শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
১. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৩৫
অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি সহবাস করে; কিন্তু বীর্যপাত হয় না
৩৩৫। সালিহ ইবন আব্দুর রহমান (রাহঃ)... উবাইদ ইব্ন রিফায়া আনসারী (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ আমরা একবার যায়দ ইবন সাবিত (রাযিঃ)-এর মজলিসে ছিলাম। আমরা বীর্যপাতের কারণে গোসল করা সম্পর্কে আলোচনা করলাম। যায়দ (রাযিঃ) বললেনঃ তোমাদের কেউ যদি বীর্যপাত করা ব্যতীত (স্ত্রী) সহবাস করে তাহলে তার জন্য এতটুকু আবশ্যক যে, নিজের লজ্জাস্থান ধৌত করবে এবং সালাতের উযূর ন্যায় উযূ করবে। জনৈক ব্যক্তি মজলিস থেকে উঠে গিয়ে উমার (রাযিঃ)-কে এই বিষয় অবহিত করল। উমার (রাযিঃ) উক্ত ব্যক্তিকে বললেন, তুমি নিজে গিয়ে তাঁকে (যায়দ) আমার নিকট নিয়ে এস, যেন তুমি তার উপর সাক্ষ্য দিতে পার। সে গেল এবং তাঁকে নিয়ে এল। আর সে সময়ে উমার (রাযিঃ)-এর নিকট কতিপয় সাহাবী উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে আলী ইব্ন আবী তালিব (রাযিঃ). ও মু’আয ইব্ন জাবাল (রাযিঃ)ও ছিলেন। উমার (রাযিঃ) তাঁকে বললেনঃ তুমি তো নিজের শত্রুতা করছ, লোকদেরকে এরূপ ফাতওয়া দিচ্ছ? যায়দ (রাযিঃ) বললেনঃ আল্লাহ্র কসম! আমি এটা নিজে নিজে উদ্ভাবন করিনি; বরং আমি তা আমার চাচাদের মধ্যে রিফায়া ইবন রাফি (রাযিঃ) ও আবু আয়্যূব আনসারী (রাযিঃ) থেকে শুনেছি। উমার (রাযিঃ) তাঁর নিকট উপস্থিত সাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বললেন, এ বিষয়ে তোমরা কি বলছ? তাঁরা এতে মতবিরোধ করলেন। উমার (রাযিঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র বান্দাগণ! তোমাদের পরবর্তীতে আমি কাকে জিজ্ঞাসা করব, তোমরা হচ্ছ বদরযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সর্বোত্তম লোক। আলী ইব্ন আবী তালিব (রাযিঃ) তাঁকে বললেন, উম্মুল মু’মিনীনদের নিকট কাউকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার জন্য পাঠান। যদি তাঁদের নিকট এ বিষয়ে কিছু (ইল্ম) থেকে থাকে, তাহলে তা আপনার জন্য প্রকাশ করে দিবেন। তারপর তিনি হাফসা (রাযিঃ)-এর নিকট কাউকে পাঠালেন, এবং তাঁকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তারপর তিনি আয়েশা (রাযিঃ)-এর নিকট (লোক) পাঠালেন। তিনি বললেনঃ মিলনকালে যখন স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের খাত্নার স্থান অতিক্রম করবে গোসল ফরয হয়ে যাবে। তখন উমার (রাযিঃ) বললেনঃ যদি আমি জানতে পারি যে, কেউ এরূপ করেছে তারপর সে গোসল করেনি, তাহলে আমি তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করব।
باب الذي يجامع ولا ينزل
335 - حَدَّثَنَا صَالِحُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، قَالَ: ثنا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمُقْرِئُ، قَالَ: ثنا ابْنُ لَهِيعَةَ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ، عَنْ مَعْمَرِ بْنِ أَبِي حَبِيبَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ عُبَيْدَ بْنَ رِفَاعَةَ الْأَنْصَارِيَّ، يَقُولُ: كُنَّا فِي مَجْلِسٍ فِيهِ زَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ فَتَذَاكَرْنَا الْغُسْلَ مِنَ الْإِنْزَالِ. فَقَالَ زَيْدٌ: " مَا عَلَى أَحَدِكُمْ إِذَا جَامَعَ فَلَمْ يُنْزِلْ إِلَّا أَنْ يَغْسِلَ فَرْجَهُ , وَيَتَوَضَّأَ وُضُوءَهُ لِلصَّلَاةِ. فَقَامَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْمَجْلِسِ , فَأَتَى عُمَرَ فَأَخْبَرَهُ بِذَلِكَ. فَقَالَ عُمَرُ لِلرَّجُلِ: اذْهَبْ أَنْتَ بِنَفْسِكَ فَائْتِنِي بِهِ حَتَّى يَكُونَ أَنْتَ الشَّاهِدَ عَلَيْهِ. فَذَهَبَ فَجَاءَ بِهِ , وَعِنْدَ عُمَرَ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فِيهِمْ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ , وَمُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا فَقَالَ: عُمَرُ: أَنْتَ عَدُوُّ نَفْسِكَ , تُفْتِي النَّاسَ بِهَذَا؟ فَقَالَ زَيْدٌ: أَمْ وَاللهِ مَا ابْتَدَعْتُهُ وَلَكِنِّي سَمِعْتُهُ مِنْ عَمَّايَ رِفَاعَةَ بْنِ رَافِعٍ وَمِنْ أَبِي أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيِّ. فَقَالَ عُمَرُ لِمَنْ عِنْدَهُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا تَقُولُونَ؟ فَاخْتَلَفُوا عَلَيْهِ. فَقَالَ عُمَرُ: يَا عِبَادَ اللهِ , فَمَنْ أَسْأَلُ بَعْدَكُمْ وَأَنْتُمْ أَهْلُ بَدْرٍ الْأَخْيَارُ؟ فَقَالَ لَهُ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ: فَأَرْسِلْ إِلَى أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِنَّهُ إِنْ كَانَ شَيْءٌ مِنْ ذَلِكَ , ظَهَرَتْ عَلَيْهِ. فَأَرْسَلَ إِلَى حَفْصَةَ فَسَأَلَهَا فَقَالَتْ: لَا عِلْمَ لِي بِذَلِكَ , ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا فَقَالَتْ: إِذَا جَاوَزَ الْخِتَانُ الْخِتَانَ , فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ. فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عِنْدَ ذَلِكَ: لَا أَعْلَمُ أَحَدًا فَعَلَهُ , ثُمَّ لَمْ يَغْتَسِلْ إِلَّا جَعَلْتُهُ نَكَالًا "
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বীর্যপাতবিহীন স্ত্রী সহবাসেও গোসল ফরয হয়। মুসলিম শরীফে হযরত আবু মুসা আশআ’রী রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে যে, বীর্যপাতবিহীন স্ত্রী সহবাসে গোসল ফরয হওয়া বা না হওয়ার বিষয়ে মুহাজির এবং আনসারদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে তিনি হযরত আয়েশা রা.-এর নিকট বিষয়টি জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে তিনি বললেন যে, শুধু সহবাস হলেই গোসল ফরয হবে। (মুসলিম-৬৭৮) এ থেকে বুঝা যায় যে, এ বিষয়টি নিয়ে সাহাবায়ে কিরামের শুরু যুগে মতবিরোধ থাকলেও তাঁদের সর্বশেষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো গোসল করতে হবে। এটাই হানাফী মাযহাবের মত। (শামী: ১/১৬১) সুতরাং হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যিনি এ বিষয়ে অন্য যে কারো চেয়ে ভালো জানতেন। সুতরাং কোন সাহাবার ভিন্ন মত থাকলেও হযরত আয়েশা রা.-এর মত ও বর্ণনা অগ্রাধিকারের জোর দাবী রাখে।
