আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫৬- পানাহার সংক্রান্ত অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৫৪৬১
২৮৯০. কৃতজ্ঞ আহারকারী ধৈর্যশীল রোযা পালনকারীর মতো। এ ব্যাপারে আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে নবী করীম (ﷺ) -এর একটি হাদীস বর্ণিত আছে।

পরিচ্ছেদঃ ২৮৯১. কাউকে আহারের দাওয়াত দিলে একথা বলা যে, এ ব্যক্তি আমার সঙ্গের।
আনাস (রাযিঃ) বলেন, তুমি কোন মুসলমানের কাছে গেলে যদি তার খানাপিনা সন্দেহযুক্ত না হয় তাহলে তার আহার থেকে খাও এবং তার পানীয় থেকে পান কর।
৫০৬৬। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে আবুল আসওয়াদ (রাহঃ) ......... আবু মাস‘উদ আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসার গোত্রের এক ব্যক্তি যার কুনিয়াত (ডাক নাম) ছিল আবু শু‘আয়ব তার একটি কসাই গোলাম ছিল। সে নবী করীম (ﷺ) -এর নিকট আসলো, তখন তিনি সাহাবীদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। তখন সে নবী করীম (ﷺ) -এর চেহারায় ক্ষুধার লক্ষণ অনুভব করলো, লোকটি তার কসাই গোলামের কাছে গিয়ে বললঃ আমার জন্য কিছু খাবার প্রস্তুত কর যা পাঁচজনের জন্য যথেষ্ট হয়। আমি পাঁচ জনকে দাওয়াত করব, যার পঞ্চম ব্যক্তি হবেন নবী করীম (ﷺ)। গোলামটি তার জন্য কিছু খাবার প্রস্তুত করলো। লোকটি তার কাছে এসে তাকে দাওয়াত করলো। এক ব্যক্তি তাদের সঙ্গে গেল। নবী করীম (ﷺ) বললেনঃ হে শু‘আয়ব! এক ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে এসেছে। তুমি চাইলে তাকে অনুমতি দিতে পার, আর চাইলে তাকে বিদায়ও করতে পার। সে বললঃ না। আমি তাকে অনুমতি দিলাম।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, দাওয়াতদাতা ছিলেন হযরত আবূ শু‘আয়ব রাযি.। এ হাদীছ দ্বারা বোঝা যায়, দাওয়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজ ইচ্ছামতো কাউকে সঙ্গে নিয়ে দাওয়াতের খাবারে শরীক করাতে পারবে না। কেউ তার সঙ্গে গেলে বা নিজ ইচ্ছায় কাউকে নিয়ে গেলে গৃহকর্তার অনুমতি নিতে হবে। গৃহকর্তা অনুমতি দিলে সে খেতে পারবে, অন্যথায় নয়। অতিথি ব্যস অতিথিই। সে খাবারের মালিক নয় যে, যাকে ইচ্ছা তাকে খাওয়াবে। তার সামনে যে খাবার পরিবেশন করা হয়, তা থেকে কেবল সে নিজেই খেতে পারবে। গৃহকর্তার পক্ষ থেকে তার জন্য কেবল খাওয়ারই অনুমতি থাকে, দান করার নয়। অনেকে দাওয়াতের খানা নিজ ইচ্ছামতো সঙ্গে করে নিয়েও যায়। গৃহকর্তার অনুমতি ছাড়া এটা কিছুতেই জায়েয নয়।

প্রকাশ থাকে যে, যাকে দাওয়াত করা হয়, সাধারণ নিয়ম অনুসারে দাওয়াতে সে একাই যেতে পারে। সঙ্গে অন্য কাউকে নিতে পারে না। তবে হাঁ, দাওয়াতদাতার সঙ্গে যদি তার ঘনিষ্ঠতা থাকে এবং বুঝতে পারে সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠ কাউকে নিয়ে গেলে তাতে সে নারাজ হবে না; বরং খুশিই হবে, তবে এ অবস্থায় সেরকম কাউকে সঙ্গে নেওয়া যাবে। এক বর্ণনায় আছে, একবার এক দর্জির দাওয়াতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আনাস রাযি.-কে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ানো সুন্নত।

খ. যারা খুশিমনে দাওয়াত দেয়, তাদের দাওয়াত কবুল করা উচিত।

গ. দাওয়াতী মেহমানের সঙ্গে অতিরিক্ত কেউ গেলে তার কর্তব্য গৃহকর্তার কাছে তার জন্য অনুমতি চাওয়া।

ঘ. দাওয়াতী মেহমানের সঙ্গে অতিরিক্ত কেউ আসলে এবং তার জন্য অনুমতি চাওয়া হলে গৃহকর্তার তা মঞ্জুর করা উচিত।

ঙ. দাওয়াতদাতা সাধারণ পর্যায়ের কেউ হলে তার দাওয়াত অবজ্ঞা করা উচিত নয়।

চ. দাওয়াতের খাবার মেহমানের জন্য কেবল খাওয়ারই অনুমতি থাকে, দান করার বা সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার নয়। তাই বিনা অনুমতিতে এটা করা যাবে না।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৫০৬৬ | মুসলিম বাংলা