শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৫৭৮
সালাতের তাশাহ্হুদ কিরূপ
১৫৭৮। মুহাম্মাদ ইবনে হুমায়দ আবু কুররা (রাহঃ)...... আবৃ আসলাম আল-মুয়াযযিন (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়র (রাযিঃ)-কে বলতে শুনেছেন ঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর তাশাহ্হুদ ছিল নিম্নরূপঃ
بِسْمِ اللهِ وَبِاللهِ خَيْرِ الْأَسْمَاءِ , التَّحِيَّاتُ الطَّيِّبَاتُ , الصَّلَوَاتُ لِلَّهِ , أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ , وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ , أَرْسَلَهُ بِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا , وَأَنَّ السَّاعَةَ آتِيَةٌ لَا رَيْبَ فِيهَا , السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ , السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ , اللهُمَّ اغْفِرْ لِي وَاهْدِنِي

বিশ্লেষণ
বস্তুত এঁরা সকলেই তাশাহহুদ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্ থেকে রিওয়ায়াত করেছেন, যা আমরা উল্লেখ
করে এসেছি। এদের সকলের রিওয়ায়াত তাশাহহুদ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে ধারাবাহিক সূত্র পরম্পরায় উমর (রাযিঃ) কর্তৃক বর্ণিত তাশাহ্হুদের বিপরীত প্রমাণিত হয়েছে-
অতএব তাদের রিওয়ায়াতগুলােকে পরিত্যাগ করে অন্য তাশাহহুদ গ্রহণ করা কোনভাবেই সমীচীন
হবে না, এবং তাদের রিওয়ায়াত বহির্ভূত অতিরিক্ত কোন কিছু গ্রহণ করা যেতে পারে না।
তবে ইবনে আব্বাস (রাযিঃ)-এর হাদীসে বর্ণিত তাশাহহুদে অন্যদের তুলনায় '''المباركات শব্দটি
অতিরিক্ত রয়েছে।

কিছু সংখ্যক আলিম বলেছেনঃ অন্য তাশাহ্হুদ অপেক্ষা ইব্‌ন আব্বাস (রাযিঃ)-এর তাশাহ্হুদ উত্তম।
যেহেতু এতে তিনি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, আর অতিরিক্ত অসম্পূর্ণ অপেক্ষা উত্তম হয়ে থাকে।
অপরাপর আলিমগণ বলেছেনঃ বরং ইবনে মাসউদ (রাযিঃ), আবু মুসা (রাযিঃ) ও ইবনে উমর (রাযিঃ)-এর
হাদীস যা তার থেকে মুজাহিদ ও ইবনে বারা (রাহঃ) রিওয়ায়াত উত্তম বিবেচিত হবে এ বিষয়ে তাদের
ঐকমত্য এবং তাদের সূত্র সুদৃঢ় হওয়ার কারণে। যেহেতু (ইবনে আব্বাস রা-এর হাদীসের রাবী) আবুয্ যুবায়র (রাহঃ) ইবনে (মাসউদ (রাযিঃ)-এর হাদীসের রাবী) আমাশ, মনসুর ও মুগীরা (রাহঃ) প্রমুখের
সমকক্ষ নন, যারা ইবনে মাসউদ (রাযিঃ)-এর হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। আবু মুসা (রাযিঃ)-এর হাদীসে
আবু যুবায়র কাতাদার সমকক্ষ নন এবং সমকক্ষ নন আবু বিশ-এর ইবনে উমর (রাযিঃ)-এর 'হাদীসে।
বর্ণনাকারীদের মধ্যে দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত শব্দ থাকার কারণে যদি সেই অতিরিক্ত শব্দ
সম্বলিত তাশাহহুদ গ্রহণ করা অপরিহার্য হয় তাহলে (জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ্ রা-এর তাশাহহুদ)
আয়মান ইবনে নাবিল (রাহঃ) আবুয্ যুবায়র (রাহঃ) সূত্রে যা অতিরিক্ত করেছেন তাও গ্রহণ করা অপরিহার্য
হয়ে পড়বে। যেহেতু তিনিও তাশাহ্হুদে বাড়িয়ে বলেছেনঃ بسم الله অনুরূপভাবে আব্দুল্লাহ্ ইবনে
যুবায়র (রাযিঃ)-এর তাশাহহুদে যা আবু আসলাম (রাহঃ) অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, সেগুলােও গ্রহণ করা
অপরিহার্য হয়ে পড়বে, যেহেতু তিনিও তাশাহহুদে বলেছেনঃ بسم الله এবং ইব্‌ন মাসউদ (রাযিঃ)-এর
হাদীস (তাশাহ্হুদ) অপেক্ষা এতে আরাে বাড়তি শব্দ বিদ্যমান রয়েছে।
বস্তুত যখন এই বাড়তি শব্দ গ্রহণযােগ্য নয়, যেহেতু তিনি এটিকে লায়স-এর হাদীসের উপর
অতিরিক্ত করেননি। অনুরূপভাবে ইব্‌ন আব্বাস (রাযিঃ)-এর হাদীসে আতা ইবনে রিবাহ্ (রাহঃ)-এর উপর
আবুয্ যুবায়রের অতিরিক্ত শব্দ গ্রহণযােগ্য নয়। যেহেতু ইবনে জুরায়জ (রাহঃ) এটিকে আতা (রাহঃ)-এর
সূত্রে ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে মাউকুফ’ হিসাবে রিওয়ায়াত করেছেন। আবার এটিকে আবুয্ যুবায়র
(রাহঃ) সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র ও তাউস (রাহঃ)-এর সূত্রে ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে মারফু হিসাবে
রিওয়ায়াত করেছেন। যদি এই সমস্ত হাদীস প্রামাণ্য হয় এবং সনদগুলাে সমকক্ষ হয় তাহলে
আব্দুল্লাহ্ ইব্‌ন মাসউদ (রাযিঃ)-এর হাদীস সকলের হাদীস অপেক্ষা অবশ্যই উত্তম বিবেচিত হবে।
যেহেতু তারা সকলে ঐ ব্যাপারে ঐকমত্য পােষণ করেছেন যে, কারাে জন্য আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) তাশাহহুদ ব্যতীত ইচ্ছা মাফিক অন্য তাশাহহুদ পড়া ঠিক নয়।
তাশাহহুদের শব্দগুলাে যখন সুনির্দিষ্ট পন্থায় রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে প্রমাণিত হয়ে আসছে এবং সকলের এ ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে যে, ইবনে মাসউদ (রাযিঃ)-এর তাশাহহুদে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কর্তৃক বর্ণিত শব্দের উপর সংযােজন নেই। পক্ষান্তরে অন্যদের তাশাহহুদে বিরােধ এবং সংযােজন বিদ্যমান।
অতএব বিরােধমুক্ত তাশাহহুদ বিরােধপূর্ণ তাশাহহুদ অপেক্ষা উত্তম বিবেচিত হবে।
অপর একটি দলীল
আমরা আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ)-কে তাশাহহুদের ব্যাপারে কঠোর দেখেছি। তাশাহহুদে একটি
‘ওয়াও' অক্ষর সংযােজন করলে তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে পাকড়াও করতেন, যেন তারা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কর্তৃক বর্ণনাকৃত শব্দের অনুসরণ করেন। এরূপ অন্য কেউ করেছেন বলে আমরা জানি না।
এজন্য আমরা আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তাশাহ্হুদকে উত্তম হিসাবে সাব্যস্ত করি
অন্য কারাে বর্ণনাকে নয়।
1578 - مَا قَدْ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حُمَيْدٍ أَبُو قُرَّةَ قَالَ: ثنا سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ , قَالَ: أنا ابْنُ لَهِيعَةَ , قَالَ: حَدَّثَنِي الْحَارِثُ بْنُ يَزِيدَ , أَنَّ أَبَا أَسْلَمَ الْمُؤَذِّنَ حَدَّثَهُ أَنَّهُ سَمِعَ عَبْدَ اللهِ بْنَ الزُّبَيْرِ يَقُولُ: إِنَّ تَشَهُّدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّذِي كَانَ يَتَشَهَّدُ بِهِ: «بِسْمِ اللهِ وَبِاللهِ خَيْرِ الْأَسْمَاءِ , التَّحِيَّاتُ الطَّيِّبَاتُ , الصَّلَوَاتُ لِلَّهِ , أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ , وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ , أَرْسَلَهُ بِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا , وَأَنَّ السَّاعَةَ آتِيَةٌ لَا رَيْبَ فِيهَا , السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ , السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ , اللهُمَّ اغْفِرْ لِي وَاهْدِنِي» فَكُلُّ هَؤُلَاءِ قَدْ رَوَى عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي التَّشَهُّدِ مَا ذَكَرْنَا عَنْهُمْ وَخَالَفَ مَا رُوِيَ عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , فَقَدْ تَوَاتَرَتْ بِذَلِكَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرِّوَايَاتُ , فَلَمْ يُخَالِفْهَا شَيْءٌ , فَلَا يَنْبَغِي خِلَافُهَا وَلَا الْأَخْذُ بِغَيْرِهَا وَلَا الزِّيَادَةُ عَلَى شَيْءٍ مِمَّا فِيهَا إِلَّا أَنَّ فِي حَدِيثِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا حَرْفًا يَزِيدُ عَلَى غَيْرِهِ وَهُوَ الْمُبَارَكَاتُ. فَقَالَ قَائِلُونَ: هُوَ أَوْلَى مِنْ حَدِيثِ غَيْرِهِ , إِذَا كَانَ قَدْ زَادَ عَلَيْهِ , وَالزَّائِدُ أَوْلَى مِنَ النَّاقِصِ. وَقَالَ آخَرُونَ: بَلْ حَدِيثُ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ وَأَبِي مُوسَى وَابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا الَّذِي رَوَاهُ عَنْهُ مُجَاهِدٌ وَابْنُ بَابِي أَوْلَى لِاسْتِقَامَةِ طُرُقِهِمْ وَاتِّفَاقِهِمْ عَلَى ذَلِكَ , لِأَنَّ أَبَا الزُّبَيْرِ لَا يُكَافِئُ الْأَعْمَشَ , وَلَا مَنْصُورٌ , وَلَا مُغِيرَةُ وَلَا أَشْبَاهُهُمْ مِمَّنْ رَوَى حَدِيثَ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , وَلَا يُكَافِئُ قَتَادَةَ فِي حَدِيثِ أَبِي مُوسَى وَلَا يُكَافِئُ أَبَا بِشْرٍ فِي حَدِيثِ ابْنِ عُمَرَ , وَلَوْ وَجَبَ الْأَخْذُ بِمَا زَادَ , وَإِنْ كَانَ دُونَهُمْ , لَوَجَبَ الْأَخْذُ بِمَا زَادَ عَنِ ابْنِ نَابِلٍ , عَنِ اللَّيْثِ عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ , فَإِنَّهُ قَدْ قَالَ فِي التَّشَهُّدِ أَيْضًا: بِسْمِ اللهِ , وَلَوَجَبَ الْأَخْذُ بِمَا زَادَ أَبُو أَسْلَمَ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ فَإِنَّهُ قَدْ قَالَ فِي التَّشَهُّدِ أَيْضًا: بِسْمِ اللهِ , وَزَادَ أَيْضًا عَلَى مَا فِي ذَلِكَ مِنَ الزِّيَادَةِ عَلَى حَدِيثِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا. فَلَمَّا كَانَتْ هَذِهِ الزِّيَادَةُ غَيْرَ مَقْبُولَةٍ لِأَنَّهُ لَمْ يَزِدْهَا عَلَى اللَّيْثِ مِثْلَهُ , لَمْ يَقْبَلْ زِيَادَةَ ابْنِ أَبِي الزُّبَيْرِ فِي حَدِيثِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَلَى عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ لِأَنَّ ابْنَ جُرَيْجٍ رَوَاهُ عَنْ عَطَاءٍ , عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا , مَوْقُوفًا. وَرَوَاهُ أَبُو الزُّبَيْرِ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ , وَطَاوُسٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ مَرْفُوعًا , وَلَوْ ثَبَتَتْ هَذِهِ الْأَحَادِيثُ كُلُّهَا وَتَكَافَأَتْ فِي أَسَانِيدِهَا لَكَانَ حَدِيثُ عَبْدِ اللهِ أَوْلَاهَا , لِأَنَّهُمْ قَدْ أَجْمَعُوا أَنَّهُ لَيْسَ لِلرَّجُلِ أَنْ يَتَشَهَّدَ بِمَا شَاءَ مِنَ التَّشَهُّدِ غَيْرَ مَا رُوِيَ مِنْ ذَلِكَ. فَلَمَّا ثَبَتَ أَنَّ التَّشَهُّدَ بِخَاصٍّ مِنَ الذِّكْرِ , وَكَانَ مَا رَوَاهُ عَبْدُ اللهِ قَدْ وَافَقَهُ عَلَيْهِ كُلُّ مَنْ رَوَاهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَيْرُهُ وَزَادَ عَلَيْهِ غَيْرُهُ مَا لَيْسَ فِي تَشَهُّدِهِ , كَانَ مَا قَدْ أُجْمِعَ عَلَيْهِ مِنْ ذَلِكَ أَوْلَى أَنْ يُتَشَهَّدَ بِهِ دُونَ الَّذِي اخْتُلِفَ فِيهِ. وَحُجَّةٌ أُخْرَى أَنَّا قَدْ رَأَيْنَا عَبْدَ اللهِ , شَدَّدَ فِي ذَلِكَ , حَتَّى أَخَذَ عَلَى أَصْحَابِهِ الْوَاوَ فِيهِ , كَيْ يُوَافِقُوا لَفْظَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا نَعْلَمُ غَيْرَهُ فَعَلَ ذَلِكَ فَلِهَذَا اسْتَحْسَنَّا مَا رُوِيَ عَنْ عَبْدِ اللهِ دُونَ مَا رُوِيَ عَنْ غَيْرِهِ. فَمِمَّا رُوِيَ عَنْ عَبْدِ اللهِ فِيمَ ذَكَرْنَا
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ১৫৭৮ | মুসলিম বাংলা