শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

১. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৫৫
আন্তর্জাতিক নং: ৬৫৬
হালাল পশুর পেশাবের বিধান
৬৫৫-৬৫৬। হুসাইন ইবন নসর (রাহঃ) ও আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মাদ ইবন খাশীশ (রাহঃ)...... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একবার এক যুদ্ধে যুবাইর (রাযিঃ) ও আব্দুর রহমান ইবন আউফ (রাযিঃ) নবী -এর দরবারে উকুন সম্পর্কে অভিযোগ উত্থাপন করলে তিনি তাদেরকে রেশমী জামা পরিধান করার অনুমতি প্রদান করেন। আনাস (রাযিঃ) বলেন, আমি তাদের উভয়ের পরিধানে রেশমী জামা দেখেছি।

বিশ্লেষণ

বস্তুত রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সেই সমস্ত পুরুষদের জন্য রেশম পরিধান করা বৈধ সাব্যস্ত করেছেন, যাদের খোস-পাঁচড়া ছিল এবং ওটা ছিল তার চিকিৎসা। উক্ত রোগের কারণে তাদের জন্য রেশমের বৈধতা এ বিষয়ের কোনরূপ দলীল নয় যে, উক্ত রোগ: ব্যতীতও রেশম বৈধ হবে। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) উরায়না গোত্রের লোকদের জন্য তাদের রোগের কারণে যে বস্তু হালাল করেছেন, এর দ্বারা এটা সাব্যস্ত হবে না যে, তা উক্ত রোগ ব্যতীতও হালাল হবে। রেশমী পোশাক পরিধান হারাম হওয়া জরুরী; প্রয়োজনের অবস্থায় এর হালাল হওয়ার পরিপন্থী নয়। অনুরূপভাবে জরুরী প্রয়োজনের অবস্থা ব্যতিরেক পেশাব হারাম হওয়ার দ্বারা এটা আবশ্যক নয় যে, ওটা জরুরী প্রয়োজনের সময়ও হারাম হবে। অতএব এতে প্রমাণিত হল যে, মদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) -এর উক্তি “এটা ব্যাধি, শিফা নয়" এটা এই ভিত্তিতে ছিল যে, যেহেতু তারা এটাকে মদ মনে করেই এর থেকে শিক্ষা অর্জন করতে চাইত এবং ওটা হারাম। অনুরূপভাবে আমাদের মতে আব্দুল্লাহ্ (রাযিঃ)-এর উক্তির মর্ম, আল্লাহ্ তা'আলা যে বস্তু তোমাদের উপর হারাম করেছেন তাতে তোমাদের শিক্ষা রাখেনি। এর ভিত্তি ছিল এ যে, তারা মদের সম্মান করত এবং তারা এটাকে প্রকৃতিগতভাবে উপকারী মনে করত। তাই তিনি তাদেরকে বললেন, আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের উপর যে বস্তু হারাম করেছেন তাতে তোমাদের জন্য শিক্ষা রাখেননি।

এই সমস্ত হাদীসের এটাই হচ্ছে বিশ্লেষণ। এই সমস্ত রিওয়ায়াত যখন সেই সম্ভাবনাও রাখছে যা আমরা উল্লেখ করেছি এবং তাতে পেশাব পাক হওয়ার ব্যাপারে কোনরূপ দলীল নেই, তাই আমরা আবশ্যক মনে করছি যে, গভীর চিন্তা ও যুক্তির নিরিখে অনুসন্ধান চালাব এবং দেখব যে, এর বিধান কি? যখন আমরা এ বিষয়ে গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি তখন দেখতে পেয়েছি যে, সমস্ত আলিমগণ এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, মানুষের গোশ্ত-পাক এবং তাদের পেশাব হারাম ও নাপাক।
আর তাদের পেশাবের বিধান ঐকমত্যভাবে তাদের রক্তের অধীন, গোশতের বিধানের অধীন নয়। সুতরাং যুক্তির দাবি হল, অনুরূপভাবে উঠের পেশাবের বিধান এর রক্তের সাথে সংশ্লিষ্ট হবে এর গোশূতের সাথে নয়। যা কিছু আমরা উল্লেখ করেছি এতে প্রমাণিত হল যে, উটের পেশাব নাপাক। আর এটাই হচ্ছে যুক্তির দাবি এবং এটাই ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ)-এর অভিমত। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্ববর্তী মনীষী আলিমগণ মতবিরোধ করেছেন। এ বিষয়ে তাঁদের থেকে বর্ণিত কিছু রিওয়ায়াত নিম্নরূপঃ
655 - حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ نَصْرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ يَزِيدَ بْنَ هَارُونَ، قَالَ: أنا هَمَّامٌ، ح

656 - وَحَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ خُشَيْشٍ، قَالَ: ثنا الْحَجَّاجُ بْنُ الْمِنْهَالِ، قَالَ: ثنا هَمَّامٌ، قَالَ: أنا قَتَادَةُ، عَنْ أَنَسٍ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ " أَنَّ الزُّبَيْرَ، وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَوْفٍ شَكَوْا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقَمْلَ , فَرَخَّصَ لَهُمَا فِي قَمِيصِ الْحَرِيرِ , فِي غَزَاةٍ لَهُمَا. قَالَ أَنَسٌ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: فَرَأَيْتُ عَلَى كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا قَمِيصًا مِنْ حَرِيرٍ «فَهَذَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , قَدْ أَبَاحَ الْحَرِيرَ لِمَنْ أَبَاحَ لَهُ اللُّبْسَ مِنَ الرِّجَالِ , لِلْحَكَّةِ الَّتِي كَانَتْ بِمَنْ أَبَاحَ ذَلِكَ لَهُ فَكَانَ ذَلِكَ مِنْ عِلَاجِهَا , وَلَمْ يَكُنْ فِي إِبَاحَتِهِ ذَلِكَ لَهُمْ لِلْعِلَّةِ الَّتِي كَانَتْ بِهِمْ مَا يَدُلُّ أَنَّ ذَلِكَ مُبَاحٌ فِي غَيْرِ تِلْكَ الْعِلَّةِ. فَكَذَلِكَ أَيْضًا مَا أَبَاحَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلْعُرَنِيِّينَ لِلْعِلَلِ الَّتِي كَانَتْ بِهِمْ , فَلَيْسَ فِي إِبَاحَةِ ذَلِكَ لَهُمْ , دَلِيلٌ أَنَّ ذَلِكَ مُبَاحٌ فِي غَيْرِ تِلْكَ الْعِلَلِ. وَلَمْ يَكُنْ فِي تَحْرِيمِ لُبْسِ الْحَرِيرِ مَا يَنْفِي أَنْ يَكُونَ حَلَالًا فِي حَالِ الضَّرُورَةِ , وَلَا أَنَّهُ عِلَاجٌ مِنْ بَعْضِ الْعِلَلِ. وَكَذَلِكَ حُرْمَةُ الْبَوْلِ فِي غَيْرِ حَالِ الضَّرُورَةِ , لَيْسَ فِيهِ دَلِيلٌ , أَنَّهُ حَرَامٌ فِي حَالِ الضَّرُورَةِ. فَثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّ قَوْلَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْخَمْرِ» إِنَّهُ دَاءٌ وَلَيْسَ بِشِفَاءٍ «إِنَّمَا هُوَ لِأَنَّهُمْ كَانُوا يَسْتَشِفُّونَ بِهَا , لِأَنَّهَا خَمْرٌ , فَذَلِكَ حَرَامٌ. وَكَذَلِكَ مَعْنَى قَوْلِ عَبْدِ اللهِ عِنْدَنَا إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ ,» لَمْ يَجْعَلْ شِفَاءَكُمْ فِيمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ " , إِنَّمَا هُوَ لَمَّا كَانُوا يَفْعَلُونَ بِالْخَمْرِ , لِإِعْظَامِهِمْ إِيَّاهَا. وَلِأَنَّهُمْ كَانُوا يَعُدُّونَهَا شِفَاءً فِي نَفْسِهَا , فَقَالَ لَهُمْ: «إِنَّ اللهَ لَمْ يَجْعَلْ شِفَاءَكُمْ فِيمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ» فَهَذِهِ وُجُوهُ هَذِهِ الْآثَارِ. فَلَمَّا احْتَمَلَتْ مَا ذَكَرْنَا , وَلَمْ يَكُنْ فِيهَا دَلِيلٌ عَلَى طَهَارَةِ الْأَبْوَالِ , احْتَجْنَا أَنْ نَرْجِعَ فَنَلْتَمِسَ ذَلِكَ مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ فَنَعْلَمَ كَيْفَ حُكْمُهُ؟ فَنَظَرْنَا فِي ذَلِكَ , فَإِذَا لُحُومُ بَنِي آدَمَ , كُلٌّ قَدْ أَجْمَعَ أَنَّهَا لُحُومٌ طَاهِرَةٌ وَأَنَّ أَبْوَالَهُمْ حَرَامٌ نَجِسَةٌ , فَكَانَتْ أَبْوَالُهُمْ بِاتِّفَاقِهِمْ مَحْكُومًا لَهَا بِحُكْمِ دِمَائِهِمْ , لَا بِحُكْمِ لُحُومِهِمْ. [ص:110] فَالنَّظَرُ عَلَى ذَلِكَ أَنْ تَكُونَ كَذَلِكَ أَبْوَالُ الْإِبِلِ , يَحْكُمُ لَهَا بِحُكْمِ دِمَائِهَا , لَا بِحُكْمِ لُحُومِهَا , فَثَبَتَ بِمَا ذَكَرْنَا أَنَّ أَبْوَالَ الْإِبِلِ نَجِسَةٌ. فَهَذَا هُوَ النَّظَرُ , وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالَى وَقَدِ اخْتَلَفَ الْمُتَقَدِّمُونَ فِي ذَلِكَ. فَمِمَّا رُوِيَ عَنْهُمْ فِي ذَلِكَ مَا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইসলাম তার যাবতীয় বিধানে সহুলতের প্রতি লক্ষ রেখেছে। এক তো ইসলাম মানুষকে এমন কোনও বিধান দেয়নি, যা পালন করা তাদের সাধ্যাতীত বা অনেক বেশি কঠিন। তারপর আবার যে বিধানই দিয়েছে তাতে মানুষের ওজর বিবেচনায় রাখা হয়েছে। ওজরের কারণে কোনও কোনও বিধান হয় সহজ করা হয়েছে, নয়তো মওকুফই করে দেওয়া হয়েছে। সফর অবস্থায় নামায কসর করা এবং রোযা অন্য সময় রাখার সুযোগ দেওয়া সহুলতের নিদর্শন। মহিলাদের তাদের ঋতুকালীন নামায পরে কাযাও করতে হয় না। সম্পূর্ণ মওকুফ। ওজর থাকলেও সর্বাবস্থায় সকল হুকুম পালন করতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা আমাদের শরী'আতে নেই। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ
তিনি দীনের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কোনও সংকীর্ণতা আরোপ করেননি। (সূরা হজ্জ, আয়াত ৭৮)

অন্যত্র ইরশাদ-
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
'আল্লাহ কারও উপর তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব অর্পণ করেন না।' (সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৬)

সুতরাং কারও শরীরে যদি চুলকানি থাকে আর সে কারণে রেশমী কাপড় ছাড়া অন্য কোনও কাপড় পরা তার জন্য কঠিন হয়ে যায়, তবে তার জন্য এ সহুলত রাখা হয়েছে যে, সে রেশমী পোশাক পরতে পারবে। ওজরের কারণে রেশমী পোশাক পরিধানের নিষিদ্ধতা তার জন্য মওকুফ রাখা হয়েছে। হযরত যুবায়র ইবনুল আউওয়াম রাযি. ও হযরত আব্দুর রহমান ইবন আওফ রাযি.-এর শরীরে চুলকানি ছিল। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে রেশমী পোশাক পরার অবকাশ দান করেন। এ অবকাশ যে-কোনও চর্মরোগীর জন্য প্রযোজ্য। যদি কোনও চর্মরোগীর অন্য পোশাক পরিধান করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, তবে সে রেশমী পোশাক পরতে পারবে। বিষয়টি কেবল চর্মরোগের জন্যই নির্দিষ্ট নয়। চর্মরোগ একটা ওজর। কাজেই অন্য কোনও ওজর পাওয়া গেলেও সে ক্ষেত্রে এ অবকাশ প্রযোজ্য হবে। যেমন কেউ যদি শীত ও তাপ নিবারণের জন্য অন্য কোনও পোশাকের ব্যবস্থা করতে না পারে আর তার কাছে রেশমী পোশাক থাকে, তবে সেও রেশমী পোশাক ব্যবহার করতে পারবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. শরী'আতের যাবতীয় বিধানে মানুষের ওজর-অজুহাত বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

খ. চর্মরোগ বা অন্য কোনও ওজর থাকলে রেশমী কাপড় ব্যবহারের অবকাশ রয়েছে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান