শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৬১০
আন্তর্জাতিক নং: ২৬১১
সালাতে কৃত ভুলের জন্য কথা বলা
২৬১০-২৬১১। আবু বাকরা (রাহঃ) ……. আবু ওয়াইল (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) বলেছেনঃ আমরা সালাতে কথা-বার্তা বলতাম এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করতাম। তারপর আমরা হাবশা থেকে নবী করীম ﷺ এর খেদমতে উপস্থিত হলাম তখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। আমি তাকে সালাম দিলে তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন না। এতে আমি ভাবলাম, কোন ব্যাপার হলো নাকি, না কোন নতুন বিধান নাযিল হয়েছে? রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাত শেষ করলে আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ব্যাপারে কোন কিছু নাজিল হয়েছে না কি? তিনি বললেন, না। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা যখন ইচ্ছা করেন নতুন বিধান নাযিল করেন। (অর্থাৎ সালাতে কথা বলা প্রসঙ্গে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে)।

ইসমাঈল ইবন ইয়াহয়া আল মুযনী (রাহঃ) ....... আসিম (রাহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন এবং এতে বাড়তি বলেছেন যে, নতুন বিষয়ে তিনি ফয়সালা করেছেন, তোমরা সালাতে কথা বলবে না। বস্তুত রাসূলুল্লাহ ﷺ সংবাদ দিয়েছেন যে, আল্লাহ তা'আলা সালাতে অবশ্যই সার্বিকভাবে সব ধরনের কথা বলা রহিত করেছেন; এতে কোন ব্যতিক্রম রাখেন নি।
অতএব এতে বুঝা গেলঃ (সালাতে) সর্বপ্রকারের কথা বলা রহিত করা হয়েছে, যা তারা সালাতে বলতো। আর এটি-ই হচ্ছে, রিওয়ায়াতের দিক থেকে এ অনুচ্ছেদের হাদীসসমূহের সঠিক মর্ম নিরূপণের যথার্থ পন্থা।
ইমাম তাহাবী (রাহঃ) -এর যুক্তিভিত্তিক দলীল বিশ্লেষণ
বস্তুত আলোচ্য বিষয়ে যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণ হচ্ছে, আমরা বেশ কিছু ইবাদাতকে লক্ষ্য করেছি, বান্দাগন এতে প্রবেশ করলে কতিপয় বস্তু থেকে তাদেরকে নিবৃত্ত রাখা হয়। এগুলো থেকে একটি হলো সালাতঃ তাদেরকে এতে কথা বলা এবং এরূপ কার্যাদি থেকে বিরত রাখা হয়, যা তাতে করা হয় না। আরেকটি হলো সিয়ামঃ এটি তাদেরকে স্ত্রী সহবাস ও পানাহার থেকে নিবৃত্ত রাখে। আরেকটি হলো হজ্জ ও উমরাঃ এ দু'টি ইবাদত তাদেরকে স্ত্রী সহবাস, সুগন্ধি ব্যবহার ও বিশেষ পোশাক থেকে বিরত রাখে। আরেকটি হলো ই'তিকাফঃ এটি তাদেরকে স্ত্রী সহবাস ও লেনদেন (কেনাবেচা) থেকে বিরত রাখে। অতএব কেউ যদি নিজে সিয়াম পালন অবস্থায় ভুলে স্ত্রী সহবাস করে অথবা পানাহার করে তাহলে এর বিধান সম্পর্কে বিরোধ আছে। কতক 'আলিম বলেনঃ এটি তাকে তাঁর সিয়াম থেকে বের করবে না (সিয়াম বিনষ্ট হবে না) সেই সমস্ত হাদীসের উপর ভিত্তি করে যা তাঁরা রিওয়ায়াত করেছেন। কতক 'আলিম বলেনঃ এটি তাকে তাঁর সিয়াম থেকে অবশ্যই বের করে দিবে (সিয়াম বিনষ্ট হয়ে যাবে)। আর যে কেউ নিজের হজ্জ অথবা উমরা অথবা ই'তিকাফে ভুলে কিংবা ইচ্ছাকৃত ভাবে স্ত্রী সহবাস করবে, সে এ কারনে এইসব আমল থেকে বের হয়ে যাবে, (অর্থাৎ তাঁর এই সমস্ত আমল বাতিল হয়ে যাবে)। অতএব যখন উক্ত কার্যাদি ইচ্ছাকৃত ভাবে করার কারনে তাকে সেই সমস্ত আমল থেকে বের করে দেয় (বাতিল হয়ে যায়) সেগুলো অনিচ্ছাকৃত ভাবে করলেও তা থেকে তাকে বের করে দিবে (তা বাতিল হয়ে যাবে)। অনুরূপ ভাবে সালাতে ইচ্ছাকৃত ভাবে কথা বলার কারনে সালাত বিনষ্ট হয়ে যায়।
অতএব আমাদের উল্লিখিত বর্ননার ভিত্তিতে যুক্তির দাবি হলোঃ ভুলে কথা বলার কারনেও সালাত বিনষ্ট হয়ে যায় এবং এতে ভুল ও ইচ্চাকৃত উভয় প্রকার কথা বলার বিধান অভিন্ন হিসেবে বিবেচিত হবে। যেমন ভাবে ই'তিকাফ, হজ্জ ও উমরায় ইচ্ছাকৃত ও ভুলে সহবাসের বিধান এক ও অভিন্ন রূপে সাব্যস্ত।
বস্তুত এটি-ই হচ্ছে, এই অনুচ্ছেদের যুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণ এবং হাদীসসমূহের সঠিক মর্ম নির্ধারণে আমাদের যথার্থ বিশ্লেষণ। আর এটি-ই হলো ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ), ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ) এর অভিমত।
প্রশ্নঃ যদি কোন প্রশ্নকারী প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন যে, মু'আবিয়া ইবনুল হাকাম (রাযিঃ) যখন সালাতে কথা বলেন তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ (কথা বলার নিষেধাজ্ঞা আরোপের সাথে) তাকে পুন সালাত আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেন নি কেন?
উত্তরঃ তাঁকে বলা হবে যে, ইতিপূর্বে সালাতে কথা বলার নিষেধাজ্ঞা আরোপ না হওয়ার কারনে তাঁর নিকট কোন দলীল (হুজ্জত) সাব্যস্ত হয় নি। (বরং নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময়-ই দলীল সাব্যস্ত হচ্ছে)। এ কারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে পুন সালাতের নির্দেশ দেন নি। পক্ষান্তরে কেউ যদি সালাতে কথা বলা রহিত হওয়া সম্পর্কিত দলীল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে অনুরূপ (কথা বলা কিংবা সালাত বিনষ্টকারী কাজে লিপ্ত হয়) কাজ করে তাহলে তাঁর জন্য পুনঃ সালাত আদায় করা জরুরী। অথবা এরূপও হতে পারে যে, সম্ভবত রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে পুন সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি তা তাঁর হাদীসে বর্ননা করেন নি।
অপর দিকে একদল 'আলিম বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ ﷺ যুলইয়াদায়নের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার দিনে সিজদা (সাহো) করেননি। এই বিষয়ে রিওয়ায়াত বর্ননা করেছেনঃ
2610 - مَا حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرَةَ , قَالَ: ثنا مُؤَمَّلُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ , قَالَ: ثنا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ , قَالَ: ثنا عَاصِمٌ , عَنْ أَبِي وَائِلٍ , قَالَ: قَالَ عَبْدُ اللهِ: كُنَّا نَتَكَلَّمُ فِي الصَّلَاةِ , وَنَأْمُرُ بِالْحَاجَةِ , فَقَدِمْنَا عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْحَبَشَةِ وَهُوَ يُصَلِّي , فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيَّ , فَأَخَذَنِي مَا قَدُمَ وَمَا حَدَثَ فَلَمَّا قَضَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاتَهُ , قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ , نَزَلَ فِي شَيْءٌ؟ قَالَ: «لَا وَلَكِنَّ اللهَ يُحْدِثُ مِنْ أَمْرِهِ مَا شَاءَ»

2611 - حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ يَحْيَى الْمُزَنِيُّ , قَالَ: ثنا مُحَمَّدُ بْنُ إِدْرِيسَ , قَالَ: ثنا سُفْيَانُ , عَنْ عَاصِمٍ , فَذَكَرَ بِإِسْنَادِهِ مِثْلَهُ , وَزَادَ «وَأَنَّ مِمَّا أَحْدَثَ قَضَى أَنْ لَا تَتَكَلَّمُوا فِي الصَّلَاةِ» فَقَدْ أَخْبَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , أَنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ , قَدْ نَسَخَ الْكَلَامَ فِي الصَّلَاةِ , وَلَمْ يَسْتَثْنِ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا. فَدَلَّ ذَلِكَ عَلَى كُلِّ الْكَلَامِ الَّذِي كَانُوا يَتَكَلَّمُونَ فِي الصَّلَاةِ. فَهَذَا وَجْهُ هَذَا الْبَابِ مِنْ طَرِيقِ تَصْحِيحِ مَعَانِي الْآثَارِ. وَأَمَّا وَجْهُ ذَلِكَ مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ , فَإِنَّا قَدْ رَأَيْنَا أَشْيَاءَ يَدْخُلُ فِيهَا الْعِبَادُ , تَمْنَعُهُمْ مِنْ أَشْيَاءَ. فَمِنْهَا الصَّلَاةُ تَمْنَعُهُمْ مِنَ الْكَلَامِ وَالْأَفْعَالِ الَّتِي لَا تُفْعَلُ فِيهَا. وَمِنْهَا الصِّيَامُ , يَمْنَعُهُمْ مِنَ الْجِمَاعِ وَالطَّعَامِ وَالشَّرَابِ. وَمِنْهَا الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ , يَمْنَعَانِهِمْ مِنَ الْجِمَاعِ وَالطِّيبِ وَاللِّبَاسِ وَمِنْهَا الِاعْتِكَافُ , يَمْنَعُهُمْ مِنَ الْجِمَاعِ وَالتَّصَرُّفِ. فَكَانَ مَنْ جَامَعَ فِي صِيَامِهِ أَوْ أَكَلَ أَوْ شَرِبَ نَاسِيًا مُخْتَلَفًا فِي حُكْمِهِ. فَقَوْمٌ يَقُولُونَ: لَا يُخْرِجُهُ ذَلِكَ مِنْ صِيَامِهِ , تَقْلِيدًا لِآثَارٍ رَوَوْهَا. وَقَوْمٌ يَقُولُونَ: قَدْ أَخْرَجَهُ ذَلِكَ مِنْ صِيَامِهِ , وَكُلُّ مَنْ جَامَعَ فِي حَجَّتِهِ أَوْ عُمْرَتِهِ أَوِ اعْتِكَافِهِ , مُتَعَمِّدًا , أَوْ نَاسِيًا فَقَدْ خَرَجَ بِذَلِكَ مِمَّا كَانَ فِيهِ مِنْ ذَلِكَ. فَكَانَ مَا يُخْرِجُهُ مِنْ هَذِهِ الْأَشْيَاءِ إِذَا فَعَلَ ذَلِكَ مُتَعَمِّدًا , فَهُوَ يُخْرِجُهُ مِنْهَا إِذَا فَعَلَهُ غَيْرَ مُتَعَمِّدٍ , وَكَانَ الْكَلَامُ فِي الصَّلَاةِ يَقْطَعُ الصَّلَاةَ إِذَا كَانَ عَلَى التَّعَمُّدِ كَذَلِكَ. فَالنَّظَرُ، عَلَى مَا ذَكَرْنَا مِنْ ذَلِكَ، أَنْ يَكُونَ أَيْضًا , يَقْطَعُهَا إِذَا كَانَ عَلَى السَّهْوِ , وَيَكُونُ حُكْمُ الْكَلَامِ فِيهَا عَلَى الْعَمْدِ وَالسَّهْوِ سَوَاءً , كَمَا كَانَ حُكْمُ الْجِمَاعِ فِي الِاعْتِكَافِ وَالْعُمْرَةِ , عَلَى الْعَمْدِ وَالسَّهْوِ سَوَاءً. فَهَذَا هُوَ النَّظَرُ أَيْضًا فِي هَذَا الْبَابِ , وَقَدْ وَافَقَ مَا صَحَّحْنَا عَلَيْهِ مَعَانِيَ الْآثَارِ , وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ , وَأَبِي يُوسُفَ , وَمُحَمَّدٍ , رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى. فَإِنْ سَأَلَ سَائِلٌ عَنِ الْمَعْنَى الَّذِي لَهُ , لَمْ يَأْمُرْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُعَاوِيَةَ بْنَ الْحَكَمِ بِإِعَادَةِ الصَّلَاةِ لَمَّا تَكَلَّمَ فِيهَا. قِيلَ لَهُ ذَلِكَ لِأَنَّ الْحُجَّةَ لَمْ تَكُنْ قَامَتْ عِنْدَهُ قَبْلَ ذَلِكَ بِتَحْرِيمِ الْكَلَامِ فِي الصَّلَاةِ , فَلَمْ يَأْمُرْهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِإِعَادَةِ الصَّلَاةِ لِذَلِكَ. فَأَمَّا مَنْ فَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ , بَعْدَ قِيَامِ الْحُجَّةِ , بِنَسْخِ الْكَلَامِ فِي الصَّلَاةِ , فَعَلَيْهِ أَنْ يُعِيدَ الصَّلَاةَ. وَقَدْ يَجُوزُ أَيْضًا أَنْ يَكُونَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , قَدْ أَمَرَهُ بِإِعَادَةِ الصَّلَاةِ , وَلَكِنْ لَمْ يُنْقَلْ ذَلِكَ فِي حَدِيثِهِ. [ص:453] وَقَدْ قَالَ قَوْمٌ: إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , لَمْ يَسْجُدْ يَوْمَ ذِي الْيَدَيْنِ
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান