মধ্যে ,
হুযুর (সা) বিভিন্ন সময় এর উপর বিভিন্ন আমল করেছেন। সুতরাং এর মধ্যে যে কোন একট আমল করা বাঞ্ছনীয়।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সালাম। অর্থাৎ নামায় শেষে কয়বার সালাম ফিরাতে হবে। এ ব্যাপারে ইমাম মালিক (র) ব্যতীত সমস্ত উলামায়ে কিরাম একমত যে, দু'বার সালাম ফিরাতে হবে। প্রায় পনেরজন সাহাবী সহীহ ও নির্ভুলভাবে হুযূর (সা) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এর উপর হযরত (সা) সর্বদা আমল করতেন এবং সাহাবা ও তাবেঈগণ এ আমল করতেন। একমাত্র ইমাম মালিক (র) এক সালামের উপর আমল করতেন। যেমন কোন ব্যক্তি যদি একা নামায আদায় করে, তখন আসসালামু আলাইকুম বলবে এবং মাথা সামান্য সোজা করে ফিরাবে অতঃপর সামনের দিকে নিয়ে আসবে। যদি মুকতাদী হয়, তাহলে সামান্য সোজা দিকে ফিরাবে। অতঃপর ইমামের দিকে মাথা রেখে ইশারা করবে। হযরত আয়েশা (রা)-এর হাদীসে এর প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু সনদের দিক দিয়ে এর মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। যদি তা সহীহ বলে গণ্য করা হয়, তবুও এর দ্বারা উদ্দেশ্য সফল হবে না। কেননা ঐ হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা) এত উচ্চস্বরে এক সালাম ফিরাতেন যে, আমাদেরকে ঘুম থেকে জাগ্রত করে দিত। কিন্তু এর দ্বারা দ্বিতীয় সালামকে অস্বীকার করা বুঝায় না। হয়ত সালাম ফিরাতেন কিন্তু তা এত জোরে নয়। কেননা জাগ্রত করার জন্য প্রথম সালামই যথেষ্ট।


বর্ণনাকারী: