মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৪. নামায অধ্যায়

হাদীস নং: ৯২
যে আল্লাহর জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে
৯২। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আওফা (রাযিঃ) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এ হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, যদিও তা কাত্তাতের ( এক প্রকার পাখি) বাসার মত ক্ষুদ্র হোক না কেন, আল্লাহ তার প্রতিদানস্বরূপ বেহেশতে তার জন্য একটি বাড়ি তৈরী করবেন।
قَالَ: سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ أَبِي أَوْفَى، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «مَنْ بَنَى لِلَّهِ مَسْجِدًا وَلَوْ كَمِفْحَصِ قَطَاةٍ بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আরবী ভাষায় একটি পাখির নাম হলো কাত্তাত (قطاة) এবং উপরে বর্ণিত হাদীসের মধ্যে مفحص শব্দের অর্থ ছোট গর্ত। উর্দূ ভাষায় এই পাখির নাম হলো সংগেখার (سمگ جوار) কোন কোন অঞ্চলে এ পাখির নাম হলো মাছরাঙ্গা। এ ছোট পাখি ডিম দেওয়ার জন্য নদীর তীরে গর্ত করে ক্ষুদ্র বাসা তৈরি করে থাকে। আরবী ভাষায় প্রবাদ বাক্য রয়েছে ليس له مفحص قطاة কাত্তাত পাখির ঘরের মতও তার কোন ঘর নেই। মোল্লা আলী কারী লিখেছেন, قطاة مفحص -এর উপমা এজন্যই দেওয়া হয়েছে যে, এই পাখির বাসা মাটির উপর তৈরি করে এবং মসজিদও মাটির উপর তৈরি করা হয়। তবে আমার মনে হয়, এরদ্বারা সবচেয়ে ক্ষুদ্র মসজিদ বুঝানো হয়েছে।
হাদীসে মসজিদ নির্মাণের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। মুসলমানদের সামাজিক জীবনে মসজিদ কত গুরুত্বপূর্ণ, এর ধারণা হুযূর (সা)-এর মদীনার জীবন থেকে লাভ করা যায়। মসজিদ ইবাদতের জায়গা, আদালতের জায়গা। এখানে বিভিন্ন বিষয়ের মীমাংসা করা হতো। মসজিদ বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিনের আলোচনার জায়গা। এখানেই রাসূলুল্লাহ (সা) বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সাথে মিলিত হতেন। এটাই মাদ্রাসা ছিল। লোকজন এখানে তালীম হাসিল করতেন। এখানেই যিকিরের আওয়াজ উচ্চারিত হতো। মসজিদই হলো শান্তি ও নিরাপত্তার স্থান। সমস্ত দুনিয়া থেকে ভয়-ভীতি নিয়ে মসজিদের দিকে আগমণ করুন এবং আল্লাহর রহমতের উপর নিজকে সমর্পণ করে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করুন।
যে মহল্লায় মসজিদ নেই, তা এক নির্জন প্রান্তরের মত। মূলত মুসলমানদের জীবন মসজি থেকেই শুরু হয়। কেননা জন্মের সাথে সাথে কানে আযান দেওয়া হয় এবং মৃত্যুর পর এখানেই জানাযা সম্পন্ন হয়, মৃত ব্যক্তির জন্য দু'আ করা হয়। সুতরাং উপরের আলোচনায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, একমাত্র মসজিদ থেকেই মুসলমানদের জীবনে যাবতীয় ন্যায়-নীতি ও শৃঙ্খলাবোধ সৃষ্টি হয়ে থাকে। হুযুর (সা)-এর পবিত্র বাণীর এটাই মূল উদ্দেশ্য যে, মসজিদ মুসলমানদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তিনি ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মসজিদ তৈরি করবে, আল্লাহ তাঁর জন্য পরকালে বেহেশতে ঘর তৈরি করবেন।