শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
৫. রোযার অধ্যায়
হাদীস নং: ৩২৬৬
আশুরা দিবসের সিয়াম পালন প্রসঙ্গে
৩২৬৬। ইবন আবী দাউদ (রাহঃ) ..... রুবাই বিন্ত মুআওবিয (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি তাঁকে আশূরা দিবসের সিয়াম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বিভিন্ন এলাকাকায় লোকদেরকে এই বলে প্রেরণ করেন, যে ব্যক্তি সিয়াম পালনকারী অবস্থায় সকাল করবে সে যেন তার সিয়ামের উপর বহাল থাকে, আর যে ব্যক্তি সিয়াম ভঙ্গকারী অবস্থায় সকল করবে সে যেন দিনের শেষ ভাগ পর্যন্ত সাওম পূর্ণ করে। সুতরাং এরপর থেকে আমরা সর্বদা এর সিয়াম পালন করতাম এবং আমাদের ছোট শিশুদেরকে এর সিয়াম পালন করাতাম। আর আমরা তাদের জন্য রংিন পশমের খেলনা প্রস্তুত করে রাখতাম। তারা যখন আমাদের কাছে আহার চাইত তখন তাদেরকে (আহার থেকে ভুলাবার নিমিত্ত) খেলনা প্রদান করতাম।
এই হাদীসে ব্যক্ত হয়েছে যে, তাঁরা তাঁদের শিশুদেরকে আহার থেকে বিরত রাখতেন এবং শিশুদেরকে দিয়ে আশুরা দিবসের সিয়াম পালন করাতেন। বস্তুত এটি আমাদের মতে না জায়িয। যেহেতু শিশুরা সিয়াম, সালাত ইত্যাদি ইবাদত সম্পাদনের আওতাভুক্ত নয়। আর তারা এর আওতাভুক্ত হবেই বা কিভাবে? অথচ আল্লাহ্ তা'আলা তাদের থেকে কলমকে উঠিয়ে নিয়েছেন, (দায়িত্বমুক্ত করেছেন) ঃ
এই হাদীসে ব্যক্ত হয়েছে যে, তাঁরা তাঁদের শিশুদেরকে আহার থেকে বিরত রাখতেন এবং শিশুদেরকে দিয়ে আশুরা দিবসের সিয়াম পালন করাতেন। বস্তুত এটি আমাদের মতে না জায়িয। যেহেতু শিশুরা সিয়াম, সালাত ইত্যাদি ইবাদত সম্পাদনের আওতাভুক্ত নয়। আর তারা এর আওতাভুক্ত হবেই বা কিভাবে? অথচ আল্লাহ্ তা'আলা তাদের থেকে কলমকে উঠিয়ে নিয়েছেন, (দায়িত্বমুক্ত করেছেন) ঃ
3266 - حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي دَاوُدَ , قَالَ: ثنا الْحِمَّانِيُّ , قَالَ: ثنا يُوسُفُ بْنُ يَزِيدَ , قَالَ: ثنا خَالِدُ بْنُ ذَكْوَانَ , عَنِ الرُّبَيِّعِ بِنْتِ مُعَوِّذٍ , قَالَ: سَأَلْتُهَا عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ. فَقَالَتْ: بَعَثَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْأَمْصَارِ «مَنْ كَانَ أَصْبَحَ صَائِمًا فَلْيَقُمْ عَلَى صَوْمِهِ , وَمَنْ كَانَ أَصْبَحَ مُفْطِرًا فَلْيُتِمَّ آخِرَ يَوْمِهِ» فَلَمْ نَزَلْ نَصُومُهُ بَعْدُ وَنُصَوِّمُهُ صِبْيَانَنَا وَهُمْ صِغَارٌ وَنَتَّخِذُ لَهُمُ اللُّعْبَةَ مِنَ الْعِهْنِ ; فَإِذَا سَأَلُونَا الطَّعَامَ أَعْطَيْنَاهُمُ اللُّعْبَةَ فَفِي هَذَا الْحَدِيثِ أَنَّهُمْ كَانُوا يَمْنَعُونَ صِبْيَانَهُمُ الطَّعَامَ , وَيُصَوِّمُونَهُمْ يَوْمَ عَاشُورَاءَ. وَهَذَا، عِنْدَنَا غَيْرُ جَائِزٍ , لِأَنَّ الصِّبْيَانَ غَيْرُ مُتَعَبَّدِينَ بِصِيَامٍ وَلَا بِصَلَاةٍ , وَلَا بِغَيْرِ ذَلِكَ. وَكَيْفَ يَكُونُونَ مُتَعَبَّدِينَ بِشَيْءٍ مِنْ ذَلِكَ , وَقَدْ رَفَعَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ عَنْهُمُ الْقَلَمَ؟
হাদীসের ব্যাখ্যা:
প্রত্যেক ঈমানদারের কর্তব্য হলো- প্রথমত নিজের জীবনকে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে পরিচালিত করা। কিন্তু পরকালে মুক্তির জন্য এটাই যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে নিজের পরিবার, সমাজ ও প্রতিবেশীদের হিদায়াতের পথে পরিচালিত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষত নিজের পরিবার ও অধীন লোকেরা যাতে জান্নাতের পথে চলতে পারে, পরিবারপ্রধানের উচিত সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি নিবদ্ধ করা।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো (জাহান্নামের) আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর...।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)
রমাজানের মাহাত্ম্য অর্জনে ব্যক্তিগত ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি পারিবারিক পরিমণ্ডলেও পবিত্র আবহ সৃষ্টি করা আবশ্যক। রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরিবারকে তাহাজ্জুদে উদ্বুদ্ধ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রমজানের শেষ দশক এলে রাসুল (সা.) কোমর শক্ত করে বেঁধে নিতেন, রাত জেগে থাকতেন এবং পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৪)
তাই প্রত্যেক মা-বাবার দায়িত্ব হলো সন্তানকে পর্যাপ্ত ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া। পাশাপাশি আমল ও ইবাদতের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে তোলা। মহান আল্লাহ ইবাদতের ওপর সন্তানদের লালন-পালনের দায়িত্ব মা-বাবার ওপর অর্পণ করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম তাঁদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকে নামাজ-রোজায় অভ্যস্ত করাতেন, যেন তারা এ মহান ইবাদত পালনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সন্তানকে উত্তম গুণাবলি ও ভালো কাজে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য মহানবী (সা.) বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। নামাজ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘তোমরা সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজ আদায়ের আদেশ করো। এ ব্যাপারে অবহেলা করলে ১০ বছর বয়সে তাদের প্রহার করো এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)
শিশুদের রোজার অভ্যাস গড়ে তোলার ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে : রুবাই বিনতে মুআব্বিজ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আশুরার সকালে আল্লাহর রাসুল (সা.) আনসারদের সব পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি সাওম পালন করেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে, আর যার সাওম অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন সওম পূর্ণ করে। রুবায়্যি (রা.) বলেন, পরবর্তী সময় আমরা ওই দিন সাওম পালন করতাম এবং আমাদের শিশুদের সাওম পালন করাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ওই খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত। (বুখারি, হাদিস : ১৯৬০)
ইমাম বুখারি (রহ.) সহিহ বুখারি শরিফে একটি অনুচ্ছেদের নামকরণ করেছেন—‘সাওমুস সিবয়ান’ বা শিশুদের রোজা। এ অনুচ্ছেদের অধীনে তিনি ওমর (রা.)-এর একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ওমর (রা.) রমজান মাসে এক নেশাগ্রস্ত লোককে বলেছিলেন, ‘তোমার জন্য আফসোস! আমাদের ছোট শিশুরা পর্যন্ত রোজাদার! (অথচ তুমি রোজা রাখো না)।’ এরপর ওমর (রা.) তাকে প্রহার করেন। এর ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) লিখেছেন, ইবনে সিরিন, ইমাম জুহুরি ও ইমাম শাফেয়ি (রহ.)সহ পূর্ববর্তী বহু মনীষী শিশুদের রোজায় অভ্যস্ত করানোকে মুস্তাহাব ইবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর মতে, নামাজের মতো সাত থেকে ১০ বছরের শিশুদের রোজায় অভ্যস্ত করানো যায়। (ফাতহুল বারি : ৫/৩)
#সংগৃহীত
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো (জাহান্নামের) আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর...।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)
রমাজানের মাহাত্ম্য অর্জনে ব্যক্তিগত ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি পারিবারিক পরিমণ্ডলেও পবিত্র আবহ সৃষ্টি করা আবশ্যক। রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরিবারকে তাহাজ্জুদে উদ্বুদ্ধ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রমজানের শেষ দশক এলে রাসুল (সা.) কোমর শক্ত করে বেঁধে নিতেন, রাত জেগে থাকতেন এবং পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৪)
তাই প্রত্যেক মা-বাবার দায়িত্ব হলো সন্তানকে পর্যাপ্ত ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া। পাশাপাশি আমল ও ইবাদতের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে তোলা। মহান আল্লাহ ইবাদতের ওপর সন্তানদের লালন-পালনের দায়িত্ব মা-বাবার ওপর অর্পণ করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম তাঁদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকে নামাজ-রোজায় অভ্যস্ত করাতেন, যেন তারা এ মহান ইবাদত পালনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সন্তানকে উত্তম গুণাবলি ও ভালো কাজে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য মহানবী (সা.) বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। নামাজ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘তোমরা সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজ আদায়ের আদেশ করো। এ ব্যাপারে অবহেলা করলে ১০ বছর বয়সে তাদের প্রহার করো এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)
শিশুদের রোজার অভ্যাস গড়ে তোলার ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে : রুবাই বিনতে মুআব্বিজ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আশুরার সকালে আল্লাহর রাসুল (সা.) আনসারদের সব পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি সাওম পালন করেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে, আর যার সাওম অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন সওম পূর্ণ করে। রুবায়্যি (রা.) বলেন, পরবর্তী সময় আমরা ওই দিন সাওম পালন করতাম এবং আমাদের শিশুদের সাওম পালন করাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ওই খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত। (বুখারি, হাদিস : ১৯৬০)
ইমাম বুখারি (রহ.) সহিহ বুখারি শরিফে একটি অনুচ্ছেদের নামকরণ করেছেন—‘সাওমুস সিবয়ান’ বা শিশুদের রোজা। এ অনুচ্ছেদের অধীনে তিনি ওমর (রা.)-এর একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ওমর (রা.) রমজান মাসে এক নেশাগ্রস্ত লোককে বলেছিলেন, ‘তোমার জন্য আফসোস! আমাদের ছোট শিশুরা পর্যন্ত রোজাদার! (অথচ তুমি রোজা রাখো না)।’ এরপর ওমর (রা.) তাকে প্রহার করেন। এর ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) লিখেছেন, ইবনে সিরিন, ইমাম জুহুরি ও ইমাম শাফেয়ি (রহ.)সহ পূর্ববর্তী বহু মনীষী শিশুদের রোজায় অভ্যস্ত করানোকে মুস্তাহাব ইবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর মতে, নামাজের মতো সাত থেকে ১০ বছরের শিশুদের রোজায় অভ্যস্ত করানো যায়। (ফাতহুল বারি : ৫/৩)
#সংগৃহীত
