মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৩১- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল
হাদীস নং: ৬০৭৫
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উসমান (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৭৫। হযরত সুমামা ইবনে হায়ন কোশাইরী (রহঃ) বলেন, [যখন বিদ্রোহীগণ হযরত ওসমান (রাঃ)-কে গৃহবন্দী অবস্থায় অবরোধ করিয়া রাখিয়াছিল, এই সময়] আমি তাঁহার গৃহের কাছে উপস্থিত ছিলাম। যখন ওসমান গৃহের উপর হইতে লোকদের প্রতি তাকাইয়া বলিলেন, আমি তোমাদিগকে আল্লাহ্ এবং ইসলামের কসম দিয়া জিজ্ঞাসা করিতেছি— তোমরা কি এই ব্যাপারে অবগত আছ যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) হিজরত করিয়া যখন মদীনায় আগমন করিলেন, তখন “রুমার কূপ” ব্যতীত অন্য কোথাও মিষ্টি পানি পাওয়া যাইত না? তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেনঃ যে রুমার কূপটি খরিদ করিয়া মুসলমানদের অবাধে ব্যবহারের জন্য ওয়াকফ করিয়া দিবে, বিনিময়ে সে বেহেশতে তদপেক্ষা উত্তম কূপ লাভ করিবে। তখন আমি উক্ত কূপটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অর্থে খরিদ করি। অথচ আজ তোমরা আমাকে উক্ত কূপের পানি পান করা হইতে বাধা দিতেছ। এমন কি আমি সমুদ্রের লোনা পানি পান করিতেছি। লোকেরা বলিল, হে আল্লাহ্ ! — হ্যাঁ, আমরা জানি। ইহার পর তিনি বলিলেন, আমি তোমাদিগকে আল্লাহ্ এবং ইসলামের কসম দিয়া জিজ্ঞাসা করিতেছি— তোমরা কি জান যে, যখন মসজিদে নববী মুসল্লীদের তুলনায় সংকীর্ণ হইয়া পড়িল, তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছিলেন, যে ব্যক্তি অমুকের বংশধর হইতে এই যমীনটি খরিদ করিয়া মসজিদখানি বৃদ্ধি করিয়া দিবে, উহার বিনিময়ে আল্লাহ্ তা'আলা তাহাকে উহা হইতে উত্তম ঘর জান্নাতে দান করিবেন। তখন আমিই উহা আমার ব্যক্তিগত অর্থ হইতে খরিদ করি অথচ আজ তোমরা আমাকে সেই মসজিদে দুই রাকআত নামায পড়া হইতেও বাধা দিতেছ। উত্তরে লোকেরা বলিল, হে আল্লাহ্ ! — হ্যাঁ, আমরা জানি। অতঃপর তিনি বলিলেন, আমি তোমাদিগকে আল্লাহ্ ও ইসলামের নামে কসম দিয়া জিজ্ঞাসা করিতেছি — তোমরা কি অবগত আছ যে, দারুণ কষ্টের অভিযানে (অর্থাৎ, তবুক যুদ্ধে) সৈন্যদিগকে আমি আমার নিজস্ব সম্পদ হইতে যুদ্ধের সামান দিয়া সাজাইয়া দিয়াছিলাম? লোকেরা বলিল, হে আল্লাহ্ ! — হ্যাঁ, আমরা জানি। তারপর তিনি বলিলেন, আমি তোমাদিগকে আল্লাহ্ ও ইসলামের কসম দিয়া জিজ্ঞাসা করিতেছি— তোমরা এই কথাটিও অবগত আছ কি, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মক্কার অনতিদূরে “সাবীর” পাহাড়ের উপর দণ্ডায়মান ছিলেন, তাঁহার সঙ্গে তথায় আবু বকর, ওমর এবং জামিও ছিলাম। হঠাৎ পাহাড়টি নড়াচড়া করিতে লাগিল। এমন কি উহা হইতে কিছু পাথর নীচের দিকে পড়িতে লাগিল। তখন রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) উহাতে স্বীয় পা ঠুকিয়া বলিলেন, স্থির হইয়া যাও, হে সাবীর। তোমার উপর একজন নবী, একজন সিদ্দীক ও দুইজন শহীদই তো রহিয়াছেন। উত্তরে লোকেরা বলিল, হে আল্লাহ্ ! – হ্যাঁ, আমরা জানি। অতঃপর হযরত ওসমান বলিয়া উঠিলেন, আল্লাহু আকবর, লোকেরা সত্য সাক্ষ্যই দিয়াছে। অতঃপর তিনি তিনবার বলিলেন, কা'বার রবের কসম! নিশ্চয় আমি একজন শহীদ ব্যক্তি। —তিরমিযী, নাসায়ী ও দারা কুতনী
وَعَن ثُمامة بن حَزْنٍ الْقشيرِي قَالَ: شَهِدْتُ الدَّارَ حِينَ أَشْرَفَ عَلَيْهِمْ عُثْمَانُ فَقَالَ: أنْشدكُمْ بِاللَّه وَالْإِسْلَامَ هَلْ تَعْلَمُونَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ وَلَيْسَ بِهَا مَاءٌ يُسْتَعْذَبُ غَيْرُ بِئْرِ رُومَةَ؟ فَقَالَ: «مَنْ يَشْتَرِي بِئْرَ رُومَةَ يَجْعَلُ دَلْوَهُ مَعَ دِلَاءِ الْمُسْلِمِينَ بِخَيْرٍ لَهُ مِنْهَا فِي الْجَنَّةِ؟» فَاشْتَرَيْتُهَا مِنْ صُلْبِ مَالِي وَأَنْتُمُ الْيَوْمَ تَمْنَعُونَنِي أَنْ أَشْرَبَ مِنْهَا حَتَّى أَشْرَبَ مِنْ مَاءِ الْبَحْرِ؟ قَالُوا: اللَّهُمَّ نعم. فَقَالَ: أنْشدكُمْ بِاللَّه وَالْإِسْلَامَ هَلْ تَعْلَمُونَ أَنَّ الْمَسْجِدَ ضَاقَ بِأَهْلِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ يَشْتَرِي بُقْعَةَ آلِ فُلَانٍ فَيَزِيدُهَا فِي الْمَسْجِد بِخَير مِنْهَا فِي الْجَنَّةِ؟» . فَاشْتَرَيْتُهَا مِنْ صُلْبِ مَالِي فَأَنْتُمُ الْيَوْمَ تَمْنَعُونَنِي أَنْ أُصَلِّيَ فِيهَا رَكْعَتَيْنِ؟ فَقَالُوا: اللَّهُمَّ نعم. قَالَ: أنْشدكُمْ بِاللَّه وَالْإِسْلَامَ هَلْ تَعْلَمُونَ أَنِّي جَهَّزْتُ جَيْشَ الْعُسْرَةِ مِنْ مَالِي؟ قَالُوا: اللَّهُمَّ نَعَمْ. قَالَ: أَنْشُدُكُمُ بِاللَّه وَالْإِسْلَامَ هَلْ تَعْلَمُونَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ عَلَى ثَبِيرِ مَكَّةَ وَمَعَهُ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَأَنَا فَتَحَرَّكَ الْجَبَلُ حَتَّى تَسَاقَطَتْ حِجَارَتُهُ بِالْحَضِيضِ فَرَكَضَهُ بِرِجْلِهِ قَالَ: «اسْكُنْ ثَبِيرُ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ نَبِيُّ وَصِدِّيقٌ وَشَهِيدَانِ» . قَالُوا: اللَّهُمَّ نَعَمْ. قَالَ: اللَّهُ أَكْبَرُ شَهِدُوا وَرَبِّ الْكَعْبَةِ أَنِّي شَهِيدٌ ثَلَاثًا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيّ وَالدَّارَقُطْنِيّ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
بئر رومة রুমার কূপটি, আকীক উপত্যকায় মসজিদে কিবলাতাইন-এর উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত। বর্তমানে উহা “বীরে জান্নাত” বেহেশতী কূপ নামে প্রসিদ্ধ। হযরত ওসমান (রাঃ) এক লক্ষ দিরহামে উহা খরিদ করিয়া ওয়াকফ করিয়া দিয়াছিলেন। جبل ثبير সাবীর পাহাড়— মক্কা ও মিনার মধ্যবর্তী একটি পাহাড়। আল্লামা তীবী বলেন, “সাবীর” মিনায় যাওয়ার পথে মুযদালিফায় অবস্থিত। ইহারই অনতিদূরে মিনার অভ্যন্তরে মসজিদে খাইফ।
