শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ

১. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৩২
অনুচ্ছেদঃ চামড়ার মোজায় মাসেহ করার মেয়াদ মুকীম এবং মুসাফিরের ক্ষেত্রে
৫৩২. ইব্ ন খুযায়মা (রাহঃ).... যায়দ ইব্ ন ওয়াহাব (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,তিনি বলেছেন উমার (রাযিঃ) মোজায় মাসেহের সম্পর্কে আমাদের লিখেছেনঃ মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকীমের জন্য একদিন একরাত পর্যন্ত।

বিশ্লেষণ
ইনি হচ্ছেন উমার(রাযিঃ)। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার থেকেও এর অনুকূলে হাদীস বর্ণিত আছে, যা আমরা মুসাফির এবং মুকীমের জন্য মেয়াদ নির্ধারণে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে রিওয়ায়াত করেছি।
উক্ বা (রাযিঃ) এর হাদীসেও সম্ভবনা আছে যে, তা হল উমার (রাযিঃ)- এর বক্তব্য। যেহেতু তিনি অবগত ছিলেন যে উকবা (রাযিঃ) যে পথে এসেছেন, তার জন্য বিধান ছিল তায়াম্মুম করা।এজন্য তিনি তাকে জিজ্ঞাস করেনঃ যখন তোমার জন্য তায়াম্মুমের বিধান আরোপিত হয়েছে তাহলে, তুমি মোজা খুলবে কখন?তাই তিনি তাকে যে উত্তর দেয়ার ছিল,তাই দিয়েছেন।বস্তুত এই হাদীসের ব্যাখ্যাই সর্বোত্তম যেন এটা উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত অন্য রিওয়ায়াতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়,বৈপরীত্য সৃষ্টি না হয়।আমরা সামঞ্জস্য বিধানে যা উল্লেখ করেছি, তা উমার (রাযিঃ) ব্যতীত অন্য সাহাবীদের থেকে বর্ণিত আছেঃ…..
532 - حَدَّثَنَا ابْنُ خُزَيْمَةَ، قَالَ: ثنا حَجَّاجٌ، قَالَ: ثنا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي زِيَادٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ وَهْبٍ، قَالَ: كَتَبَ إِلَيْنَا عُمَرُ فِي الْمَسْحِ عَلَى الْخُفَّيْنِ: «لِلْمُسَافِرِ ثَلَاثَةُ أَيَّامٍ وَلَيَالِيهِنَّ وَلِلْمُقِيمِ يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ» فَهَذَا عُمَرُ قَدْ جَاءَ عَنْهُ فِي هَذَا , مَا يُوَافِقُ مَا رَوَيْنَا , عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي التَّوْقِيتِ لِلْمُسَافِرِ وَلِلْمُقِيمِ وَقَدْ يَحْتَمِلُ حَدِيثُ عُقْبَةَ أَيْضًا أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ الْكَلَامُ , كَانَ مِنْ عُمَرَ , لِأَنَّهُ عَلِمَ أَنَّ طَرِيقَ عُقْبَةَ , الَّذِي جَاءَ مِنْهُ طَرِيقٌ لَا مَاءَ فِيهِ. فَكَانَ حُكْمُهُ أَنْ يَتَيَمَّمَ فَسَأَلَهُ: مَتَى عَهْدُكَ بِخَلْعِ خُفَّيْكَ , إِذَا كَانَ حُكْمُكَ هُوَ التَّيَمُّمُ , فَأَخْبَرَهُ بِمَا أَخْبَرَهُ. وَهَذَا الْوَجْهُ أَوْلَى مَا حُمِلَ عَلَيْهِ هَذَا الْحَدِيثُ لِيُوَافِقَ مَا رُوِيَ عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ سِوَاهُ وَلَا يُضَادُّهُ. وَقَدْ رُوِيَ عَنْ غَيْرِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا يُوَافِقُ مَا رَوَيْنَا فِي التَّوْقِيتِ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মোজার ওপর মাসেহ করার সময় মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত।’ (সুরা : আবু দাউদ, আয়াত : ১৩৫)

ইসলামী শরিয়তের বিধান মতে, অজু সহজভাবে করার জন্য পা ধৌত করার বিকল্প হিসেবে মোজার ওপর মাসেহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

মাসেহ বৈধ হওয়ার শর্তসমূহ

যতক্ষণ পর্যন্ত নিম্নোল্লিখিত শর্তসমূহ পাওয়া যাবে, মোজার ওপর মাসেহ বৈধ হবে।

১। পবিত্র হয়ে মোজা পরা। অর্থাৎ অজু করে পা ধোয়ার পর মোজা পরা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৯)

২। মোজা দ্বারা টাখনু ঢাকা থাকতে হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৩৫৪)

৩। মোজা ফাটাছেঁড়া হলে পায়ের ছোট আঙুলের তিন আঙুল পরিমাণের কম ফাটাছেঁড়া থাকতে হবে। (আবু দাউদ ২৪২০, আল-আশবাহ ১/১১৪, আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা : ৩৭/২৬৫)

৪। উভয় মোজা বাঁধা ছাড়া পায়ে লেগে থাকতে হবে।

৫। তা ধারাবাহিক চলার উপযোগী হতে হবে। (আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা : ৩৭/২৬৪)

সুতরাং আমাদের দেশে প্রচলিত সুতার মোজার ওপর মাসেহ বৈধ নয়।

মাসেহর ফরজ ও সুন্নতসমূহ

মাসেহর ফরজ সীমারেখা : হাতের ছোট তিন আঙুলের সমান পায়ের ওপরের অংশ মাসেহ করা। (আবু দাউদ : ১৪০, সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি : ১৪৩৭, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৮৫)

মাসেহর সুন্নত : পায়ের আঙুলের মাথা থেকে হাতের আঙুলগুলো প্রশস্ত করে টাখনু পর্যন্ত মাসেহ করবে। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৮৫, কিতাবুল আসার : ১/৭২)

মোজা মাসেহর নির্ধারিত মেয়াদ

মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকিমের জন্য এক দিন এক রাত। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৫)

মাসেহর সময় শুরু হবে যখন থেকে অজু ভেঙে যায় (হাদাস হয়)। আর এটি যখন থেকে মোজা পরা হয়, সে সময় থেকে নয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৮০)

মুকিম যদি মাসেহ করার পর সফর আরম্ভ করে, তবে মুসাফিরের সময়সীমা পরিপূর্ণ করবে, তদ্রূপ মুসাফির যদি মাসেহ করার পর মুকিম হয়ে যায়, তবে মুকিমের নির্ধারিত মেয়াদ পূরণ করবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৫, মুসান্নাফে আব্দির রাজ্জাক : ১/২২১)

মাসেহ ভঙ্গকারী বিষয়

১। যেসব কারণে অজু ভঙ্গ হয় সেসব কারণে মাসেহও ভঙ্গ হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৯)

২। মোজা খোলার কারণে মাসেহ ভেঙে যায়। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ১৪২২)

৩। মোজা যদি পায়ের টাখনুসহ বেশির ভাগ অংশ বের হয়ে যায়, তখনো মাসেহ ভেঙে যাবে। (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ১৪২২, ১৩৯৬)

৪। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মাধ্যমে মাসেহ ভেঙে যায়। (বাদায়ে : ১/৪৬)

৫। উভয় মোজার কোনো একটিতে বেশির ভাগ অংশে পানি পৌঁছে গেলে মাসেহ ভেঙে যায়। (সুনানুল কুবরা : ১৩৯৬, মুআত্তা মুহাম্মদ : ২/৫৮৭)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান