শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৪৭১
আন্তর্জাতিক নং: ১৪৭৩
নামাযের অধ্যায়
ফজরের সালাত ও অন্যান্য সালাতে দু'আ কুনূত পাঠ করা ।
১৪৭১-১৪৭৩। ইউসুফ (রাহঃ) এবং রাওহ ইনুল ফারাজ (রাহঃ)-এর সূত্রে জা'ফর ইবন রাবীআ' (রাহঃ) আ'রাজ (রাহঃ)-এর উক্তি উল্লেখ করেছেন যে, আবু হুরায়রা (রাযিঃ) ফজরের সালাতে কুনূত পাঠ করতেন।

আবু জা'ফর তাহাবী (রাহঃ) বলেন : এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, আবু হুরায়রা (রাযিঃ)-এর মতে রহিত হয়ে গিয়েছিলো রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কর্তৃক কাফিরদের বিরুদ্ধে পঠিত বদ্ দু'আ। কিন্তু এর সাথে যেই কুনূত ছিলো তা কিন্তু রহিত হয়নি।

এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় ইউনুস ইবন ইয়াযীদ (রাহঃ) যুহরী (রাহঃ) থেকে সেই কুনূতের হাদীস বর্ণনা করেছেন যা আমরা এই অধ্যায়ের সূচনায় বর্ণনা করে এসেছি। যেটি ইউনুস ইব্‌ন আব্দুল আ'লা (রাহঃ) ইব্‌ন শিহাব (রাহঃ)-এর সূত্রে উক্ত দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে তিনি বলেছেন : আমরা এই বিষয়ে অবগত হয়েছি যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর প্রতি যখন لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন তিনি তা পরিত্যাগ করেন। অতএব প্রমাণিত হলো যে, উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার উল্লেখ হলো ইমাম যুহরীর (রাহঃ) উক্তি। কুনূত পাঠ পরিত্যাগ করার উক্তি আবু হুরায়রা (রাযিঃ)-এর উক্তি নয়, যেটিকে সাঈদ ও আবু সালামা (রাহঃ) আবু হুরায়রা (রাযিঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

অতএব প্রথমত এই সম্ভাবনা উপেক্ষা করা যায় না যে, আবু হুরায়রা (রাযিঃ) উক্ত আয়াত অবতরণের ব্যাপারে অবহিত ছিলেন না। ফলে তিনি নবুয়ত যুগ পরবর্তী সময়ে স্বীয় জ্ঞান অনুযায়ী আমল তথা ফজরের কুনূত পাঠ অব্যাহত রেখেছেন, যা তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)
-এর আমল ও তাঁর পঠিত কুনূতকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। যেহেতু এর পরিপন্থী দলিল প্রমাণ তার নিকট পৌঁছায়নি।

পক্ষান্তরে আব্দুল্লাহ্ ইবন উমর (রাযিঃ) ও আব্দুর রহমান ইবন আবু বাকার (রাযিঃ) উক্ত আয়াত অবতরণের ব্যাপারে অবহিত ছিলেন। যা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর আমল তথা কুনূত পাঠকে রহিত করে দিয়েছে। ফলে তাঁরা উভয়ে তা পাঠ থেকে বিরত থেকেছেন। এবং পূর্ববর্তী রহিত বিষয়কে পরিত্যাগ করেছেন।

দ্বিতীয় প্রমাণ : ইব্‌ন ঈমা'র হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)- রুকূ থেকে মাথা উত্তোলন করে
বলেছেন : গিফার গোত্রকে আল্লাহ্ ক্ষমা করুন, তারপর তিনি পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে
রয়েছে এরপর তিনি (ﷺ) আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন। এতে প্রমাণিত হলো যে, তিনি যা কিছু বলতেন তা সবই উক্ত আয়াত অবতরণের কারণে পরিত্যাগ করেছেন। এবং সেই কুনূত, যাতে তিনি মক্কাস্থ সেই সমস্ত বন্দীদের জন্য দু'আ করতেন, তাদের পর তিনি তা পাঠ করা ছেড়ে দেন।

ইয়াহ্ইয়া ইবন কাসীর (রাহঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীসে আবু হুরায়রা (রাযিঃ)-এর উক্তি আমরা আবু সালামা.... আবু হুরায়রা সূত্রে এই অধ্যায়ে পূর্বে বর্ণনা করে এসেছি। সেখানে তিনি কুনূতের কথা উল্লেখ করেছেন। সেই হাদীসে আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) দু'আ করলেন না। আমি কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, তুমি কি (অবগত নও) যে, তারা আমার নিকট আগমন করেছে।
উক্ত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইশা'র সালাতে উক্ত কুনূত পাঠ করতেন, যেমনিভাবে তিনি ফজরের সালাতে পাঠ করতেন। বস্তুত ইশা'র সালাতে কুনূত পাঠ পূর্ণরূপে রহিত হয়ে যাওয়া (অন্য কুনূত নয়) স্বীকৃত বিষয়। সুতরাং ফজরের সালাতেও অনুরূপ কুনূত পাঠ রহিত হয়ে যাওয়া প্রমাণিত হয় ।

কুনূত সংক্রান্ত রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে বর্ণিত এই সমস্ত হাদীসের প্রেক্ষাপট ও বিশ্লেষণ যখন আমরা সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করলাম এবং ফজরের সালাতে এখন কুনূত পাঠের অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয়_ এইরূপ কোন হাদীস পেলাম না, তাই আমরা এতে কুনূত পাঠের হুকুম দেই না; বরং পরিত্যাগ করার হুকুম দেই। প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর কতক সাহাবী উক্ত কুনূত পাঠকে পরিপূর্ণরূপে অস্বীকার করেছেন।
كتاب الصلاة
1471 - حَدَّثَنَا يُونُسُ قَالَ: ثنا عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ ح.

1472 - وَحَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ الْفَرَجِ قَالَ: ثنا يَحْيَى بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُكَيْرٍ , قَالَا: ثنا بَكْرُ بْنُ مُضَرَ , عَنْ جَعْفَرِ بْنِ رَبِيعَةَ , عَنِ الْأَعْرَجِ قَالَ: «كَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَقْنُتُ فِي صَلَاةِ الصُّبْحِ» قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: فَدَلَّ ذَلِكَ عَلَى أَنَّ الْمَنْسُوخَ عِنْدَ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ إِنَّمَا كَانَ هُوَ الدُّعَاءَ عَلَى مَنْ دَعَا عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَأَمَّا الْقُنُوتُ الَّذِي كَانَ مَعَ ذَلِكَ , فَلَا. قِيلَ لَهُ: إِنَّ يُونُسَ بْنَ يَزِيدَ قَدْ رَوَى عَنِ الزُّهْرِيِّ فِي حَدِيثِ الْقُنُوتِ الَّذِي رَوَيْنَاهُ فِي أَوَّلِ هَذَا الْبَابِ ,

1473 - مَا قَدْ حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ عَبْدِ الْأَعْلَى قَالَ: أَنَا ابْنُ وَهْبٍ قَالَ: أَخْبَرَنِي يُونُسُ , عَنِ ابْنِ شِهَابٍ فَذَكَرَ ذَلِكَ الْحَدِيثَ بِطُولِهِ. ثُمَّ قَالَ فِيهِ: ثُمَّ قَدْ بَلَغَنَا أَنَّهُ تَرَكَ ذَلِكَ حِينَ أُنْزِلَ عَلَيْهِ {لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ} [آل عمران: 128] الْآيَةَ , فَصَارَ ذِكْرُ نُزُولِ هَذِهِ الْآيَةِ الَّذِي كَانَ بِهِ النَّسْخُ , مِنْ كَلَامِ الزُّهْرِيِّ , لَا مِمَّا رَوَاهُ عَنْ سَعِيدٍ , وَأَبِي سَلَمَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ. فَقَدْ يُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ نُزُولُ هَذِهِ الْآيَةِ لَمْ يَكُنْ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَلِمَهُ , فَكَانَ يَعْمَلُ عَلَى مَا عَلِمَ مِنْ فِعْلِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقُنُوتِهِ إِلَى أَنْ مَاتَ لِأَنَّ الْحُجَّةَ لَمْ تَثْبُتْ عِنْدَهُ بِخِلَافِ ذَلِكَ. وَعَلِمَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي بَكْرٍ أَنَّ نُزُولَ هَذِهِ الْآيَةِ كَانَ نَسْخًا لِمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَفْعَلُهُ فَانْتَهَيَا إِلَى ذَلِكَ وَتَرَكَا بِهِ الْمَنْسُوخَ الْمُتَقَدِّمَ. وَحُجَّةٌ أُخْرَى أَنَّ فِي حَدِيثِ ابْنِ إِيمَاءٍ " أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: حِينَ رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرَّكْعَةِ غِفَارٌ غَفَرَ اللهُ لَهَا " حَتَّى ذَكَرَ مَا ذَكَرَ فِي حَدِيثِهِ ثُمَّ قَالَ: «اللهُ أَكْبَرُ» وَخَرَّ سَاجِدًا. فَثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّ جَمِيعَ مَا كَانَ يَقُولُهُ هُوَ مَا تَرَكَ بِنُزُولِ تِلْكَ الْآيَةِ وَمَا كَانَ يَدْعُو بِهِ مَعَ ذَلِكَ مِنْ دُعَائِهِ لِلْأَسْرَى الَّذِينَ كَانُوا بِمَكَّةَ , ثُمَّ تَرَكَ ذَلِكَ عِنْدَمَا قَدِمُوا، وَقَدْ رَوَى أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَيْضًا , فِي حَدِيثِ يَحْيَى بْنِ كَثِيرٍ الَّذِي قَدْ رَوَيْنَاهُ فِيمَا تَقَدَّمَ مِنَّا فِي هَذَا الْبَابِ عَنْهُ , عَنْ أَبِي سَلَمَةَ , عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , فَذَكَرَ الْقُنُوتَ. وَفِيهِ قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ وَأَصْبَحَ ذَاتَ يَوْمٍ وَلَمْ يَدْعُ لَهُمْ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ فَقَالَ: «أَوَ مَا تَرَاهُمْ قَدْ قَدِمُوا عَلَيَّ؟» فَفِي ذَلِكَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ ذَلِكَ الْقُنُوتَ فِي الْعِشَاءِ الْآخِرَةِ , كَمَا كَانَ يَقُولُهُ فِي الصُّبْحِ , وَقَدْ أَجْمَعُوا أَنَّ ذَلِكَ مَنْسُوخٌ مِنْ صَلَاةِ الْعِشَاءِ الْآخِرَةِ بِكَمَالِهِ لَا إِلَى قُنُوتٍ غَيْرِهِ , فَالْفَجْرُ أَيْضًا فِي النَّسْخِ كَذَلِكَ. فَلَمَّا كَشَفْنَا وُجُوهَ هَذِهِ الْآثَارِ الْمَرْوِيَّةِ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْقُنُوتِ , فَلَمْ نَجِدْهَا تَدُلُّ عَلَى وُجُوبِهِ الْآنَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ لَمْ نَأْمُرْ بِهِ فِيهَا وَأَمَرْنَا بِتَرْكِهِ , مَعَ أَنَّ بَعْضَ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ أَنْكَرَهُ أَصْلًا
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান