শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

২. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৯২৩
সালাতের ওয়াক্ত
৯২৩। আবু বাকরা (রাযিঃ) ও ইবন মারযুক (রাহঃ)..... সামুরা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ বলেছেন তোমারা সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায় করবে না। কেননা তখন তা শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখান দিয়ে উদিত হয় এবং শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখান দিয়ে অস্ত যায়।

বিশ্লেষণ

ফকীহ আলিমগণ বলেছেন যেহেতু রাসূলুল্লাহ্ সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায় থেকে নিষেধ করেছেন, তাই এতে সাব্যস্ত হল যে, এটা সালাতের ওয়াক্ত নয় এবং তা আসার সাথে সাথেই আসরের ওয়াক্ত বের (শেষ) হয়ে যায়।
তাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় পক্ষের আলিমদের দলীল হল যে, এ হাদীসে সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায়ের নিষিদ্ধতা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু অন্য রিওয়ায়াতে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি সূর্য ডোবার আগে আসরের এক রাক'আত পেল সে আসরের (সালাত) পেয়ে গেল। সুতরাং এই হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হল, এই সময়টিতে আসরের সালাত শুরু করা যেতে পারে। অতএব প্রথমোক্ত হাদীসে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অন্য অর্থে প্রয়োগ করা হবে, যা অপর হাদীসে বৈধ করা হয়েছে, যেন উভয় হাদীসে পারস্পরিক বৈপরিত্য সৃষ্টি না হয়। অতএব এই সমস্ত রিওয়ায়াতের এটাই সর্বোত্তম ব্যাখ্যা, যার ফলে হাদীসগুলো পরস্পরের সাথে সাংঘর্ষিক থাকে না।

ইমাম তাহাবী (রাহঃ)-এর যুক্তিভিত্তিক দলীল

আমাদের মতে যুক্তির নিরিখে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশ্লেষণ হল নিম্নরূপ: আমরা যুহর এবং অবশিষ্ট সমস্ত সালাতের ওয়াক্ত সমূহের ব্যাপারে লক্ষ্য করেছি যে, তাতে সমস্ত নফল এবং সমস্ত কাযা সালাত আদায় করা জায়িয আছে। অনুরূপভাবে এ বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে যে, আসর ও ফজরের ওয়াক্তেও কাযা সালাত আদায় করা জায়িয আছে, এতে শুধুমাত্র নফল আদায়ের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক সেই ওয়াক্ত যা সালাতের ওয়াক্ত হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে, তাতে কাথা সালাত আদায় করার ব্যাপারেও সকলের ঐকমতা রয়েছে। যখন সাব্যস্ত হল, সমস্ত সালাতের এই গুণাগুণ স্বীকৃত বিষয় এবং এটাও সাব্যস্ত হল যে, সূর্যাস্তের সময় ঐকমত্যভাবে কোন কাষা সালাত আদায় করা জায়িয নয়। এতে ফরয সালাত সমূহের ওয়াক্ত সমূহের কুণাগুণ থেকে এর বিধান বের হয়ে গেল এবং সাব্যস্ত হল, এই ওয়াক্তে কোন সালাত আদায় করা যাবে না। যেমন দ্বিপ্রহর এবং সূর্যোদয়ের সময় (আদায় করা যায় না)।

আর রাসুলুল্লাহ হল কর্তৃক সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায়ের প্রতি নিষেধাজ্ঞা, “যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের সালাতের এক রাক'আত পেল সে আসরের সালাত পেয়ে গেল” তাঁর এই উক্তির জন্য রহিতকারী, এটা সেই প্রমাণ সমূহের ভিত্তিতে, যা আমরা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা সহকারে বর্ণনা করে এসেছি ।

বস্তুত আমাদের মতে এটাই কিয়াম ও যুক্তি। আর এটা ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ), ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর অভিমত। মাগরিবের ওয়াক্ত সম্পর্কে প্রথমোক্ত সমস্ত হাদীসসমূহে ব্যক্ত হয়েছে যে, তিনি তা সূর্যাস্তের সাথে সাথে আদায় করেছেন। পক্ষান্তরে কিছু সংখ্যক আলিম এর পরিপন্থী মত পোষণ করে বলেছেন : মাগরিবের প্রথম ওয়াজ হল যখন তারকারাজি উদিত হয়। তাঁরা এ বিষয়ে নিম্নোক্ত রিওয়াত দ্বারা প্রমাণ পেশ করেন ।
923 - حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرَةَ، وَابْنُ مَرْزُوقٍ قَالَا: ثنا وَهْبٌ، قَالَ: ثنا شُعْبَةُ، عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ، قَالَ: سَمِعْتُ الْمُهَلَّبَ بْنَ أَبِي صُفْرَةَ، يُحَدِّثُ عَنْ سَمُرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " لَا تُصَلُّوا عِنْدَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَلَا عِنْدَ غُرُوبِهَا فَإِنَّهَا تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَيِ الشَّيْطَانِ , أَوْ عَلَى قَرْنَيِ الشَّيْطَانِ , وَتَغْرُبُ بَيْنَ قَرْنَيِ الشَّيْطَانِ , أَوْ عَلَى قَرْنَيِ الشَّيْطَانِ قَالُوا: فَلَمَّا نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الصَّلَاةِ عِنْدَ غُرُوبِ الشَّمْسِ , ثَبَتَ أَنَّهُ لَيْسَ بِوَقْتِ صَلَاةٍ وَأَنَّ وَقْتَ الْعَصْرِ يَخْرُجُ بِدُخُولِهِ. فَكَانَ مِنْ حُجَّةِ الْآخَرِينَ عَلَيْهِ أَنَّهُ رُوِيَ فِي هَذَا الْحَدِيثِ , النَّهْيُ عَنِ الصَّلَاةِ عِنْدَ غُرُوبِ الشَّمْسِ وَرُوِيَ فِي غَيْرِهِ «مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الْعَصْرِ قَبْلَ أَنْ تَغِيبَ الشَّمْسُ فَقَدْ أَدْرَكَ الْعَصْرَ» فَكَانَ فِي ذَلِكَ إِبَاحَةُ الدُّخُولِ فِي الْعَصْرِ فِي ذَلِكَ الْوَقْتِ. فَجَعَلَ النَّهْيَ فِي الْحَدِيثِ الْأَوَّلِ عَلَى غَيْرِ الَّذِي أُبِيحَ فِي الْحَدِيثِ الْآخَرِ حَتَّى لَا يَتَضَادَّ الْحَدِيثَانِ. فَهَذَا أَوْلَى مَا حُمِلَتْ عَلَيْهِ الْآثَارُ , حَتَّى لَا يَتَضَادَّ. وَأَمَّا وَجْهُ النَّظَرِ عِنْدَنَا فِي ذَلِكَ , فَإِنَّا رَأَيْنَا وَقْتَ الظُّهْرِ وَالصَّلَوَاتُ كُلُّهَا فِيهِ مُبَاحَةٌ التَّطَوُّعُ كُلُّهُ , وَقَضَاءُ كُلِّ صَلَاةٍ فَائِتَةٍ. وَكَذَلِكَ مَا اتُّفِقَ عَلَيْهِ أَنَّهُ وَقْتُ الْعَصْرِ , وَوَقْتُ الصُّبْحِ مُبَاحٌ قَضَاءُ الصَّلَوَاتِ الْفَائِتَاتِ فِيهِ , فَإِنَّمَا نَهَى عَنِ التَّطَوُّعِ خَاصَّةً فِيهِ. فَكَانَ كُلُّ وَقْتٍ قَدِ اتُّفِقَ عَلَيْهِ أَنَّهُ وَقْتُ الصَّلَاةِ عَنْ هَذِهِ الصَّلَوَاتِ , كُلٌّ قَدْ أَجْمَعَ أَنَّ الصَّلَاةَ الْفَائِتَةَ تُقْضَى فِيهِ. فَلَمَّا ثَبَتَ أَنَّ هَذِهِ صِفَةُ أَوْقَاتِ الصَّلَوَاتِ الْمُجْمَعِ عَلَيْهَا , وَثَبَتَ أَنَّ غُرُوبَ الشَّمْسِ لَا يُقْضَى فِيهِ صَلَاةٌ فَائِتَةٌ بِاتِّفَاقِهِمْ خَرَجَتْ بِذَلِكَ صِفَتُهُ مِنْ صِفَةِ أَوْقَاتِ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ , وَثَبَتَ أَنَّهُ لَا يُصَلَّى فِيهِ صَلَاةٌ أَصْلًا كَنِصْفِ النَّهَارِ , وَطُلُوعِ الشَّمْسِ وَأَنَّ نَهْيَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الصَّلَاةِ عِنْدَ غُرُوبِ الشَّمْسِ , نَاسِخٌ لِقَوْلِهِ «مَنْ أَدْرَكَ مِنَ الْعَصْرِ رَكْعَةً قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ فَقَدْ أَدْرَكَ الْعَصْرَ» لِلدَّلَائِلِ الَّتِي شَرَحْنَاهَا , وَبَيَّنَّاهَا. فَهَذَا هُوَ النَّظَرُ , عِنْدَنَا , وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ رَحِمَهُ اللهُ , وَأَبِي يُوسُفَ رَحِمَهُ اللهُ وَمُحَمَّدٍ رَحِمَهُ اللهُ. وَأَمَّا وَقْتُ الْمَغْرِبِ فَإِنَّ فِي الْآثَارِ الْأُوَلِ كُلِّهَا أَنَّهُ قَدْ صَلَّاهَا عِنْدَ غُرُوبِ الشَّمْسِ. وَقَدْ ذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى خِلَافِ ذَلِكَ فَقَالُوا أَوَّلُ وَقْتِ الْمَغْرِبِ حِينَ يَطْلُعُ النَّجْمُ. وَاحْتَجُّوا فِي ذَلِكَ
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ত্বহাবী শরীফ - হাদীস নং ৯২৩ | মুসলিম বাংলা