মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৩. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫০
উযূর মধ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তিন-তিনবার ধৌত করা সম্পর্কে
৫০। আব্দে খায়ের (রাহঃ) হযরত আলী (রাযিঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, (একবার) হযরত আলী (রাযিঃ) পানি চাইলেন এবং এরদ্বারা তিনবার হাত ধৌত করেন, তিনবার কুল্লি করেন, তিনবার নাকে পানি দিলেন, তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন, তিনবার কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করেন, তিনবার মাথা মাসেহ করেন, এবং তিনবার পা ধৌত করেন। অতঃপর তিনি বলেন, এটাই হলো রাসূল করীম (ﷺ)-এর উযূ করার পদ্ধতি।
عَنْ خَالِدٍ، عَنْ عَبْدِ خَيْرٍ، عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ: " أَنَّهُ دَعَا بِمَاءٍ، فَغَسَلَ كَفَّيْهِ ثَلَاثًا، وَتَمَضْمَضَ ثَلَاثًا، وَاسْتَنْشَقَ ثَلَاثًا، وَغَسَلَ وَجْهَهُ ثَلَاثًا، وَذِرَاعَيْهِ ثَلَاثًا، وَمَسَحَ رَأْسَهُ ثَلَاثًا، وَغَسَلَ قَدَمَيْهِ ثَلَاثًا، ثُمَّ قَالَ: هَذَا وُضُوءُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " وَفِي رِوَايَةٍ: عَنْ خَالِدٍ، عَنْ عَبْدِ خَيْرٍ، عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: «أَنَّهُ دَعَا بِمَاءٍ، فَغَسَلَ كَفَّيْهِ ثَلَاثًا، وَاسْتَنْشَقَ ثَلَاثًا، وَغَسَلَ وَجْهَهُ ثَلَاثًا، وَذِارَعَيْهِ ثَلَاثًا، وَمَسَحَ بِرَأْسِهِ مَرَّةً، وَغَسَلَ قَدَمَيْهِ ثَلَاثًا» .
وَفِي رِوَايَةٍ أُخْرَى: " أَنَّهُ دَعَا بِمَاءٍ، فَأَتَى بِإِنَاءٍ فِيهِ مَاءٌ وَطِسْتٍ، قَالَ عَبْدُ خَيْرٍ: وَنَحْنُ نَنْظُرُ إِلَيْهِ، فَأَخَذَ بِيَدِهِ الْيُمْنَى الْإِنَاءَ، فَأَكْفَأَ عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى، ثُمَّ غَسَلَ يَدَيْهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَهُ الْيُمْنَى فِي الْإِنَاءِ، فَمَلَأَ يَدَهُ فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ، فَعَلَ هَذَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ غَسَلَ يَدَيْهِ إِلَى الْمَرَافِقِ ثَلَاثِ مَرَّاتٍ، ثُمَّ أَخَذَ الْمَاءَ بِيَدِهِ ثُمَّ مَسَحَ بِهَا رَأْسَهُ مَرَّةً وَاحِدَةً، ثُمَّ غَسَلَ قَدَمَيْهِ ثَلَاثًا ثَلَاثًا، ثُمَّ غَرَفَ بِكَفِّهِ، ثُمَّ قَالَ: مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى طَهُورِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَهَذَا طَهُورِهِ ".
وَفِي رِوَايَةٍ: " أَنَّهُ دَعَا بِمَاءٍ، فَغَسَلَ كَفَّيْهِ ثَلَاثًا، وَمَضْمَضَ ثَلَاثًا، وَاسْتَنْشَقَ ثَلَاثًا، وَغَسَلَ وَجْهَهُ ثَلَاثًا، وَغَسَلَ ذِرَاعَيْهِ ثَلَاثًا، ثُمَّ أَخَذَ مَاءً فِي كَفِّهِ، فَصَبَّهُ عَلَى صَلْعَتِهِ، ثُمَّ قَالَ: مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى طَهُورِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلْيَنْظُرْ إِلَى هَذَا.
وَفِي رِوَايَةٍ، عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: «أَنَّهُ تَوَضَّأَ ثَلَاثًا ثَلَاثًا» .
قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ يَعْقُوبَ: مَنْ رَوَى عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فِي هَذَا الْحَدِيثِ، عَنْ خَالِدٍ: أَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «مَسَحَ رَأْسَهُ ثَلَاثًا، أَنَّهُ وَضَعَ يَدَهُ عَلَى يَافُوخِهِ، ثُمَّ مَدَّ يَدَهُ إِلَى مُؤَخِّرِ رَأْسَهُ، ثُمَّ إِلَى مُقَدَّمِ رَأْسِهِ، فَجَعَلَ ذَلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، وَإِنَّمَا ذَلِكَ إِلَّا مَرَّةً وَاحِدَةً، لِأَنَّهُ لَمْ تُبَايِنْ يَدُهُ، وَلَا أَخَذَ الْمَاءَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، فَهُوَ كَمَنْ جَعَلَ الْمَاءَ فِي كَفِّهِ، ثُمَّ مَدَّ إِلَى كُوعِهِ» ، أَلَا تَرَى وَأَنَّهُ بَيِّنٌ فِي الْأَحَادِيثِ الَّتِي رَوَى عَنْهُ، وَهُمُ الْجَارُودُ بْنُ زَيْدٍ، وَخَارِجَةُ بْنُ مُصْعَبٍ، وَأَسَدُ بْنُ عُمَرَ، أَنَّ الْمَسْحَ كَانَ مَرَّةً وَاحِدَةً، وَبَيَّنَ أَنَّ مَعْنَاهُ مَا ذَكَرْنَا.
قَالَ: وَقَدْ رَوَى عَنْ جَمَاعَةٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَثِيرَةٍ عَلَى هَذَا اللَّفْظِ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَسَحَ رَأْسَهُ ثَلَاثًا، مِنْهُمْ: عُثْمَانُ، وَعَلِيٌّ، وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ، وَغَيْرُهُمْ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُمْ.
قَالَ الْبَيْهَقِيُّ: وَقَدْ رُوِيَ مِنْ أَوْجُهٍ غَرِيبَةٍ، عَنْ عُثْمَانَ: تِكْرَارَ الْمَسْحِ إِلَّا أَنَّهُ مَعَ خِلَافِ الْحِفَاظِ لَيْسَ بِحُجَّةٍ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ، فَهَلْ كَانَ مَعْنَاهُ إِلَّا عَلَى مَا ذَكَرْنَا، فَمَنْ جَعَلَ أَبَا حَنِيفَةَ غَالِطًا فِي رِوَايَةِ الْمَسْحِ ثَلَاثًا، فَقَدْ وَهِمَ، وَكَانَ هُوَ بِالْغَلَطِ أَوْلَى وَأَخْلَقَ، وَقَدْ غَلِطَ شُعْبَةُ فِي هَذَا الْحَدِيثِ غَلَطًا فَاحِشًا عِنْدَ الْجَمِيعِ، وَهُوَ رِوَايَةُ هَذَا الْحَدِيثِ، عَنْ مَالِكِ بْنِ عَرْفَطٍ، عَنْ عَبْدِ خَيْرٍ، عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَصَحَّفَ الِاسْمَيْنِ فِي إِسْنَادِهِ، فَقَالَ: بَدَلَ خَالِدٍ مَالِكٌ، وَبَدَلَ عَلْمَقَةَ عَرْفَطٌ، وَلَوْ كَانَ هَذَا الْغَلَطُ مِنْ أَبِي حَنِيفَةَ رَحِمَهُ اللَّهُ لَنَسَبُوهُ إِلَى الْجَهَالَةِ وَقِلَّةِ الْمَعْرِفَةِ، وَلَأَخْرَجُوهُ مِنَ الدِّينِ، وَهَذَا مِنْ قِلَّةِ الْوَرَعِ وَاتِّبَاعِ الْهَوَى

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ফাতহুল কাদীর নামক গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সা)-এর উযুর পদ্ধতি তেইশজন সাহাবা থেকে হুবহু বর্ণিত আছে। এঁদের মধ্যে হযরত আলী (রা) এবং হযরত উসমান (রা) রয়েছেন। কিন্তু আবদুল্লাহ ইবনে যায়দ ইবনে আসিম সর্বাধিক স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। তাই এ অধ্যায়ে তাঁর বর্ণিত হাদীস মূল দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তিনি হযরত ওয়াহশী (রা)-র সাথে একত্র হয়ে মুসায়লামা (নবুয়তের মিথ্যা দাবিদার)-কে হত্যা করেন। ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম মালিক, ইমাম নাসাঈ (র) তাঁর থেকেই হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ঐ আবদুল্লাহ্ নন যিনি আবদুল্লাহ ইবনে যায়দ ইবনে আবদে রাব্বিহ নামে প্রসিদ্ধ এবং যিনি মুয়াযযিন ছিলেন।।
কুল্লি ও নাকে পানি দেওয়া সম্পর্কে ইমাম আবূ হানীফা (র) এবং ইমাম শাফিঈর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে । কেননা বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্ন বাক্য রয়েছে। কোন হাদীসে ثَلَاثُ غُرُفَاتٍ বাক্য রয়েছে অর্থাৎ হুযূর (সা) তিনবার অঞ্জলির মধ্যে পানি নিয়েছেন, কোন হাদীসে রয়েছে غُرُفَاتٍ واحدة তিনি এক অঞ্জলি পানি নিয়েছেন। ইমাম শাফিঈ (র) এ দৃষ্টিকোণ থেকে বলেন যে, প্রত্যেকবার এক অঞ্জলি পানি নিয়েছেন; এর দ্বারা কুল্লিও করেছেন এবং নাকে পানিও দিয়েছেন। মোটকথা, তিনবার তিন অঞ্জলি পানি নিয়েছেন।
ইমাম আবূ হানীফা (র) ثَلَاثُ غُرُفَاتٍ এর দৃষ্টিকোণ থেকে এই ব্যাখ্যা করেন যে, মুখমন্ডল ও নাক পৃথকভাবে পরিষ্কার করেছেন এবং উভয়টির জন্য তিনবার করে পানি নিয়েছেন। সুতরাং মোট ছয় অঞ্জলি পানি নিয়েছেন। ইমাম আযম (র) এই হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কেননা এরদ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মুখমন্ডল ও নাকের জন্য পৃথকভাবে পানি নিয়েছেন এবং উভয়টির জন্য তিন অঞ্জলি পানি নেওয়া সম্পর্কে আবূ দাউদ শরীফে বর্ণিত হযরত উসমান (রা)-এর হাদীসও এর স্বপক্ষে দলীল হিসেবে সাহায্য করে থাকে।
এছাড়া আবূ দাউদে বর্ণিত হযরত তালহা ইবনে মুসাররাফ (রা)-এর হাদীস এ বিষয়ে আরো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে। তিনি বলেছেনঃ হযরত (সা) কুল্লি ও নাকে পানি দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য করতেন। কোন কোন মাযহাবের ইমাম এ হাদীসের বিরোধিতা করেছেন। তবে কিয়াস ইমাম সাহেবের মাযহাবকে জোর সমর্থন করে থাকে। কেননা মুখ ও নাক অন্যান্য অঙ্গের মত পৃথক পৃথক অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কেন এক অঙ্গ মনে করা হবে। সুতরাং ধর্মীয় মূলনীতি অনুযায়ী যে রিওয়ায়েত কিয়াসের অনুরূপ, তা দলীল হিসেবে অধিক গ্রহণযোগ্য।
আবদে খায়ের থেকে অপর একটি রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আলী (রা) পানি নিয়ে তিনবার হাত ধৌত করেন। তিনবার নাকে পানি দেন, তিনবার মুখমন্ডল ধৌত করেন, তিনবার কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করেন, একবার মাথা মাসেহ করেন এবং তিনবার পা ধৌত করেন। অতঃপর তিনি বলেন, এটাই হলো রাসূল করীম (সা)-এর পূর্ণাঙ্গ উযূ (অর্থাৎ এতে ফরয, সুন্নত ও মুস্তাহাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে)।
অন্য একটি রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, হযরত আলী (রা) পানি চাইলে তাঁর নিকট পানির একটি কলস ও একটি থালা বা ঘটি আনা হলো। হযরত আবদে খায়ের (র) বলেন, আমি তাঁকে দেখছিলাম যে, তিনি ডান হাতে ঘটি থেকে পানি নিয়ে বাঁ হাতে পানি ঢালেন। অতঃপর তিনবার হাত ধৌত করেন। অতঃপর ডান হাতে পানি নিয়ে কুল্লি করেন এবং তিনবার নাকে পানি দেন। এরপর তিনবার মুখমন্ডল ধৌত করেন এবং এক অঞ্জলি পানি নিয়ে মাথা একবার মসেহ করেন। এরপর দু’পা তিনবার করে ধৌত করেন। তারপর এক অঞ্জলী পানি নিয়ে পান করেন। অতঃপর বলেন, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর উযূ দেখতে ইচ্ছা করে (সে যেন দেখে), এটাই হলো হুযূর (সা)-এর উযূ করার পদ্ধতি।
অন্য একটি রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, তিনি পানি চেয়ে নিলেন। অতঃপর দু'হাত তিনবার ধুলেন, তিনবার কুল্লি করলেন, তিনবার মুখমণ্ডল ধুলেন, এরপর দু'হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন, এরপর এক অঞ্জলী পানি নিয়ে মাথায় দিলেন এবং বললেন, যে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উযু দেখতে চায়, তবে দেখুক তা এইরূপ।
আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াকুব, হযরত আবূ হানীফা (র) থেকে, তিনি হযরত খালিদ (রা) থেকে, তিনি বলেন যে, নবী (সা) এভাবে তিনবার মাথা মাসেহ করেন যে, স্বীয় হাত কপালের উপর রেখে ধীরে ধীরে তা মাথার পিছনের দিকে নিয়ে যান, এরপর পুনরায় তা কপালের দিকে নিয়ে আসেন। এভাবে তিনবার করে মাসেহ করেন। কেননা এতে হাত মাথা থেকে পৃথক হয়নি এবং তিনবার পানি পরিবর্তন করা হয়নি। এখানে ঐ হাদীসসমূহ লক্ষণীয় যা জারুদ ইবনে যায়দ, খারিজা ইবনে মিসআর এবং আসাদ ইবনে উমর (র) হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেনঃ মাসেহ একবার ছিল যা উপরে বর্ণনা করা হল, এটাই সঠিক। হযরত আবূ হানীফা (র) বলেন, সাহাবা (রা)-দের এক বিরাট জামাআত থেকে এটাই বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সা) তিনবার মাথা মাসেহ করেছেন। এদের মধ্যে হযরত উসমান (রা), হযরত আলী (রা), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) ও অন্যান্যগণ ছিলেন। আল্লামা বায়হাকী (র) বলেন, মাথা মাসেহ সম্পর্কিত হাদীস হযরত উসমান (রা) থেকে দুর্বল পদ্ধতিতে বর্ণিত হয়েছে।
অধিকন্তু হাদীসের হাফিযদের রিওয়ায়েতের বিরোধী এবং আহলে ইলম পন্ডিত ব্যক্তিদের নিকট তা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। এবার তিনবার মাসেহ করার রিওয়ায়েতে ইমাম আবু হানীফা (র)-এর দিকে ভুলের যে ইঙ্গিত করা হয়েছে, তা মূলত শু'বা (র) বর্ণিত ঐ হাদীসের সনদে সমস্ত মুহাদ্দিসগণের নিকট ভুল রয়েছে। তা হলো এই যে, এই হাদীস মালিক ইবনে বাগতা থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি আবদে খায়ের থেকে এবং তিনি হযরত আলী (রা) থেকে। কিন্তু বর্ণনার সময় পিতা-পুত্রের নামের মধ্যে ভুলে পরিবর্তন হয়ে গেছে। খালিদের স্থলে মালিক এবং আলকামার স্থানে আরাফাত লিপিবদ্ধ হয়। যদি আবু হানীফা (র) থেকে এই ভুল প্রকাশ হতো, তাহলে বিরোধিগণ বলতেন, তিনি ইলমে হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ, ইলমে দীনের ব্যাপারে তাঁর প্রতি বিরূপ মন্তব্য করা হতো। কিন্তু এ সমস্ত বিরূপ মন্তব্য তাওয়ার স্বল্পতা এবং মনের আবেগের বশবর্তী ও অনুসরণের কারণেই হতে পারে।
ব্যাখ্যাঃ মাথা মাসেহ সম্পর্কে ইমাম আবূ হানীফা (র) এবং ইমাম শাফিঈ (র)-এর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম সাহেবের মতে একবার মাসেহ করা সুন্নত, ইমাম শাফিঈ-এর মতে তিনবার মাসেহ করা সুন্নত এবং প্রত্যেকবার নতুন পানি নিতে হবে। ইমাম শাফিঈ (র) এটা গোসলের উপর কিয়াস (অনুমান) করেছেন এবং হাদীস توضأ ثلاثا -কে সামনে রেখেছেন। অর্থাৎ হুযূর (সা) প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তিনবার করে ধৌত করেছেন।
কেননা উযূ গোসল ও মাসেহ উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করে থাকে। ইমাম আযম (র)-এর দলীল হলো ঐ হাদীস যাতে একবার মাসেহ করার নির্দেশ রয়েছে। এটাই মতপার্থক্যের কারণ। তাই দারে কৃতনী ইমাম আবূ ইউসূফ-এর সূত্রে ইমাম সাহেব (র)-এর রিওয়ায়েত বর্ণনা করে সর্বপ্রথম এই বিরোধিতা করেন যে, ان ابا حنيفة خالف الحفاظ في ذلك فقال ثلاثا ثلاثا وإنما هو مرة واحدة مع خلافه اياهم قال إن السنة في الوضوء مسح الرأس مرة অর্থাৎ “আবূ হানীফা (র) এখানে হাদীসের হাফিযদের বিরোধিতা করেছেন। এবং যারা তিনবার মাসেহ করার কথা বলেছেন, তাঁদের বিরোধিতা করে বলেছেন যে, উযূর মধ্যে একবার মাসেহ করা সুন্নত।" অথচ এখানে সন্দেহ করা অর্থহীন।
ইমাম সাহেবের রিওয়ায়েতে تثليث শব্দ রয়েছে। কিন্তু শাফিঈ (র)-এর মতানুযায়ী তিনবার নতুন পানি নিয়ে মাসেহ করতে হবে- এটা অর্থ নয়; বরং নতুন পানি না নিয়ে শুধু তিনবার মাথা মাসেহ করতে হবে এবং প্রত্যেকবারেই যখন হাত মাথা থেকে যখন পৃথক করা হয়নি, তখন এটা বাস্তবে একবার মাসেহ করা হবে, তিনবার কিভাবে হতে পারে? হিদায়া নামক গ্রন্থে মাসেহ করার পদ্ধতি এটাই বর্ণিত হয়েছে। এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, গোসলের কষ্ট থেকে এতে একটু সুযোগ এবং পবিত্রতার মধ্যে একটু অবকাশ দেওয়া হয়েছে। যদি তিনবার নতুন পানি নেওয়া হয়, তাহলে এটাতো গোসলই হয়ে যায়, মাসেহ থাকে না। অবকাশ ও সুযোগ দূরীভূত হয়ে যায়। ফলে মাসেহ করার উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়ে যায়। সুতরাং কিয়াস ও বিবেক অনুযায়ী একবার মাসেহ করাই বিধিসম্মত। এটাই ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মাযহাব।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ৫০ | মুসলিম বাংলা