মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২৯- সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামত পরবর্তী বর্ণনা
হাদীস নং: ৫৬৪৭
- সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামত পরবর্তী বর্ণনা
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬৪৭। সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব (রহঃ) হইতে বর্ণিত, একদা তিনি হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ)-এর সহিত সাক্ষাৎ করিলেন। তখন আবু হোরায়রা (রাঃ) বলিলেন, আমি আল্লাহর কাছে এই দো'আ করি, তিনি যেন আমাকে ও তোমাকে বেহেশতের বাজারে একত্রিত করেন। তখন সাঈদ বলিলেন, সেখানে কি বাজারও আছে? তিনি জবাবে বলিলেন, হ্যাঁ, আমাকে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ বেহেশতবাসীগণ যখন বেহেশতে প্রবেশ করিবে, তখন তাহারা নিজ নিজ আমলের মান অনুযায়ী স্থান লাভ করিবে। অতঃপর দুনিয়ার দিনগুলির হিসাব ও পরিমাণ অনুযায়ী সপ্তাহের জুমআর দিন তাহাদিগকে একটি বিশেষ অনুমতি প্রদান করা হইবে; আর উহা হইল তাহারা তাহাদের পরওয়ারদিগারের সাক্ষাৎ লাভ করিবে। সেই দিন আল্লাহ্ তা'আলা তাহার আশকে জনসমক্ষে উন্মুক্ত করিয়া দিবেন এবং বেহেশতবাসীদের সম্মুখে বেহেশতের বৃহৎ কাননসমূহের একটি কাননে আত্মপ্রকাশ করিবেন এবং বেহেশতবাসীদের জন্য তাহাদের মান ও মর্যাদা অনুপাতে নূরের, মণি-মুক্তার, যমররদের এবং সোনা-চান্দির মিম্বর স্থাপন করা হইবে। তাহাদের মধ্যে মামুলী মর্যাদাবান ব্যক্তি—অথচ বেহেশতীদের মধ্যে কেহ হীন হইবে না—কাফুর-কস্তুরীর টিলার উপর উপবেশন করিবে। এই সমস্ত টিলায় উপবেশনকারীগণ কুরসী বা আসনে উপবেশনকারীগণকে নিজেদের অপেক্ষা অধিক মর্যাদালাভকারী বলিয়া ধারণা করিবে না। (অর্থাৎ, প্রত্যেক জান্নাতী আপন স্থানে সন্তুষ্ট থাকিবে।) আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করিলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা কি আমাদের পরওয়ারদিগারকে দেখিতে পাইব? তিনি বলিলেন ; হ্যাঁ, দেখিতে পাইবে। আচ্ছা বল দেখি ! সূর্য এবং পূর্ণিমার রাত্রে চাঁদ দেখিতে তোমাদের কোন প্রকারের সন্দেহ হয় ? আমরা বলিলাম, না। কোন সন্দেহ হয় না। হুযূর (ﷺ) বলিলেন ; অনুরূপভাবে তোমাদের রবকে দেখিতে তোমাদের কোন রকমের সন্দেহ হইবে না এবং উক্ত মজলিসে এমন কোন লোক অবশিষ্ট থাকিবে না, যাহার সহিত আল্লাহ্ তা'আলা সরাসরি কথা বলিবেন না। এমন কি আল্লাহ্ তা'আলা উপস্থিত এক ব্যক্তিকে বলিবেনঃ হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমার কি স্মরণ আছে যে, অমুক দিন তুমি এই এই কথাটি বলিয়াছিলে? মোটকথা, দুনিয়াতে সে যেই সমস্ত অপরাধ করিয়াছিল উহার কিছু কিছু তাহাকে আল্লাহ্ তা'আলা স্মরণ করাইয়া দিবেন। তখন সে বলিবে, হে আমার রব! তুমি কি আমাকে ক্ষমা করিয়া দাও নাই? আল্লাহ্ বলিবেনঃ হ্যাঁ, নিশ্চয়। আমার ক্ষমার বদৌলতেই তুমি আজ এই মর্যাদার অধিকারী হইয়াছ। ফলকথা, তাহারা এই অবস্থায় থাকিতেই এক খণ্ড মেঘ আসিয়া তাহাদিগকে উপর হইতে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিবে এবং উহা তাহাদের উপর এমন সুগন্ধি বর্ষণ করিবে যে, অনুরূপ সুগন্ধি তাহারা আর কখনও পায় নাই। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা বলিবেন, তোমরা উঠ এবং উহার দিকে চল, যাহা আমি তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছি। আর তোমাদের মনে যাহা যাহা চায় উহা হইতে নিয়া নাও অতঃপর আমরা এমন একটি বাজারে আসিব, যাহাকে ফেরেস্তাগণ বেষ্টন করিয়া রাখিয়াছেন। উহাতে এমন সব জিনিস রক্ষিত থাকিবে— যাহা মানব চক্ষু কখনও দেখিতে পায় নাই, উহার সংবাদ কর্ণে শুনিতে পায় নাই, এমন কি মানুষের অন্তরও কল্পনা করিতে পারে নাই। সুতরাং আমাদিগকে সেই বাজার হইতে এমন সব কিছু দেওয়া হইবে যাহা যাহা আমরা পছন্দ করিব, অথচ উক্ত বাজারে কোন জিনিসই বেচা-কেনা হইবে না; বরং তথায় বেহেশতীগণ একজন অন্য জনের সহিত সাক্ষাৎ করিবে। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেন, সেই বাজারে একজন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি একজন মামুলী ধরনের ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করিবে— অবশ্য বেহেশতীদের মধ্যে কেহ হীন নহে। তখন সে তাহার পোশাক-পরিচ্ছদ দেখিয়া আশ্চর্যান্বিত হইবে কিন্তু তাহার কথা শেষ হইতে না হইতেই সে অনুভব করিবে যে, তাহার পোশাক উহার চাইতে আরও উত্তম হইয়া গিয়াছে। আর ইহা এই জন্য যে, বেহেশতে কোন ব্যক্তির অনুতপ্ত ও দুশ্চিন্তায় পতিত হওয়ার অবকাশ থাকিবে না। অতঃপর (উক্ত বাজার ও পরস্পরে দেখা-সাক্ষাৎ শেষ করিয়া) আমরা আপন আপন বাসস্থানের দিকে প্রত্যাবর্তন করিব। এই সময় আমাদের স্ত্রীগণ আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করিবে এবং বলিবে, মারহাবা, খোশ আমদেদ ! বস্তুতঃ যখন তোমরা আমাদের নিকট হইতে পৃথক হইয়াছিলে, সেই অবস্থা অপেক্ষা এখন তোমরা আরও অধিক খুবসুরত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হইয়া আমাদের নিকটে ফিরিয়া আসিয়াছ। তখন আমরা বলিব, আজ আমরা আমাদের মহা পরাক্রমশালী পরওয়ারদিগারের সাথে বসার সৌভাগ্য লাভ করিয়াছি। কাজেই এই মর্যাদার অধিকারী হইয়া প্রত্যাবর্তন করা আমাদের জন্য যথার্থ উপযোগী হইয়াছে এবং এইরূপ হওয়াই বাঞ্ছনীয় ছিল। তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ্। ইমাম তিরমিযী বলিয়াছেন হাদীসটি গরীব।
كتاب أحوال القيامة وبدء الخلق
وَعَن سعيد بن الْمسيب أَنه لقيَ أَبَا هريرةَ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: أَسْأَلُ اللَّهَ أَنْ يَجْمَعَ بَيْنِي وَبَيْنَكَ فِي سُوقِ الْجَنَّةِ. فَقَالَ سَعِيدٌ: أَفِيهَا سُوقٌ؟ قَالَ: نَعَمْ أَخْبَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ إِذَا دَخَلُوهَا نَزَلُوا فِيهَا بِفَضْلِ أَعْمَالِهِمْ ثُمَّ يُؤْذَنُ لَهُمْ فِي مِقْدَارِ يَوْمِ الْجُمُعَةِ مِنْ أَيَّامِ الدُّنْيَا فَيَزُورُونَ رَبَّهُمْ وَيَبْرُزُ لَهُمْ عَرْشُهُ وَيَتَبَدَّى لَهُم فِي روضةٍ من رياضِ الجنَّة فَيُوضَع لَهُم مَنَابِر من نور ومنابرمن لُؤْلُؤٍ وَمَنَابِرُ مِنْ يَاقُوتٍ وَمَنَابِرُ مِنْ زَبَرْجَدٍ وَمَنَابِرُ مِنْ ذَهَبٍ وَمَنَابِرُ مِنْ فِضَّةٍ وَيَجْلِسُ أَدْنَاهُم - وَمَا فيهم دنيٌّ - عَلَى كُثْبَانِ الْمِسْكِ وَالْكَافُورِ مَا يَرَوْنَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَرَاسِيِّ بِأَفْضَلَ مِنْهُمْ مَجْلِسًا» . قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَهَلْ نَرَى رَبَّنَا؟ قَالَ: «نَعَمْ هَلْ تَتَمَارَوْنَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ وَالْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ؟» قُلْنَا: لَا. قَالَ: كَذَلِكَ لَا تَتَمَارَوْنَ فِي رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ وَلَا يَبْقَى فِي ذَلِكَ الْمَجْلِسِ رَجُلٌ إِلَّا حَاضَرَهُ اللَّهُ مُحَاضَرَةً حَتَّى يَقُولَ لِلرَّجُلِ مِنْهُمْ: يَا فلَان ابْن فلَان أَتَذكر يَوْم قلت كَذَا وَكَذَا؟ فيذكِّره بِبَعْض غدارته فِي الدُّنْيَا. فَيَقُولُ: يَا رَبِّ أَفَلَمْ تَغْفِرْ لِي؟ فَيَقُولُ: بَلَى فَبِسِعَةِ مَغْفِرَتِي بَلَغْتَ مَنْزِلَتَكَ هَذِهِ. فَبَيْنَا هُمْ عَلَى ذَلِكَ غَشِيتْهُمْ سَحَابَةٌ مِنْ فَوْقِهِمْ فَأَمْطَرَتْ عَلَيْهِمْ طِيبًا لَمْ يَجِدُوا مِثْلَ رِيحِهِ شَيْئًا قَطُّ وَيَقُولُ رَبُّنَا: قُومُوا إِلَى مَا أَعْدَدْتُ لَكُمْ مِنَ الْكَرَامَةِ فَخُذُوا مَا اشْتَهَيْتُمْ فَنَأْتِي سُوقًا قَدْ حَفَّتْ بِهِ الْمَلَائِكَةُ فِيهَا مَا لَمْ تَنْظُرِ الْعُيُونُ إِلَى مِثْلِهِ وَلَمْ تَسْمَعِ الْآذَانُ وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى الْقُلُوبِ فَيُحْمَلُ لَنَا مَا اشْتَهَيْنَا لَيْسَ يُبَاعُ فِيهَا وَلَا يُشْتَرَى وَفِي ذَلِكَ السُّوقِ يَلْقَى أَهْلُ الْجَنَّةِ بَعْضُهُمْ بَعْضًا . قَالَ: فَيُقْبِلُ الرَّجُلُ ذُو الْمَنْزِلَةِ الْمُرْتَفِعَةِ فَيَلْقَى مَنْ هُوَ دُونَهُ - وَمَا فيهم دنيٌّ - فيروعُه مَا يرى عَلَيْهِ من اللباسِ فِيمَا يَنْقَضِي آخِرُ حَدِيثِهِ حَتَّى يَتَخَيَّلَ عَلَيْهِ مَا هُوَ أحسن مِنْهُ وَذَلِكَ أَنَّهُ لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ أَنْ يَحْزَنَ فِيهَا ثُمَّ نَنْصَرِفُ إِلَى مَنَازِلِنَا فَيَتَلَقَّانَا أَزْوَاجُنَا فَيَقُلْنَ: مَرْحَبًا وَأَهْلًا لَقَدْ جِئْتَ وَإِنَّ بِكَ مِنَ الْجَمَالِ أَفْضَلَ مِمَّا فَارَقْتَنَا عَلَيْهِ فَيَقُولُ: إِنَّا جَالَسْنَا الْيَوْمَ رَبَّنَا الْجَبَّارَ وَيَحِقُّنَا أَنْ نَنْقَلِبَ بِمِثْلِ مَا انْقَلَبْنَا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيث غَرِيب