শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৪৮৫
নামাযের অধ্যায়
মুসাফিরের সালাত
২৪৮৫। আবু বাকরা (রাহঃ) ..... ইব্‌ন শিহাব (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি উরওয়া (রাহঃ)-কে বললাম, আয়েশা (রাযিঃ) যে সফরে চার রাক’আত আদায় করতেন, তা তিনি কিভাবে করতেন ? তিনি বললেন, মিনাতে সালাত পুরো পড়ার ব্যাপারে উসমান (রাযিঃ) যে ব্যাখ্যা করেছেন, অনুরূপ ব্যাখ্যা আয়েশা (রাযিঃ) ও করেছেন।
আর মিনাতে উসমান (রাযিঃ) কর্তৃক সালাত পুরো পড়ার ব্যাপারে তিনি যে ব্যাখ্যা করেছেন তা আমরা পূর্বেই উল্লেখ করে এসেছি। এ বিষয়ে বিশুদ্ধতম ব্যাখ্যা ছিলো এই যে, তিনি ইকামতের (অবস্থান করার) নিয়্যত করার কারণে সালাত পূর্ণরূপে আদায় করেছেন। যদি আয়েশা (রাযিঃ) এ কারণে সালাতকে পুরো পড়ে থাকেন তাহলে হতে পারে সফর অবস্থায় যেখানেই সালাতের সময় হতো তিনি সে স্থানেই ইকামতের নিয়্যত করে ফেলতেন, যাতে করে তাঁর উপর সালাত পুরো পড়া ওয়াজিব হয়ে যেত, একারণে তিনি সালাত পুরো পড়তেন। তাহলে তিনি মুকীমদের বিধানের আওতায় থেকে সালাত পুরো আদায় করতেন, মুসাফিরদের বিধানের আওতায় থেকে নয় ।

একদল আলিম বলেছেনঃ আয়েশা (রাযিঃ) যে এরূপ করতেন, তা এ কারণ ব্যতীত অন্য কারণেও ছিলো। আর তা হচ্ছে- আমি আবু বাকরা (রাহঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আবু উমর (রাহঃ) বলেছেন যে, উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাযিঃ) বলতেন, যে স্থানে আমি অবতরণ করি সেটি আমার মন্‌যিল (বাড়ি), যাতে কিছুক্ষণ অবস্থান করার কারণে সেটিকে তাঁর মন্‌যিল হিসাবে পরিগণিত করতেন এবং সালাতকে পুরো আদায় করতেন।
বস্তুত এ বিশ্লেষণটি আমার নিকট অসাররূপে বিবেচিত। কেননা আয়েশা (রাযিঃ) যদিও মু’মিনদের জননী; কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তো মু’মিনদের পিতা রূপে স্বীকৃত, আর তিনি মু’মিনদের সাথে আয়েশা (রাযিঃ) অপেক্ষা অধিকতর নিকটবর্তী। তিনি যখন কোন মন্‌যিলে অবস্থান করতেন এতে সফরের বিধান থেকে (যাতে সালাতকে কসর পড়া হয়) ইকামতের বিধানের দিকে (যাতে সালাতকে পুরো পড়া হয়) বের হয়ে যেতেন না ।
একদল আলিম বলেছেনঃ কসর সালাত পড়ার ব্যাপারে আয়েশা (রাযিঃ)-এর মাযহাব ছিলো, যে ব্যক্তি সফরের পাথেয় এবং পানির মশক বহন করে সফরের উদ্দেশ্যে বের হয় সে ব্যক্তি কসর আদায় করবে, যা আমরা উসমান (রাযিঃ) থেকে রিওয়ায়াত করে এসেছি। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর ইন্তিকালের পর এরূপ যথেষ্ট সফর করতেন আর এ অর্থেই তিনি সালাত কসর পড়াকে পরিত্যাগ করেছেন। যখন উসমান (রাযিঃ) এবং আয়েশা (রাযিঃ)-এর আমল সংক্রান্ত এ সমস্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ অভিন্ন ও সমপর্যায়ভুক্ত, অতএব সালাত কসর পড়াকে কোন বস্তু অপরিহার্য করে, তা খতিয়ে দেখা আমাদের জন্য নিতান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।
তাহাবী (রাহঃ) এর যুক্তিভিত্তিক দলীল
বস্তুত এ বিষয়ে মৌলিক নীতি হচ্ছে, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, কেউ যদি নিজ বাড়িতে মুকীমরূপে অবস্থান করে তাহলে তার সালাতের বিধান হচ্ছে ইকামতের বিধান, তার এ ইকামত (অবস্থান) ইবাদত কিংবা গুনাহের কারণে হউক, এর কোন কিছুই তার বিধানকে পরিবর্তন করবে না। সালাতকে পুরো আদায় করার বিধান তার উপর শুধুমাত্র ইকামতের দ্বারাই ওয়াজিব, ইবাদত কিংবা গুনাহের সাথে এর কোনরূপ সম্পর্ক নেই। তারপর সে যখন সফর করবে এতে সে ইকামতের বিধান থেকে বের হয়ে যাবে। আর এ বিষয়ে অবশ্যই মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, যা আমরা উল্লেখ করেছি। একদল আলিম বলেছেন, ইবাদত সংশ্লিষ্ট সফর ব্যতীত তার উপর কসর পড়ার বিধান ওয়াজিব হবে না। পক্ষান্তরে অপর একদল আলিম বলেছেন, উভয় অবস্থায়-ই তার জন্য কসর পড়ার বিধান ওয়াজিব হবে।
অতএব যখন ইকামত অবস্থায় সালাত পুরো আদায় করার বিধান তার উপর একমাত্র ইকামতের দ্বারাই আরোপিত হয়, ইবাদত কিংবা গোনাহের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। অনুরূপভাবে কসর করার বিধানও এরূপ হওয়া যুক্তির দাবি যে, সফর অবস্থায় সালাত সংক্ষিপ্ত করা তার উপর একমাত্র সফরের দ্বারা-ই আরোপিত হয়, ইবাদত কিংবা গোনাহের সাথে এর কোন রূপ সম্পর্ক নেই। তাই মুক্তাদি শহরে বা অন্য যে কোন স্থানে থাকুক না কেন, সে মুক্তাদিই থাকে। তাকে সালাতে কসর করতে হবে। এটি-ই হচ্ছে যুক্তিভিত্তিক প্রমাণ এবং অনুসন্ধানমূলক পর্যালোচনা, যা আমরা বর্ণনা এবং বিশ্লেষণ করেছি। এটাই আবু হানীফা (রাহঃ), আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর অভিমত।
كتاب الصلاة
2485 - فَإِنَّ أَبَا بَكْرَةَ حَدَّثَنَا , قَالَ: ثنا رَوْحٌ , قَالَ: ثنا ابْنُ جُرَيْجٍ , قَالَ: أَنَا ابْنُ شِهَابٍ , قَالَ: قُلْتُ لِعُرْوَةِ: مَا كَانَ يَحْمِلُ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا عَلَى أَنْ تُصَلِّيَ فِي السَّفَرِ أَرْبَعًا؟ فَقَالَ: تَأَوَّلَتْ مَا تَأَوَّلَ عُثْمَانُ فِي إِتْمَامِ الصَّلَاةِ بِمِنًى. وَقَدْ ذَكَرْنَا مَا تَأَوَّلَ فِي إِتْمَامِ عُثْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ الصَّلَاةَ بِمِنًى فَكَانَ مَا صَحَّ مِنْ ذَلِكَ هُوَ أَنَّهُ كَانَ مِنْ أَجْلِ نِيَّتِهِ لِلْإِقَامَةِ. فَإِنْ كَانَ مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ , كَانَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا تُتِمُّ الصَّلَاةَ , فَإِنَّهُ يَجُوزُ أَنْ يَكُونَ كَانَتْ لَا يَحْضُرُهَا صَلَاةٌ إِلَّا نَوَتْ إِقَامَةً فِي ذَلِكَ الْمَكَانِ , يَجِبُ عَلَيْهَا بِهَا إِتْمَامُ الصَّلَاةِ , فَتُتِمُّ الصَّلَاةَ لِذَلِكَ. فَيَكُونُ إِتْمَامُهَا وَهِيَ فِي حُكْمِ الْمُقِيمِينَ , لَا فِي حُكْمِ الْمُسَافِرِينَ. وَقَدْ قَالَ قَوْمٌ: كَانَ ذَلِكَ مِنْهَا , لِمَعْنًى غَيْرِ هَذَا , وَهُوَ أَنِّي سَمِعْتُ أَبَا بَكْرَةَ يَقُولُ: قَالَ أَبُو عُمَرَ: كَانَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ فَكَانَتْ تَقُولُ: «كُلُّ مَوْضِعٍ أَنْزِلُهُ , فَهُوَ مَنْزِلُ بَعْضِ بَنِيَّ» , فَتَعُدُّ ذَلِكَ مَنْزِلًا لَهَا , وَتُتِمُّ الصَّلَاةَ مِنْ أَجْلِهِ. وَهَذَا عِنْدِي فَاسِدٌ , لِأَنَّ عَائِشَةَ وَإِنْ كَانَتْ هِيَ أُمُّ الْمُؤْمِنِينَ , فَإِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَبُو الْمُؤْمِنِينَ , وَهُوَ أَوْلَى بِهِمْ مِنْ عَائِشَةَ. فَقَدْ كَانَ يَنْزِلُ فِي مَنَازِلِهِمْ , فَلَا يَخْرُجُ بِذَلِكَ مِنْ حُكْمِ السَّفَرِ الَّذِي يُقْصَرُ فِيهِ الصَّلَاةُ إِلَى حُكْمِ الْإِقَامَةِ الَّتِي تُكْمَلُ فِيهَا الصَّلَاةُ. وَقَدْ قَالَ قَوْمٌ: كَانَ مَذْهَبُ عَائِشَةَ فِي قَصْرِ الصَّلَاةِ أَنَّهُ يَكُونُ لِمَنْ حَمَلَ الزَّادَ وَالْمَزَادَ , عَلَى مَا رَوَيْنَا , عَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , وَكَانَتْ تُسَافِرُ بَعْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي كِفَايَةٍ مِنْ ذَلِكَ , فَتَرَكَتْ لِهَذَا الْمَعْنَى قَصْرَ الصَّلَاةِ. فَلَمَّا تَكَافَأَتْ هَذِهِ التَّأْوِيلَاتُ فِي فِعْلِ عُثْمَانَ وَعَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا , لَزِمَنَا أَنْ نَنْظُرَ حُكْمَ قَصْرِ الصَّلَاةِ , مَا يُوجِبُهُ. فَكَانَ الْأَصْلُ فِي ذَلِكَ أَنَّا رَأَيْنَا الرَّجُلَ إِذَا كَانَ مُقِيمًا فِي أَهْلِهِ , فَحُكْمُهُ فِي الصَّلَاةِ حُكْمُ الْإِقَامَةِ , وَسَوَاءٌ كَانَ فِي إِقَامَتِهِ طَاعَةٌ أَوْ مَعْصِيَةٌ , لَا يَتَغَيَّرُ بِشَيْءٍ مِنْ ذَلِكَ حُكْمُهُ , فَكَانَ حُكْمُهُ تَمَامَ الصَّلَاةِ يَجِبُ عَلَيْهِ بِالْإِقَامَةِ خَاصَّةً , لَا بِطَاعَةٍ , وَلَا بِمَعْصِيَةٍ ثُمَّ إِذَا سَافَرَ , خَرَجَ بِذَلِكَ مِنْ حُكْمِ الْإِقَامَةِ. فَقَدْ جَرَى فِي هَذَا مِنَ الِاخْتِلَافِ , مَا قَدْ ذَكَرْنَا. فَقَالَ قَوْمٌ: لَا يَجِبُ لَهُ حُكْمُ التَّقْصِيرِ إِلَّا أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ السَّفَرُ سَفَرَ طَاعَةٍ. وَقَالَ آخَرُونَ: يَجِبُ لَهُ حُكْمُ التَّقْصِيرِ فِي الْوَجْهَيْنِ جَمِيعًا. فَلَمَّا كَانَ حُكْمُ الْإِتْمَامِ يَجِبُ لَهُ فِي الْإِقَامَةِ بِالْإِقَامَةِ خَاصَّةً , لَا بِطَاعَةٍ وَلَا بِغَيْرِهَا , كَانَ كَذَلِكَ يَجِيءُ فِي النَّظَرِ أَنْ يَكُونَ حُكْمُ التَّقْصِيرِ يَجِبُ لَهُ فِي السَّفَرِ بِالسَّفَرِ خَاصَّةً , لَا بِطَاعَةٍ وَلَا غَيْرِهَا , قِيَاسًا وَنَظَرًا عَلَى مَا بَيَّنَّا وَشَرَحْنَا. وَلَمَّا ثَبَتَ أَنَّ التَّقْصِيرَ إِنَّمَا يَجِبُ لَهُ بِحُكْمِ السَّفَرِ خَاصَّةً لَا بِغَيْرِهِ , ثَبَتَ أَنَّهُ يَقْصُرُ مَا كَانَ مُسَافِرًا فِي الْأَمْصَارِ وَفِي غَيْرِهَا لِأَنَّ الْعِلَّةَ الَّتِي لَهَا تُقْصَرُ فِي السَّفَرِ الَّذِي لَمْ يَخْرُجْ مِنْهُ بِدُخُولِهِ الْأَمْصَارَ. وَجَمِيعُ مَا بَيَّنَّا فِي هَذَا الْبَابِ وَصَحَّحْنَا , هُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ , وَأَبِي يُوسُفَ , وَمُحَمَّدٍ , رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ২৪৮৫ | মুসলিম বাংলা