শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
২১. মাকরুহ বিষয়াদির বর্ণনা
হাদীস নং: ৬৯৯৫
মৃত ব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি করা
৬৯৯৫। ইবন আবী দাউদ (রাযিঃ) ……. আব্দুর রহমান ইবন আওফ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমার হাত ধরলেন। আমি তাঁর সঙ্গে তাঁর (অসুস্থ) পুত্র ইবরাহীম (রাযিঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন তাঁর মরণাপন্ন অবস্থা। নবী (ﷺ) তাকে ধরে নিজের কোলে রাখলেন। তারপর তার ইন্তেকাল হয়ে গেল। আর তিনি তাকে রেখে দিলেন এবং তিনি কেঁদে উঠলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি কাঁদছেন? অথচ আপনি কান্না থেকে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, আমি কান্না থেকে নিষেধ করি নাই; বরং আমি নিষেধ করেছি দুই ধরনের আহাম্মুকী ও অন্যায় চিৎকারকে। তা হলো, খেলাধূলা ও শয়তানী বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ। বিপদের সময় চিৎকার করা যাতে মুখে প্রহার করা এবং গলার কাপড় ছিঁড়ে ফেলা পাওয়া যায়। আর এটা (কাঁদা) তো রহমত। যে ব্যক্তি দয়া করে না, তাকেও দয়া করা হয় না। হে ইবরাহীম! যদি এমনটি না হতো যে, আল্লাহ্ তা'আলার ওয়াদা (অঙ্গীকার) সত্য এবং কথা হক, আর আমাদের পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের সঙ্গে অতিসত্তর মিলিত হবে, তাহলে আমরা তোমার জন্য এর চেয়েও অধিক দুঃখ করতাম। আমরা তোমার কারণে বিষন্ন। যে কাঁদে এবং হৃদয় বিষন্ন হয়। আমরা এরূপ কথা বলব না যাতে প্রতিপালক (আল্লাহ্ তা'আলা) অসন্তুষ্ট হন।
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এই হাদীসে বলেছেন যে, প্রথমোক্ত রিওয়ায়াতসমূহে যে কান্না থেকে নিষেধ করেছেন তা কি? অর্থাৎ এটা হচ্ছে সেই কান্নার সঙ্গে বিকট চিৎকার (বিলাপ করা), চেহারা থাপড়ানো এবং গলার কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হবে। এবং তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এছাড়া দয়ামায়ার ভিত্তিতে কান্না নিষিদ্ধ কান্নার পরিপন্থি। পক্ষান্তরে ঐ হাদীস যা আমরা উমর (রাযিঃ) ও ইবন উমর (রাযিঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে রিওয়ায়াত করেছি যে, “মৃত ব্যক্তির জন্য তার পরিবারের লোকদের কান্নাকাটি করার কারণে তাকে আযাব দেওয়া হয়"- আমরা আয়েশা (রাযিঃ) থেকে এর প্রতি স্বীকৃতিও উল্লেখ করেছি। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন যে, আল্লাহ্ তা'আলা কাফির ব্যক্তির পরিবারের কতক লোকের কান্নাকাটি করার কারণে তার কবরে আযাবকে বৃদ্ধি করেন । সম্ভবত যে কান্নাকাটি করার কারণে কাফিরের কবরের আযাব বৃদ্ধি করা হয়, তা দ্বারা সেই কান্নাকাটি উদ্দেশ্য যার ওসীয়ত সে তার জীবদ্দশায় করেছিল, কেননা জাহিলী যুগের লোকেরা স্বীয় পরিজনকে ওসীয়ত করত যে, তাদের মৃত্যুর পর তারা যেন এরূপ করে। তাই আল্লাহ্ তা'আলা তাকে কবরে ঐ কারণে আযাব প্রদান করেন যা তার জীবদ্দশায় পাওয়া গিয়েছে এবং মৃত্যুর পর এর উপর আমল হয়েছে। আয়েশা (রাযিঃ) থেকে এই হাদীসটি ভিন্ন শব্দেও বর্ণিত আছে:
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এই হাদীসে বলেছেন যে, প্রথমোক্ত রিওয়ায়াতসমূহে যে কান্না থেকে নিষেধ করেছেন তা কি? অর্থাৎ এটা হচ্ছে সেই কান্নার সঙ্গে বিকট চিৎকার (বিলাপ করা), চেহারা থাপড়ানো এবং গলার কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হবে। এবং তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এছাড়া দয়ামায়ার ভিত্তিতে কান্না নিষিদ্ধ কান্নার পরিপন্থি। পক্ষান্তরে ঐ হাদীস যা আমরা উমর (রাযিঃ) ও ইবন উমর (রাযিঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে রিওয়ায়াত করেছি যে, “মৃত ব্যক্তির জন্য তার পরিবারের লোকদের কান্নাকাটি করার কারণে তাকে আযাব দেওয়া হয়"- আমরা আয়েশা (রাযিঃ) থেকে এর প্রতি স্বীকৃতিও উল্লেখ করেছি। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন যে, আল্লাহ্ তা'আলা কাফির ব্যক্তির পরিবারের কতক লোকের কান্নাকাটি করার কারণে তার কবরে আযাবকে বৃদ্ধি করেন । সম্ভবত যে কান্নাকাটি করার কারণে কাফিরের কবরের আযাব বৃদ্ধি করা হয়, তা দ্বারা সেই কান্নাকাটি উদ্দেশ্য যার ওসীয়ত সে তার জীবদ্দশায় করেছিল, কেননা জাহিলী যুগের লোকেরা স্বীয় পরিজনকে ওসীয়ত করত যে, তাদের মৃত্যুর পর তারা যেন এরূপ করে। তাই আল্লাহ্ তা'আলা তাকে কবরে ঐ কারণে আযাব প্রদান করেন যা তার জীবদ্দশায় পাওয়া গিয়েছে এবং মৃত্যুর পর এর উপর আমল হয়েছে। আয়েশা (রাযিঃ) থেকে এই হাদীসটি ভিন্ন শব্দেও বর্ণিত আছে:
6995 - مَا حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي دَاوُدَ , قَالَ: ثنا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ يُونُسَ , قَالَ: ثنا إِسْرَائِيلُ , عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ , عَنْ عَطَاءٍ , عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ , عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ: أَخَذَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدَيَّ , فَانْطَلَقْتُ مَعَهُ إِلَى ابْنِهِ إِبْرَاهِيمَ وَهُوَ يَجُودُ بِنَفْسِهِ. فَأَخَذَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَضَعَهُ فِي حِجْرِهِ , حَتَّى خَرَجَتْ نَفْسُهُ , فَوَضَعَهُ , ثُمَّ بَكَى. فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ , أَتَبْكِي وَأَنْتَ تَنْهَى عَنِ الْبُكَاءِ؟ . فَقَالَ: «إِنِّي لَمْ أَنْهَ عَنِ الْبُكَاءِ , وَلَكِنْ نَهَيْتُ عَنْ صَوْتَيْنِ أَحْمَقَيْنِ فَاجِرَيْنِ , صَوْتٍ عِنْدَ نَغْمَةِ لَهْوٍ وَلَعِبٍ وَمَزَامِيرِ شَيْطَانٍ , وَصَوْتٍ عِنْدَ مُصِيبَةٍ , لَطْمِ وُجُوهٍ , وَشَقِّ جُيُوبٍ , وَهَذَا رَحْمَةٌ , مَنْ لَا يَرْحَمُ , لَا يُرْحَمُ , يَا إِبْرَاهِيمُ , لَوْلَا إِنَّهُ وَعْدٌ صَادِقٌ , وَقَوْلٌ حَقٌّ وَإِنَّ آخِرَنَا سَيَلْحَقُ أَوَّلَنَا , لَحَزِنَّا عَلَيْكَ حُزْنًا هُوَ أَشَدُّ مِنْ هَذَا , وَإِنَّا بِكَ لَمَحْزُونُونَ , تَبْكِي الْعَيْنُ , وَيَحْزَنُ الْقَلْبُ , وَلَا نَقُولُ مَا يُسْخِطُ الرَّبَّ» [ص:294] فَأَخْبَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي هَذَا الْحَدِيثِ , بِالْبُكَاءِ الَّذِي نَهَى عَنْهُ فِي الْأَحَادِيثِ الْأُوَلِ , وَأَنَّهُ الْبُكَاءُ الَّذِي مَعَهُ الصَّوْتُ الشَّدِيدُ , وَلَطْمُ الْوُجُوهِ , وَشَقُّ الْجُيُوبِ. وَبَيَّنَ أَنَّ مَا سِوَى ذَلِكَ مِنَ الْبُكَاءِ , فَمَا فُعِلَ مِنْ جِهَةِ الرَّحْمَةِ , أَنَّهُ بِخِلَافِ ذَلِكَ الْبُكَاءِ الَّذِي نُهِيَ عَنْهُ. وَأَمَّا مَا ذَكَرْنَاهُ عَنْ عَمْرٍو ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْمَيِّتَ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ» فَقَدْ ذَكَرْنَا عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا إِنْكَارَ ذَلِكَ فَإِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لِيَزِيدَ الْكَافِرَ عَذَابًا فِي قَبْرِهِ , بِبَعْضِ بُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ» . وَقَدْ يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ الْبُكَاءُ الَّذِي يُعَذَّبُ بِهِ الْكَافِرُ فِي قَبْرِهِ , يَزْدَادُ بِهِ عَذَابًا عَلَى عَذَابِهِ , بُكَاءً قَدْ كَانَ أَوْصَى لَهُ فِي حَيَاتِهِ. فَإِنَّ أَهْلَ الْجَاهِلِيَّةِ , قَدْ كَانُوا يُوصُونَ بِذَلِكَ , أَهْلِيهِمْ أَنْ يَفْعَلُوهُ بَعْدَ وَفَاتِهِمْ. فَيَكُونُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ يُعَذِّبُهُ فِي قَبْرِهِ بِسَبَبٍ , قَدْ كَانَ سَبَبُهُ فِي حَيَاتِهِ , فُعِلَ بَعْدَ مَوْتِهِ. وَقَدْ رُوِيَ هَذَا الْحَدِيثُ , عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا بِغَيْرِ هَذَا اللَّفْظِ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
ইবরাহীম রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক পুত্রের নাম। তাঁর মায়ের নাম মারিয়া রাযি.। হযরত মারিয়া রাযি.-এর বাড়ি ছিল মিশরে। তিনি ছিলেন মিশরের শাসক মুকাওকিসের দাসী। তিনি কিবতী বংশিয়া ছিলেন বলে তাঁকে মারিয়া কিবতিয়া বলা হয়। হিজরী ৬ষ্ঠ সনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে মুকাওকিসের কাছে পত্র লেখেন, তখন মুকাওকিস সম্মানজনকভাবে সে পত্র গ্রহণ করেন। তারপর ভক্তি-শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বহু উপহারসামগ্রী পাঠান। সেই উপহারসামগ্রীর মধ্যে হযরত মারিয়া কিবতিয়া রাযি. ও তাঁর বোন সীরীন রাযি.-ও ছিলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মারিয়া রাযি.-কে সম্মানজনকভাবে গ্রহণ করেন এবং তাঁকে নিজ সন্তানের মাতৃত্বের মর্যাদা দেন। হিজরী ৮ম সনে তাঁর গর্ভে নবীপুত্র ইবরাহীম রাযি, জন্মগ্রহণ করেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনন্দের সঙ্গে সাহাবায়ে কেরামকে এ সংবাদ জানান। তিনি বলেন, আজ রাতে আমার এক পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। আমি আমার পিতার নামে তার নাম রেখেছি ইবরাহীম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু সাইফ নামে এক আনসারী নারীকে তাকে দুধপান করানোর দায়িত্ব প্রদান করেন। তাঁর স্বামী আবূ সাইফ ছিলেন একজন কামার। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝেমধ্যেই নিজ শিশুপুত্রকে দেখার জন্য আবূ সাইফের বাড়িতে যেতেন।
হযরত আনাস রাযি. বর্ণনা করেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখার জন্য আবূ সাইফের বাড়ির উদ্দেশে চললেন। আমিও তাঁর সঙ্গে গেলাম। আমি দ্রুত হেঁটে তাঁর আগে আগেই গেলাম। গিয়ে দেখি ধোঁয়ায় সারা ঘর আচ্ছন্ন। আবূ সাইফ তখন তার চুল্লিতে আগুন জ্বালাচ্ছিল। আমি বললাম, হে আবূ সাইফ! থামুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে গেছেন। তিনি থামলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুটিকে আনতে বললেন। তিনি তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন এবং কিছু পাঠ করলেন। (সহীহ মুসলিম: ২৩১৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১২১২৬)
হযরত আনাস রাযি. বলেন- وَهُوَ يَجُودُ بِنَفْسِهِ (তখন তিনি প্রাণত্যাগ করছিলেন)। يَجُودُ ক্রিয়াপদটির উৎপত্তি جُودٌ থেকে। এর অর্থ দানশীলতা, দান করা। পাপি ব্যক্তির রূহ তার দেহ থেকে টেনে-হেঁচড়ে বের করা হয়। পক্ষান্তরে নেককার ব্যক্তির রূহ তার আখিরাতের ঠিকানা জান্নাতে যাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। মালাকুল মাওত এমন রূহকে গ্রহণ করে সম্মানজনকভাবে। বিষয়টি অনেকটা এরকম, যেমন কেউ কোনও দামি বস্তু কাউকে দান করল আর গ্রহীতা সম্মানজনকভাবে তা গ্রহণ করল। সে কারণেই এস্থলে প্রাণত্যাগের বিষয়টিকে يَجُودُ অর্থাৎ 'দান করছে' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। যাহোক হযরত আনাস রাযি. বলেন, ইবরাহীমের প্রাণত্যাগের অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠল।
এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলছিলেন, ওহে বাছা! আল্লাহর ফয়সালার বিপরীতে আমি তোমার জন্য কিছুই করার ক্ষমতা রাখি না। (মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১২১২৪)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কান্না দেখে হযরত আব্দুর রহমান ইবন আওফ রাযি. বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনিও? অর্থাৎ আপনিও কাঁদছেন? সাধারণ মানুষ ধৈর্য ধরতে পারে না। তাই তারা কাঁদে। কিন্তু আপনি তো অনেক বেশি ধৈর্যশীল। অন্যকেও ধৈর্যের উপদেশ দিয়ে থাকেন। ধৈর্য হারাতে নিষেধ করেন। তা সত্ত্বেও দেখছি আপনি সাধারণ মানুষের মতো কাঁদছেন। মুসান্নাফের বর্ণনায় আছে, ইয়া রাসুলাল্লাহ। আপনি কাঁদছেন? আপনি কি কাঁদতে নিষেধ করেননি?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ কান্না হল রহমত ও দয়ার প্রকাশ, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে রেখে দিয়েছেন। অর্থাৎ মানবমনে যেহেতু সৃষ্টিগতভাবেই দয়ামায়া আছে, তাই শোকে-দুঃখে কাঁদা স্বাভাবিক। এ কান্না সে দয়ামায়ারই প্রকাশ। এতে কোনও দোষ নেই এবং এটা সবরেরও পরিপন্থি নয়। দোষ হচ্ছে বিলাপ করা ও সীমালঙ্ঘন করা।
অপর এক বর্ণনায় আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন-
إنما نهيت عن النوح، عن صوتين أحمقين فاجرين: صوت عند نغمة لعب ولهو ومزامير شيطان, وصوت عند مصيبة: خمش وجوه, وشق جيوب, ورنة شيطان, إنما هذه رحمة, ومن لا يرحم لا يرحم
'আমি তো নিষেধ করেছি বিলাপ করতে দুটি নির্বোধ পাপিষ্ঠ ধ্বনি হতে। এক হল সঙ্গীত ও খেলাধুলা এবং শয়তানের সুর। আরেক হল মসিবতকালীন ধ্বনি- চেহারা খামচানো, কাপড় ছিঁড়ে ফেলা ও শয়তানের গুণগুণানি। আর এ তো হল রহমত ও মায়া। যে মায়া করে না, তাকে মায়া করা হয় না।
(মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১২১২৪; মুসনাদে আবূ দাঊদ তয়ালিসী: ১৭৮৮; মুসনাদুল বাযযার: ১০০১: বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৭১৫১: শু'আবুল ঈমান: ৯৬৮৪; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৫৩০)
তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন - إِنَّ الْعَيْنَ تَدْمَعُ وَالْقَلْبَ يَحْزَنُ (চোখ অশ্রু ঝরায়, অন্তর ব্যথিত হয়)। অর্থাৎ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই অন্যের বেদনায় ব্যথিত হয়। প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকার্ত হয়ে কাঁদে ও চোখ থেকে অশ্রু ঝরায়। এটা মানুষের স্বভাবগত বিষয়। এ বেদনা ও কান্না মানুষের ইচ্ছাবহির্ভূত। এটা যখন ইচ্ছাবহির্ভূত, তখন এটা শরী'আতের আদেশ-নিষেধেরও অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা ইচ্ছাবহির্ভূত বিষয়ে শরী'আত আদেশ বা নিষেধ করে না। তাই এ কান্না এবং এ অশ্রু ঝরানো নিষিদ্ধ নয় যে, নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করার কারণে শাস্তি দেওয়া হবে।
শরী'আতের আদেশ-নিষেধ আরোপিত হয় এমন বিষয়ে, যা মানুষের ইচ্ছাধীন। অর্থাৎ তা করা বা না করার ক্ষমতা মানুষের থাকে। যেমন বাকশক্তির ব্যবহার। মানুষ চাইলে কথা বলতেও পারে, নাও বলতে পারে। তাই এ বিষয়ে শরী'আতের হুকুম আছে। অর্থাৎ আনন্দ ও বেদনা উভয় অবস্থায় কেবল শরী'আতসম্মত কথাই বলা যাবে। আল্লাহ তা’আলা অসন্তষ্ট হন এমন কোনও কথা কিছুতেই বলা যাবে না। সুতরাং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ولا نقول إلا ما يُرضي ربنا (তবে আমরা কেবল এমন কথাই বলব, যা আমাদের প্রতিপালককে সন্তুষ্ট করে)। অর্থাৎ আমরা মসিবতের বেলায়ও আল্লাহর নি'আমতের কথা ভুলব না। তাঁর নি'আমতের কথা স্মরণ করে শোকর আদায় করব ও আলহামদুলিল্লাহ বলব। যে চলে গেল বা যা চলে গেল, মনে করব তা আল্লাহর ফায়সালাক্রমেই গিয়েছে। আমরা সে ফয়সালা মনেপ্রাণে মেনে নেব। মুখেও তা প্রকাশ করব আর বলব ইন্না লিল্লাহ...।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয়পুত্রের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বললেন-
وَإِنَّا لِفِرَاقِكَ يَا إِبْرَاهِيم لَمَحْزُونُون
‘হে ইবরাহীম! আমরা তোমার বিচ্ছেদে শোকাহত’।
শোকার্ত হওয়াটা আল্লাহ তা'আলার ফয়সালা মেনে নেওয়ার পরিপন্থি নয়। কেননা এটা মানুষের স্বভাবগত বিষয়, যেমন উপরে বলা হয়েছে। বরং শোকার্ত না হওয়াটাই দোষের। কেননা তা নির্দয়তার প্রকাশ। আল্লাহ তা'আলা নিজে দয়ালু। তিনি মানুষের বেলায়ও দয়ামায়ার প্রকাশ পসন্দ করেন। এমনকি যে ব্যক্তি দয়ামায়া করে না, তার প্রতি তিনি নিজ রহমত ও দয়া বর্ষণ করেন না।
প্রকাশ থাকে যে, হযরত ইবরাহীম রাযি.-এর মৃত্যুর দিন সূর্যগ্রহণ লেগেছিল। এ কারণে লোকে বলাবলি করছিল, সূর্যগ্রহণ লেগেছে ইবরাহীমের মৃত্যুর কারণে। এটি একটি ভুল ধারণা ছিল। এর খণ্ডন জরুরি ছিল। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদিন একটি ভাষণ দেন। তিনি তাতে ইরশাদ করেন-
إن الشمس والقمر لا ينكسفان لموت أحد من الناس، ولكنهما آيتان من آيات الله، فإذا رأيتموهما، فقوموا، فصلوا
কোনও মানুষেরই মৃত্যুতে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ লাগে না। বরং এ দু'টি আল্লাহ তা'আলার নিদর্শনাবলির অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যখন তোমরা সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ লাগতে দেখবে, তখন নামাযে দাঁড়িয়ে যাবে।
(সহীহ বুখারী : ১০৪১; সহীহ মুসলিম: ৯০১; সুনানে আবু দাউদ: ১১৭৮; সুনানে নাসাঈ : ১৪৫৯; সুনানে ইবন মাজাহ : ১২৬৩; মুসনাদে আহমাদ: ২৭১২; সুনানে দারিমী: ১৫৬৬; মুসনাদুল বাযযার: ১৩৭১: মুসনাদে আবূ দাঊদ তয়ালিসী: ৭২৯; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৪৯২২; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৮২৯৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা : ১৩৭০; সহীহ ইবনে হিব্বান: ২৮২৭)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. সন্তানের প্রতি মায়া-মমতা প্রাকৃতিক বিষয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরে এ গুণ অনেক বেশি ছিল।
খ. প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকার্ত হওয়া ও ক্রন্দন করা একটি স্বাভাবিক বিষয়। এটা নিষিদ্ধ নয়।
গ. প্রিয়জনের মৃত্যুতে ক্রন্দন করা মায়া-মমতার প্রকাশ। এরূপ ক্ষেত্রে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কাঁদতেন।
ঘ. মৃত্যুযন্ত্রণা প্রাকৃতিক। এটা সকলেরই হয়।
ঙ. শোকে-দুঃখে সতর্ক থাকতে হবে যাতে মুখ দিয়ে এমন কোনও কথা উচ্চারিত না হয়, যা আল্লাহ তা'আলার অসন্তুষ্টির কারণ হতে পারে।
চ. যে-কারও মৃত্যু আল্লাহ তা'আলার ফয়সালায়ই হয়ে থাকে। তাই কারও মৃত্যুতে অন্তর শোকাহত হলেও আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা জরুরি।
হযরত আনাস রাযি. বর্ণনা করেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখার জন্য আবূ সাইফের বাড়ির উদ্দেশে চললেন। আমিও তাঁর সঙ্গে গেলাম। আমি দ্রুত হেঁটে তাঁর আগে আগেই গেলাম। গিয়ে দেখি ধোঁয়ায় সারা ঘর আচ্ছন্ন। আবূ সাইফ তখন তার চুল্লিতে আগুন জ্বালাচ্ছিল। আমি বললাম, হে আবূ সাইফ! থামুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে গেছেন। তিনি থামলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুটিকে আনতে বললেন। তিনি তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন এবং কিছু পাঠ করলেন। (সহীহ মুসলিম: ২৩১৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১২১২৬)
হযরত আনাস রাযি. বলেন- وَهُوَ يَجُودُ بِنَفْسِهِ (তখন তিনি প্রাণত্যাগ করছিলেন)। يَجُودُ ক্রিয়াপদটির উৎপত্তি جُودٌ থেকে। এর অর্থ দানশীলতা, দান করা। পাপি ব্যক্তির রূহ তার দেহ থেকে টেনে-হেঁচড়ে বের করা হয়। পক্ষান্তরে নেককার ব্যক্তির রূহ তার আখিরাতের ঠিকানা জান্নাতে যাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। মালাকুল মাওত এমন রূহকে গ্রহণ করে সম্মানজনকভাবে। বিষয়টি অনেকটা এরকম, যেমন কেউ কোনও দামি বস্তু কাউকে দান করল আর গ্রহীতা সম্মানজনকভাবে তা গ্রহণ করল। সে কারণেই এস্থলে প্রাণত্যাগের বিষয়টিকে يَجُودُ অর্থাৎ 'দান করছে' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। যাহোক হযরত আনাস রাযি. বলেন, ইবরাহীমের প্রাণত্যাগের অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠল।
এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলছিলেন, ওহে বাছা! আল্লাহর ফয়সালার বিপরীতে আমি তোমার জন্য কিছুই করার ক্ষমতা রাখি না। (মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১২১২৪)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কান্না দেখে হযরত আব্দুর রহমান ইবন আওফ রাযি. বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনিও? অর্থাৎ আপনিও কাঁদছেন? সাধারণ মানুষ ধৈর্য ধরতে পারে না। তাই তারা কাঁদে। কিন্তু আপনি তো অনেক বেশি ধৈর্যশীল। অন্যকেও ধৈর্যের উপদেশ দিয়ে থাকেন। ধৈর্য হারাতে নিষেধ করেন। তা সত্ত্বেও দেখছি আপনি সাধারণ মানুষের মতো কাঁদছেন। মুসান্নাফের বর্ণনায় আছে, ইয়া রাসুলাল্লাহ। আপনি কাঁদছেন? আপনি কি কাঁদতে নিষেধ করেননি?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ কান্না হল রহমত ও দয়ার প্রকাশ, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে রেখে দিয়েছেন। অর্থাৎ মানবমনে যেহেতু সৃষ্টিগতভাবেই দয়ামায়া আছে, তাই শোকে-দুঃখে কাঁদা স্বাভাবিক। এ কান্না সে দয়ামায়ারই প্রকাশ। এতে কোনও দোষ নেই এবং এটা সবরেরও পরিপন্থি নয়। দোষ হচ্ছে বিলাপ করা ও সীমালঙ্ঘন করা।
অপর এক বর্ণনায় আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন-
إنما نهيت عن النوح، عن صوتين أحمقين فاجرين: صوت عند نغمة لعب ولهو ومزامير شيطان, وصوت عند مصيبة: خمش وجوه, وشق جيوب, ورنة شيطان, إنما هذه رحمة, ومن لا يرحم لا يرحم
'আমি তো নিষেধ করেছি বিলাপ করতে দুটি নির্বোধ পাপিষ্ঠ ধ্বনি হতে। এক হল সঙ্গীত ও খেলাধুলা এবং শয়তানের সুর। আরেক হল মসিবতকালীন ধ্বনি- চেহারা খামচানো, কাপড় ছিঁড়ে ফেলা ও শয়তানের গুণগুণানি। আর এ তো হল রহমত ও মায়া। যে মায়া করে না, তাকে মায়া করা হয় না।
(মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ১২১২৪; মুসনাদে আবূ দাঊদ তয়ালিসী: ১৭৮৮; মুসনাদুল বাযযার: ১০০১: বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৭১৫১: শু'আবুল ঈমান: ৯৬৮৪; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৫৩০)
তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন - إِنَّ الْعَيْنَ تَدْمَعُ وَالْقَلْبَ يَحْزَنُ (চোখ অশ্রু ঝরায়, অন্তর ব্যথিত হয়)। অর্থাৎ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই অন্যের বেদনায় ব্যথিত হয়। প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকার্ত হয়ে কাঁদে ও চোখ থেকে অশ্রু ঝরায়। এটা মানুষের স্বভাবগত বিষয়। এ বেদনা ও কান্না মানুষের ইচ্ছাবহির্ভূত। এটা যখন ইচ্ছাবহির্ভূত, তখন এটা শরী'আতের আদেশ-নিষেধেরও অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা ইচ্ছাবহির্ভূত বিষয়ে শরী'আত আদেশ বা নিষেধ করে না। তাই এ কান্না এবং এ অশ্রু ঝরানো নিষিদ্ধ নয় যে, নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করার কারণে শাস্তি দেওয়া হবে।
শরী'আতের আদেশ-নিষেধ আরোপিত হয় এমন বিষয়ে, যা মানুষের ইচ্ছাধীন। অর্থাৎ তা করা বা না করার ক্ষমতা মানুষের থাকে। যেমন বাকশক্তির ব্যবহার। মানুষ চাইলে কথা বলতেও পারে, নাও বলতে পারে। তাই এ বিষয়ে শরী'আতের হুকুম আছে। অর্থাৎ আনন্দ ও বেদনা উভয় অবস্থায় কেবল শরী'আতসম্মত কথাই বলা যাবে। আল্লাহ তা’আলা অসন্তষ্ট হন এমন কোনও কথা কিছুতেই বলা যাবে না। সুতরাং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ولا نقول إلا ما يُرضي ربنا (তবে আমরা কেবল এমন কথাই বলব, যা আমাদের প্রতিপালককে সন্তুষ্ট করে)। অর্থাৎ আমরা মসিবতের বেলায়ও আল্লাহর নি'আমতের কথা ভুলব না। তাঁর নি'আমতের কথা স্মরণ করে শোকর আদায় করব ও আলহামদুলিল্লাহ বলব। যে চলে গেল বা যা চলে গেল, মনে করব তা আল্লাহর ফায়সালাক্রমেই গিয়েছে। আমরা সে ফয়সালা মনেপ্রাণে মেনে নেব। মুখেও তা প্রকাশ করব আর বলব ইন্না লিল্লাহ...।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয়পুত্রের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বললেন-
وَإِنَّا لِفِرَاقِكَ يَا إِبْرَاهِيم لَمَحْزُونُون
‘হে ইবরাহীম! আমরা তোমার বিচ্ছেদে শোকাহত’।
শোকার্ত হওয়াটা আল্লাহ তা'আলার ফয়সালা মেনে নেওয়ার পরিপন্থি নয়। কেননা এটা মানুষের স্বভাবগত বিষয়, যেমন উপরে বলা হয়েছে। বরং শোকার্ত না হওয়াটাই দোষের। কেননা তা নির্দয়তার প্রকাশ। আল্লাহ তা'আলা নিজে দয়ালু। তিনি মানুষের বেলায়ও দয়ামায়ার প্রকাশ পসন্দ করেন। এমনকি যে ব্যক্তি দয়ামায়া করে না, তার প্রতি তিনি নিজ রহমত ও দয়া বর্ষণ করেন না।
প্রকাশ থাকে যে, হযরত ইবরাহীম রাযি.-এর মৃত্যুর দিন সূর্যগ্রহণ লেগেছিল। এ কারণে লোকে বলাবলি করছিল, সূর্যগ্রহণ লেগেছে ইবরাহীমের মৃত্যুর কারণে। এটি একটি ভুল ধারণা ছিল। এর খণ্ডন জরুরি ছিল। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদিন একটি ভাষণ দেন। তিনি তাতে ইরশাদ করেন-
إن الشمس والقمر لا ينكسفان لموت أحد من الناس، ولكنهما آيتان من آيات الله، فإذا رأيتموهما، فقوموا، فصلوا
কোনও মানুষেরই মৃত্যুতে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ লাগে না। বরং এ দু'টি আল্লাহ তা'আলার নিদর্শনাবলির অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যখন তোমরা সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ লাগতে দেখবে, তখন নামাযে দাঁড়িয়ে যাবে।
(সহীহ বুখারী : ১০৪১; সহীহ মুসলিম: ৯০১; সুনানে আবু দাউদ: ১১৭৮; সুনানে নাসাঈ : ১৪৫৯; সুনানে ইবন মাজাহ : ১২৬৩; মুসনাদে আহমাদ: ২৭১২; সুনানে দারিমী: ১৫৬৬; মুসনাদুল বাযযার: ১৩৭১: মুসনাদে আবূ দাঊদ তয়ালিসী: ৭২৯; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৪৯২২; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৮২৯৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা : ১৩৭০; সহীহ ইবনে হিব্বান: ২৮২৭)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. সন্তানের প্রতি মায়া-মমতা প্রাকৃতিক বিষয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরে এ গুণ অনেক বেশি ছিল।
খ. প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকার্ত হওয়া ও ক্রন্দন করা একটি স্বাভাবিক বিষয়। এটা নিষিদ্ধ নয়।
গ. প্রিয়জনের মৃত্যুতে ক্রন্দন করা মায়া-মমতার প্রকাশ। এরূপ ক্ষেত্রে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কাঁদতেন।
ঘ. মৃত্যুযন্ত্রণা প্রাকৃতিক। এটা সকলেরই হয়।
ঙ. শোকে-দুঃখে সতর্ক থাকতে হবে যাতে মুখ দিয়ে এমন কোনও কথা উচ্চারিত না হয়, যা আল্লাহ তা'আলার অসন্তুষ্টির কারণ হতে পারে।
চ. যে-কারও মৃত্যু আল্লাহ তা'আলার ফয়সালায়ই হয়ে থাকে। তাই কারও মৃত্যুতে অন্তর শোকাহত হলেও আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা জরুরি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
