শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৩৩৯
ফজরের সালাত এক রাক'আত পড়ার পর যদি সূর্য উঠে যায়।
২৩৩৯। রাওহ ইবনুল ফারাজ (রাহঃ) ..... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ
মক্কার পথে রাতের শেষ ভাগে এক স্থানে অবতরণ করলেন এবং অরিমি করলেন) পরে তিনিও জাগরিত হননি এবং তাঁর সাহাবীগণের কেউও না। অবশেষে তাদের উপর রােদ এসে পড়ল। রাসূলুল্লাহ জাগরিত হলেন। তিনি (উঠে) বললেন, এটি এরূপ স্থান, যাতে শয়তান রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উট হাঁকিয়ে নিলেন, (স্থান ত্যাগ করলেন), তাঁর সাহাবীরাও বাহন হাঁকিয়ে নিয়ে গেলেন। যখন সূর্য উঁচু হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- উঠ বসালেন এবং তাঁর সাহাবীরাও বসালেন। পরে তিনি তাঁদের ইমামতি করলেন এবং ফজরের সালাত আদায় করলেন।
পর্যালােচনা
অতএব আমরা লক্ষ্য করেছি যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সূর্য উঠা পর্যন্ত ফজরের সালাত বিলম্ব করেছেন। অথচ এটি। ফরয সালাত, তা তিনি তখন আদায় করেননি যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য উঁচু না হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অন্য এক হাদীসে বলেছেনঃ তােমাদের কেউ যদি সালাত আদায় করতে ভুলে যায় বা ঘুমিয়ে পড়ে তবে যে সময়ই মনে পড়বে তা আপয়ি করে নিবে। এতে বুঝা যাচ্ছে, সূর্যোদয়ের সময়ে সালাত আদায় থেকে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, এতে ফরয ও নফল সালাত সবই অন্তর্ভুক্ত। অরি তিনি যে সময়ে জাগরিত হয়েছেন সেটি ঐ সালাতের সময় নয়, যা থেকে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।
কোন প্রশ্নকারী যদি প্রশ্ন করে যে, তুমি হাদীসের এক টুকরা উল্লেখ করে আরেক টুকরা ছেড়ে দিয়েছ কেন ? আর তুমি বলছ, কেউ যদি আসরের এক রাক'আত পড়তে না পড়তেই সূর্য ডুবে যায় তাহলে সে অবশিষ্ট সালাত পূরণ করে নিবে। (সালাত বিনষ্ট হবে না।)
উত্তরে তাকে বলা হবে যে, আমরা এ হাদীসের এক টুকরা বা পুরাে হাদীস কোনটার উপরই আমল করি না;বরং পুরাে হাদীসকে আমরা (রহিত) মনে করি। কারণ সূর্যোদয়ের সময় সালাত আদায় থেকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে এবং আমাদের উল্লিখিত জুবাইর (রাযিঃ), ইমরান (রাযিঃ), আবু কাতাদা (রাযিঃ) ও আবু হুরায়রা (রাযিঃ)-এর হাদীসও রহিত হওয়ার প্রমাণ বহন করে যে, ফরয সালাত এর মধ্যে (সূর্যোদয়ের সময়) ভান্তুর্ভুক্ত। এ সময় তা আদায় করা যাবে না, যেমন ভাবে নফল সালাত উক্ত সময়ে আদায় করা যায় না।
বাকি রইলাে সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় ঐ দিনের আসরের সালাত জায়িয হওয়া প্রসঙ্গ। এ বিষয়ে আমরা ‘সালাতের ওয়াক্ত' অনুচ্ছেদে আলােচনা করেছি। আর এটিই হচ্ছে এ অনুচ্ছেদে হাদীসসমূহের সঠিক মর্ম নির্ধারণের পন্থা।
বস্তুত এর যৌক্তিক দিক হচ্ছেঃ আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সূর্য উঠার সময় থেকে নিয়ে উঁচু হওয়া পর্যন্ত এমন একটি সময়, যাতে সালাত আদায় থেকে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং আমরা নিষিদ্ধ সময়ের বিধান সম্পর্কে চিন্তা করেছি, তাতে কি ফরয ব্যতীত শুধু নফল সালাতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরাপিত হয়েছে, না সব ধরনের (ফরয ও নফল সালাতের উপর। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা’র দিনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন এবং এ বিষয়ে তার থেকে প্রমাণ রয়েছে। আর ঐ দুই দিনে ফরজ এবং নফল সিয়াম পালন করা যাবে না এ নিষেধজ্ঞার ব্যাপারে সমস্ত আলিমদের ঐকমত্য রয়েছে । অনুরূপভাবে যুক্তির দাবি হচ্ছে যে, সূর্য উঠার সময় যখন সালাত থেকে নিষেধ করা হয়েছে, তাতে ফরজ কিংবা নফল (সালাত আদায় করা যাবে না। অনুরূপ ভাবে সূর্য ডুবার সময়ও যুক্তির দাবি তাই। (ফরয এবং নফল সালাত পড়া নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে সমান)।
রইলাে আসরের পর সূর্য ডুবা পর্যন্ত এবং ফজরের পর সূর্য উঠা পর্যন্ত সালাত আদায় থেকে রাসূলুল্লাহ
-এর নিষেধাজ্ঞা । আসলে এই সময় ওয়াক্তের কারণে সালাত থেকে নিষেধ করা হয়নি; বরং এ দুই ওয়াক্তে (সালাত থেকে) নিষেধাজ্ঞা এসেছে সালাতের কারণে। আর আমরা লক্ষ্য করেছি যে, ঐ সময়টিতে যে ব্যক্তি ফরয (সালাত আদায় করেনি তার জন্য তাতে ফরয আদায় করা এবং কাযা সালাত আদায় করা জায়িয। অতএব যখন সালাতই হচ্ছে বাধা প্রদানকারী এবং তা হচ্ছে ফরয (সালাত)। সুতরাং উক্ত ফরয সালাত থেকে ভিন্ন ধরনের তথা নফল সালাতসমূহ থেকে নিষেধ করা হয়েছে, ফরয সালাতসমূহ থেকে নয়।
এটি হচ্ছে আবু হানীফা (রাহঃ), আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও মুহাম্মাদ (রাহঃ) এর উক্তি (মাযহাব)। আর হাকাম (ইবন
উতবা) (রাহঃ) ও হাম্মাদ (ইবন আবু সুলায়মান) (রাহঃ) এই মতই পােষণ করেছেন।
2339 - حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ الْفَرَجِ , قَالَ: ثنا أَبُو مُصْعَبٍ الزُّهْرِيُّ , قَالَ: ثنا ابْنُ أَبِي حَازِمٍ , عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ , عَنْ أَبِيهِ , عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَرَّسَ ذَاتَ لَيْلَةٍ بِطَرِيقِ مَكَّةَ , فَلَمْ يَسْتَيْقِظْ هُوَ وَلَا أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِهِ حَتَّى ضَرَبَتْهُمُ الشَّمْسُ , فَاسْتَيْقَظَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «هَذَا مَنْزِلٌ بِهِ شَيْطَانٌ» فَاقْتَادَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاقْتَادَ أَصْحَابُهُ , حَتَّى ارْتَفَعَ الضُّحَى , فَأَنَاخَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَأَنَاخَ أَصْحَابُهُ , فَأَمَّهُمْ , فَصَلَّى الصُّبْحَ. فَلَمَّا رَأَيْنَا النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَّرَ صَلَاةَ الصُّبْحِ لَمَّا طَلَعَتِ الشَّمْسُ وَهِيَ فَرِيضَةٌ فَلَمْ يُصَلِّهَا حِينَئِذٍ حَتَّى ارْتَفَعَتِ الشَّمْسُ وَقَدْ قَالَ فِي غَيْرِ هَذَا الْحَدِيثِ: «مَنْ نَسِيَ صَلَاةً أَوْ نَامَ عَنْهَا , فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا» دَلَّ ذَلِكَ أَنَّ نَهْيَهُ عَنِ الصَّلَاةِ عِنْدَ طُلُوعِ الشَّمْسِ , قَدْ دَخَلَ فِيهِ الْفَرَائِضُ وَالنَّوَافِلُ , وَأَنَّ الْوَقْتَ الَّذِي اسْتَيْقَظَ فِيهِ , لَيْسَ بِوَقْتٍ لِلصَّلَاةِ الَّتِي نَامَ عَنْهَا. فَإِنْ قَالَ قَائِلٌ: فَلِمَ قُلْتَ بِبَعْضِ هَذَا الْحَدِيثِ , وَتَرَكْتَ بَعْضَهُ؟ فَقُلْتُ: «مَنْ صَلَّى مِنَ الْعَصْرِ رَكْعَةً ثُمَّ غَرَبَتْ لَهُ الشَّمْسُ , أَنَّهُ يُصَلِّي بَقِيَّتَهَا» قِيلَ لَهُ: لَمْ نَقُلْ بِبَعْضِ هَذَا الْحَدِيثِ , وَلَا بِشَيْءٍ مِنْهُ , بَلْ جَعَلْنَاهُ مَنْسُوخًا كُلَّهُ , بِمَا رُوِيَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ نَهْيِهِ عَنِ الصَّلَاةِ عِنْدَ طُلُوعِ الشَّمْسِ , وَبِمَا قَدْ دَلَّ عَلَيْهِ مَا ذَكَرْنَا مِنْ حَدِيثِ جُبَيْرٍ , وَعِمْرَانَ , وَأَبِي قَتَادَةَ , وَأَبِي هُرَيْرَةَ عَلَى أَنَّ الْفَرِيضَةَ قَدْ دَخَلَتْ فِي ذَلِكَ , وَأَنَّهَا لَا تُصَلَّى حِينَئِذٍ , كَمَا لَا تُصَلَّى النَّافِلَةُ. وَأَمَّا الصَّلَاةُ عِنْدَ غُرُوبِ الشَّمْسِ لِعَصْرِ يَوْمِهِ , فَإِنَّا قَدْ ذَكَرْنَا الْكَلَامَ فِي ذَلِكَ فِي بَابِ مَوَاقِيتِ الصَّلَاةِ. فَهَذَا وَجْهُ هَذَا الْبَابِ مِنْ طَرِيقِ تَصْحِيحِ مَعَانِي الْآثَارِ. وَأَمَّا وَجْهُهُ مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ , فَإِنَّا رَأَيْنَا وَقْتَ طُلُوعِ الشَّمْسِ إِلَى أَنْ تَرْتَفِعَ , وَقْتًا قَدْ نُهِيَ عَنِ الصَّلَاةِ فِيهِ. فَأَرَدْنَا أَنْ نَنْظُرَ فِي حُكْمِ الْأَوْقَاتِ الَّتِي يُنْهَى فِيهَا عَنِ الْأَشْيَاءِ , هَلْ يَكُونُ عَلَى التَّطَوُّعِ مِنْهَا دُونَ الْفَرَائِضِ؟ أَوْ عَلَى ذَلِكَ كُلِّهِ؟ فَرَأَيْنَا يَوْمَ الْفِطْرِ , وَيَوْمَ النَّحْرِ , قَدْ نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صِيَامِهِمَا , وَقَامَتِ الْحُجَّةُ عَنْهُ بِذَلِكَ , فَكَانَ ذَلِكَ النَّهْيُ عِنْدَ جَمِيعِ الْعُلَمَاءِ عَلَى أَنْ لَا يُصَامَ فِيهِمَا فَرِيضَةٌ , وَلَا تَطَوُّعٌ. فَكَانَ النَّظَرُ عَلَى ذَلِكَ فِي وَقْتِ طُلُوعِ الشَّمْسِ , الَّذِي قَدْ نُهِيَ عَنِ الصَّلَاةِ فِيهِ , أَنْ يَكُونَ كَذَلِكَ , لَا تُصَلَّى فِيهِ فَرِيضَةٌ وَلَا تَطَوُّعٌ , وَكَذَلِكَ يَجِيءُ فِي النَّظَرِ عِنْدَ غُرُوبِ الشَّمْسِ. وَأَمَّا نَهْيُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الصَّلَاةِ بَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى تَغِيبَ الشَّمْسُ , وَبَعْدَ الصُّبْحِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ , فَإِنَّ هَذَيْنِ الْوَقْتَيْنِ لَمْ يُنْهَ عَنِ الصَّلَاةِ فِيهِمَا لِلْوَقْتِ , وَإِنَّمَا نُهِيَ عَنِ الصَّلَاةِ فِيهِمَا لِلصَّلَاةِ , وَقَدْ رَأَيْنَا ذَلِكَ الْوَقْتَ يَجُوزُ لِمَنْ لَمْ يُصَلِّ أَنْ يُصَلِّيَ فِيهِ الْفَرِيضَةَ وَالصَّلَاةَ الْفَائِتَةَ. فَلَمَّا كَانَتِ الصَّلَاةُ هِيَ النَّاهِيَةُ وَهِيَ فَرِيضَةٌ , كَانَتْ إِنَّمَا يُنْهَى عَنْ غَيْرِ شَكْلِهَا مِنَ النَّوَافِلِ , لَا عَنِ الْفَرَائِضِ. وَهَذَا قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ وَأَبِي يُوسُفَ وَمُحَمَّدٍ , رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى. وَقَدْ قَالَ بِذَلِكَ الْحَكَمُ وَحَمَّادٌ
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ২৩৩৯ | মুসলিম বাংলা