মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
১. ঈমান-আকাঈদ অধ্যায়
হাদীস নং: ৫
তাওহীদ ও রিসালাত
৫। হযরত বুরাইদা (রাযিঃ) বর্ণনা করেন যে, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর খেদমতে উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি সাহাবাদেরকে বললেনঃ চল আমরা আমাদের প্রতিবেশী অসুস্থ ইয়াহুদী লোকটির সেবা করে আসি। বর্ণনাকারী বলেন, হযরত (ﷺ) তার নিকট পৌঁছার পর তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পেলেন। তিনি তাকে তার অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। এরপর বললেনঃ তুমি এ বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান কর যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবূদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। তখন লোকটি তার পিতার দিকে দৃষ্টিপাত করল, কিন্তু তার পিতা কিছুই বলল না। হুযূর (ﷺ) পুনরায় বললেন তুমি সাক্ষ্য প্রদান কর যে, এক আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। তখনও লোকটি তার পিতার দিকে দৃষ্টিপাত করল। এ অবস্থায় তার পিতা তাকে উক্ত বিষয়ে সাক্ষ্য বা স্বীকারোক্তির জন্য নির্দেশ দান করল। তখন ইয়াহুদী যুবকটি বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবূদ নেই এবং হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল। তখন নবী করীম (ﷺ) বললেনঃ আল্লাহর শুকরিয়া এই যে, তিনি আমার দ্বারা একজন মানুষকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করেছেন।
অন্য একটি রিওয়ায়েতে একই ঘটনা এভাবে বর্ণিত আছে যে, একদিন হুযূর (ﷺ) স্বীয় সাহাবাদেরকে বললেনঃ চল আমরা আমাদের একজন রুগ্ন ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে সেবা করে আসি। বর্ণনাকারী বলেন, যখন তিনি ঐ লোকটির নিকট গমন করেন তখন তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পেলেন। হযরত (ﷺ) তাকে বললেনঃ তুমি কি স্বীকার কর এক আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই? সে বলল, হ্যাঁ নিশ্চয়ই? এরপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি এ বিষয়ে সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসূল? তখন লোকটি তার পিতার দিকে দৃষ্টিপাত করল। বর্ণনাকারী বলেন, হুযূর (ﷺ) একই বাক্য তিনবার পুনরুল্লেখ করেন। অবশেষে লোকটি বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শোকর যে, আমার দ্বারা তিনি একজন লোককে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করলেন।
অন্য একটি রিওয়ায়েতে একই ঘটনা এভাবে বর্ণিত আছে যে, একদিন হুযূর (ﷺ) স্বীয় সাহাবাদেরকে বললেনঃ চল আমরা আমাদের একজন রুগ্ন ইয়াহুদী প্রতিবেশীকে সেবা করে আসি। বর্ণনাকারী বলেন, যখন তিনি ঐ লোকটির নিকট গমন করেন তখন তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পেলেন। হযরত (ﷺ) তাকে বললেনঃ তুমি কি স্বীকার কর এক আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই? সে বলল, হ্যাঁ নিশ্চয়ই? এরপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি এ বিষয়ে সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসূল? তখন লোকটি তার পিতার দিকে দৃষ্টিপাত করল। বর্ণনাকারী বলেন, হুযূর (ﷺ) একই বাক্য তিনবার পুনরুল্লেখ করেন। অবশেষে লোকটি বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শোকর যে, আমার দ্বারা তিনি একজন লোককে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করলেন।
عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ لِأَصْحَابِهِ: " انْهَضُوا بِنَا نَعُودُ جَارَنَا الْيَهُودِيَّ، قَالَ: فَدَخَلَ عَلَيْهِ، فَوَجَدَهُ فِي الْمَوْتِ، ثُمَّ قَالَ: أَتَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ؟ فَنَظَرَ إِلَى أَبِيهِ، فَلَمْ يُكَلِّمْهُ أَبُوهُ، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَتَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ، فَنَظَرَ إِلَى أَبِيهِ، فَقَالَ لَهُ أَبُوهُ: اشْهَدْ لَهُ، فَقَالَ الْفَتَى: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْحَمْدُ لِلَّهُ الَّذِي أَنْقَذَ بِي نَسَمَةً مِنَ النَّارِ "، وَفِي رِوَايَةٍ، أَنَّهُ قَالَ ذَاتَ يَوْمٍ لِأَصْحَابِهِ: انْهَضُوا بِنَا نَعُودُ جَارَنَا الْيَهُودِيَّ، قَالَ: فَوَجَدَهُ فِي الْمَوْتِ، فَقَالَ: أَتَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ؟ قَالَ: فَنَظَرَ الرَّجُلُ إِلَى أَبِيهِ، قَالَ: فَأَعَادَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَوَصَفَ الْحَدِيثَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ إِلَى آخِرِهِ عَلَى هَذِهِ الْهَيْئَةِ إِلى قَوْلِهِ: فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنْقَذَ بِي نَسَمَةً مِنَ النَّارِ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ইয়াহুদী-খ্রীস্টান ও অগ্নি উপাসক রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখার জন্য যাওয়াতে কোন দোষ নেই। বিশেষ করে যদি তাবলীগে দ্বীনের উদ্দেশ্য থাকে, যেমন হযরত (সা) এর আদর্শ পেশ করেছেন। ইমাম মুহাম্মদ (র) স্বীয় ‘আসার' নামক গ্রন্থে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছেন যে, রুগ্ন অবস্থায় কাফিরদের শুশ্রূষা করাতে কোন দোষ নেই।
এ হাদীসে বিস্তারিতভাবে প্রতিবেশীর হক ও অধিকারের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, প্রতিবেশীর অধিকারের ব্যাপারে ইসলামী আইনের মধ্যে কোন সীমাবদ্ধতা নেই। বাযযায, আবূ নাঈম এবং তিবরানী নামক গ্রন্থসমূহে এক মারফূ হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে যে, প্রতিবেশী তিন প্রকার।
প্রথমতঃ ঐ ব্যক্তি যার সাথে শুধু প্রতিবেশীর সম্পর্কে রয়েছে। যেমন একজন মুশরিক, এর সাথে আত্মীয়তার কোন সম্পর্ক নেই। পক্ষান্তরে ইসলামের দৃষ্টিতেও কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং অধিকারের দিক দিয়ে এটা হল নিম্নস্তরের প্রতিবেশী।
দ্বিতীয়তঃ যার মধ্যে দুটি হক বা অধিকার রয়েছে। যেমন ঐ ব্যক্তি যিনি মুসলমান এবং প্রতিবেশী। ইসলামের হক এবং প্রতিবেশীর হক। এটা হল মধ্যম স্তরের প্রতিবেশী।
তৃতীয়তঃ ঐ ব্যক্তি যিনি মুসলমান, আত্মীয় এবং প্রতিবেশী। এটা হল উঁচু স্তরের প্রতিবেশী।
কেননা তিনি একাধারে তিনটি হকের অধিকারী।
হাদীসের দ্বারা আরো একটি বিষয় প্রতীয়মান হল যে, শিশু যখন এতটুকু বয়ঃপ্রাপ্ত হয় যে, কুফরীর হাকীকত বা মূল উৎস উপলব্ধি করতে সক্ষম হওয়ার পর কুফরীর অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তবে সে শাস্তির যোগ্য হবে। এছাড়া হাদীসের দ্বারা আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা গেল যে, অন্য ধর্মের লোকদেরকে মুসলমানগণ দীনের দাওয়াত দিতে থাকবেন।
এ হাদীসে বিস্তারিতভাবে প্রতিবেশীর হক ও অধিকারের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, প্রতিবেশীর অধিকারের ব্যাপারে ইসলামী আইনের মধ্যে কোন সীমাবদ্ধতা নেই। বাযযায, আবূ নাঈম এবং তিবরানী নামক গ্রন্থসমূহে এক মারফূ হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে যে, প্রতিবেশী তিন প্রকার।
প্রথমতঃ ঐ ব্যক্তি যার সাথে শুধু প্রতিবেশীর সম্পর্কে রয়েছে। যেমন একজন মুশরিক, এর সাথে আত্মীয়তার কোন সম্পর্ক নেই। পক্ষান্তরে ইসলামের দৃষ্টিতেও কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং অধিকারের দিক দিয়ে এটা হল নিম্নস্তরের প্রতিবেশী।
দ্বিতীয়তঃ যার মধ্যে দুটি হক বা অধিকার রয়েছে। যেমন ঐ ব্যক্তি যিনি মুসলমান এবং প্রতিবেশী। ইসলামের হক এবং প্রতিবেশীর হক। এটা হল মধ্যম স্তরের প্রতিবেশী।
তৃতীয়তঃ ঐ ব্যক্তি যিনি মুসলমান, আত্মীয় এবং প্রতিবেশী। এটা হল উঁচু স্তরের প্রতিবেশী।
কেননা তিনি একাধারে তিনটি হকের অধিকারী।
হাদীসের দ্বারা আরো একটি বিষয় প্রতীয়মান হল যে, শিশু যখন এতটুকু বয়ঃপ্রাপ্ত হয় যে, কুফরীর হাকীকত বা মূল উৎস উপলব্ধি করতে সক্ষম হওয়ার পর কুফরীর অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তবে সে শাস্তির যোগ্য হবে। এছাড়া হাদীসের দ্বারা আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা গেল যে, অন্য ধর্মের লোকদেরকে মুসলমানগণ দীনের দাওয়াত দিতে থাকবেন।


বর্ণনাকারী: