আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫৬- পানাহার সংক্রান্ত অধ্যায়

হাদীস নং: ৫০৪০
আন্তর্জাতিক নং: ৫৪৩৪
২৮৬৮. ভাইদের জন্য আহারের ব্যবস্থা করা
৫০৪০। মুহাম্মাদ ইবনে ইউসূফ (রাহঃ) ......... আবু মাস‘উদ আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু শু‘আয়ব নামক আনসার গোত্রের এক ব্যক্তির এক কসাই গোলাম ছিল। সে তাকে বললো, আমার জন্য কিছু খাবার প্রস্তুত কর, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে দাওয়াত করতে চাই। পাঁচজনের মধ্যে তিনি হবেন একজন। তারপর সে নবী করীম (ﷺ) -কে দাওয়াত করল। তিনি ছিলেন পাঁচ জনের অন্যতম। তখন এক ব্যক্তি তাদের পিছে পিছে আসতে লাগল। নবী করীম (ﷺ) বললেনঃ তুমি তো আমাকে আমাদের পাঁচ জনের পঞ্চম ব্যক্তি হিসাবে দাওয়াত দিয়েছ। এ লোকটা আমাদের পিছে পিছে এসেছে। তুমি ইচ্ছা করলে তাকে অনুমতি দিতে পার আর ইচ্ছা করলে বাদও দিতে পার। সে বললো আমি বরং তাকে অনুমতি দিচ্ছি।
باب الرَّجُلِ يَتَكَلَّفُ الطَّعَامَ لإِخْوَانِهِ
5434 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الأَنْصَارِيِّ، قَالَ: كَانَ مِنَ الأَنْصَارِ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ أَبُو شُعَيْبٍ، وَكَانَ لَهُ غُلاَمٌ لَحَّامٌ، فَقَالَ: اصْنَعْ لِي طَعَامًا، أَدْعُو رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَامِسَ خَمْسَةٍ، فَدَعَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَامِسَ خَمْسَةٍ، فَتَبِعَهُمْ رَجُلٌ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكَ دَعَوْتَنَا خَامِسَ خَمْسَةٍ، وَهَذَا رَجُلٌ قَدْ تَبِعَنَا، فَإِنْ شِئْتَ أَذِنْتَ لَهُ، وَإِنْ شِئْتَ تَرَكْتَهُ» قَالَ: بَلْ أَذِنْتُ لَهُ
قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ: سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَاعِيْلَ، يَقُولُ: «إِذَا كَانَ القَوْمُ عَلَى المَائِدَةِ، لَيْسَ لَهُمْ أَنْ يُنَاوِلُوا مِنْ مَائِدَةٍ إِلَى مَائِدَةٍ أُخْرَى، وَلَكِنْ يُنَاوِلُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا فِي تِلْكَ المَائِدَةِ أَوْ يَدَعُ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, দাওয়াতদাতা ছিলেন হযরত আবূ শু‘আয়ব রাযি.। এ হাদীছ দ্বারা বোঝা যায়, দাওয়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজ ইচ্ছামতো কাউকে সঙ্গে নিয়ে দাওয়াতের খাবারে শরীক করাতে পারবে না। কেউ তার সঙ্গে গেলে বা নিজ ইচ্ছায় কাউকে নিয়ে গেলে গৃহকর্তার অনুমতি নিতে হবে। গৃহকর্তা অনুমতি দিলে সে খেতে পারবে, অন্যথায় নয়। অতিথি ব্যস অতিথিই। সে খাবারের মালিক নয় যে, যাকে ইচ্ছা তাকে খাওয়াবে। তার সামনে যে খাবার পরিবেশন করা হয়, তা থেকে কেবল সে নিজেই খেতে পারবে। গৃহকর্তার পক্ষ থেকে তার জন্য কেবল খাওয়ারই অনুমতি থাকে, দান করার নয়। অনেকে দাওয়াতের খানা নিজ ইচ্ছামতো সঙ্গে করে নিয়েও যায়। গৃহকর্তার অনুমতি ছাড়া এটা কিছুতেই জায়েয নয়।

প্রকাশ থাকে যে, যাকে দাওয়াত করা হয়, সাধারণ নিয়ম অনুসারে দাওয়াতে সে একাই যেতে পারে। সঙ্গে অন্য কাউকে নিতে পারে না। তবে হাঁ, দাওয়াতদাতার সঙ্গে যদি তার ঘনিষ্ঠতা থাকে এবং বুঝতে পারে সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠ কাউকে নিয়ে গেলে তাতে সে নারাজ হবে না; বরং খুশিই হবে, তবে এ অবস্থায় সেরকম কাউকে সঙ্গে নেওয়া যাবে। এক বর্ণনায় আছে, একবার এক দর্জির দাওয়াতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আনাস রাযি.-কে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ানো সুন্নত।

খ. যারা খুশিমনে দাওয়াত দেয়, তাদের দাওয়াত কবুল করা উচিত।

গ. দাওয়াতী মেহমানের সঙ্গে অতিরিক্ত কেউ গেলে তার কর্তব্য গৃহকর্তার কাছে তার জন্য অনুমতি চাওয়া।

ঘ. দাওয়াতী মেহমানের সঙ্গে অতিরিক্ত কেউ আসলে এবং তার জন্য অনুমতি চাওয়া হলে গৃহকর্তার তা মঞ্জুর করা উচিত।

ঙ. দাওয়াতদাতা সাধারণ পর্যায়ের কেউ হলে তার দাওয়াত অবজ্ঞা করা উচিত নয়।

চ. দাওয়াতের খাবার মেহমানের জন্য কেবল খাওয়ারই অনুমতি থাকে, দান করার বা সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার নয়। তাই বিনা অনুমতিতে এটা করা যাবে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৫০৪০ | মুসলিম বাংলা