শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
২২. ছুটে যাওয়া অতিরিক্ত মাসাঈলের অধ্যায়
হাদীস নং: ৭৩০১
দুই ঈদের সালাতে কিভাবে তাকবীর বলতে হয়?
৭৩০১। মুহাম্মাদ ইবন আহমাদ আল-জুযজানী (রাহঃ) ..... আবু আয়েশা (রাযিঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সাঈদ ইবনুল আ'স (রাযিঃ)) একদিন আবু মুসা আল আশআরী (রাযিঃ) ও হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাযিঃ)-কে ডাকলেন এবং তাদেরকে প্রশ্ন করলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরে কেমন করে তাকবীর বলতেন? আবু মুসা (রাযিঃ) বলেন, জানাযার ন্যায় চার তাকবীর বলতেন । হুযায়ফা (রাযিঃ) তাঁর সমর্থন করলেন। তখন আবু মুসা (রাযিঃ) বলেন, এভাবে আমিও বসরাবাসীদের জন্যে তাকবীর বলতাম যখন আমি তাদের আমীর ছিলাম।
এ হাদীসেও প্রথম হাদীস থেকে অতিরিক্ত নেই। এখানেও আমরা অনুসন্ধান করেন একটি বর্ণনা খুঁজে পেলাম:
এ হাদীসেও প্রথম হাদীস থেকে অতিরিক্ত নেই। এখানেও আমরা অনুসন্ধান করেন একটি বর্ণনা খুঁজে পেলাম:
7301 - فَإِذَا مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ الْجُوزْجَانِيُّ قَدْ حَدَّثَنَا , قَالَ: ثنا غَسَّانُ بْنُ الرَّبِيعِ قَالَ: ثنا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ ثَابِتِ [ص:346] بْنِ ثَوْبَانَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ سَمِعَ مَكْحُولًا يَقُولُ: حَدَّثَنِي أَبُو عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ سَعِيدَ بْنَ الْعَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ دَعَا أَبَا مُوسَى الْأَشْعَرِيَّ وَحُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا , فَسَأَلَهُمَا كَيْفَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَبِّرُ فِي الْأَضْحَى وَالْفِطْرِ؟ فَقَالَ أَبُو مُوسَى: أَرْبَعًا , كَتَكْبِيرِهِ عَلَى الْجَنَائِزِ , وَصَدَّقَهُ حُذَيْفَةُ. فَقَالَ أَبُو مُوسَى: كَذَلِكَ كُنْتُ أُكَبِّرُ لِأَهْلِ الْبَصْرَةِ , إِذْ كُنْتُ أَمِيرًا عَلَيْهِمْ " فَلَمْ يَكُنْ فِي هَذَا أَيْضًا زِيَادَةٌ عَلَى مَا فِي الْحَدِيثِ الْأَوَّلِ. فَنَظَرْنَا فِي ذَلِكَ أَيْضًا
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীসে হযরত আবু মুসা আশআরী রা. ঈদের নামাযে চার-চার তাকবীরের কথা বলেছেন। এর ব্যাখ্যা আব্দুর রাযযাক: ৫৬৮৭ নং হাদীসে হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে সহীহ সনদে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, প্রথম রাকাতের কিরাতের পূর্বে তাকবীর চারটি। (তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অতিরিক্ত তাকবীর হবে তিনটি) আর দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পরে তাকবীর চারটি তার শেষ তাকবীরে রুকু করবে। (অতিরিক্ত তাকবীর তিনটি) তাহলে দু’রাকাত নামাযে অতিরিক্ত তাকবীর মোট ছয়টি। এ ব্যাখ্যা অনুযায়ী হযরত আবু মুসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হলো যে, রসূল স. ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর বলতেন। আমরা এভাবেই ঈদের নামায পড়ে থাকি।
অনুরূপ অর্থে চার তাকবীর সম্বলিত আরো বেশ কিছু হাদীস সহীহ বা হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে।
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ وَيَحْيَى بْنُ عُثْمَانَ قَدْ حَدَّثَانَا، قَالَا: ثنا عَبْدُ الله بْنُ يُوسُفَ عَنْ يَحْيَى بْنِ حَمْزَةَ قَالَ: حَدَّثَنِي الْوَضِينُ بْنُ عَطَاءٍ أَنَّ الْقَاسِمَ، أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ حَدَّثَهُ، قَالَ: حَدَّثَنِي بَعْضُ أَصْحَابِ رَسُولِ الله صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ صَلَّى بِنَا، النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عِيدٍ، فَكَبَّرَ أَرْبَعًا، وَأَرْبَعًا، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ حِينَ انْصَرَفَ، قَالَ: لَا تَنْسَوْا، كَتَكْبِيرِ الْجَنَائِزِ، وَأَشَارَ بِأَصَابِعِهِ، وَقَبَضَ إبْهَامَهُ فَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنُ الْإِسْنَادِ وَعَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ, وَيَحْيَى بْنُ حَمْزَةَ, وَالْوَضِينُ وَالْقَاسِمُ كُلُّهُمْ أَهْلُ رِوَايَةٍ, مَعْرُوفُونَ بِصِحَّةِ الرِّوَايَةِ
হযরত কাসেম বিন আব্দুর রহমান রহ. বলেন, রসূলুল্লাহ স.-এর কোন এক সাহাবা আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ স. আমাদেরকে ঈদের দিনে নামায পড়ালেন। তাতে ৪বার অতঃপর ৪বার তাকবীর বললেন। নামায শেষে আমাদের দিকে ফিরে বৃদ্ধাঙ্গুল বন্ধ করে হাতের অপর ৪ আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে বললেন, তোমরা ভুলে যেও না, এটা জানাযার তাকবীরের মতো। ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেন, এ হাদীসের সনদ হাসান। আব্দুল্লাহ বিন ইউসুফ, ইয়াহইয়া বিন হামযা, ওয়াযীন বিন আতা এবং কাসেম সকলেই বর্ণনায় পারদর্শী এবং সহীহ বর্ণনা পেশ করায় পরিচিত। (ত্বহাবী: খ--২, পৃষ্ঠা-৩৭১, হাদীস নং-৭২৭৩)
হাদীসটির সত্মর: সহীহ লিগাইরিহী। ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেন, এ হাদীসের সনদ হাসান। বদরুদ্দীন আইনী রহ. বলেন,وهذا إسناد صحيح ورجاله ثقات. হাদীসটির সনদ সহীহ এবং বর্ণনাকারীগণ সকলেই নির্ভরযোগ্য। (নুখাবুল আফকার: ১৬/৪৪২)
ফায়দা : এ সহীহ হাদীসটি বর্ণনান্তে ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেন, ঈদের নামাযের তাকবীর সংখ্যার বিষয়টি যদি সনদের দৃঢ়তা দিয়ে ফায়সালা করতে হয় তাহলে এ হাদীসটি গ্রহণ করা বেশী উত্তম হবে।
ইমাম ত্বহাবী রহ.-এর এ মনত্মব্যের কারণ এই যে, তাঁর অনুসন্ধানে ঈদের নামাযের তাকবীরের ব্যাপারে রসূল স. থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে সনদের বিবেচনায় এর চেয়ে দৃঢ় হাদীস নেই। যদিও একক সনদে এটা উঁচু মানের সহীহ নয়। তবুও সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিঈগণের ব্যাপক আমল এর অনুকুলে থাকায় এ হাদীসের দৃঢ়তাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ইমাম আহমাদ রহ. অবশ্য মন্তব্য করেছেন যে, “ঈদের নামাযের তাকবীরের ব্যাপারে রসূলুল্লাহ স. থেকে বর্ণিত কোন সহীহ হাদীস নেই”। (নাসবুর রায়াহ: ঈদের নামায অধ্যায়) হয়তো তিনি এ মন্তব্য দ্বারা একক সনদে বর্ণিত উঁচু মানের সহীহ হাদীস উদ্দেশ্য নিয়েছেন, এ হাদীসটির একক সনদ সে মানে পৌঁছেনি।
চার তাকবীরের ব্যাখ্যা প্রথম হাদীসের সারসংক্ষেপে দেখুন।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরামের আমল :
عَنْ مَعْمَرٍ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، وَالْأَسْوَدِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ: كَانَ ابْنُ مَسْعُودٍ جَالِسًا وَعِنْدَهُ حُذَيْفَةُ وَأَبُو مُوسَى الْأَشْعَرِيُّ، فَسَأَلَهُمَا سَعِيدُ بْنُ الْعَاصِ عَنِ التَّكْبِيرِ فِي الصَّلَاةِ يَوْمَ الْفِطْرِ وَالْأَضْحَى فَجَعَلَ هَذَا يَقُولُ: سَلْ هَذَا، وَهَذَا يَقُولُ: سَلْ هَذَا، فَقَالَ لَهُ حُذَيْفَةُ: سَلْ هَذَا لِعَبْدِ الله بْنِ مَسْعُودٍ فَسَأَلَهُ، فَقَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ: يُكَبِّرُ أَرْبَعًا ثُمَّ يَقْرَأُ، ثُمَّ يُكَبِّرُ فَيَرْكَعُ، ثُمَّ يَقُومُ فِي الثَّانِيَةِ فَيَقْرَأُ، ثُمَّ يُكَبِّرُ أَرْبَعًا بَعْدَ الْقِرَاءَةِ.
অনুবাদ : হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বসেছিলেন। তাঁর কাছে হযরত হুজাইফা ও আবু মুসা আশআরী রা. উপস্থিত ছিলেন। সাঈদ ইবনুল আছ তাঁদের দু’জনকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে নামাযের তাকবীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন তাঁদের একজন অপরজনকে দেখিয়ে বলতেছিলেন যে, তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করো। আবার অপরজন বলেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করো। পরে হযরত হুজাইফা বললেন, এ বিষয়টি আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.কে জিজ্ঞেস করুন। তিনি হযরত ইবনে মাসউদ রা.কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ৪ বার তাকবীর দিয়ে কুরআন পাঠ করবে। তাকবীর বলে রুকু করবে। অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতে কুরআন পড়ে ৪ বার তাকবীর বলবে। (আব্দুর রাযযাক: ৫৬৮৭)
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাউকূফ। হাদীসটির সকল রাবীই বুখারী-মুসলিমের রাবী। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, رَوَاهُ عبد الرَّزَّاق عَن ابْن مَسْعُود بِإِسْنَاد صَحِيح “আব্দুর রাযযাক ইবনে মাসউদ থেকে সহীহ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন”। (আদ্দিরায়াহ: হাদীস নাম্বার 286)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীসের বর্ণনায় হযরত ইবনে মাসউদ রা. স্পষ্ট বলেছেন যে, প্রথম রাকাতের কিরাতের পূর্বে তাকবীর চারটি। তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অতিরিক্ত তাকবীর হবে তিনটি। আর দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পরে তাকবীর চারটি তার শেষ তাকবীরে রুকু করবে। তাহলে অতিরিক্ত তাকবীর তিনটি। দু’রাকাত নামাযে অতিরিক্ত তাকবীর মোট ছয়টি। আমরা এভাবেই ঈদের নামায পড়ে থাকি।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بن عَبْدِ الله الْحَضْرَمِيُّ، حَدَّثَنَا مَسْرُوقُ بن الْمَرْزُبَانِ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي زَائِدَةَ، عَنْ أَشْعَثَ، عَنْ كُرْدُوسٍ، قَالَ: أَرْسَلَ الْوَلِيدُ إِلَى عَبْدِ الله بن مَسْعُودٍ، وَحُذَيْفَةَ، وَأَبِي مَسْعُودٍ، وَأَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ بَعْدَ الْعَتَمَةِ، فَقَالَ: إِنَّ هَذَا عِيدُ الْمُسْلِمِينَ فَكَيْفَ الصَّلاةُ؟ فَقَالُوا: سَلْ أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ فَسَأَلَهُ، فَقَالَ:"يَقُومُ فَيُكَبِّرُ أَرْبَعًا، ثُمَّ يَقْرَأُ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ، وَسُورَةٍ مِنَ الْمُفَصَّلِ، ثُمَّ يُكَبِّرُ، وَيَرْكَعُ فَتِلْكَ خَمْسٌ ثُمَّ يَقُومُ فَيَقْرَأُ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُورَةٍ مِنَ الْمُفَصَّلِ، ثُمَّ يُكَبِّرُ أَرْبَعًا يَرْكَعُ فِي آخِرِهِنَّ فَتِلْكَ تِسْعٌ فِي الْعِيدَيْنِ فَمَا أَنْكَرَهُ وَاحِدٌ مِنْهُمْ.
অনুবাদ : কুরদুস বিন আব্বাস রহ. বলেন, হযরত ওয়ালিদ ইশার নামাযের পরে আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ, হুজাইফা, আবু মাসউদ এবং হযরত আবু মুসা আশআরী রা.-এর নিকট লোক পাঠালেন। প্রেরিত দূত তাঁদের নিকট গিয়ে বললো, এটা মুসলমানদের ঈদ। আপনারা বলে দিন যে, নামাযের পদ্ধতি কেমন হবে? তাঁরা সবাই বললেন: হযরত আবু আব্দুর রহমান অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.কে জিজ্ঞেস করুন। জবাবে হযরত ইবনে মাসউদ বলেন, ঈদের নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে ৪ বার তাকবীর বলে ছূরা ফাতিহা ও মুফাছছল থেকে অপর একটি ছূরা পড়বে এবং পুনরায় তাকবীর বলে রুকু করবে। এ হলো মোট ৫টি তাকবীর। এরপর দাঁড়িয়ে ছূরা ফাতিহা ও মুফাছ্ছাল থেকে অপর একটি ছূরা পড়বে। অতঃপর ৪ বার তাকবীর বলবে যার শেষ তাকবীরে রুকু করবে। এ হলো সর্বমোট ৯টি তাকবীর। তিনি এ কথা বলার পরে তাদের কেউই এর প্রতিবাদ করেননি। (আল্ মু’জামুল কাবীর লিত্তবারানী-৯৪০০)
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাউকূফ। আলস্নামা হাইসামী বলেন, এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই নির্ভরযোগ্য”। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ৩২৪৭) হযরত ইবনে হাযাম এ হাদীসটির সনদকে উঁচু মানের সহীহ বলেছেন। (মুহালস্না: ঈদের নামায অধ্যায়)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীসের বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ঈদের নামাযে দাঁড়িয়ে ৪ বার তাকবীর বলে ছূরা ফাতিহা ও মুফাছছল থেকে অপর একটি ছূরা পড়বে এবং পুনরায় তাকবীর বলে রুকু করবে। এ হলো মোট ৫টি তাকবীর। তাকবীরে তাহরীমা এবং রুকুর তাকবীর ব্যতীত অতিরিক্ত তাকবীর তিনটি। এরপর দাঁড়িয়ে ছূরা ফাতিহা ও মুফাছ্ছাল থেকে অপর একটি ছূরা পড়বে। অতঃপর ৪ বার তাকবীর বলবে যার শেষ তাকবীরে রুকু করবে। এর মধ্যে রুকুর তাকবীর ব্যতীত অতিরিক্ত তাকবীর তিনটি। এ হলো সর্বমোট ৯টি তাকবীর যার মধ্যে ঈদের নামাযের অতিরিক্ত ছয়টি। অন্য চারটি এমন তাকবীর যা সকল নামাযে দেয়া হয়ে থাকে। উপস্থিত সাহাবায়ে কিরামও এটা সমর্থন করেন। আমরা এভাবেই ঈদের নামায পড়ে থাকি।
অনুরূপ অর্থে নয় তাকবীর সম্বলিত আরো বেশ কিছু হাদীস সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে।
عَبْدُ الرَّزَّاقِ، قَالَ: أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ أَبِي الْوَلِيدِ قَالَ: حَدَّثَنَا خَالِدٌ الْحَذَّاءُ، عَنْ عَبْدِ الله بْنِ الْحَارِثِ قَالَ شَهِدْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ كَبَّرَ فِي صَلَاةِ الْعِيدِ بِالْبَصْرَةِ تِسْعَ تَكْبِيرَاتٍ، وَالَى بَيْنَ الْقِرَاءَتَيْنِ قَالَ: وَشَهِدْتُ الْمُغِيرَةَ بْنَ شُعْبَةَ فَعَلَ ذَلِكَ أَيْضًا. فَسَأَلْتُ خَالِدًا كَيْفَ فَعَلَ ابْنُ عَبَّاسٍ؟ فَفَسَّرَ لَنَا كَمَا صَنَعَ ابْنُ مَسْعُودٍ فِي حَدِيثِ مَعْمَرٍ وَالثَّوْرِيِّ عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ سَوَاءً
অনুবাদ : হযরত আব্দুল্লাহ বিন হারিস বলেন, আমি হযরত ইবনে আব্বাস রা.কে দেখেছি, তিনি বসরায় ঈদের নামাযে নয়টি তাকবীর দিলেন এবং উভয় রাকাতের কিরাতকে মিলালেন। আমি মুগীরা বিন শু’বা রা.কেও অনুরূপ করতে দেখেছি। অতঃপর আমি খালিদ হাজ্জাকে জিজ্ঞেস করলাম, ইবনে আব্বাস রা. নয় তাকবীর কীভাবে দিলেন? তিনি আমাকে (পূর্ববর্ণিত) মা’মার ও সাওরীর মাধ্যমে আবু ইসহাক থেকে বর্ণিত ইবনে মাসউদ রা.-এর হাদীসের অনুরূপ ব্যাখ্যা দিলেন। (আব্দুর রাযযাক: ৫৬৮৯) অর্থাৎ নিয়মিত তাকবীর ব্যতীত অতিরিক্ত ছয় তাকবীর বললেন।
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাউকূফ। হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেন, “হাদীসটির সনদ সহীহ”। (আদ্দিরায়াহ: ২৮৬ নাম্বার হাদীস-এর আলোচনায়)
সারসংক্ষেপ : হযরত ইবনে আব্বাস রা. কর্তৃক ৯ তাকবীরের ব্যাখ্যা হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত আল্ মু’জামুল কাবীর লিত্তবারানী-এর ৯৪০০ নাম্বার হাদীসের সারসংক্ষেপে দেখুন। এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হলো যে, ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর ছয়টি।
এ ব্যাখ্যা মতে নয় তাকবীরের হাদীস সহীহ সনদে আরো বর্ণিত হয়েছে হযরত আনাস রা. থেকে-(ইবনে আবী শাইবা: ৫৭৬০)। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন-(নুখাবুল আফকার: পৃষ্ঠা-৪৫৪, খ--১৬)। আরো বর্ণিত হয়েছে হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. এবং সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব রহ. থেকে-(ইবনে আবী শাইবা: ৫৭৫৬)। হাদীসটির সকল রাবীই বুখারী-মুসলিমের রাবী। এ সকল হাদীস থেকেও প্রমাণিত হলো যে, ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর ছয়টি।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট তাবিঈনে কিরামের আমল :
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرَةَ، قَالَ: ثنا رَوْحٌ، قَالَ: ثنا شُعْبَةُ، قَالَ سَمِعْتُ مَنْصُورًا، يُحَدِّثُ عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، وَمَسْرُوقٍ، أَنَّهُمَا كَانَا يُكَبِّرَانِ فِي الْعِيدَيْنِ تِسْعَ تَكْبِيرَاتٍ
অনুবাদ : হযরত ইবরাহীম নাখাঈ রহ. বর্ণনা করেন যে, হযরত আসওয়াদ এবং মাসরূক রহ. ঈদের নামাযে ৯টি তাকবীর দিতেন। (ত্বহাবী: খ--২, পৃষ্ঠা-৩৭৩, হাদীস নং-৭২৯৪)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাকতু’। আলস্নামা বদরম্নদ্দীন আইনী রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (নুখাবুল আফকার: খ--১৬, পৃষ্ঠা-৪৫৮)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকেও প্রমাণিত হলো যে, ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর ছয়টি। এ বিষয়ে সহীহ সনদে ইবরাহীম নাখাঈ রহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.-এর ছাত্রগণ (যারা প্রবীণ তাবিঈ) ঈদের নামাযে নয় তাকবীর দিতেন। (ইবনে আবী শাইবা: ৫৭৬১) হযরত হাসান বসরী রহ. থেকে হাসান সনদে বর্ণিত আছে যে, নামাযের তাকবীরসহ তিনি ঈদের নামাযে ৯টি তাকবীর দিতেন। (ত্বহাবী: খ--২, পৃষ্ঠা-৩৭৩, হাদীস নং-৭২৯৫) আল্লামা আইনী এটাকে সহীহ বলেছেন। (নুখাবুল আফকার: খ--১৬, পৃষ্ঠা-৪৫৯) ইবরাহীম নাখাঈ রহ. থেকে সহীহ সনদে আরো বর্ণিত আছে যে, (অতিরিক্ত তাকবীরসহ) ঈদের নামাযের তাকবীর ৯টি। (ত্বহাবী: খ--২, পৃষ্ঠা-৩৭৩, হাদীস নং-৭২৯৬) আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী এটাকে সহীহ বলেছেন। (নুখাবুল আফকার: পৃষ্ঠা-৪৫৯, খ--১৬) এ ব্যাপারে সহীহ সনদে হযরত ইবনে ছীরীন রহ. থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, তিনি ঈদের তাকবীরের ব্যাপারে যা বলেছেন তা হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত তাকবীরের অনুরূপ। (ত্বহাবী: খ--২, পৃষ্ঠা-৩৭৩, হাদীস নং-৭২৯৮) আল্লামা আইনী এটাকে সহীহ বলেছেন। (নুখাবুল আফকার: পৃষ্ঠা-৪৫৯, খ--১৬) সহীহ সনদে আরো বর্ণিত আছে ইমাম শা’বী ও মুসাইয়াব বিন রাফে’ রহ. থেকে। (ইবনে আবী শাইবা: ৫৭৭৪) হাদীসটির সকল রাবীই বুখারী-মুসলিমের রাবী। এ সকল হাদীস থেকেও প্রমাণিত হলো যে, ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর ছয়টি।
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرَةَ قَالَ: ثنا رَوْحٌ قَالَ: ثنا شُعْبَةُ قَالَ: سَمِعْتُ حَمْزَةَ أَبَا عُمَارَةَ قَالَ: سَمِعْتُ الشَّعْبِيَّ رَحِمَهُ اللهُ يَقُولُ: «ثَلَاثًا ثَلَاثًا , سِوَى تَكْبِيرَةِ الصَّلَاةِ
অনুবাদ : হযরত হামঝা বিন হাবীব বলেন, আমি ইমাম শা’বী রহ. থেকে শুনেছি যে, নামাযের তাকবীর ব্যতীত তিনটি করে (মোট ছয়টি) তাকবীর দিতে হবে। (ত্বহাবী: খ--২, পৃষ্ঠা-৩৭৩, হাদীস নং-৭২৯৭)
হাদীসটির সত্মর : সহীহ, মাকতু’। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (নুখাবুল আফকার: পৃষ্ঠা-৪৫৯, খ--১৬)
ফায়দা : অতিরিক্ত ছয় তাকবীরে ঈদের নামায পড়ার দলীল হিসেবে হাসান ও সহীহ সনদে বর্ণিত রসূলুল্লাহ স.-এর আমল ও তাঁর বাণী, (আবু দাউদ: ১১৫৩, ত্বহাবী: খ--২, পৃষ্ঠা-৩৭১, হাদীস নং-৭২৭৩) সহীহ সনদে বর্ণিত জলীলুল কদর সাহাবায়ে কিরামের আমল ও মন্তব্য (আব্দুর রাযযাক: ৫৬৮৭ ও ৫৬৮৯, তবারানী: ৯৪০০ এবং ইবনে আবী শাইবা: ৫৭৫৬ ও ৫৭৬০) এবং সহীহ সনদে বর্ণিত বিশিষ্ট তাবিঈদের আমল ও মন্তব্য (ইবনে আবী শাইবা: ৫৭৬১, ৫৭৬৫ ও ৫৭৭৪)-এর ভিত্তিতে আমরা অতিরিক্ত ৬ তাকবীরের সাথে ঈদের নামায আদায় করে থাকি এবং এটাকে উত্তম বলে বিশ্বাস করি।
এর বিপরীতে ১২ তাকবীরে ঈদের নামায আদায় করার কথাও হাদীসে বর্ণিত আছে। তন্মধ্যে তিরমিযী শরীফে বর্ণিত ৫৩৬ নাম্বার হাদীসকে ইমাম তিরমিযী রহ. হাসান বলার পাশাপাশি এ মন্তব্য করেন যে, وَهُوَ أَحْسَنُ شَيْءٍ رُوِيَ فِي هَذَا البَابِ হাদীসটি এ অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম। রিজাল শাস্ত্রের ইমামগণের বিশেস্নষন মতে ইমাম তিরমিযী রহ. কর্তৃক হাদীসটিকে হাসান এবং এ অধ্যায়ের মধ্যে সর্বোত্তম বলে মন্তব্য করা যথার্থ নয়। কারণ এ হাদীসের সনদে কাসীর বিন আব্দুল্লাহ নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন। তাঁর ব্যাপারে ইমাম আহমাদ রহ. বলেন,منكر الحديث “তাঁর হাদীস অগ্রহণযোগ্য”। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, ضعيف الحديث “তাঁর হাদীস জঈফ”। আবু দাউদ বলেন, كان أحد الكذابين “তিনি মিথ্যাবাদীদের একজন”। ইমাম দারাকুতনী বলেন, متروك الحديث “তাঁর হাদীস পরিত্যাক্ত”। (তাহজীবুত তাহজীব ও তাহজীবুল কামাল থেকে সংগৃহীত)। ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, ضعيف: أفرط من نسبه إلى الكذب “তিনি জঈফ, যারা তাঁকে মিথ্যার দিকে সম্বোধন করেছে তারা বাড়াবাড়ি করেছে”। (তাকরীব: ৬৩০৮)। সুতরাং এমন রাবীর বর্ণিত হাদীস কীভাবে হাসান স্তরে উন্নীত এবং সর্বোত্তম হয়? এ হাদীসের ব্যাপারে ইমাম তিরমিযী রহ. নিজে তাঁর ইলালুল কুবরায় বলেন, ইমাম বুখারী রহ.কে জিজ্ঞেস করলে তিনি এটাকে জঈফ বলেছেন। (আল ইলালুল কাবীর: ঈদের নামাযের তাকবীর অধ্যায়) ইমাম দারাকুতনী রহ. এটাকে মুজতরাব বলেছেন। (ইলালুদ দারাকুতনী: ৩৪৫৮)
১২ তাকবীরে ঈদের নামায পড়ার হাদীস আরো বর্ণিত আছে আবু দাউদ: ১১৪৯ ও ১১৫০ নাম্বারে এ দুটি হাদীসের বর্ণনায় রয়েছে আব্দুল্লাহ বিন লাহিআহ। তিনি যদিও মুসলিমের রাবী কিন্তু তাঁর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের আপত্তি রয়েছে। ইমাম ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, كان ضعيفا لا يحتج بحديثه “তিনি জঈফ, তার হাদীস দলীলযোগ্য নয়”। ইমাম নাসাঈ রহ. বলেন, ليس بثقة “তিনি নির্ভরযোগ্য নন”। ইবনে আবী হাতেম বলেন,سألت أبى وأبا زرعة عن الإفريقى و ابن لهيعة: أيهما أحب إليك ؟ فقالا: جميعا ضعيفان “আমি আমার পিতা আবু হাতিমকে এবং আবু যুরআকে জিজ্ঞেস করলাম: আব্দুল্লাহ বিন লাহিআহ এবং ইফরিকী এ দুজনের মধ্যে আপনার নিকট কে প্রিয়? তাঁরা বললেন, দুজনই জঈফ”। (তাহজীবুল কামাল ও তাহজীবুত তাহজীব থেকে সংগৃহীত) ইমাম জাহাবী বলেন, قلت: العمل على تضعيف حديثه “তাঁর ব্যাপারে সিদ্ধানত্ম হলো তাঁর হাদীসকে জঈফ গণনা করা”। (আল কাশেফ: ২৯৩৪) অবশ্য আব্দুল্লাহ বিন মুবারক ও আব্দুল্লাহ বিন ওয়াহহাব রহ. ইবনে লাহিআ থেকে যা বর্ণনা করেন তা অন্যদের বর্ণনার চেয়ে তুলনামূলক বেশী গ্রহণযোগ্য। কিন্তু উক্ত বর্ণনায় হযরত আব্দুল্লাহ বিন লাহিআ নিঃসঙ্গ হওয়ায় সে প্রাধান্যের দিকটিও দুর্বল হয়ে গেছে। হাকেম এবং ইমাম জাহাবী রহ. বলেন, تفرد به ابن لهيعة “হাদীসটি আব্দুল্লাহ বিন লাহিআ একাই বর্ণনা করেছেন”। (মুসতাদরাকে হাকেম: ১১০৮ নাম্বার হাদীস ও ইমাম জাহাবীর তালখীছে)
১২ তাকবীরে ঈদের নামায পড়ার হাদীস আরো বর্ণিত আছে আবু দাউদ: ১১৫১ ও ১১৫২ নাম্বার হাদীসে। এ দুটি হাদীসের বর্ণনায় রয়েছে আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান তায়েফী। অধিকাংশ মুহাদ্দিস তাঁর বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তাঁর ব্যাপারে কিছু মুহাদ্দিসীনে কিরামের আপত্তিও রয়েছে। عن ابن معين : ضعيف “হযরত ইয়াহইয়া বিন মাঈন রহ. বলেন, তিনি জঈফ”। আবু হাতিম বলেন, ليس بقوى ، لين الحديث “তিনি শক্তিশালী নন, হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে নরম”। ইমাম নাসাঈ বলেন, ليس بذاك القوى و يكتب حديثه “তিনি তেমন মজবুত নন। তবে তাঁর হাদীস লেখার যোগ্য”।
উপরিউক্ত তথ্যের দ্বারা ইবনে লাহিআ বা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান তায়েফী রহ. কর্তৃক বর্ণিত হাদীসকে অগ্রহণযোগ্য বলা আমার উদ্দেশ্য নয়; বরং এটা দেখানো উদ্দেশ্য যে, ইবনে লাহিআ ও আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান তায়েফীর মাধ্যমে বর্ণিত ১২ তাকবীরে ঈদের নামায পড়ার হাদীসের তুলনায় পূর্ববর্ণিত ৬ তাকবীরে ঈদের নামায পড়ার হাদীস তুলনামূলক বেশী শক্তিশালী। এ কারণে আমরা ৬ তাকবীরে ঈদের নামায পড়ার আমলকে উত্তম মনে করি। তবে ১২ তাকবীরে ঈদের নামায পড়ার আমলকেও বৈধ মনে করি। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (২/১৭২)
অনুরূপ অর্থে চার তাকবীর সম্বলিত আরো বেশ কিছু হাদীস সহীহ বা হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে।
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ وَيَحْيَى بْنُ عُثْمَانَ قَدْ حَدَّثَانَا، قَالَا: ثنا عَبْدُ الله بْنُ يُوسُفَ عَنْ يَحْيَى بْنِ حَمْزَةَ قَالَ: حَدَّثَنِي الْوَضِينُ بْنُ عَطَاءٍ أَنَّ الْقَاسِمَ، أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ حَدَّثَهُ، قَالَ: حَدَّثَنِي بَعْضُ أَصْحَابِ رَسُولِ الله صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ صَلَّى بِنَا، النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عِيدٍ، فَكَبَّرَ أَرْبَعًا، وَأَرْبَعًا، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ حِينَ انْصَرَفَ، قَالَ: لَا تَنْسَوْا، كَتَكْبِيرِ الْجَنَائِزِ، وَأَشَارَ بِأَصَابِعِهِ، وَقَبَضَ إبْهَامَهُ فَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنُ الْإِسْنَادِ وَعَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ, وَيَحْيَى بْنُ حَمْزَةَ, وَالْوَضِينُ وَالْقَاسِمُ كُلُّهُمْ أَهْلُ رِوَايَةٍ, مَعْرُوفُونَ بِصِحَّةِ الرِّوَايَةِ
হযরত কাসেম বিন আব্দুর রহমান রহ. বলেন, রসূলুল্লাহ স.-এর কোন এক সাহাবা আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ স. আমাদেরকে ঈদের দিনে নামায পড়ালেন। তাতে ৪বার অতঃপর ৪বার তাকবীর বললেন। নামায শেষে আমাদের দিকে ফিরে বৃদ্ধাঙ্গুল বন্ধ করে হাতের অপর ৪ আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে বললেন, তোমরা ভুলে যেও না, এটা জানাযার তাকবীরের মতো। ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেন, এ হাদীসের সনদ হাসান। আব্দুল্লাহ বিন ইউসুফ, ইয়াহইয়া বিন হামযা, ওয়াযীন বিন আতা এবং কাসেম সকলেই বর্ণনায় পারদর্শী এবং সহীহ বর্ণনা পেশ করায় পরিচিত। (ত্বহাবী: খ--২, পৃষ্ঠা-৩৭১, হাদীস নং-৭২৭৩)
হাদীসটির সত্মর: সহীহ লিগাইরিহী। ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেন, এ হাদীসের সনদ হাসান। বদরুদ্দীন আইনী রহ. বলেন,وهذا إسناد صحيح ورجاله ثقات. হাদীসটির সনদ সহীহ এবং বর্ণনাকারীগণ সকলেই নির্ভরযোগ্য। (নুখাবুল আফকার: ১৬/৪৪২)
ফায়দা : এ সহীহ হাদীসটি বর্ণনান্তে ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেন, ঈদের নামাযের তাকবীর সংখ্যার বিষয়টি যদি সনদের দৃঢ়তা দিয়ে ফায়সালা করতে হয় তাহলে এ হাদীসটি গ্রহণ করা বেশী উত্তম হবে।
ইমাম ত্বহাবী রহ.-এর এ মনত্মব্যের কারণ এই যে, তাঁর অনুসন্ধানে ঈদের নামাযের তাকবীরের ব্যাপারে রসূল স. থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে সনদের বিবেচনায় এর চেয়ে দৃঢ় হাদীস নেই। যদিও একক সনদে এটা উঁচু মানের সহীহ নয়। তবুও সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিঈগণের ব্যাপক আমল এর অনুকুলে থাকায় এ হাদীসের দৃঢ়তাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ইমাম আহমাদ রহ. অবশ্য মন্তব্য করেছেন যে, “ঈদের নামাযের তাকবীরের ব্যাপারে রসূলুল্লাহ স. থেকে বর্ণিত কোন সহীহ হাদীস নেই”। (নাসবুর রায়াহ: ঈদের নামায অধ্যায়) হয়তো তিনি এ মন্তব্য দ্বারা একক সনদে বর্ণিত উঁচু মানের সহীহ হাদীস উদ্দেশ্য নিয়েছেন, এ হাদীসটির একক সনদ সে মানে পৌঁছেনি।
চার তাকবীরের ব্যাখ্যা প্রথম হাদীসের সারসংক্ষেপে দেখুন।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরামের আমল :
عَنْ مَعْمَرٍ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، وَالْأَسْوَدِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ: كَانَ ابْنُ مَسْعُودٍ جَالِسًا وَعِنْدَهُ حُذَيْفَةُ وَأَبُو مُوسَى الْأَشْعَرِيُّ، فَسَأَلَهُمَا سَعِيدُ بْنُ الْعَاصِ عَنِ التَّكْبِيرِ فِي الصَّلَاةِ يَوْمَ الْفِطْرِ وَالْأَضْحَى فَجَعَلَ هَذَا يَقُولُ: سَلْ هَذَا، وَهَذَا يَقُولُ: سَلْ هَذَا، فَقَالَ لَهُ حُذَيْفَةُ: سَلْ هَذَا لِعَبْدِ الله بْنِ مَسْعُودٍ فَسَأَلَهُ، فَقَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ: يُكَبِّرُ أَرْبَعًا ثُمَّ يَقْرَأُ، ثُمَّ يُكَبِّرُ فَيَرْكَعُ، ثُمَّ يَقُومُ فِي الثَّانِيَةِ فَيَقْرَأُ، ثُمَّ يُكَبِّرُ أَرْبَعًا بَعْدَ الْقِرَاءَةِ.
অনুবাদ : হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বসেছিলেন। তাঁর কাছে হযরত হুজাইফা ও আবু মুসা আশআরী রা. উপস্থিত ছিলেন। সাঈদ ইবনুল আছ তাঁদের দু’জনকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে নামাযের তাকবীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন তাঁদের একজন অপরজনকে দেখিয়ে বলতেছিলেন যে, তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করো। আবার অপরজন বলেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করো। পরে হযরত হুজাইফা বললেন, এ বিষয়টি আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.কে জিজ্ঞেস করুন। তিনি হযরত ইবনে মাসউদ রা.কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ৪ বার তাকবীর দিয়ে কুরআন পাঠ করবে। তাকবীর বলে রুকু করবে। অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতে কুরআন পড়ে ৪ বার তাকবীর বলবে। (আব্দুর রাযযাক: ৫৬৮৭)
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাউকূফ। হাদীসটির সকল রাবীই বুখারী-মুসলিমের রাবী। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, رَوَاهُ عبد الرَّزَّاق عَن ابْن مَسْعُود بِإِسْنَاد صَحِيح “আব্দুর রাযযাক ইবনে মাসউদ থেকে সহীহ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন”। (আদ্দিরায়াহ: হাদীস নাম্বার 286)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীসের বর্ণনায় হযরত ইবনে মাসউদ রা. স্পষ্ট বলেছেন যে, প্রথম রাকাতের কিরাতের পূর্বে তাকবীর চারটি। তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অতিরিক্ত তাকবীর হবে তিনটি। আর দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পরে তাকবীর চারটি তার শেষ তাকবীরে রুকু করবে। তাহলে অতিরিক্ত তাকবীর তিনটি। দু’রাকাত নামাযে অতিরিক্ত তাকবীর মোট ছয়টি। আমরা এভাবেই ঈদের নামায পড়ে থাকি।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بن عَبْدِ الله الْحَضْرَمِيُّ، حَدَّثَنَا مَسْرُوقُ بن الْمَرْزُبَانِ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي زَائِدَةَ، عَنْ أَشْعَثَ، عَنْ كُرْدُوسٍ، قَالَ: أَرْسَلَ الْوَلِيدُ إِلَى عَبْدِ الله بن مَسْعُودٍ، وَحُذَيْفَةَ، وَأَبِي مَسْعُودٍ، وَأَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ بَعْدَ الْعَتَمَةِ، فَقَالَ: إِنَّ هَذَا عِيدُ الْمُسْلِمِينَ فَكَيْفَ الصَّلاةُ؟ فَقَالُوا: سَلْ أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ فَسَأَلَهُ، فَقَالَ:"يَقُومُ فَيُكَبِّرُ أَرْبَعًا، ثُمَّ يَقْرَأُ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ، وَسُورَةٍ مِنَ الْمُفَصَّلِ، ثُمَّ يُكَبِّرُ، وَيَرْكَعُ فَتِلْكَ خَمْسٌ ثُمَّ يَقُومُ فَيَقْرَأُ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُورَةٍ مِنَ الْمُفَصَّلِ، ثُمَّ يُكَبِّرُ أَرْبَعًا يَرْكَعُ فِي آخِرِهِنَّ فَتِلْكَ تِسْعٌ فِي الْعِيدَيْنِ فَمَا أَنْكَرَهُ وَاحِدٌ مِنْهُمْ.
অনুবাদ : কুরদুস বিন আব্বাস রহ. বলেন, হযরত ওয়ালিদ ইশার নামাযের পরে আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ, হুজাইফা, আবু মাসউদ এবং হযরত আবু মুসা আশআরী রা.-এর নিকট লোক পাঠালেন। প্রেরিত দূত তাঁদের নিকট গিয়ে বললো, এটা মুসলমানদের ঈদ। আপনারা বলে দিন যে, নামাযের পদ্ধতি কেমন হবে? তাঁরা সবাই বললেন: হযরত আবু আব্দুর রহমান অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.কে জিজ্ঞেস করুন। জবাবে হযরত ইবনে মাসউদ বলেন, ঈদের নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে ৪ বার তাকবীর বলে ছূরা ফাতিহা ও মুফাছছল থেকে অপর একটি ছূরা পড়বে এবং পুনরায় তাকবীর বলে রুকু করবে। এ হলো মোট ৫টি তাকবীর। এরপর দাঁড়িয়ে ছূরা ফাতিহা ও মুফাছ্ছাল থেকে অপর একটি ছূরা পড়বে। অতঃপর ৪ বার তাকবীর বলবে যার শেষ তাকবীরে রুকু করবে। এ হলো সর্বমোট ৯টি তাকবীর। তিনি এ কথা বলার পরে তাদের কেউই এর প্রতিবাদ করেননি। (আল্ মু’জামুল কাবীর লিত্তবারানী-৯৪০০)
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাউকূফ। আলস্নামা হাইসামী বলেন, এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই নির্ভরযোগ্য”। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ৩২৪৭) হযরত ইবনে হাযাম এ হাদীসটির সনদকে উঁচু মানের সহীহ বলেছেন। (মুহালস্না: ঈদের নামায অধ্যায়)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীসের বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ঈদের নামাযে দাঁড়িয়ে ৪ বার তাকবীর বলে ছূরা ফাতিহা ও মুফাছছল থেকে অপর একটি ছূরা পড়বে এবং পুনরায় তাকবীর বলে রুকু করবে। এ হলো মোট ৫টি তাকবীর। তাকবীরে তাহরীমা এবং রুকুর তাকবীর ব্যতীত অতিরিক্ত তাকবীর তিনটি। এরপর দাঁড়িয়ে ছূরা ফাতিহা ও মুফাছ্ছাল থেকে অপর একটি ছূরা পড়বে। অতঃপর ৪ বার তাকবীর বলবে যার শেষ তাকবীরে রুকু করবে। এর মধ্যে রুকুর তাকবীর ব্যতীত অতিরিক্ত তাকবীর তিনটি। এ হলো সর্বমোট ৯টি তাকবীর যার মধ্যে ঈদের নামাযের অতিরিক্ত ছয়টি। অন্য চারটি এমন তাকবীর যা সকল নামাযে দেয়া হয়ে থাকে। উপস্থিত সাহাবায়ে কিরামও এটা সমর্থন করেন। আমরা এভাবেই ঈদের নামায পড়ে থাকি।
অনুরূপ অর্থে নয় তাকবীর সম্বলিত আরো বেশ কিছু হাদীস সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে।
عَبْدُ الرَّزَّاقِ، قَالَ: أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ أَبِي الْوَلِيدِ قَالَ: حَدَّثَنَا خَالِدٌ الْحَذَّاءُ، عَنْ عَبْدِ الله بْنِ الْحَارِثِ قَالَ شَهِدْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ كَبَّرَ فِي صَلَاةِ الْعِيدِ بِالْبَصْرَةِ تِسْعَ تَكْبِيرَاتٍ، وَالَى بَيْنَ الْقِرَاءَتَيْنِ قَالَ: وَشَهِدْتُ الْمُغِيرَةَ بْنَ شُعْبَةَ فَعَلَ ذَلِكَ أَيْضًا. فَسَأَلْتُ خَالِدًا كَيْفَ فَعَلَ ابْنُ عَبَّاسٍ؟ فَفَسَّرَ لَنَا كَمَا صَنَعَ ابْنُ مَسْعُودٍ فِي حَدِيثِ مَعْمَرٍ وَالثَّوْرِيِّ عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ سَوَاءً
অনুবাদ : হযরত আব্দুল্লাহ বিন হারিস বলেন, আমি হযরত ইবনে আব্বাস রা.কে দেখেছি, তিনি বসরায় ঈদের নামাযে নয়টি তাকবীর দিলেন এবং উভয় রাকাতের কিরাতকে মিলালেন। আমি মুগীরা বিন শু’বা রা.কেও অনুরূপ করতে দেখেছি। অতঃপর আমি খালিদ হাজ্জাকে জিজ্ঞেস করলাম, ইবনে আব্বাস রা. নয় তাকবীর কীভাবে দিলেন? তিনি আমাকে (পূর্ববর্ণিত) মা’মার ও সাওরীর মাধ্যমে আবু ইসহাক থেকে বর্ণিত ইবনে মাসউদ রা.-এর হাদীসের অনুরূপ ব্যাখ্যা দিলেন। (আব্দুর রাযযাক: ৫৬৮৯) অর্থাৎ নিয়মিত তাকবীর ব্যতীত অতিরিক্ত ছয় তাকবীর বললেন।
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাউকূফ। হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেন, “হাদীসটির সনদ সহীহ”। (আদ্দিরায়াহ: ২৮৬ নাম্বার হাদীস-এর আলোচনায়)
সারসংক্ষেপ : হযরত ইবনে আব্বাস রা. কর্তৃক ৯ তাকবীরের ব্যাখ্যা হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত আল্ মু’জামুল কাবীর লিত্তবারানী-এর ৯৪০০ নাম্বার হাদীসের সারসংক্ষেপে দেখুন। এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হলো যে, ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর ছয়টি।
এ ব্যাখ্যা মতে নয় তাকবীরের হাদীস সহীহ সনদে আরো বর্ণিত হয়েছে হযরত আনাস রা. থেকে-(ইবনে আবী শাইবা: ৫৭৬০)। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন-(নুখাবুল আফকার: পৃষ্ঠা-৪৫৪, খ--১৬)। আরো বর্ণিত হয়েছে হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. এবং সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব রহ. থেকে-(ইবনে আবী শাইবা: ৫৭৫৬)। হাদীসটির সকল রাবীই বুখারী-মুসলিমের রাবী। এ সকল হাদীস থেকেও প্রমাণিত হলো যে, ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর ছয়টি।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট তাবিঈনে কিরামের আমল :
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرَةَ، قَالَ: ثنا رَوْحٌ، قَالَ: ثنا شُعْبَةُ، قَالَ سَمِعْتُ مَنْصُورًا، يُحَدِّثُ عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، وَمَسْرُوقٍ، أَنَّهُمَا كَانَا يُكَبِّرَانِ فِي الْعِيدَيْنِ تِسْعَ تَكْبِيرَاتٍ
অনুবাদ : হযরত ইবরাহীম নাখাঈ রহ. বর্ণনা করেন যে, হযরত আসওয়াদ এবং মাসরূক রহ. ঈদের নামাযে ৯টি তাকবীর দিতেন। (ত্বহাবী: খ--২, পৃষ্ঠা-৩৭৩, হাদীস নং-৭২৯৪)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাকতু’। আলস্নামা বদরম্নদ্দীন আইনী রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (নুখাবুল আফকার: খ--১৬, পৃষ্ঠা-৪৫৮)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকেও প্রমাণিত হলো যে, ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর ছয়টি। এ বিষয়ে সহীহ সনদে ইবরাহীম নাখাঈ রহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.-এর ছাত্রগণ (যারা প্রবীণ তাবিঈ) ঈদের নামাযে নয় তাকবীর দিতেন। (ইবনে আবী শাইবা: ৫৭৬১) হযরত হাসান বসরী রহ. থেকে হাসান সনদে বর্ণিত আছে যে, নামাযের তাকবীরসহ তিনি ঈদের নামাযে ৯টি তাকবীর দিতেন। (ত্বহাবী: খ--২, পৃষ্ঠা-৩৭৩, হাদীস নং-৭২৯৫) আল্লামা আইনী এটাকে সহীহ বলেছেন। (নুখাবুল আফকার: খ--১৬, পৃষ্ঠা-৪৫৯) ইবরাহীম নাখাঈ রহ. থেকে সহীহ সনদে আরো বর্ণিত আছে যে, (অতিরিক্ত তাকবীরসহ) ঈদের নামাযের তাকবীর ৯টি। (ত্বহাবী: খ--২, পৃষ্ঠা-৩৭৩, হাদীস নং-৭২৯৬) আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী এটাকে সহীহ বলেছেন। (নুখাবুল আফকার: পৃষ্ঠা-৪৫৯, খ--১৬) এ ব্যাপারে সহীহ সনদে হযরত ইবনে ছীরীন রহ. থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, তিনি ঈদের তাকবীরের ব্যাপারে যা বলেছেন তা হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত তাকবীরের অনুরূপ। (ত্বহাবী: খ--২, পৃষ্ঠা-৩৭৩, হাদীস নং-৭২৯৮) আল্লামা আইনী এটাকে সহীহ বলেছেন। (নুখাবুল আফকার: পৃষ্ঠা-৪৫৯, খ--১৬) সহীহ সনদে আরো বর্ণিত আছে ইমাম শা’বী ও মুসাইয়াব বিন রাফে’ রহ. থেকে। (ইবনে আবী শাইবা: ৫৭৭৪) হাদীসটির সকল রাবীই বুখারী-মুসলিমের রাবী। এ সকল হাদীস থেকেও প্রমাণিত হলো যে, ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর ছয়টি।
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرَةَ قَالَ: ثنا رَوْحٌ قَالَ: ثنا شُعْبَةُ قَالَ: سَمِعْتُ حَمْزَةَ أَبَا عُمَارَةَ قَالَ: سَمِعْتُ الشَّعْبِيَّ رَحِمَهُ اللهُ يَقُولُ: «ثَلَاثًا ثَلَاثًا , سِوَى تَكْبِيرَةِ الصَّلَاةِ
অনুবাদ : হযরত হামঝা বিন হাবীব বলেন, আমি ইমাম শা’বী রহ. থেকে শুনেছি যে, নামাযের তাকবীর ব্যতীত তিনটি করে (মোট ছয়টি) তাকবীর দিতে হবে। (ত্বহাবী: খ--২, পৃষ্ঠা-৩৭৩, হাদীস নং-৭২৯৭)
হাদীসটির সত্মর : সহীহ, মাকতু’। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (নুখাবুল আফকার: পৃষ্ঠা-৪৫৯, খ--১৬)
ফায়দা : অতিরিক্ত ছয় তাকবীরে ঈদের নামায পড়ার দলীল হিসেবে হাসান ও সহীহ সনদে বর্ণিত রসূলুল্লাহ স.-এর আমল ও তাঁর বাণী, (আবু দাউদ: ১১৫৩, ত্বহাবী: খ--২, পৃষ্ঠা-৩৭১, হাদীস নং-৭২৭৩) সহীহ সনদে বর্ণিত জলীলুল কদর সাহাবায়ে কিরামের আমল ও মন্তব্য (আব্দুর রাযযাক: ৫৬৮৭ ও ৫৬৮৯, তবারানী: ৯৪০০ এবং ইবনে আবী শাইবা: ৫৭৫৬ ও ৫৭৬০) এবং সহীহ সনদে বর্ণিত বিশিষ্ট তাবিঈদের আমল ও মন্তব্য (ইবনে আবী শাইবা: ৫৭৬১, ৫৭৬৫ ও ৫৭৭৪)-এর ভিত্তিতে আমরা অতিরিক্ত ৬ তাকবীরের সাথে ঈদের নামায আদায় করে থাকি এবং এটাকে উত্তম বলে বিশ্বাস করি।
এর বিপরীতে ১২ তাকবীরে ঈদের নামায আদায় করার কথাও হাদীসে বর্ণিত আছে। তন্মধ্যে তিরমিযী শরীফে বর্ণিত ৫৩৬ নাম্বার হাদীসকে ইমাম তিরমিযী রহ. হাসান বলার পাশাপাশি এ মন্তব্য করেন যে, وَهُوَ أَحْسَنُ شَيْءٍ رُوِيَ فِي هَذَا البَابِ হাদীসটি এ অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম। রিজাল শাস্ত্রের ইমামগণের বিশেস্নষন মতে ইমাম তিরমিযী রহ. কর্তৃক হাদীসটিকে হাসান এবং এ অধ্যায়ের মধ্যে সর্বোত্তম বলে মন্তব্য করা যথার্থ নয়। কারণ এ হাদীসের সনদে কাসীর বিন আব্দুল্লাহ নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন। তাঁর ব্যাপারে ইমাম আহমাদ রহ. বলেন,منكر الحديث “তাঁর হাদীস অগ্রহণযোগ্য”। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, ضعيف الحديث “তাঁর হাদীস জঈফ”। আবু দাউদ বলেন, كان أحد الكذابين “তিনি মিথ্যাবাদীদের একজন”। ইমাম দারাকুতনী বলেন, متروك الحديث “তাঁর হাদীস পরিত্যাক্ত”। (তাহজীবুত তাহজীব ও তাহজীবুল কামাল থেকে সংগৃহীত)। ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, ضعيف: أفرط من نسبه إلى الكذب “তিনি জঈফ, যারা তাঁকে মিথ্যার দিকে সম্বোধন করেছে তারা বাড়াবাড়ি করেছে”। (তাকরীব: ৬৩০৮)। সুতরাং এমন রাবীর বর্ণিত হাদীস কীভাবে হাসান স্তরে উন্নীত এবং সর্বোত্তম হয়? এ হাদীসের ব্যাপারে ইমাম তিরমিযী রহ. নিজে তাঁর ইলালুল কুবরায় বলেন, ইমাম বুখারী রহ.কে জিজ্ঞেস করলে তিনি এটাকে জঈফ বলেছেন। (আল ইলালুল কাবীর: ঈদের নামাযের তাকবীর অধ্যায়) ইমাম দারাকুতনী রহ. এটাকে মুজতরাব বলেছেন। (ইলালুদ দারাকুতনী: ৩৪৫৮)
১২ তাকবীরে ঈদের নামায পড়ার হাদীস আরো বর্ণিত আছে আবু দাউদ: ১১৪৯ ও ১১৫০ নাম্বারে এ দুটি হাদীসের বর্ণনায় রয়েছে আব্দুল্লাহ বিন লাহিআহ। তিনি যদিও মুসলিমের রাবী কিন্তু তাঁর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের আপত্তি রয়েছে। ইমাম ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, كان ضعيفا لا يحتج بحديثه “তিনি জঈফ, তার হাদীস দলীলযোগ্য নয়”। ইমাম নাসাঈ রহ. বলেন, ليس بثقة “তিনি নির্ভরযোগ্য নন”। ইবনে আবী হাতেম বলেন,سألت أبى وأبا زرعة عن الإفريقى و ابن لهيعة: أيهما أحب إليك ؟ فقالا: جميعا ضعيفان “আমি আমার পিতা আবু হাতিমকে এবং আবু যুরআকে জিজ্ঞেস করলাম: আব্দুল্লাহ বিন লাহিআহ এবং ইফরিকী এ দুজনের মধ্যে আপনার নিকট কে প্রিয়? তাঁরা বললেন, দুজনই জঈফ”। (তাহজীবুল কামাল ও তাহজীবুত তাহজীব থেকে সংগৃহীত) ইমাম জাহাবী বলেন, قلت: العمل على تضعيف حديثه “তাঁর ব্যাপারে সিদ্ধানত্ম হলো তাঁর হাদীসকে জঈফ গণনা করা”। (আল কাশেফ: ২৯৩৪) অবশ্য আব্দুল্লাহ বিন মুবারক ও আব্দুল্লাহ বিন ওয়াহহাব রহ. ইবনে লাহিআ থেকে যা বর্ণনা করেন তা অন্যদের বর্ণনার চেয়ে তুলনামূলক বেশী গ্রহণযোগ্য। কিন্তু উক্ত বর্ণনায় হযরত আব্দুল্লাহ বিন লাহিআ নিঃসঙ্গ হওয়ায় সে প্রাধান্যের দিকটিও দুর্বল হয়ে গেছে। হাকেম এবং ইমাম জাহাবী রহ. বলেন, تفرد به ابن لهيعة “হাদীসটি আব্দুল্লাহ বিন লাহিআ একাই বর্ণনা করেছেন”। (মুসতাদরাকে হাকেম: ১১০৮ নাম্বার হাদীস ও ইমাম জাহাবীর তালখীছে)
১২ তাকবীরে ঈদের নামায পড়ার হাদীস আরো বর্ণিত আছে আবু দাউদ: ১১৫১ ও ১১৫২ নাম্বার হাদীসে। এ দুটি হাদীসের বর্ণনায় রয়েছে আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান তায়েফী। অধিকাংশ মুহাদ্দিস তাঁর বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তাঁর ব্যাপারে কিছু মুহাদ্দিসীনে কিরামের আপত্তিও রয়েছে। عن ابن معين : ضعيف “হযরত ইয়াহইয়া বিন মাঈন রহ. বলেন, তিনি জঈফ”। আবু হাতিম বলেন, ليس بقوى ، لين الحديث “তিনি শক্তিশালী নন, হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে নরম”। ইমাম নাসাঈ বলেন, ليس بذاك القوى و يكتب حديثه “তিনি তেমন মজবুত নন। তবে তাঁর হাদীস লেখার যোগ্য”।
উপরিউক্ত তথ্যের দ্বারা ইবনে লাহিআ বা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান তায়েফী রহ. কর্তৃক বর্ণিত হাদীসকে অগ্রহণযোগ্য বলা আমার উদ্দেশ্য নয়; বরং এটা দেখানো উদ্দেশ্য যে, ইবনে লাহিআ ও আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান তায়েফীর মাধ্যমে বর্ণিত ১২ তাকবীরে ঈদের নামায পড়ার হাদীসের তুলনায় পূর্ববর্ণিত ৬ তাকবীরে ঈদের নামায পড়ার হাদীস তুলনামূলক বেশী শক্তিশালী। এ কারণে আমরা ৬ তাকবীরে ঈদের নামায পড়ার আমলকে উত্তম মনে করি। তবে ১২ তাকবীরে ঈদের নামায পড়ার আমলকেও বৈধ মনে করি। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (২/১৭২)
