শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৪৭৩
মুসাফিরের সালাত
২৪৭৩। মুহাম্মাদ ইব্‌ন আব্দুল্লাহ্ ইব্‌ন মায়মূন (রাহঃ) আবু উমাইয়া (রাহঃ) অথবা আবু উমাইয়া গোত্রের জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি সফর থেকে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর নিকট এসেছি। তিনি বললেন, হে আবু উমাইয়া! তুমি কি খাবারের অপেক্ষা করবে না? আমি বললাম, আমি তো সিয়াম পালন করছি। তারপর তিনি অনুরূপ উল্লেখ করেছেন।
পর্যালোচনা
বস্তুত এ সমস্ত হাদীস যা আমরা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে রিওয়ায়াত করেছি, পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে, মুসাফিরের ফরয হচ্ছে দু’রাক’আত। মুসাফিরের দু’রাক’আত হচ্ছে মুকীমের চার রাক’আতের অনুরূপ। যেমনিভাবে মুকীমের জন্য চার রাক’আতের উপর নিজ সালাতে বৃদ্ধি করা জায়িয নেই, অনুরূপভাবে মুসাফিরের জন্য নিজ সালাতে দু’রাক’আতের উপর বৃদ্ধি করা জায়িয নেই।
তাহাবী (রাহঃ)-এর যুক্তিভিত্তিক দলীল
এ বিষয়ে আমাদের যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণ হচ্ছে, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে ফরয বলা হয় যেটা সম্পাদন করা (যার উপর ফরয তার জন্য) একান্ত জরুরী, এতে কম-বেশী করার কোন ইখতিয়ার তার নেই। আর ঐকমত্য অনুযায়ী নফল বলা হয় ব্যক্তি যদি চায় আদায় করতে পারে, যদি চায় পরিহার করতে পারে। বস্তুত এটি নফলের বৈশিষ্ট্য। পক্ষান্তরে যেটি আদায় করা জরুরী, সেটি হচ্ছে ফরয। মুসাফিরের জন্য দু’রাক’আত আদায় করা (সর্বসম্মতভাবে) আবশ্যক। এরপরে (অতিরিক্ত) দু’রাক’আতের ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। একদল আলিম বলছেনঃ (অতিরিক্ত) দু’রাক’আত আদায় করা সঠিক (জায়িয) নয়। আর একদল আলিম বলছেনঃ মুসাফিরের জন্য যদি সে ইচ্ছা করে তা আদায় করতেও পারে, আর যদি ইচ্ছা করে তা পরিত্যাগও করতে পারে। অতএব যে দু’রাক’আত ফরযের গুণে গুণান্বিত, সে দু’রাক’আত ফরয হিসাবে বিবেচিত হবে, এবং পরবর্তী দু’রাক’আত যেহেতু নফলের গুণে গুণান্বিত, সেটি নফল হিসাবে বিবেচিত হবে। এতে প্রমাণিত হলোঃ মুসাফিরের ফরয হচ্ছে দু’রাক’আত। যে সালাতে মুসাফিরের ফরয হচ্ছে দু’রাক’আত, সে সালাতে মুকীমের ফরয হচ্ছে চার রাকাত। যেমনিভাবে মুকীমের জন্য চার রাক’আতের পরে সালাম ব্যতীত অন্য কিছু বৃদ্ধি করা সঠিক (জায়িয) নয়, অনুরূপভাবে মুসাফিরের জন্যও দু’রাক’আতের পরে সালাম ব্যতীত অন্য কিছু বৃদ্ধি করা সঠিক (জায়িয) নয়। বস্তুত এটি-ই হচ্ছে এ অনুচ্ছেদে আমাদের যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণ । আর এটি হচ্ছে- আবু হানীফা (রাহঃ), আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর উক্তি।
কেউ যদি বলে যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর সাহাবীগণের এক দল থেকে অবশ্যই বর্ণিত আছে, তাঁরা (সফরে) সালাত পূর্ণ আদায় করতেন। আর এ বিষয়ে মিনাতে উসমান (রাযিঃ)-এর আমলের কথা উল্লেখ করা হয় এবং আয়েশা (রাযিঃ)-এর আমল নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিতঃ
2473 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنُ مَيْمُونٍ، قَالَ: ثنا الْوَلِيدُ، عَنِ الْأَوْزَاعِيِّ، عَنْ يَحْيَى، قَالَ: ثنا أَبُو قِلَابَةَ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَبُو أُمَيَّةَ، أَوْ عَنْ رَجُلٍ، عَنْ أَبِي أُمَيَّةَ، قَالَ: " قَدِمْتُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ سَفَرٍ ; فَقَالَ: أَلَا تَنْتَظِرُ الْغَدَا يَا أَبَا أُمَيَّةَ؟ فَقُلْتُ: إِنِّي صَائِمٌ ثُمَّ ذَكَرَ مِثْلَهُ " فَهَذِهِ الْآثَارُ الَّتِي رَوَيْنَاهَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَدُلُّ عَلَى أَنَّ فَرْضَ الْمُسَافِرِ رَكْعَتَانِ. وَأَنَّهُ فِي رَكْعَتَيْهِ كَالْمُقِيمِ فِي أَرْبَعَةٍ. فَكَمَا لَيْسَ لِلْمُقِيمِ أَنْ يَزِيدَ فِي صَلَاتِهِ عَلَى أَرْبَعَةٍ شَيْئًا , فَكَذَلِكَ لَيْسَ لِلْمُسَافِرِ أَنْ يَزِيدَ فِي صَلَاتِهِ عَلَى رَكْعَتَيْنِ شَيْئًا. وَكَانَ النَّظَرُ عِنْدَنَا فِي ذَلِكَ أَنَّا رَأَيْنَا الْفُرُوضَ الْمُجْتَمَعَ عَلَيْهَا , لَا بُدَّ لِمَنْ هِيَ عَلَيْهِ مِنْ أَنْ يَأْتِيَ بِهَا ; وَلَا يَكُونُ لَهُ خِيَارٌ فِي أَنْ لَا يَأْتِيَ بِمَا عَلَيْهِ مِنْهَا. وَكَانَ مَا أُجْمِعَ عَلَيْهِ أَنَّ لِلرَّجُلِ أَنْ يَأْتِيَ بِهِ إِنْ شَاءَ ; وَإِنْ شَاءَ لَمْ يَأْتِ بِهِ , فَهُوَ التَّطَوُّعُ ; إِنْ شَاءَ فَعَلَهُ ; وَإِنْ شَاءَ تَرَكَهُ. فَهَذِهِ هِيَ صِفَةُ التَّطَوُّعِ , وَمَا لَا بُدَّ مِنَ الْإِتْيَانِ بِهِ , فَهُوَ الْفَرْضُ , وَكَانَتِ الرَّكْعَتَانِ لَا بُدَّ مِنَ الْمَجِيءِ بِهِمَا وَمَا بَعْدَهُمَا فَفِيهِ اخْتِلَافٌ. فَقَوْمٌ يَقُولُونَ: لَا يَنْبَغِي أَنْ يُؤْتَى بِهِ , وَقَوْمٌ يَقُولُونَ لِلْمُسَافِرِ أَنْ يَجِيءَ بِهِ إِنْ شَاءَ , وَلَهُ أَنْ لَا يَجِيءَ بِهِ. فَالرَّكْعَتَانِ مَوْصُوفَتَانِ بِصِفَةِ الْفَرْضِ , فَهُمَا فَرِيضَةٌ , وَمَا بَعْدَ الرَّكْعَتَيْنِ مَوْصُوفٌ بِصِفَةِ التَّطَوُّعِ , فَهُوَ تَطَوُّعٌ. فَثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّ الْمُسَافِرَ فَرْضُهُ رَكْعَتَانِ , وَكَانَ الْفَرْضُ عَلَى الْمُقِيمِ أَرْبَعًا فِيمَا يَكُونُ فَرْضُهُ عَلَى الْمُسَافِرِ رَكْعَتَيْنِ. فَكَمَا لَا يَنْبَغِي لِلْمُقِيمِ أَنْ يُصَلِّيَ بَعْدَ الْأَرْبَعِ شَيْئًا مِنْ غَيْرِ تَسْلِيمٍ , فَكَذَلِكَ لَا يَنْبَغِي لِلْمُسَافِرِ أَنْ يُصَلِّيَ بَعْدَ الرَّكْعَتَيْنِ شَيْئًا بِغَيْرِ تَسْلِيمٍ. فَهَذَا هُوَ النَّظَرُ عِنْدَنَا فِي هَذَا الْبَابِ وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ , وَأَبِي يُوسُفَ , وَمُحَمَّدٍ , رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى. فَإِنْ قَالَ قَائِلٌ: فَقَدْ رُوِيَ عَنْ جَمَاعَةٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُمْ كَانُوا يُتِمُّونَ , وَذَكَرَ فِي ذَلِكَ مَا قَدْ فَعَلَهُ عُثْمَانُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ بِ مِنًى
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান