মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
৩. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৬
মাসেহ করার সময় নির্ধারিত করা
৬৬। হযরত খায়মা ইবনে সাবিত (রাযিঃ) নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ মোযার উপর মাসেহ মুকীমের জন্য একদিন একরাত এবং মুসাফিরের জন্য তিনদিন তিনরাত সময়-সীমা নির্ধারিত। যদি উযূ অবস্থায় মোযা পরিধান করে থাকে, তবে মোযা খোলার কোন প্রয়োজন নেই।
অন্য এক রিওয়ায়েতে আছে, মোযার উপর মাসেহকারী মুসাফিরের জন্য তিনদিন এবং মুকীমের জন্য একদিন ও একরাত, যদি সে ইচ্ছা করে। অবশ্য যদি সে মোযা পরিধানের পূর্বে উযূ করে থাকে।
অন্য এক রিওয়ায়েতে আছে, মোযার উপর মাসেহকারী মুসাফিরের জন্য তিনদিন এবং মুকীমের জন্য একদিন ও একরাত, যদি সে ইচ্ছা করে। অবশ্য যদি সে মোযা পরিধানের পূর্বে উযূ করে থাকে।
عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ الْجَدَلِيِّ، عَنْ خُزَيْمَةَ بْنِ ثَابِتٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ فِي الْمَسْحِ عَلَى الْخُفَّيْنِ: «لِلْمُقِيمِ يَوْمًا وَلَيْلَةً، وَلِلْمُسَافِرِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيهَا، لَا يَنْزِعُ خُفَّيْهِ إِذَا لَبِسَهُمَا وَهُوَ مُتَوَضِّئٌ» ، وَفِي رِوَايَةٍ: «الْمَسْحُ عَلَى الْخُفَّيْنِ لِلْمُسَافِرِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَلِلْمُقِيمِ يَوْمًا وَلَيْلَةً، إِنْ شَاءَ إذَا تَوَضَّأَ قَبْلَ أَنْ يَلْبَسَهُمَا»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এই হাদীসের সনদ মুনকাতি', (বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতায় যদি দু'-একজন বর্ণনাকারী বাদ পড়ে যায়, তাহলে ঐ হাদীসকে হাদীসে মুনকাতি' বলা হয়)। কেননা ইবরাহীম তাইমী এবং আমর ইবনে মায়মূন মধ্য থেকে বাদ পড়েছেন। ইবরাহীমে নখঈ-র সিমা (শ্রবণ) আবূ আবদুল্লাহ থেকে গ্রহণযোগ্য নয়। বর্ণনাকারীর এই লুপ্ত হওয়া বা বাদ পড়ার কারণে হাদীসটি দুর্বল এবং এর সত্যতার মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। আমাদের কথা হলো, প্রথমতঃ এ হাদীসের উপর সবাই ঐক্যবদ্ধ নয়। তাহযীবুত তাহযীব গ্রন্থে বলা হয়েছে, আবূ আবদুল্লাহ হাদারী থেকে ইবরাহীম নখঈ (র) হাদীস শ্রবণ করেছিলেন। যদি শ্রবণকে না মানা হয়, তবুও ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মতে যদি বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য হয়, তাহলে ঐ হাদীস দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।
ইবরাহীমে নখঈ (র) একজন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। তাকবীর নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, ইবরাহীমে নখঈ (র) একজন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। তবে তিনি অধিকাংশ সময় বর্ণনাকারীর নাম লুপ্ত করে থাকেন। অধিকন্তু এ হাদীসকে আবূ দাউদ ও তিরমিযী সহীহ হিসেবে গ্রহণ করছেন। তিরমিযী ইবনে মুঈন থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। ইবনে হিব্বানও এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে, এ সমস্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও বিস্তারিত বর্ণনাকে না দেখার ভান করে ইমাম নববী শরহে আল-মুহাযযাব নামক গ্রন্থে বলেন, এ হাদীসটি দুর্বল (যঈফ) হওয়া সম্পর্কে সবাই একমত। বাস্তব বিরোধী এরূপ দাবি করা ইমাম নববীর জন্য ঠিক হয়নি। অথবা তিনি এর হাকীকত সম্পর্কে অবহিত হতে পারেননি।
মাসেহ করার সময় সীমা নির্ধারণের মধ্যেও শরীয়তের একটি বিশেষ রহস্য রয়েছে। অধিকাংশ কাজের মধ্যে সময়-সীমা কমপক্ষে একদিন একরাত ধরা হয়ে থাকে। তাই শরীয়ত মুক মের জন্য এই সময় নির্ধারণ করেছে। অতঃপর মুসফিরের ক্ষেত্রে সফরের সময় কাজ লাঘব করার জন্য তা তিনগুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছে। এ ছাড়া মুসাফিরের নিকট কোন কোন সময় পানির ঘাটতি দেখা দেয়। আবার কখনো সময়ের স্বল্পতা দেখা দেয়। শরীয়তে এসব ওযরের কারণে মুসাফিরের উপর অনুগ্রহ ও সফর সহজ করার উদ্দেশ্যে তিনদিন তিনরাত পর্যন্ত সুযোগ দান করা হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, “আমি বেজোড়কে পসন্দ করি।" তাই শরীয়তে দু’-এর সংখ্যাকে পরিহার করা হয়েছে। মোটকথা, শরীয়তের প্রতিটি বিষয়ই হিকমতে পরিপূর্ণ।
ইবরাহীমে নখঈ (র) একজন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। তাকবীর নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, ইবরাহীমে নখঈ (র) একজন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। তবে তিনি অধিকাংশ সময় বর্ণনাকারীর নাম লুপ্ত করে থাকেন। অধিকন্তু এ হাদীসকে আবূ দাউদ ও তিরমিযী সহীহ হিসেবে গ্রহণ করছেন। তিরমিযী ইবনে মুঈন থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। ইবনে হিব্বানও এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে, এ সমস্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও বিস্তারিত বর্ণনাকে না দেখার ভান করে ইমাম নববী শরহে আল-মুহাযযাব নামক গ্রন্থে বলেন, এ হাদীসটি দুর্বল (যঈফ) হওয়া সম্পর্কে সবাই একমত। বাস্তব বিরোধী এরূপ দাবি করা ইমাম নববীর জন্য ঠিক হয়নি। অথবা তিনি এর হাকীকত সম্পর্কে অবহিত হতে পারেননি।
মাসেহ করার সময় সীমা নির্ধারণের মধ্যেও শরীয়তের একটি বিশেষ রহস্য রয়েছে। অধিকাংশ কাজের মধ্যে সময়-সীমা কমপক্ষে একদিন একরাত ধরা হয়ে থাকে। তাই শরীয়ত মুক মের জন্য এই সময় নির্ধারণ করেছে। অতঃপর মুসফিরের ক্ষেত্রে সফরের সময় কাজ লাঘব করার জন্য তা তিনগুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছে। এ ছাড়া মুসাফিরের নিকট কোন কোন সময় পানির ঘাটতি দেখা দেয়। আবার কখনো সময়ের স্বল্পতা দেখা দেয়। শরীয়তে এসব ওযরের কারণে মুসাফিরের উপর অনুগ্রহ ও সফর সহজ করার উদ্দেশ্যে তিনদিন তিনরাত পর্যন্ত সুযোগ দান করা হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, “আমি বেজোড়কে পসন্দ করি।" তাই শরীয়তে দু’-এর সংখ্যাকে পরিহার করা হয়েছে। মোটকথা, শরীয়তের প্রতিটি বিষয়ই হিকমতে পরিপূর্ণ।


বর্ণনাকারী: