মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৩১- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল

হাদীস নং: ৬১০৮
প্রথম অনুচ্ছেদ - আশারাহ্ মুবাশশারা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১০৮। হযরত ওমর (রাঃ) বলিয়াছেন, এই ব্যাপারে (অর্থাৎ, খেলাফতের ব্যাপারে) এই কয়েকজন ব্যতীত আমি অন্য আর কাহাকেও যোগ্যতম মনে করি না, যাহাদের প্রতি রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাতের সময় সন্তুষ্ট থাকিয়া গিয়াছেন। অতঃপর তিনি [ওমর (রাঃ)] হযরত আলী, ওসমান, যুবায়র, তালহা, সাদ ও আব্দুর রহমান (রাঃ)-এর নাম উল্লেখ করেন। —বুখারী
بَابُ مَنَاقِبِ الْعَشَرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ: الْفَصْلُ الأول
عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: مَا أَحَدٌ أَحَقَّ بِهَذَا الْأَمْرِ مِنْ هَؤُلَاءِ النَّفَرِ الَّذِينَ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَنْهُمْ رَاضٍ فَسَمَّى عَلِيًّا وَعُثْمَانَ وَالزُّبَيْرَ وَطَلْحَةَ وَسَعْدًا وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

যেই দশজন সাহাবী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁহাদের জীবদ্দশায় দুনিয়াতেই জান্নাতী হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করিয়াছেন, তাঁহাদিগকে "আশারায়ে মুবাশশারা” বলা হয়। আবু মনসুর বাগদাদী বলেন, সমস্ত উম্মতের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী হইলেন পর পর চারিজন খলীফা। ইহার পর অবশিষ্ট ছয়জন। তারপর বদরী সাহাবীগণ, তারপর ওহুদে অংশগ্রহণকারীগণ, তারপর বায়আতে রেওয়ানে অংশগ্রহণকারী সাহাবাগণ। অতঃপর দুই আকাবায় অংশগ্রহণকারীগণ। অতঃপর অবশিষ্ট সাহাবায়ে কেরাম। হযরত শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহঃ) তাঁহার التفهيمات الالهية গ্রন্থে বলিয়াছেন, দশজন সাহাবী জান্নাতী হওয়ার সুসংবাদটি একটি হাদীসে উল্লেখ থাকায় তাঁহারা “আশারায়ে মুবাশশারা” নামে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছেন, অন্যথায় পৃথক পৃথকভাবে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আরও অনেককেই জান্নাতী হওয়ার সুসংবাদ দান করিয়াছেন। যেমন, নবী (ﷺ)-এর বিবিগণ, আহলে বায়ত, হাসান, হোসাইন, তাঁহাদের মা ও নানী, হযরত হামযা প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)। "আশারায়ে মুবাশশারা” হইলেন এই দশজন। (১—৪) চারিজন খোলাফায়ে রাশেদীন, (৫) হযরত তালহা, (৬) হযরত যুবায়র ইবনুল আওয়াম, (৭) হযরত সা'দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস, (৮) হযরত সাঈদ ইবনে যায়দ, (৯) হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ ও (১০) হযরত আবু ওবায়দা (আমের) ইবনুল জাররাহ্ (রাঃ)। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী আশারায়ে মুবাশশারার নাম একটি কবিতায় এইভাবে উল্লেখ করিয়াছেনঃ

لَقَدْ بَشِّرَ الْهَادِي مِنَ الصَّحْبِ زُمْرَةُ + بِجَنَّاتِ عَدْنٍ كُلُّهُمْ فَضْلُهُ اشْتَهَرَ زُبَيْرٌ سَعْدٌ طَلْحَةُ عَامِرٌ + أَبُو بَكْرٍ عُثْمَانُ ابْنُ عَوْفٍ عَلِيٌّ

আবার কেহ এইভাবেও বলিয়াছেনঃ

لِلْمُصْطَفَى خَيْرُ صَحْبِ نَصَّ أَنَّهُمْ + فِي جَنَّةِ الْخُلْدِ نَصَّا زَادَهُمْ شَرَفًا هُمْ طَلْحَةُ وَابْنُ عَوْفٍ وَالزُّبَيْرُ مَعَ + أبِى عُبَيْدَةَ وَالشُّعْدَانِ وَالْخُلْفَا

প্রাসঙ্গিক ঘটনাঃ আততায়ী আবু লু'লু যখন হযরত ওমর (রাঃ)-কে আহত করিল, আর ওমর (রাঃ)-এর পুনঃ আরোগ্য হওয়ার লক্ষণ দেখা গেল না, তখন লোকেরা তাঁহাকে একজন খলীফা নিযুক্ত করিয়া দেওয়ার অনুরোধ করিল। তখন হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, খলীফা নির্বাচনের দায়িত্ব এই ছয়জনের উপর ন্যস্ত করিলাম। আমার ধারণা, ইঁহারাই সকলের অপেক্ষা যোগ্যতম ব্যক্তিত্ব। অবশেষে পাঁচ সদস্যের ঐক্যমতে হযরত ওসমান (রাঃ) খলীফা নির্বাচিত হইলেন এবং সমস্ত উম্মত সেই পাঁচজনের রায় নির্দ্বিধায় মানিয়া লইয়াছেন। সেই ছয় জন আশারায়ে মুবাশশারার অন্তর্ভুক্ত। হযরত আবু ওবায়দা (রাঃ) ইহার পূর্বেই ইনতেকাল করিয়াছেন। তাই হযরত ওমর (রাঃ) তাঁহার নাম উল্লেখ করেন নাই।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৬১০৮ | মুসলিম বাংলা