মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৩. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৭
মাসেহ করার সময় নির্ধারিত করা
৬৭। হযরত খুযায়মা ইবনে সাবিত (রাযিঃ) বলেন, মোযার উপর মাসেহ করার সময়সীমা সম্পর্কে নবী (ﷺ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হয়। তখন তিনি বলেনঃ মুসাফিরের জন্য তিনদিন তিনরাত এবং মুকীমের জন্য একদিন একরাত।
عَنْ سَعِيدٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُونٍ الْأَوْدِيِّ، عَنْ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ الْجَدَلِيِّ، عَنْ خُزَيْمَةَ بْنِ ثَابِتٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنِ الْمَسْحِ عَلَى الْخُفَّيْنِ، قَالَ: «لِلْمُسَافِرِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيهِنَّ، وَلِلْمُقِيمِ يَوْمًا وَلَيْلَةً»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মোজার ওপর মাসেহ করার সময় মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত।’ (সুরা : আবু দাউদ, আয়াত : ১৩৫)

ইসলামী শরিয়তের বিধান মতে, অজু সহজভাবে করার জন্য পা ধৌত করার বিকল্প হিসেবে মোজার ওপর মাসেহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

মাসেহ বৈধ হওয়ার শর্তসমূহ

যতক্ষণ পর্যন্ত নিম্নোল্লিখিত শর্তসমূহ পাওয়া যাবে, মোজার ওপর মাসেহ বৈধ হবে।

১। পবিত্র হয়ে মোজা পরা। অর্থাৎ অজু করে পা ধোয়ার পর মোজা পরা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৯)

২। মোজা দ্বারা টাখনু ঢাকা থাকতে হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৩৫৪)

৩। মোজা ফাটাছেঁড়া হলে পায়ের ছোট আঙুলের তিন আঙুল পরিমাণের কম ফাটাছেঁড়া থাকতে হবে। (আবু দাউদ ২৪২০, আল-আশবাহ ১/১১৪, আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা : ৩৭/২৬৫)

৪। উভয় মোজা বাঁধা ছাড়া পায়ে লেগে থাকতে হবে।

৫। তা ধারাবাহিক চলার উপযোগী হতে হবে। (আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা : ৩৭/২৬৪)

সুতরাং আমাদের দেশে প্রচলিত সুতার মোজার ওপর মাসেহ বৈধ নয়।

মাসেহর ফরজ ও সুন্নতসমূহ

মাসেহর ফরজ সীমারেখা : হাতের ছোট তিন আঙুলের সমান পায়ের ওপরের অংশ মাসেহ করা। (আবু দাউদ : ১৪০, সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি : ১৪৩৭, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৮৫)

মাসেহর সুন্নত : পায়ের আঙুলের মাথা থেকে হাতের আঙুলগুলো প্রশস্ত করে টাখনু পর্যন্ত মাসেহ করবে। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৮৫, কিতাবুল আসার : ১/৭২)

মোজা মাসেহর নির্ধারিত মেয়াদ

মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৫)

মাসেহর সময় শুরু হবে যখন থেকে অজু ভেঙে যায় (হাদাস হয়)। আর এটি যখন থেকে মোজা পরা হয়, সে সময় থেকে নয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৮০)

মুকিম যদি মাসেহ করার পর সফর আরম্ভ করে, তবে মুসাফিরের সময়সীমা পরিপূর্ণ করবে, তদ্রূপ মুসাফির যদি মাসেহ করার পর মুকিম হয়ে যায়, তবে মুকিমের নির্ধারিত মেয়াদ পূরণ করবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৫, মুসান্নাফে আব্দির রাজ্জাক : ১/২২১)

মাসেহ ভঙ্গকারী বিষয়

১। যেসব কারণে অজু ভঙ্গ হয় সেসব কারণে মাসেহও ভঙ্গ হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৯)

২। মোজা খোলার কারণে মাসেহ ভেঙে যায়। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ১৪২২)

৩। মোজা যদি পায়ের টাখনুসহ বেশির ভাগ অংশ বের হয়ে যায়, তখনো মাসেহ ভেঙে যাবে। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ১৪২২, ১৩৯৬)

৪। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মাধ্যমে মাসেহ ভেঙে যায়। (বাদায়ে : ১/৪৬)

৫। উভয় মোজার কোনো একটিতে বেশির ভাগ অংশে পানি পৌঁছে গেলে মাসেহ ভেঙে যায়। (সুনানুল কুবরা : ১৩৯৬, মুআত্তা মুহাম্মদ : ২/৫৮৭)

ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে মোযা পরিধান করার পর থেকে মাসেহ করার সময়-সীমা আরম্ভ হয়। ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মতে হাদসের পর থেকে। অর্থাৎ যদি কোন মুকীম সকালে মোযা পরিধান করে মাসেহ করে এবং ঐ উযূর সাথে যোহর নামায আদায় করে। কিন্তু যোহরের পর উযূ ভেঙ্গে যায়, তাহলে পরবর্তী দিনের সকাল নয়, বরং যোহর নামাযের বাদ পর্যন্ত মাসেহ করার সময় বাকী থাকবে। এ মাযহাবই কিয়াসের নিকটবর্তী। কেননা মোযার কাজ হলো অপবিত্র বস্তুকে পা পর্যন্ত পৌঁছতে না দেয়া এবং এর এ প্রতিক্রিয়া যখন উযূ ভেঙ্গে যাবে, তখন থেকে শুরু হবে। কেননা পূর্বে তা পবিত্র ছিল। এ সময় অপবিত্র বস্তু প্রতিরোধ করার প্রশ্ন আসে না। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, এক ব্যক্তি মোযার উপর মাসেহ করল এবং একদিন একরাত তার উযূ ভাঙ্গেনি। তাহলে সে কি তার মোযা খুলে ফেলবে? না। সুতরাং মোযা পরিধান করার সময় থেকে নয়; বরং উযূ ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে এ সময়-সীমা থেকে শুরু হয়। এটাই ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মাযহাব।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ৬৭ | মুসলিম বাংলা