শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

১১. শরীআত বিধিত দন্ডের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫০০০
১. ইচ্ছাকৃত হত্যা এবং যখম করার শাস্তি
৫০০০। আবু বাকরা (রাহঃ) ও ইবরাহীম ইব্‌ন মারযূক (রাহঃ) ….. আনাস ইব্‌ন মালিক ইব্‌ন নযর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাঁর ফুফু রুবাইয়্যা (রাযিঃ) স্বীয় দাসীকে চড় মেরে তার সামনের দাঁত ভেঙ্গে ফেলেন। তারা (রুবাইয়্যা রা-এর পরিজন) তাদের (দাসীর উত্তরাধিকার) নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করল। তারা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করল, দিয়াত গ্রহণ করতেও অস্বীকৃতি জানালাে, শুধু কিসাসের দাবি করল। তারা স্বীয় মুকাদ্দামা রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)-এর দরবারে পেশ করল। তিনি কিসাসের হুকুম প্রদান করলেন। আনাস ইব্‌ন নযর (রাযিঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রুবাইয়্যার দাঁত ভেঙ্গে ফেলা হবে? না, (ইয়া রাসূলাল্লাহ!) সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে হক সহকারে প্রেরণ করেছেন, তার দাঁত ভাঙ্গা হবে না। রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) বললেন, হে আনাস! আল্লাহর কিতাবের বিধান তাে কিসাস। অনন্তর তারা সম্মত হয়ে গেল এবং ক্ষমা করে দিল। আর রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) বললেন, অবশ্যই আল্লাহর কিছু বান্দা এরূপ রয়েছে যে, যদি তারা আল্লাহর উপর কসম করে তিনি তা পূর্ণ করেন। কতক রাবী কিছু অতিরিক্ত শব্দ নকল করেছে।

সুতরাং যে মহিলার দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) রুবাইয়্যা (রাযিঃ) -এর উপর এর কিসাসের ফায়সালা দিয়েছেন এবং তাকে কিসাস ও দিয়াত গ্রহণের শাঝে ইখতিয়ার প্রদান করেননি। আনাস ইব্‌ন নযর (রাযিঃ) যখন তা অস্বীকার করলেন, তখন তিনি তাকে দলীল দিয়ে বললেন, হে আনাস! আল্লাহর কিতাবের বিধান হলাে কিসাস। পরে লােকেরা ক্ষমা করে দিল এবং তাদের জন্য দিয়াতের ফায়সালা দেন নাই। এতে সাব্যস্ত হলাে যে, ইচ্ছাকৃত হত্যা করার অবস্থায় কুরআন ও সুন্নাহর বিধান মতে যা ওয়াজিব হয় তা হলাে শুধু কিসাস। কেননা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যদি তার কিসাস এবং ক্ষমা করার মাঝে ইখতিয়ার হত যে, সে এর বদলায় অপরাধী থেকে কিছু গ্রহণ করবে, তাহলে রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) তাকে অবশ্যই ইখতিয়ার প্রদান করতেন এবং তাদেরকে জানিয়ে দিতেন যে, এ থেকে তাদের কি কি জিনিস ইখতিয়ার করার অধিকার আছে।

তােমরা কি লক্ষ্য করছ না যে, যদি কোন ব্যক্তি বিচারকের নিকট এরূপ মুকাদ্দামা নিয়ে যায়, যাতে তার জন্য দুটি বস্তুর একটি সাব্যস্ত হয়। বিচারকের নিকট তা প্রমাণিত হলাে তখন তিনি দুই বস্তুর কোন একটির পরিবর্তে অপরটির ফায়সালা করবেন না। বরং তিনি তার জন্য এই ফায়সালা করবেন যে, অমুক অমুক বস্তু থেকে যেটা তুমি পছন্দ কর গ্রহণ কর। অতঃপর সে যদি তাতে সীমালংঘন করে তাহলে ধরে নিতে হবে সে যেন ফায়সালা বুঝতে ত্রুটি করেছে।

বস্তুত রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) হলেন সর্বোত্তম বিচারক, যখন তিনি কিসাসের ফায়সালা দিয়েছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, এটা আল্লাহ্ তা'আলার কিতাবের (কুরআন) ফায়সালা । তাই এতে সাব্যস্ত হলাে যে, এরূপ অবস্থায় শুধু কিসাস প্রজোয্য, অন্য কিছু নয়।

যখন এই হাদীসটি সাব্যস্ত হয়ে গেল, যেমনটি আমরা উল্লেখ করেছি। সুতরাং আবু শুরায়হ (রাযিঃ) ও আবু হুরায়রা (রাযিঃ)-এর হাদীসকেও এর অনুকূলবর্তী করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। সুতরাং যে দুই হাদীসে রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) -এর বক্তব্যকে এ অর্থে ধরা হবে যে, তার এই ইচ্ছাধিকার থাকবে, হয় সে ক্ষমা করবে, কিংবা কিসাস নেবে, কিংবা অপরাধীর দিয়াতের দণ্ড গ্রহণের সম্মতির শর্তে তার থেকে দিয়াত নেবে। যেন এই দুই হাদীসের বিষয়বস্তু এবং আনাস (ইব্‌ন নযর রা) এর হাদীসের বিষয়বস্তু সমন্বিত হয়ে যায়।

যদি কোন প্রশ্নকারী বলে যে, যুক্তি তাে প্রথমােক্ত মত পােষণকারীদের পক্ষে সহযােগিতা করে, তাহলে এভাবে যে, লােকদের উপর নিজেদেরকে জীবিত রাখা আবশ্যক। যখন সেই ব্যক্তি যার রক্ত প্রবাহিত (বদলা নেয়ার) করার অধিকার রয়েছে, সে বলবে আমি দিয়াত গ্রহণে এবং রক্ত প্রবাহিত না করতে সম্মত আছি। হত্যাকারীর উপর স্বীয় প্রাণ বাঁচান ওয়াজিব হবে। আর যখন এটা তার উপর ওয়াজিব তখন তার থেকে দিয়াত গ্রহণ করা হবে, যদিও সে অপছন্দ করে।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে দলীল হলাে যে, অবশ্যই লোকদের উপর স্বীয় প্রাণ রক্ষা করা আবশ্যক যেমনটি তুমি উল্লেখ করেছ। চাই তা দিয়াতের দ্বারা হােক বা তা ছাড়া অন্য কোন জিনিসের দ্বারা, বরং স্বীয় সমস্ত মালিকানা বস্তুর দ্বারা হােক। আমরা লক্ষ্য করছি যে, ফকীহ (ইসলামী আইনজ্ঞ)গণ এই বিষয়ে ঐকমত্য পােষণ করেছেন যে, যদি (নিহতের) ওলী হত্যাকারীকে বলে যে, আমি এ কথায় রাজি যে, তােমার এই বাড়ি নিয়ে নেব এবং তােমাকে হত্যা করব না। আল্লাহ্ এবং ঐ হত্যাকারীর মাঝে বিষয়টি সােপর্দ করে (নৈতিকভাবে) ঐ ব্যক্তির উপর আবশ্যক হবে যে, সে বাড়ি দিয়ে নিজের জান বাঁচাবে। কিন্তু এ বিষয়ে সকলের ঐকমত্য যে, যদি সে (হত্যাকারী) অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে, তার উপর জবরদস্তি করা যাবেনা এবং তার অসম্মতিতে বাড়ি নিয়ে ওলীকে দেয়া যাবেনা।

অনুরূপভাবে দিয়াতের বিষয়টি, যখন (নিহতের) ওলী এর দাবি করবে তখন নৈতিকভাবে হত্যাকারীর উপর ওয়াজিব হলাে সে তা আদায় করে স্বীয় জীবনকে রক্ষা করবে। কিন্তু যদি সে তা অস্বীকার করে তবে তার উপর জবরদস্তি করা যাবে না এবং তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার থেকে তা নেয়া যাবে না।

অতঃপর আমরা প্রথমােক্ত মত পােষণকারীদের সেই কথার দিকে ফিরে যাচ্ছি যে, অপরাধীর অসম্মতিতেও ওলীর জন্য দিয়াত গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে।

আমরা তাদেরকে বলব যে, এটা তিন অবস্থার কোন একটি থেকে মুক্ত নয়ঃ হয়ত এটা এজন্য হবে যে, হত্যাকারীর উপর কিসাস এবং দিয়াত উভয়টি আবশ্যক। সুতরাং যখন সে কিসাস ক্ষমা করে দিয়েছে তখন ক্ষমা করার কারণে তা বাতিল করে দিয়েছে। তাই তার জন্য এখন দিয়াত গ্রহণ করার অধিকার হবে। অথবা শুধু কিসাস ওয়াজিব হবে এবং সে ওই কিসাসের বদলে দিয়াত গ্রহণ করতে পারবে। অথবা দুটো বস্তু থেকে একটি বস্তু ওয়াজিব, কিসাস হবে নতুবা দিয়াত, তা থেকে যেটা ইচ্ছা ইখতিয়ার করবে। সুতরাং এই তিন অবস্থার কোন একটি থেকে মুক্ত হবে না।

বস্তুত তােমরা যদি বল যে, তার জন্য কিসাস এবং দিয়াত দু'টিই ওয়াজিব, তাহলে এটা ভ্রান্ত। কেননা আল্লাহ্ তা'আলা কারাে উপর তার কাজ (অপরাধ) অপেক্ষা অধিক শাস্তি ওয়াজিব করেন নাই। আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَا أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْأَنْفَ بِالْأَنْفِ وَالْأُذُنَ بِالْأُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوحَ قِصَاصٌ

অর্থাৎ তাদের জন্য ওতে বিধান দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখমের বদলে অনুরূপ যখম। (সূরাঃ ৫, আয়াতঃ ৪৫)
আল্লাহ্ তা'আলা কোন অপরাধীর উপর তার অপরাধ অপেক্ষা অতিরিক্ত (কোন শাস্তি) ওয়াজিব করেন নাই। যদি এই বিষয়টি এরূপ হত তাহলে ওয়াজিব হবে যে, সে হত্যাও করবে এবং দিয়াতও গ্রহণ করবে। সুতরাং যখন হত্যা করার পরে দিয়াত গ্রহণ নেই তখন এতে প্রতীয়মান হয় যে, যা কিছু ওয়াজিব তােমাদের বক্তব্যের পরিপন্থী। যদি তােমরা বল যে, ওয়াজিব তাে শুধু কিসাস, কিন্তু সে এর পরিবর্তে দিয়াত গ্রহণ করতে পারে। বস্তুত আমরা এমন বিধান দেখতে পাই না যে, কোন পাওনাদার দেনাদারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেনার বদল তথা বিকল্প উসূল করবে। সুতরাং এই অর্থও বাতিল হয়ে গেল। যদি তােমরা বল যে, তার জন্য দু'টো থেকে একটি বস্তু ওয়াজিব, হয়ত কিসাস, নয়ত দিয়াত গ্রহণ। দু’টো থেকে যেটা পছন্দ করবে গ্রহণ করবে। কিন্তু তার জন্য আবশ্যক নয় যে, তা থেকে কোন একটিই গ্রহণ করবে, অন্যটি নিতে পারবে না। তার জন্য সমীচীন হলাে যে, যখন দু’টো থেকে নির্দিষ্ট কোন একটিকে ক্ষমা করে দিয়েছে তখন তার ক্ষমা করে দেয়াটা জায়িয না হওয়া। কেননা যা কিছু সে ক্ষমা করে দিয়েছে এটা নির্দিষ্টভাবে তার হক তথা অধিকার ছিল না। তাই সে তা বাতিল করতে পারবে। তার এ অধিকার ছিল যে, সে তা ইখতিয়ার করবে এভাবে সেটা তার হক হয়ে যেত অথবা অন্যটিকে ইখতিয়ার করবে এবং সেটা তার হক হয়ে যেত। সুতরাং যখন সে ঐ দুটো থেকে কোন একটিকে ইখতিয়ার করার এবং হুবহু সেটা ওয়াজিব হওয়ার পূর্বে অন্য হককে ক্ষমা করে দিবে, তার এ ক্ষমা করে দেয়াটা বাতিল বলে গণ্য হবে।

তােমরা কি লক্ষ্য করছ না যে, যদি কেউ কারাে পিতাকে ইচ্ছাকৃতভাবে যখম করে দেয় এবং সে স্বীয় পিতার যখমকারীকে ক্ষমা করে দেয়। অতঃপর তার পিতা সেই যখমের কারণে মৃত্যুবরণ করে এবং সে (পুত্র) ব্যতীত তার অন্য কোন উত্তরাধিকারীও নেই, তা হলে তার ক্ষমা করা বাতিল গণ্য হবে। কেননা সে ক্ষমা করে দেয়ার অধিকারপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বে ক্ষমা করেছে।

যা কিছু আমরা উল্লেখ করেছি যখন বিষয়টি এরূপ এবং কিসাস অথবা দিয়াত গ্রহণ করার পূর্বে হত্যাকারীকে ক্ষমা করা জায়িয। এতে প্রামণিত হলাে যে, ক্ষমা করার পূর্বে শুধু কিসাস ওয়াজিব ছিল, যদি তা ওয়াজিব না হত তাহলে সে ক্ষমা করার মাধ্যমে তা বাতিল করতে পারত না। যেমনিভাবে পুত্র স্বীয় পিতার রক্ত ওই সময় পর্যন্ত ক্ষমা করতে পারবে না, যতক্ষণ না তা তার জন্য ওয়াজিব হয়।

যা কিছু আমরা উল্লেখ করেছি এর সাব্যস্ততা এবং এই তিন অবস্থার খণ্ডনে প্রমাণিত হয় যে, ইচ্ছাকৃত হত্যাকারী অথবা ইচ্ছাকৃত যখমকারীর উপর শুধু কিসাস ওয়াজিব, অন্য কোন বস্তু অর্থাৎ দিয়াত ইত্যাদি আবশ্যক নয়। তবে হ্যাঁ, জীবিত হওয়ার অবস্থায় হত্যাকারী স্বয়ং এবং মৃত্যুবরণ করার অবস্থায় তার উত্তরাধিকারীগণ যদি কোন বস্তুর উপর আপােষ করে নেয় তাহলে সেই আপােষকৃত বস্তু ওয়াজিব হবে। আর দিয়াত অথবা অন্য কোন জিনিসের উপর আপােষ করা জায়িয হবে। আর এটাই হলাে ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ) ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাযিঃ)-এর অভিমত।
5000 - وَحَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مَرْزُوقٍ قَالَ: ثنا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْأَنْصَارِيُّ قَالَا: ثنا حُمَيْدٌ الطَّوِيلُ عَنْ " أَنَسِ بْنِ مَالِكِ بْنِ النَّضْرِ أَنَّ عَمَّتَهُ الرُّبَيِّعَ لَطَمَتْ جَارِيَةً فَكَسَرَتْ ثَنِيَّتَهَا فَطَلَبُوا إِلَيْهِمُ الْعَفْوَ فَأَبَوْا، وَالْأَرْشَ، فَأَبَوْا إِلَّا الْقِصَاصَ. [ص:177] فَاخْتَصَمُوا إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَمَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْقِصَاصِ. فَقَالَ أَنَسُ بْنُ النَّضْرِ: يَا رَسُولَ اللهِ , أَتُكْسَرُ ثَنِيَّةُ الرُّبَيِّعِ، لَا وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا تُكْسَرُ ثَنِيَّتُهَا. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَنَسُ، كِتَابُ اللهِ الْقِصَاصُ» فَرَضِيَ الْقَوْمُ فَعَفَوْا. وَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللهِ مَنْ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَأَبَرَّهُ» يَزِيدُ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ. فَلَمَّا كَانَ الْحُكْمُ الَّذِي حَكَمَ بِهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الرُّبَيِّعِ لِلْمَنْزُوعَةِ ثَنِيَّتُهَا هُوَ الْقِصَاصُ وَلَمْ يُخَيِّرْهَا بَيْنَ الْقِصَاصِ وَأَخْذِ الدِّيَةِ وَهَاجَ أَنَسُ بْنُ النَّضْرِ حِينَ أَبَى ذَلِكَ , فَقَالَ «يَا أَنَسُ كِتَابُ اللهِ الْقِصَاصُ» فَعَفَا الْقَوْمُ فَلَمْ يَقْضِ لَهُمْ بِالدِّيَةِ. ثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّ الَّذِي يَجِبُ بِكِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَسُنَّةِ رَسُولِهِ فِي الْعَمْدِ هُوَ الْقِصَاصُ لِأَنَّهُ لَوْ كَانَ يَجِبُ لِلْمَجْنِيِّ عَلَيْهِ الْخِيَارُ بَيْنَ الْقِصَاصِ وَبَيْنَ الْعَفْوِ مِمَّا يَأْخُذُ بِهِ الْجَانِي إِذًا لَخَيَّرَهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَأَعْلَمَهَا بِمَا لَهَا أَنْ تَخْتَارَهُ مِنْ ذَلِكَ. أَلَا تَرَى أَنَّ حَاكِمًا لَوْ تَقَدَّمَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فِي شَيْءٍ يَجِبُ لَهُ فِيهِ أَحَدُ شَيْئَيْنِ فَثَبَتَ عِنْدَهُ حَقُّهُ أَنَّهُ لَا يَحْكُمُ لَهُ بِأَحَدِ الشَّيْئَيْنِ دُونَ الْآخَرِ وَإِنَّمَا يَحْكُمُ لَهُ بِأَنْ يَخْتَارَ مَا أَحَبَّ مِنْ كَذَا وَمِنْ كَذَا فَإِنْ تَعَدَّى ذَلِكَ فَقَدْ قَصُرَ عَنْ فَهْمِ الْحُكْمِ وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْكَمُ الْحُكَمَاءِ. فَلَمَّا حَكَمَ بِالْقِصَاصِ وَأَخْبَرَ أَنَّهُ كِتَابُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّ الَّذِي فِي مِثْلِ ذَلِكَ هُوَ الْقِصَاصُ لَا غَيْرُهُ. فَلَمَّا ثَبَتَ هَذَا الْحَدِيثُ عَلَى مَا ذَكَرْنَا وَجَبَ أَنْ يُعْطَفَ عَلَيْهِ حَدِيثُ أَبِي شُرَيْحٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا. فَيُجْعَلَ قَوْلُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيهِمَا «فَهُوَ بِالْخِيَارِ بَيْنَ أَنْ يَعْفُوَ أَوْ بَيْنَ أَنْ يَقْتَصَّ أَوْ يَأْخُذَ الدِّيَةَ» عَلَى الرِّضَاءِ مِنَ الْجَانِي بِغُرْمِ الدِّيَةِ حَتَّى تَتَّفِقَ مَعَانِي هَذَيْنِ الْحَدِيثَيْنِ وَمَعْنَى حَدِيثِ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ. فَإِنْ قَالَ قَائِلٌ: فَإِنَّ النَّظَرَ يَدُلُّ عَلَى مَا قَالَ أَهْلُ الْمَقَالَةِ الْأُولَى وَذَلِكَ أَنَّ عَلَى النَّاسِ أَنْ يَسْتَحْيُوا أَنْفُسَهُمْ. فَإِذَا قَالَ الَّذِي لَهُ سَفْكُ الدَّمِ قَدْ رَضِيتُ بِأَخْذِ الدِّيَةِ وَتَرْكِ سَفْكِ الدَّمِ وَجَبَ عَلَى الْقَاتِلِ اسْتِحْيَاءُ نَفْسِهِ فَإِذَا وَجَبَ ذَلِكَ عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ مَالِهِ وَإِنْ كَرِهَ. فَالْحُجَّةُ عَلَيْهِ فِي ذَلِكَ أَنَّ عَلَى النَّاسِ اسْتِحْيَاءَ أَنْفُسِهِمْ كَمَا ذَكَرْتَ بِالدِّيَةِ وَبِمَا جَاوَزَ الدِّيَةَ وَجَمِيعَ مَا يَمْلِكُونَ. وَقَدْ رَأَيْنَاهُمْ أَجْمَعُوا أَنَّ الْوَلِيَّ لَوْ قَالَ لِلْقَاتِلِ قَدْ رَضِيتُ أَنْ آخُذَ دَارَكَ هَذِهِ عَلَى أَنْ لَا أَقْتُلَكَ أَنَّ الْوَاجِبَ [ص:178] عَلَى الْقَاتِلِ فِيمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ اللهِ تَسْلِيمُ ذَلِكَ لَهُ وَحَقْنُ دَمِ نَفْسِهِ فَإِنْ أَبَى لَمْ يُجْبَرْ عَلَيْهِ بِاتِّفَاقِهِمْ عَلَى ذَلِكَ وَلَمْ يُؤْخَذْ مِنْهُ ذَلِكَ كُرْهًا فَيُدْفَعُ إِلَى الْوَلِيِّ. فَكَذَلِكَ الدِّيَةُ إِذَا طَلَبَهَا الْوَلِيُّ فَإِنَّهُ يَجِبُ عَلَى الْقَاتِلِ فِيمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ رَبِّهِ أَنْ يَسْتَحِيَ نَفْسَهُ بِهَا وَإِنْ أَبَى ذَلِكَ لَمْ يُجْبَرْ عَلَيْهِ وَلَمْ يُؤْخَذْ مِنْهُ كُرْهًا. ثُمَّ رَجَعْنَا إِلَى أَهْلِ الْمَقَالَةِ الْأُولَى فِي قَوْلِهِمْ إِنَّ لِلْوَلِيِّ أَنْ يَأْخُذَ الدِّيَةَ وَإِنْ كَرِهَ ذَلِكَ الْجَانِي. فَنَقُولُ لَهُمْ: لَيْسَ يَخْلُو ذَلِكَ مِنْ أَحَدِ وُجُوهٍ ثَلَاثَةٍ: إِمَّا أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ لِأَنَّ الَّذِي لَهُ عَلَى الْقَاتِلِ هُوَ الْقِصَاصُ وَالدِّيَةُ جَمِيعًا فَإِذَا عَفَا عَنِ الْقِصَاصِ فَأَبْطَلَهُ بِعَفْوِهِ كَانَ لَهُ أَخْذُ الدِّيَةِ. وَإِمَّا أَنْ يَكُونَ الَّذِي وَجَبَ لَهُ هُوَ الْقِصَاصُ خَاصَّةً وَلَهُ أَنْ يَأْخُذَ الدِّيَةَ بَدَلًا مِنْ ذَلِكَ الْقِصَاصِ. وَإِمَّا أَنْ يَكُونَ الَّذِي وَجَبَ لَهُ هُوَ أَحَدُ أَمْرَيْنِ إِمَّا الْقِصَاصُ وَإِمَّا الدِّيَةُ يَخْتَارُ مِنْ ذَلِكَ مَا شَاءَ لَيْسَ يَخْلُو ذَلِكَ مِنْ أَحَدِ هَذِهِ الثَّلَاثَةِ الْوُجُوهِ. فَإِنْ قُلْتُمُ: الَّذِي وَجَبَ لَهُ هُوَ الْقِصَاصُ وَالدِّيَةُ جَمِيعًا فَهَذَا فَاسِدٌ لِأَنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَمْ يُوجِبْ عَلَى أَحَدٍ فَعَلَ فِعْلًا أَكْثَرَ مِمَّا فَعَلَ فَقَدْ قَالَ عَزَّ وَجَلَّ «وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَا أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْأَنْفَ بِالْأَنْفِ وَالْأُذُنَ بِالْأُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوحَ قِصَاصٌ» . فَلَمْ يُوجِبِ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى أَحَدٍ بِفِعْلٍ يَفْعَلُهُ أَكْثَرَ مِمَّا فَعَلَ وَلَوْ كَانَ ذَلِكَ كَذَلِكَ لَوَجَبَ أَنْ يُقْتَلَ وَيَأْخُذَ الدِّيَةَ. فَلَمَّا لَمْ يَكُنْ لَهُ بَعْدَ قَتْلِهِ أَخَذُ الدِّيَةِ دَلَّ ذَلِكَ عَلَى أَنَّ الَّذِي كَانَ وَجَبَ لَهُ خِلَافُ مَا قُلْتُمْ. وَإِنْ قُلْتُمْ: إِنَّ الَّذِي وَجَبَ لَهُ هُوَ الْقِصَاصُ وَلَكِنْ لَهُ أَنْ يَأْخُذَ الدِّيَةَ بَدَلًا مِنْ ذَلِكَ الْقِصَاصِ فَإِنَّا لَا نَجِدُ حَقًّا لِرَجُلٍ يَكُونُ لَهُ أَنْ يَأْخُذَ بِهِ بَدَلًا بِغَيْرِ رِضَاءِ مَنْ عَلَيْهِ ذَلِكَ الْحَقُّ فَبَطَلَ هَذَا الْمَعْنَى أَيْضًا. وَإِنْ قُلْتُمْ: إِنَّ الَّذِي وَجَبَ لَهُ أَحَدُ أَمْرَيْنِ: إِمَّا الْقِصَاصُ وَإِمَّا الدِّيَةُ يَأْخُذُ مِنْهُمَا مَا أَحَبَّ وَلَمْ يَجِبْ لَهُ أَنْ يَأْخُذَ وَاحِدًا مِنْهُمَا دُونَ الْآخَرِ. فَإِنَّهُ يَنْبَغِي إِذَا عَفَا عَنْ أَحَدِهِمَا بِعَيْنِهِ أَنْ لَا يَجُوزَ عَفْوُهُ لِأَنَّ حَقَّهُ لَمْ يَكُنْ هُوَ الْمَعْفُوَّ عَنْهُ بِعَيْنِهِ فَيَكُونُ لَهُ إِبْطَالُهُ إِنَّمَا كَانَ لَهُ أَنْ يَخْتَارَهُ فَيَكُونُ هُوَ حَقَّهُ أَوْ يَخْتَارُ غَيْرَهُ فَيَكُونُ هُوَ حَقَّهُ فَإِذَا عَفَا عَنْ أَحَدِهِمَا قَبْلَ اخْتِيَارِهِ إِيَّاهُ وَقَبْلَ وُجُوبِهِ لَهُ بِعَيْنِهِ فَعَفْوُهُ بَاطِلٌ. أَلَا تَرَى أَنَّ رَجُلًا لَوْ جُرِحَ أَبُوهُ عَمْدًا فَعَفَا عَنْ جَارِحِ أَبِيهِ ثُمَّ مَاتَ أَبُوهُ مِنْ تِلْكَ الْجِرَاحَةِ وَلَا وَارِثَ لَهُ غَيْرُهُ أَنَّ عَفْوَهُ بَاطِلٌ لِأَنَّهُ إِنَّمَا عَفَا قَبْلَ وُجُوبِ الْمَعْفُوِّ عَنْهُ لَهُ. فَلَمَّا كَانَ مَا ذَكَرْنَا كَذَلِكَ وَكَانَ الْعَفْوُ مِنَ الْقَاتِلِ قَبْلَ اخْتِيَارِهِ الْقِصَاصَ أَوِ الدِّيَةَ جَائِزًا ثَبَتَ بِذَلِكَ [ص:179] أَنَّ الْقِصَاصَ قَدْ كَانَ وَجَبَ لَهُ بِعَيْنِهِ قَبْلَ عَفْوِهِ عَنْهُ وَلَوْلَا وُجُوبُهُ لَهُ إِذًا لَمَا كَانَ لَهُ إِبْطَالُهُ بِعَفْوِهِ كَمَا لَمْ يَجُزْ عَفْوُ الِابْنِ عَنْ دَمِ أَبِيهِ قَبْلَ وُجُوبِهِ لَهُ. فَفِي ثُبُوتِ مَا ذَكَرْنَا وَانْتِفَاءِ هَذِهِ الْوُجُوهِ الَّتِي وَصَفْنَا مَا يَدُلُّ أَنَّ الْوَاجِبَ عَلَى الْقَاتِلِ عَمْدًا أَوِ الْجَارِحَ عَمْدًا هُوَ الْقِصَاصُ لَا غَيْرُ ذَلِكَ مِنْ دِيَةٍ وَغَيْرِهَا إِلَّا أَنْ يَصْلُحَ هُوَ إِنْ كَانَ حَيًّا أَوْ وَارِثُهُ إِنْ كَانَ مَيْتًا , وَالَّذِي وَجَبَ ذَلِكَ عَلَيْهِ عَلَى شَيْءٍ , فَيَكُونُ الصُّلْحُ جَائِزًا عَلَى مَا اصْطَلَحَا عَلَيْهِ مِنْ دِيَةٍ أَوْ غَيْرِهَا. وَهَذَا قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ، وَأَبِي يُوسُفَ، وَمُحَمَّدٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِمْ أَجْمَعِينَ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বলা হচ্ছে- لو أقسم على الله لأبره (যে আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহ অবশ্যই তার শপথ রক্ষা করেন)। অর্থাৎ তার শপথের মর্যাদা রক্ষার্থে সে যে উদ্দেশ্যে শপথ করেছে, আল্লাহ তাআলা তা পূর্ণ করেন।

হাদিসে বর্ণিত ঘটনার ক্ষেত্রে তাঁর এই কথা- তার দাঁত ভাঙ্গা হবে না এটা কুরআনের বিধান ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ফয়সালা অমান্য করা নয়; বরং আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থার বহিঃপ্রকাশ। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, আল্লাহ তাআলা কোনও সহজ সুরত পয়দা করে দেবেন। সে কারণেই তিনি কসম করে বলছিলেন- তার দাঁত ভাঙ্গা হবে না। আল্লাহ তাআলা তাঁর কসমের মর্যাদা রাখলেন। অপরপক্ষ কিসাস গ্রহণের দাবি ত্যাগ করল এবং অর্থদণ্ড গ্রহণে রাজি হয়ে গেল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আকস্মিক পরিবর্তনে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তারপর তিনি মন্তব্য করলেন إن من عباد الله من لو أقسم على الله لأبره "আল্লাহর এমন কোনও কোনও বান্দাও আছে, যে আল্লাহর নামে কসম করলে আল্লাহ তা পূর্ণ করেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৫০০০ | মুসলিম বাংলা