শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
৮. তালাক - ডিভোর্স অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৬০৩
৬. দাসী যদি স্বাধীন হয়ে যায় আর তার স্বামী স্বাধীন তাহলে আযাদপ্রাপ্তা মহিলার বিয়ে ভঙ্গের ব্যাপারে কোন ইখতিয়ার থাকবে কিনা?
৪৬০৩। সালিহ ইব্ন আব্দুর রহমান (রাহঃ) ….. আব্দুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “যখন বারীরা (রাযিঃ) কে ইখতিয়ার দেয়া হল তখন তার স্বামীকে আমরা দেখেছি মদীনার গলিতে বারীরা (রাযিঃ)-এর পিছনে পিছনে হাটছিল এবং চোখের পানি তার দাড়ি বেয়ে পড়ছিল। তার পক্ষ হয়ে হযরত আব্বাস (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) -এর সাথে কথা বললেন, যেন তাকে বারীরা (রাযিঃ)-এর কাছে সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করেন। তাই রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) বারীরা (রাযিঃ)-কে বললেন, “তােমার স্বামী এবং সন্তানের পিতা (তাকে বরণ করে নাও)” বারীরা (রাযিঃ) বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি আমাকে হুকুম করছেন?’ রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) বললেন, “না, আমি সুপারিশ করছি।” বারীরা (রাযিঃ) বললেন, যদি আপনি আমার কাছে তার সম্বন্ধে সুপারিশ পেশ করেন তাহলে তার প্রতি আমার কোন প্রয়ােজন নেই। এভাবে তিনি তাঁর নিজেকে পছন্দ করে নিলেন। তাঁর স্বামীর নাম ছিল মুগীস। বনু মাখযূম গােত্রের মুগীরা বংশের গােলাম ছিলেন।
উলামায়ে কিরাম বলেন, রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) বারীরা (রাযিঃ) কে ইখতিয়ার দিয়েছিলেন, কেননা তার স্বামী ছিলেন গােলাম। আর এ হাদীসটি প্রথমােক্ত অভিমত পােষণকারীদের বিরুদ্ধে দলীল হিসেবে গণ্য। একটি হাদীস অপরটির বিপরীত বর্ণিত হয়েছে। এরূপ হাদীস যদি দেখতে পাওয়া যায় তাহলে এগুলােকে এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে যেন এদের মধ্যে বৈপরিজ না থাকে। এগুলােকে বিপরীত ও পরস্পর বিরােধী হিসেবে গণ্য করা যাবে না। আর এ দু’হাদীসের বর্ণনাকারীগণ আমাদের মতে সত্য ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত, এমনকি তাদের মধ্যে কোন প্রকার সন্দেহ পােষণ করারও অবকাশ নেই। আমাদের উল্লেখিত তত্ত্বটি প্রমাণিত করার পর আমরা বলতে পারি যে, তার সম্বন্ধে একবার বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন গােলাম, আবার বলা হয়েছে তিনি ছিলেন স্বাধীন। তাই বলা যায় তিনি এক অবস্থায় ছিলেন গােলাম আবার অন্য অবস্থায় ছিলেন স্বাধীন। তাতে আরাে প্রমাণিত হয় যে, একটি অবস্থা অন্য একটি অবস্থার পরে দেখা দিয়েছে, আর দাসত্বের পরই আসে স্বাধীনতা, স্বাধীনতার পরে দাসত্ব সাধারণত আসেনা। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা দাসত্বের অবস্থাকে অগ্রগামী এবং স্বাধীনতার অবস্থাকে পশ্চাতগামী মনে করতে পারি। তাই প্রমাণিত হল, যে সময় বারীরা (রাযিঃ) কে ইখতিয়ার দেয়া হয়েছিল সে সময় তার স্বামী ছিলেন স্বাধীন, যদিও তিনি এর পূর্বে গােলাম ছিলেন। এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদীসসমূহে বর্ণনা পাওয়া যায়। আমাদের কাছে যতগুলাে বর্ণনা এসেছে এগুলাে যদি এ কথার উপর ঐক্যমত পােষণ করত যে, তিনি গােলাম ছিলেন তাহলে স্বাধীন হলে যা কিছু নিষেধ ছিল তা নিষেধ হতনা। আর হুকুমও অন্য রকম হত। কেননা রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) থেকে এরূপ বর্ণিত নেই যে, তিনি বলেছেন إنما خيرتها لان زوجها عبد অর্থাৎ আমি বারীরা (রাযিঃ) কে ইখতিয়ার দিয়েছি, কেননা তার স্বামী ছিল গােলাম ! যদি এরকম হত তাহলে বারীরা (রাযিঃ)-এর স্বামী স্বাধীন হলে বারীরা (রাযিঃ)-এর জন্যে ইখতিয়ার দেয়া হতনা। কিন্তু এ ধরনের কিছু বক্তব্য আসেনি। শুধু এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) তাকে ইখতিয়ার দিয়েছেন এবং তার স্বামী ছিল গােলাম। আমরা এটা নিয়ে গবেষণা করলাম যে, স্বাধীন এবং গােলামের হুকুমের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কিনা? এরপর আরাে গবেষণা করলাম, তখন দেখতে পেলাম যে, দাসী তার দাসত্বকালে তার প্রভুর উপর নির্ভরশীল। তিনি তাকে স্বাধীন ব্যক্তির সাথে কিংবা গােলামের সাথে বিবাহ বন্ধনে আব্দ্ধ হতে অনুমতি দেবেন। আমরা এটাও লক্ষ্য করলাম যে, তার মুক্তির পর প্রভুর কোন অধিকার নেই যে, দাসীর বিবাহ বন্ধনকে স্বাধীন কিংবা গােলামের সাথে নবায়ন করতে পারে। আসলে গােলাম ও স্বাধীন স্বামীদের ক্ষেত্রে প্রভুর অধিকার থাকুক বা না থাকুক তাতে কিছু আসে যায় না। এজন্যই আমরা লক্ষ্য করছি যে, গােলামের সাথে প্রভু কর্তৃক দাসীকে বিয়ে দেয়ার পর যদি তাকে আযাদ করে দেয়া হয় তাহলে নিকাহ্ বাতিল করার ব্যাপারে তার ইখতিয়ার অর্জিত হয়। অনুরূপভাবে স্বাধীনের সাথে বিয়ে দেয়ার পর যদি তাকে আযাদ করে দেয়া হয় তাহলে বর্ণিত কারণ অনুসরণে সে তার নিকাহ্ বাতিল করার অধিকার অর্জন করে। আর এটাই ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ), ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর অভিমত। এ সম্পর্কেও হাদীস পাওয়া যায়, যা নিম্নে বর্ণনা হলঃ
উলামায়ে কিরাম বলেন, রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) বারীরা (রাযিঃ) কে ইখতিয়ার দিয়েছিলেন, কেননা তার স্বামী ছিলেন গােলাম। আর এ হাদীসটি প্রথমােক্ত অভিমত পােষণকারীদের বিরুদ্ধে দলীল হিসেবে গণ্য। একটি হাদীস অপরটির বিপরীত বর্ণিত হয়েছে। এরূপ হাদীস যদি দেখতে পাওয়া যায় তাহলে এগুলােকে এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে যেন এদের মধ্যে বৈপরিজ না থাকে। এগুলােকে বিপরীত ও পরস্পর বিরােধী হিসেবে গণ্য করা যাবে না। আর এ দু’হাদীসের বর্ণনাকারীগণ আমাদের মতে সত্য ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত, এমনকি তাদের মধ্যে কোন প্রকার সন্দেহ পােষণ করারও অবকাশ নেই। আমাদের উল্লেখিত তত্ত্বটি প্রমাণিত করার পর আমরা বলতে পারি যে, তার সম্বন্ধে একবার বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন গােলাম, আবার বলা হয়েছে তিনি ছিলেন স্বাধীন। তাই বলা যায় তিনি এক অবস্থায় ছিলেন গােলাম আবার অন্য অবস্থায় ছিলেন স্বাধীন। তাতে আরাে প্রমাণিত হয় যে, একটি অবস্থা অন্য একটি অবস্থার পরে দেখা দিয়েছে, আর দাসত্বের পরই আসে স্বাধীনতা, স্বাধীনতার পরে দাসত্ব সাধারণত আসেনা। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা দাসত্বের অবস্থাকে অগ্রগামী এবং স্বাধীনতার অবস্থাকে পশ্চাতগামী মনে করতে পারি। তাই প্রমাণিত হল, যে সময় বারীরা (রাযিঃ) কে ইখতিয়ার দেয়া হয়েছিল সে সময় তার স্বামী ছিলেন স্বাধীন, যদিও তিনি এর পূর্বে গােলাম ছিলেন। এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদীসসমূহে বর্ণনা পাওয়া যায়। আমাদের কাছে যতগুলাে বর্ণনা এসেছে এগুলাে যদি এ কথার উপর ঐক্যমত পােষণ করত যে, তিনি গােলাম ছিলেন তাহলে স্বাধীন হলে যা কিছু নিষেধ ছিল তা নিষেধ হতনা। আর হুকুমও অন্য রকম হত। কেননা রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) থেকে এরূপ বর্ণিত নেই যে, তিনি বলেছেন إنما خيرتها لان زوجها عبد অর্থাৎ আমি বারীরা (রাযিঃ) কে ইখতিয়ার দিয়েছি, কেননা তার স্বামী ছিল গােলাম ! যদি এরকম হত তাহলে বারীরা (রাযিঃ)-এর স্বামী স্বাধীন হলে বারীরা (রাযিঃ)-এর জন্যে ইখতিয়ার দেয়া হতনা। কিন্তু এ ধরনের কিছু বক্তব্য আসেনি। শুধু এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) তাকে ইখতিয়ার দিয়েছেন এবং তার স্বামী ছিল গােলাম। আমরা এটা নিয়ে গবেষণা করলাম যে, স্বাধীন এবং গােলামের হুকুমের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কিনা? এরপর আরাে গবেষণা করলাম, তখন দেখতে পেলাম যে, দাসী তার দাসত্বকালে তার প্রভুর উপর নির্ভরশীল। তিনি তাকে স্বাধীন ব্যক্তির সাথে কিংবা গােলামের সাথে বিবাহ বন্ধনে আব্দ্ধ হতে অনুমতি দেবেন। আমরা এটাও লক্ষ্য করলাম যে, তার মুক্তির পর প্রভুর কোন অধিকার নেই যে, দাসীর বিবাহ বন্ধনকে স্বাধীন কিংবা গােলামের সাথে নবায়ন করতে পারে। আসলে গােলাম ও স্বাধীন স্বামীদের ক্ষেত্রে প্রভুর অধিকার থাকুক বা না থাকুক তাতে কিছু আসে যায় না। এজন্যই আমরা লক্ষ্য করছি যে, গােলামের সাথে প্রভু কর্তৃক দাসীকে বিয়ে দেয়ার পর যদি তাকে আযাদ করে দেয়া হয় তাহলে নিকাহ্ বাতিল করার ব্যাপারে তার ইখতিয়ার অর্জিত হয়। অনুরূপভাবে স্বাধীনের সাথে বিয়ে দেয়ার পর যদি তাকে আযাদ করে দেয়া হয় তাহলে বর্ণিত কারণ অনুসরণে সে তার নিকাহ্ বাতিল করার অধিকার অর্জন করে। আর এটাই ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ), ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর অভিমত। এ সম্পর্কেও হাদীস পাওয়া যায়, যা নিম্নে বর্ণনা হলঃ
4603 - حَدَّثَنَا صَالِحُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ , قَالَ: ثنا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ , قَالَ: ثنا هُشَيْمٌ , قَالَ أَخْبَرَنَا خَالِدٌ , عَنْ عِكْرِمَةَ , " عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ: لَمَّا خُيِّرَتْ بَرِيرَةُ رَأَيْنَا زَوْجَهَا يَتْبَعُهَا فِي سِكَكِ الْمَدِينَةِ وَدُمُوعُهُ تَسِيلُ عَلَى لِحْيَتِهِ. [ص:83] فَكَلَّمَ لَهُ الْعَبَّاسُ , النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , أَنْ يَطْلُبَ إِلَيْهَا , فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " زَوْجُكِ وَأَبُو وَلَدِكِ؟ فَقَالَتْ: أَتَأْمُرُنِي بِهِ يَا رَسُولَ اللهِ؟ فَقَالَ: «إِنَّمَا أَنَا شَافِعٌ» قَالَتْ: إِنْ كُنْتَ شَافِعًا , فَلَا حَاجَةَ لِي فِيهِ , وَاخْتَارَتْ نَفْسَهَا , وَكَانَ يُقَالُ لَهُ مُغِيثٌ , وَكَانَ عَبْدًا لِآلِ الْمُغِيرَةِ مِنْ بَنِي مَخْزُومٍ " قَالُوا: فَإِنَّمَا خَيَّرَهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , مِنْ أَجْلِ أَنَّ زَوْجَهَا كَانَ عَبْدًا. فَكَانَ مِنَ الْحُجَّةِ عَلَيْهِمْ لِأَهْلِ الْمَقَالَةِ الْأُولَى أَنَّ أَوْلَى الْأَشْيَاءِ بِنَا - إِذَا جَاءَتِ الْآثَارُ هَكَذَا , فَوَجَدْنَا السَّبِيلَ إِلَى أَنْ نَحْمِلَهَا عَلَى غَيْرِ طَرِيقِ التَّضَادِّ - أَنْ نَحْمِلَهَا عَلَى ذَلِكَ , وَلَا نَحْمِلُهَا عَلَى التَّضَادِّ وَالتَّكَاذُبِ , وَيَكُونُ حَالُ رُوَاتِهَا - عِنْدَنَا - عَلَى الصِّدْقِ وَالْعَدَالَةِ فِيمَا رَوَوْا , حَتَّى لَا نَجِدَ بُدًّا مِنْ أَنْ نَحْمِلَهَا عَلَى خِلَافِ ذَلِكَ. فَلَمَّا ثَبَتَ أَنَّ مَا ذَكَرْنَا كَذَلِكَ - وَكَانَ زَوْجُ بَرِيرَةَ قَدْ قِيلَ فِيهِ: إِنَّهُ كَانَ عَبْدًا , وَقِيلَ فِيهِ: إِنَّهُ كَانَ حُرًّا - جَعَلْنَاهُ عَلَى أَنَّهُ قَدْ كَانَ عَبْدًا فِي حَالٍ , حُرًّا فِي حَالٍ أُخْرَى. فَثَبَتَ بِذَلِكَ تَأَخُّرُ إِحْدَى الْحَالَتَيْنِ عَنِ الْأُخْرَى فَكَانَ الرِّقُّ , قَدْ يَكُونُ بَعْدَهُ الْحُرِّيَّةُ , وَالْحُرِّيَّةُ لَا يَكُونُ بَعْدَهَا رِقٌّ فَلَمَّا كَانَ ذَلِكَ كَذَلِكَ , جَعَلْنَا حَالَ الْعُبُودِيَّةِ مُتَقَدِّمَةً , وَحَالَ الْحُرِّيَّةِ مُتَأَخِّرَةً. فَثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّهُ كَانَ حُرًّا فِي وَقْتِ مَا خُيِّرَتْ بَرِيرَةُ , عَبْدًا قَبْلَ ذَلِكَ , هَكَذَا تَصْحِيحُ الْآثَارِ فِي هَذَا الْبَابِ وَلَوِ اتَّفَقَتِ الرِّوَايَاتُ كُلُّهَا - عِنْدَنَا - عَلَى أَنَّهُ كَانَ عَبْدًا , لَمَا كَانَ فِي ذَلِكَ مَا يَنْفِي أَنْ يَكُونَ إِذَا كَانَ حُرًّا , زَالَ حُكْمُهُ عَنْ ذَلِكَ , لِأَنَّهُ لَمْ يَجِئْ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ «إِنَّمَا خَيَّرْتُهَا لِأَنَّ زَوْجَهَا عَبْدٌ» وَلَوْ كَانَ ذَلِكَ كَذَلِكَ , لَانْتَفَى أَنْ يَكُونَ لَهَا خِيَارٌ إِذَا كَانَ زَوْجُهَا حُرًّا. فَلَمَّا لَمْ يَجِئْ مِنْ ذَلِكَ شَيْءٌ , وَجَاءَ عَنْهُ أَنَّهُ خَيَّرَهَا , وَكَانَ زَوْجُهَا عَبْدًا - نَظَرْنَا - هَلْ يَفْتَرِقُ فِي ذَلِكَ حُكْمُ الْحُرِّ وَحُكْمُ الْعَبْدِ؟ فَنَظَرْنَا فِي ذَلِكَ , فَرَأَيْنَا الْأَمَةَ فِي حَالِ رِقِّهَا لِمَوْلَاهَا , أَنْ يَعْقِدَ النِّكَاحَ عَلَيْهَا لِلْحُرِّ وَالْعَبْدِ , وَرَأَيْنَاهَا بَعْدَمَا تَعْتِقُ , لَيْسَ لَهُ أَنْ يَسْتَأْنِفَ عَلَيْهَا عَقْدَ نِكَاحٍ لِحُرٍّ وَلَا لِعَبْدٍ , فَاسْتَوَى حُكْمُ مَا إِلَى الْمَوْلَى فِي الْعَبِيدِ وَالْأَحْرَارِ وَمَا لَيْسَ إِلَيْهِ فِي الْعَبِيدِ وَالْأَحْرَارِ فِي ذَلِكَ فَلَمَّا كَانَ ذَلِكَ كَذَلِكَ , وَرَأَيْنَاهَا إِذْ أُعْتِقَتْ بَعْدَ عَقْدِ مَوْلَاهَا نِكَاحَ الْعَبْدِ عَلَيْهَا يَكُونُ لَهَا الْخِيَارُ فِي حِلِّ النِّكَاحِ عَلَيْهَا , كَانَ كَذَلِكَ فِي الْحُرِّ , إِذَا أُعْتِقَتْ يَكُونُ لَهَا حِلُّ نِكَاحِهِ عَنْهَا , قِيَاسًا وَنَظَرًا عَلَى مَا بَيَّنَّا مِنْ ذَلِكَ. وَهَذَا قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ وَأَبِي يُوسُفَ , وَمُحَمَّدٍ , رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِمْ أَجْمَعِينَ. [ص:84] وَقَدْ رُوِيَ ذَلِكَ أَيْضًا
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত বারীরা রাযি. একজন বিখ্যাত মহিলা সাহাবী। তিনি এককালে দাসীর জীবন যাপন করেছেন। পরে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. তাঁর মালিকের কাছে তাঁর মূল্য পরিশোধ করে তাঁকে আযাদ করে দেন। মুক্তিলাভের আগেই তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। তাঁর স্বামীর নাম মুগীছ। কেউ কেউ মু'আত্তিব বলেছেন। তিনি ছিলেন কোনও এক গোত্রের গোলাম এবং ছিলেন সহজ-সরল এক কৃষ্ণাঙ্গ । অপরদিকে হযরত বারীরা রাযি. ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতি ও সুন্দরী। হযরত মুগীছ রাযি. তাঁকে বেজায় ভালোবাসতেন।
দাসী থাকা অবস্থায় যদি কোনও নারীর বিবাহ হয় এবং তার স্বামীও দাস হয়, তবে মুক্তিলাভ করার পর শরীআতের পক্ষ থেকে সেই নারীর নিজ বিবাহ বহাল রাখা না রাখার এখতিয়ার লাভ হয়। তো উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. যখন বারীরা রাযি.-কে মুক্তিদান করলেন, তখন তাঁরও সেই এখতিয়ার লাভ হল। সেমতে তিনি তাঁর স্বামীকে পরিত্যাগ করলেন। এতে হযরত মুগীছ রাযি. ভীষণ শোকার্ত হয়ে পড়েন। তিনি কেঁদে কেঁদে দিন কাটাতে থাকেন। তিনি একান্তমনে কামনা করছিলেন যেন বারীরা তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং তাঁকে স্বামী হিসেবে পুনরায় গ্রহণ করে নেন। কিন্তু বারীরা রাযি. তাঁর সিদ্ধান্তের অনড়।
হযরত মুগীছ রাযি.-এর শোকার্ত অবস্থা দেখে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দয়া হয়। সুতরাং তিনি তাঁকে ফেরত গ্রহণের জন্য বারীরা রাযি.-এর কাছে সুপারিশ করলেন। সে কথাই এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তিনি হযরত বারীরা রাযি.-কে বললেন পুনরায় গ্রহণ করতে।
এ কথাটির মধ্যে পরোক্ষভাবে আদেশের অর্থ নিহিত রয়েছে। তাই হযরত বারীরা রাযি. নিশ্চিত হতে চাইলেন যে, এটা তাঁর আদেশ কি না। কেননা আদেশ হলে তিনি তা মানতে বাধ্য। নবীর আদেশ অমান্য করার কোনও এখতিয়ার কারও থাকে না। হযরত বারীরা রাযি.-এর তা জানা ছিল। সুতরাং তিনি প্রশ্ন করলেন- (ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি আমাকে হুকুম করছেন)? অর্থাৎ আপনি কি তাকে পুনরায় স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে নেওয়ার জন্য আমাকে আদেশ করছেন, যা মানা আমার জন্য অবশ্যকর্তব্য? যদি তাই হয়, ব্যস তবে আমার কোনও কথা নেই, আমি তাকে পুনরায় গ্রহণ করে নেব।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-(আমি কেবল সুপারিশই করছি)। অর্থাৎ এটা অবশ্যপালনীয় আদেশ নয়; বরং সুপারিশ। এটা রাখা ও না রাখা তোমার এখতিয়ার। না রাখলে তোমার কোনও গুনাহ হবে না। সুতরাং হযরত বারীরা রাযি. হযরত মুগীছ রাযি.-কে পুনরায় গ্রহণ না করাকেই বেছে নিলেন । তিনি সুপারিশ রক্ষা করলেন না। বললেন- لا حاجة لي فيه (তাকে আমার প্রয়োজন নেই)। অর্থাৎ তাঁকে পুনরায় গ্রহণ দ্বারা আমার প্রয়োজন পূরণ হবে না। তাঁর প্রতি যেহেতু আমার মন নেই, তাই ফেরত গ্রহণ করলে আমাদের জীবন শান্তিপূর্ণ হবে বলে মনে হয় না। সুতরাং তিনি সুপারিশ গ্রহণ করতে না পারার ওজর পেশ করলেন। বোঝা গেল সুপারিশ সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক বিষয়। যার কাছে সুপারিশ করা হয়, তার তা রাখা ও না রাখা উভয়েরই এখতিয়ার থাকে। এমনকি বড় ব্যক্তিও যদি তার অধীন বা সাধারণ কারও কাছে সুপারিশ করে, তখনও সে এখতিয়ার আরোপের অধিকার তার আছে। চাইলে সে তার সুপারিশ রাখতেও পারে, নাও রাখতে পারে। এটা বড়র সঙ্গে ছোটর বেআদবী বলে গণ্য হবে না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর এক সাধারণ উম্মতের পক্ষ থেকে তাঁর সুপারিশ গ্রহণ না করাকে বেআদবীরূপে নেননি। তাঁর কাছ থেকে আমাদের এ মহত্ত্বও শেখার রয়েছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছের মধ্যে শিক্ষণীয় আছে অনেক কিছু। এখানে তা থেকে কয়েকটি উল্লেখ করা যাচ্ছে।
ক. অন্যের বিপদ ও সংকট এবং দুঃখ-কষ্টে সহমর্মিতা প্রকাশ করা চাই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মুগীছ রাযি.-এর প্রতি তাই করেছেন।
খ. কারও শোক ও দুঃখ নিবারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা যার আছে, তার কাছে সেই ব্যক্তির পক্ষে সুপারিশ করা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত, যেমন তিনি মুগীছ রাযি.-এর পক্ষে বারীরা রাযি.-এর কাছে সুপারিশ করেছেন।
গ. সুপারিশের ভাষা হওয়া চাই কোমল ও মনোরঞ্জনমূলক।
ঘ. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ভালোবাসা থাকা-নাথাকা আল্লাহপ্রদত্ত বিষয়। এ জন্য কারও নিন্দা করা চলে না, যেহেতু এটা কারও ইচ্ছাধীন নয়।
ঙ. স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা প্রকাশ দূষণীয় নয়।
চ. কোনও স্ত্রী তার স্বামীকে মন দিয়ে গ্রহণ করে নিতে না পারলে অভিভাবকের তাকে তার ঘর করতে বাধ্য করা উচিত নয়।
ছ. অনুরূপ যে স্ত্রী তার স্বামীকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে, তাকে স্বামী থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা বাঞ্ছনীয় নয়।
জ. বড় ব্যক্তি তার অধীন বা সাধারণ কারও কাছে সুপারিশ করলে তা মানা বাধ্যতামূলক হয়ে যায় না।
ঝ. সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করা হলে সুপারিশকারীর ব্যথিত হওয়া উচিত নয়।
দাসী থাকা অবস্থায় যদি কোনও নারীর বিবাহ হয় এবং তার স্বামীও দাস হয়, তবে মুক্তিলাভ করার পর শরীআতের পক্ষ থেকে সেই নারীর নিজ বিবাহ বহাল রাখা না রাখার এখতিয়ার লাভ হয়। তো উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. যখন বারীরা রাযি.-কে মুক্তিদান করলেন, তখন তাঁরও সেই এখতিয়ার লাভ হল। সেমতে তিনি তাঁর স্বামীকে পরিত্যাগ করলেন। এতে হযরত মুগীছ রাযি. ভীষণ শোকার্ত হয়ে পড়েন। তিনি কেঁদে কেঁদে দিন কাটাতে থাকেন। তিনি একান্তমনে কামনা করছিলেন যেন বারীরা তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং তাঁকে স্বামী হিসেবে পুনরায় গ্রহণ করে নেন। কিন্তু বারীরা রাযি. তাঁর সিদ্ধান্তের অনড়।
হযরত মুগীছ রাযি.-এর শোকার্ত অবস্থা দেখে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দয়া হয়। সুতরাং তিনি তাঁকে ফেরত গ্রহণের জন্য বারীরা রাযি.-এর কাছে সুপারিশ করলেন। সে কথাই এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তিনি হযরত বারীরা রাযি.-কে বললেন পুনরায় গ্রহণ করতে।
এ কথাটির মধ্যে পরোক্ষভাবে আদেশের অর্থ নিহিত রয়েছে। তাই হযরত বারীরা রাযি. নিশ্চিত হতে চাইলেন যে, এটা তাঁর আদেশ কি না। কেননা আদেশ হলে তিনি তা মানতে বাধ্য। নবীর আদেশ অমান্য করার কোনও এখতিয়ার কারও থাকে না। হযরত বারীরা রাযি.-এর তা জানা ছিল। সুতরাং তিনি প্রশ্ন করলেন- (ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি আমাকে হুকুম করছেন)? অর্থাৎ আপনি কি তাকে পুনরায় স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে নেওয়ার জন্য আমাকে আদেশ করছেন, যা মানা আমার জন্য অবশ্যকর্তব্য? যদি তাই হয়, ব্যস তবে আমার কোনও কথা নেই, আমি তাকে পুনরায় গ্রহণ করে নেব।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-(আমি কেবল সুপারিশই করছি)। অর্থাৎ এটা অবশ্যপালনীয় আদেশ নয়; বরং সুপারিশ। এটা রাখা ও না রাখা তোমার এখতিয়ার। না রাখলে তোমার কোনও গুনাহ হবে না। সুতরাং হযরত বারীরা রাযি. হযরত মুগীছ রাযি.-কে পুনরায় গ্রহণ না করাকেই বেছে নিলেন । তিনি সুপারিশ রক্ষা করলেন না। বললেন- لا حاجة لي فيه (তাকে আমার প্রয়োজন নেই)। অর্থাৎ তাঁকে পুনরায় গ্রহণ দ্বারা আমার প্রয়োজন পূরণ হবে না। তাঁর প্রতি যেহেতু আমার মন নেই, তাই ফেরত গ্রহণ করলে আমাদের জীবন শান্তিপূর্ণ হবে বলে মনে হয় না। সুতরাং তিনি সুপারিশ গ্রহণ করতে না পারার ওজর পেশ করলেন। বোঝা গেল সুপারিশ সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক বিষয়। যার কাছে সুপারিশ করা হয়, তার তা রাখা ও না রাখা উভয়েরই এখতিয়ার থাকে। এমনকি বড় ব্যক্তিও যদি তার অধীন বা সাধারণ কারও কাছে সুপারিশ করে, তখনও সে এখতিয়ার আরোপের অধিকার তার আছে। চাইলে সে তার সুপারিশ রাখতেও পারে, নাও রাখতে পারে। এটা বড়র সঙ্গে ছোটর বেআদবী বলে গণ্য হবে না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর এক সাধারণ উম্মতের পক্ষ থেকে তাঁর সুপারিশ গ্রহণ না করাকে বেআদবীরূপে নেননি। তাঁর কাছ থেকে আমাদের এ মহত্ত্বও শেখার রয়েছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছের মধ্যে শিক্ষণীয় আছে অনেক কিছু। এখানে তা থেকে কয়েকটি উল্লেখ করা যাচ্ছে।
ক. অন্যের বিপদ ও সংকট এবং দুঃখ-কষ্টে সহমর্মিতা প্রকাশ করা চাই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মুগীছ রাযি.-এর প্রতি তাই করেছেন।
খ. কারও শোক ও দুঃখ নিবারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা যার আছে, তার কাছে সেই ব্যক্তির পক্ষে সুপারিশ করা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত, যেমন তিনি মুগীছ রাযি.-এর পক্ষে বারীরা রাযি.-এর কাছে সুপারিশ করেছেন।
গ. সুপারিশের ভাষা হওয়া চাই কোমল ও মনোরঞ্জনমূলক।
ঘ. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ভালোবাসা থাকা-নাথাকা আল্লাহপ্রদত্ত বিষয়। এ জন্য কারও নিন্দা করা চলে না, যেহেতু এটা কারও ইচ্ছাধীন নয়।
ঙ. স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা প্রকাশ দূষণীয় নয়।
চ. কোনও স্ত্রী তার স্বামীকে মন দিয়ে গ্রহণ করে নিতে না পারলে অভিভাবকের তাকে তার ঘর করতে বাধ্য করা উচিত নয়।
ছ. অনুরূপ যে স্ত্রী তার স্বামীকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে, তাকে স্বামী থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা বাঞ্ছনীয় নয়।
জ. বড় ব্যক্তি তার অধীন বা সাধারণ কারও কাছে সুপারিশ করলে তা মানা বাধ্যতামূলক হয়ে যায় না।
ঝ. সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করা হলে সুপারিশকারীর ব্যথিত হওয়া উচিত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
