আশ-শামাঈলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ- ইমাম তিরমিযী রহঃ

শামাইলে নববীর পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ৩৪২
রাসূলুল্লাহ্ -এর বিনয়ের বিবরণ
৩৪২। মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল (রাহঃ)... উমরা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন : 'আয়িশা (রাযিঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ঘরে অবস্থানকালে কি করতেন? জবাবে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ছিলেন মানুষের মধ্যে একজন মানুষ। পোশাকের মধ্যে তিনি উকুন তালাশ করতেন, ছাগ দোহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই সম্পন্ন করতেন।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ صَالِحٍ قَالَ : حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ ، عَنْ عَمْرَةَ ، قَالَتْ : قِيلَ لِعَائِشَةَ : مَاذَا كَانَ يَعْمَلُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِهِ ؟ قَالَتْ : كَانَ بَشَرًا مِنَ الْبَشَرِ ، يَفْلِي ثَوْبَهُ ، وَيَحْلُبُ شَاتَهُ ، وَيَخْدُمُ نَفْسَهُ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনার আলোকে নিম্নে পূর্ণাঙ্গ হাদীস ও তার ব্যাখ্যা পেশ করা হলো।

আসওয়াদ ইবন ইয়াযীদ রহ. বলেন, আমি আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবারবর্গের সেবায় থাকতেন। যখন নামাযের সময় হতো, নামাযে বের হয়ে যেতেন।

আসওয়াদ ইবন ইয়াযীদ রহ. একজন শীর্ষস্থানীয় তাবি'ঈ। একজন বড় ইবাদতগুযার, মুহাদ্দিছ, ফকীহ ও পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গার্হস্থ্য জীবন সম্পর্কে জানার আগ্রহ হলে তিনি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. বলেন-
كَانَ يَكُونُ فِي مِهْنَةِ أَهْلِهِ (তিনি পরিবারবর্গের সেবায় থাকতেন)। অর্থাৎ গার্হস্থ্য কাজকর্মে স্ত্রীদের সহযোগিতা করতেন। কেমন কেমন কাজ তিনি করতেন? বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্ন কাজ বর্ণিত হয়েছে।বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, তিনি ছেঁড়া কাপড় সেলাই করতেন, রিপু করতেন, বকরীর দুধ দোয়াতেন, জুতা ছিঁড়ে গেলে তা সেলাই করতেন, ঘর ঝাড়ু দিতেন, উট বাঁধতেন, উটকে ঘাস খাওয়াতেন, খাদেমের সঙ্গে আটার খামিরা বানাতেন, বাজার থেকে মালামাল বয়ে আনতেন এবং ব্যক্তিগত কাজকর্ম করতেন। অর্থাৎ তাঁর জীবনে অলসতা ছিল না। বাইরের অপরিসীম ব্যস্ততা তো ছিলই, এমনকি ঘরে যতক্ষণ থাকতেন, ততক্ষণও কাজে ব্যস্ত থাকতেন।

বলাই বাহুল্য, এভাবে গার্হস্থ্য কাজে সহযোগিতা করাটা ছিল তাঁর উচ্চতর বিনয়ের নিদর্শন। অহংকারী লোকেরা এসব করতে পারে না। তারা এসব কাজকে নিজের উচ্চাসনের পক্ষে বেমানান মনে করে। ভাবখানা এমন যে, এসব তো ঘরের মেয়েদের কাজ কিংবা এসব তো দাস-দাসী করবে। এসব ছোট ছোট কাজ করা কি আমার মানায়? কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঠিকই মানাত। তিনি এসব কাজকে নিজের জন্য অমর্যাদাকর মনে করতেন না। বরং এগুলো করাকে দায়িত্ব মনে করতেন। স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করাকে কর্তব্য জ্ঞান করতেন। বস্তুত দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করাতেই মহত্ত্ব। তিনি ছিলেন মহানবী। ঘরে-বাইরে তিনি যা-কিছুই করেছেন, তার প্রত্যেকটিই করণীয় কাজ এবং খুশিমনে তা করার ভেতরই জীবনের পরিপূর্ণতা।

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. বলেন- فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ خَرَجَ إِلَى الصَّلَاةِ (যখন নামাযের সময় হতো, নামাযে বের হয়ে যেতেন)। অর্থাৎ তাঁর যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, নামাযের সময় হয়ে গেলে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে মসজিদে চলে যেতেন এবং নামায আদায় করতেন। নামায ছিল তাঁর চোখের শীতলতা। নামায সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। তিনি সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্বের সঙ্গে এ আমল সম্পন্ন করতেন। এমন নয় যে, ব্যক্তিগত কাজের জন্য নামায পিছিয়ে দিতেন। বরং নামায যথাসময়ে আদায় করতেন এবং সেজন্য ব্যক্তিগত কাজ স্থগিত রাখতেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. গার্হস্থ্য কাজে অংশগ্রহণ বিনয়ের পরিচায়ক।

খ. প্রত্যেক পুরুষের গার্হস্থ্য কাজে স্ত্রীদের সহযোগিতা করা উচিত।

গ. কাজে যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, নামাযের সময় হয়ে গেলে সব স্থগিত রেখে আগে নামায আদায় করে নেওয়া উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
শামাঈলে তিরমিযী - হাদীস নং ৩৪২ | মুসলিম বাংলা