মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২৯- সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামত পরবর্তী বর্ণনা
হাদীস নং: ৫৫৮২
প্রথম অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৮২। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: সর্বশেষ ব্যক্তি যে জান্নাতে প্রবেশ করিবে, সে জাহান্নাম হইতে বাহির হওয়ার সময় একবার চলিবে, একবার সম্মুখের দিকে ঝুঁকিয়া পড়িবে এবং আরেকবার আগুন তাহাকে ঝলসাইয়া দিবে। অতঃপর যখন (এই অবস্থায়) সে দোযখের সীমানা অতিক্রম করিয়া আসিবে, তখন উহার দিকে তাকাইয়া বলিবে; বড়ই কল্যাণময় সেই মহান রব। যিনি আমাকে তোমা হইতে মুক্তি দান করিয়াছেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ তা'আলা আমাকে এমন কিছু দান করিয়াছেন, যাহা আগের ও পিছনের কোন ব্যক্তিকেই উহা প্রদান করেন নাই। অতঃপর তাহার সম্মুখে একটি বৃক্ষ প্রকাশ করা হইবে। তখন সে বলিবে, হে আমার রব! আমাকে ঐ গাছটির কাছে পৌঁছাইয়া দিন, যাহাতে আমি উহার নীচে ছায়া হাসিল করি এবং উহার ঝর্ণা হইতে পানি পান করি। তখন আল্লাহ্ বলিবেনঃ হে আদম সন্তান। যদি আমি তোমাকে ইহা প্রদান করি, তখন হয়তো তুমি আমার কাছে অন্য কিছু চাহিতে থাকিবে। সে বলিবে, না, হে আমার পরওয়ারদিগার! এবং সে আল্লাহুর সাথে এই ওয়াদা-অঙ্গীকার করিবে যে, উহা ব্যতীত সে আর কিছুই চাহিবে না। অথচ তাহার অধৈর্য ও অস্থিরতা দেখিয়া আল্লাহ্ তা'আলা তাহাকে অসহায় অবস্থায় পাইয়া তাহার মনোবাঞ্ছা পূরণ করিবেন। তখন তাহাকে উক্ত গাছের কাছে পৌঁছাইয়া দিবেন। সে উহার ছায়া উপভোগ করিবে এবং পানি পান করিবে।
অতঃপর আরেকটি গাছ প্রকাশ পাইবে যাহা প্রথমটি অপেক্ষা উত্তম। তখন সে বলিবে, হে আমার প্রতিপালক। আমাকে ঐ গাছটির নিকটবর্তী করিয়া দিন, যেন আমি সেখানে ঝর্ণার পানি পান করিতে পারি এবং উহার ছায়ায় বিশ্রাম করিতে পারি, আমি ইহা ছাড়া অন্য আর কিছু তোমার কাছে চাহিব না। তখন আল্লাহ্ বলিবেন হে আদম সন্তান! তুমি কি আমার সহিত এই ওয়াদা কর নাই যে, তোমাকে যাহাকিছু দেওয়া হইয়াছে, তুমি উহা ছাড়া আর কিছুই চাহিবে না? আল্লাহ্ আরও বলিবেন: এমনও তো হইতে পারে; যদি আমি তোমাকে উহার নিকটে পৌঁছাইয়া দেই, তখন তুমি অন্য আরও কিছু চাহিয়া বসিবে? তখন সে এই প্রতিশ্রুতি দিবে যে, সে উহা ব্যতীত আর কিছুই চাহিবে না। আল্লাহ্ তাহাকে অপারক মনে করিবেন। কেননা, তিনি ভালভাবে অবগত আছেন যে, ঐখানে যাওয়ার পর সে যাহাকিছু দেখিতে পাইবে, উহাতে সে লোভ সামলাইতে পারিবে না। অবশেষে আল্লাহ্ তাহাকে উহার নিকটবর্তী করিয়া দিবেন।
সে উহার ছায়ায় আরাম উপভোগ করিবে এবং পানি পান করিবে। অতঃপর জান্নাতের দরজার নিকটে এমন একটি গাছ প্রকাশ করাইবেন, যাহা প্রথম দুইটি অপেক্ষা উত্তম। উহা দেখিয়া সে বলিবে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে ঐ গাছটির নিকটে পৌঁছাইয়া দিন যাহাতে আমি উহার ছায়া উপভোগ করি এবং উহার পানি পান করি। উহা ব্যতীত আর কিছুই তোমার কাছে চাহিব না। তখন আল্লাহ্ বলিবেন হে আদম সন্তান! তুমি কি আমার সাথে এই ওয়াদা কর নাই যে, তোমাকে যাহাকিছু দেওয়া হইয়াছে, তুমি উহা ছাড়া আর কিছুই চাহিবে না? সে বলিবে, হ্যাঁ, ওয়াদা তো করিয়াছিলাম, তবে হে আমার রব। আমার এই আকাঙ্ক্ষাটি পূরণ করিয়া দাও, ইহার পর আমি আর কিছুই তোমার কাছে চাহিব না। এবং আল্লাহ্ তা'আলা তাহাকে অপারক জানিবেন। কেননা, তিনি জানেন, ইহার পর সে যাহাকিছু দেখিতে পাইবে, উহাতে সে ধৈর্যধারণ করিতে পারিবে না। তখন তাহাকে উহার নিকটবর্তী করিয়া দেওয়া হইবে। যখন সে গাছটির নিকটে যাইবে, জান্নাতবাসীদের শব্দ শুনিতে পাইবে তখন বলিবে, হে আমার পরওয়ারদিগার। আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাইয়া দিন। তখন আল্লাহ্ বলিবেন: হে আদম সন্তান। আমার নিকট তোমার চাওয়া কখন শেষ হইবে? আচ্ছা, তুমি কি ইহাতে সন্তুষ্ট হইবে যে, আমি তোমাকে দুনিয়ার সমপরিমাণ জায়গা এবং উহার সঙ্গে অনুরূপ জায়গাও তোমাকে জান্নাতে প্রদান করি ? তখন লোকটি বলিবে, হে পরওয়ারদিগার। তুমি সমস্ত জাহানের রব হইয়াও আমার সাথে ঠাট্টা করিতেছ? এই কথা বলার পর ইবনে মাসউদ (রাঃ) হাসিলেন। অতঃপর বলেন, তোমরা আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করিতেছ না যে, আমার হাসিবার কারণ কি? তখন তাহারা জিজ্ঞাসা করিলেন, আচ্ছা, বলুন তো আপনি কেন হাসিলেন? তিনি বলিলেন, এইভাবে রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসিয়াছিলেন। তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন। ইয়া রাসূলাল্লাহ্। কিসে আপনাকে হাসাইল? উত্তরে তিনি বলিলেন, যখন ঐ লোকটি বলিল, 'তুমি রাব্বুল 'আলামীন হইয়াও আমার সাথে ঠাট্টা করিতেছ ?” তখন স্বয়ং আল্লাহ্ হাসিয়া ফেলিলেন, অতঃপর আল্লাহ্ বলেন : আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করিতেছি না; বরং আমি যাহা ইচ্ছা করি তাহা করিতে সক্ষম। —মুসলিম।
অতঃপর আরেকটি গাছ প্রকাশ পাইবে যাহা প্রথমটি অপেক্ষা উত্তম। তখন সে বলিবে, হে আমার প্রতিপালক। আমাকে ঐ গাছটির নিকটবর্তী করিয়া দিন, যেন আমি সেখানে ঝর্ণার পানি পান করিতে পারি এবং উহার ছায়ায় বিশ্রাম করিতে পারি, আমি ইহা ছাড়া অন্য আর কিছু তোমার কাছে চাহিব না। তখন আল্লাহ্ বলিবেন হে আদম সন্তান! তুমি কি আমার সহিত এই ওয়াদা কর নাই যে, তোমাকে যাহাকিছু দেওয়া হইয়াছে, তুমি উহা ছাড়া আর কিছুই চাহিবে না? আল্লাহ্ আরও বলিবেন: এমনও তো হইতে পারে; যদি আমি তোমাকে উহার নিকটে পৌঁছাইয়া দেই, তখন তুমি অন্য আরও কিছু চাহিয়া বসিবে? তখন সে এই প্রতিশ্রুতি দিবে যে, সে উহা ব্যতীত আর কিছুই চাহিবে না। আল্লাহ্ তাহাকে অপারক মনে করিবেন। কেননা, তিনি ভালভাবে অবগত আছেন যে, ঐখানে যাওয়ার পর সে যাহাকিছু দেখিতে পাইবে, উহাতে সে লোভ সামলাইতে পারিবে না। অবশেষে আল্লাহ্ তাহাকে উহার নিকটবর্তী করিয়া দিবেন।
সে উহার ছায়ায় আরাম উপভোগ করিবে এবং পানি পান করিবে। অতঃপর জান্নাতের দরজার নিকটে এমন একটি গাছ প্রকাশ করাইবেন, যাহা প্রথম দুইটি অপেক্ষা উত্তম। উহা দেখিয়া সে বলিবে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে ঐ গাছটির নিকটে পৌঁছাইয়া দিন যাহাতে আমি উহার ছায়া উপভোগ করি এবং উহার পানি পান করি। উহা ব্যতীত আর কিছুই তোমার কাছে চাহিব না। তখন আল্লাহ্ বলিবেন হে আদম সন্তান! তুমি কি আমার সাথে এই ওয়াদা কর নাই যে, তোমাকে যাহাকিছু দেওয়া হইয়াছে, তুমি উহা ছাড়া আর কিছুই চাহিবে না? সে বলিবে, হ্যাঁ, ওয়াদা তো করিয়াছিলাম, তবে হে আমার রব। আমার এই আকাঙ্ক্ষাটি পূরণ করিয়া দাও, ইহার পর আমি আর কিছুই তোমার কাছে চাহিব না। এবং আল্লাহ্ তা'আলা তাহাকে অপারক জানিবেন। কেননা, তিনি জানেন, ইহার পর সে যাহাকিছু দেখিতে পাইবে, উহাতে সে ধৈর্যধারণ করিতে পারিবে না। তখন তাহাকে উহার নিকটবর্তী করিয়া দেওয়া হইবে। যখন সে গাছটির নিকটে যাইবে, জান্নাতবাসীদের শব্দ শুনিতে পাইবে তখন বলিবে, হে আমার পরওয়ারদিগার। আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাইয়া দিন। তখন আল্লাহ্ বলিবেন: হে আদম সন্তান। আমার নিকট তোমার চাওয়া কখন শেষ হইবে? আচ্ছা, তুমি কি ইহাতে সন্তুষ্ট হইবে যে, আমি তোমাকে দুনিয়ার সমপরিমাণ জায়গা এবং উহার সঙ্গে অনুরূপ জায়গাও তোমাকে জান্নাতে প্রদান করি ? তখন লোকটি বলিবে, হে পরওয়ারদিগার। তুমি সমস্ত জাহানের রব হইয়াও আমার সাথে ঠাট্টা করিতেছ? এই কথা বলার পর ইবনে মাসউদ (রাঃ) হাসিলেন। অতঃপর বলেন, তোমরা আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করিতেছ না যে, আমার হাসিবার কারণ কি? তখন তাহারা জিজ্ঞাসা করিলেন, আচ্ছা, বলুন তো আপনি কেন হাসিলেন? তিনি বলিলেন, এইভাবে রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসিয়াছিলেন। তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন। ইয়া রাসূলাল্লাহ্। কিসে আপনাকে হাসাইল? উত্তরে তিনি বলিলেন, যখন ঐ লোকটি বলিল, 'তুমি রাব্বুল 'আলামীন হইয়াও আমার সাথে ঠাট্টা করিতেছ ?” তখন স্বয়ং আল্লাহ্ হাসিয়া ফেলিলেন, অতঃপর আল্লাহ্ বলেন : আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করিতেছি না; বরং আমি যাহা ইচ্ছা করি তাহা করিতে সক্ষম। —মুসলিম।
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: آخِرُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ رَجُلٌ يَمْشِي مَرَّةً وَيَكْبُو مَرَّةً وَتَسْفَعُهُ النارُ مرّة فإِذا جاؤوها الْتَفَتَ إِلَيْهَا فَقَالَ: تَبَارَكَ الَّذِي نَجَّانِي مِنْكِ لَقَدْ أَعْطَانِي اللَّهُ شَيْئًا مَا أَعْطَاهُ أَحَدًا مِنَ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ فَتُرْفَعُ لَهُ شَجَرَةٌ فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ أَدْنِنِي مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ فَلْأَسْتَظِلَّ بِظِلِّهَا وَأَشْرَبَ مِنْ مَائِهَا فَيَقُولُ اللَّهُ: يَا ابْنَ آدَمَ لَعَلِّي إِنْ أَعْطَيْتُكَهَا سَأَلْتَنِي غَيْرَهَا؟ فَيَقُولُ: لَا يَا رَبِّ وَيُعَاهِدُهُ أَنْ لَا يَسْأَلَهُ غَيْرَهَا وَرَبُّهُ يَعْذُرُهُ لِأَنَّهُ يَرَى مَا لَا صَبْرَ لَهُ عَلَيْهِ فَيُدْنِيهِ مِنْهَا فَيَسْتَظِلُّ بِظِلِّهَا وَيَشْرَبُ مِنْ مَائِهَا ثُمَّ تُرْفَعُ لَهُ شَجَرَةٌ هِيَ أَحْسَنُ مِنَ الْأُولَى فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ أَدْنِنِي مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ لِأَشْرَبَ مِنْ مَائِهَا وَأَسْتَظِلَّ بِظِلِّهَا لَا أَسْأَلُكَ غَيْرَهَا. فَيَقُولُ: يَا ابْنَ آدَمَ أَلَمْ تُعَاهِدْنِي أَنْ لَا تَسْأَلَنِي غَيْرَهَا؟ فَيَقُولُ: لَعَلِّي إِنْ أَدْنَيْتُكَ مِنْهَا تَسْأَلُنِي غَيْرَهَا؟ فَيُعَاهِدُهُ أَنْ لَا يَسْأَلَهُ غَيْرَهَا وَرَبُّهُ يَعْذُرُهُ لِأَنَّهُ يَرَى مَا لَا صَبْرَ لَهُ عَلَيْهِ فَيُدْنِيهِ مِنْهَا فَيَسْتَظِلُّ بِظِلِّهَا وَيَشْرَبُ مِنْ مَائِهَا ثُمَّ تُرْفَعُ لَهُ شَجَرَةٌ عِنْدَ بَابِ الْجَنَّةِ هِيَ أَحْسَنُ مِنَ الْأُولَيَيْنِ فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ أَدْنِنِي مِنْ هَذِهِ فَلِأَسْتَظِلَّ بِظِلِّهَا وَأَشْرَبَ مِنْ مَائِهَا لَا أَسْأَلُكَ غَيْرَهَا. فَيَقُولُ: يَا ابْنَ آدَمَ أَلَمْ تُعَاهِدْنِي أَنْ لَا تَسْأَلَنِي غَيْرَهَا؟ قَالَ: بَلَى يَا رَبِّ هَذِهِ لَا أَسْأَلُكَ غَيْرَهَا وَرَبُّهُ يَعْذُرُهُ لِأَنَّهُ يَرَى مَا لَا صَبْرَ لَهُ عَلَيْهِ فَيُدْنِيهِ مِنْهَا فَإِذَا أَدْنَاهُ مِنْهَا سَمِعَ أَصْوَاتَ أَهْلِ الْجَنَّةِ فيقولُ: أَي رَبِّ أَدْخِلْنِيهَا فَيَقُولُ: يَا ابْنَ آدَمَ مَا يصريني مِنْك؟ أيرضيك أَن أُعْطِيك الدُّنْيَا وَمِثْلَهَا مَعَهَا. قَالَ: أَيْ رَبِّ أَتَسْتَهْزِئُ مِنِّي وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ فَضَحِكَ ابْنُ مَسْعُودٍ فَقَالَ: أَلا تسألونيّ ممَّ أضْحك؟ فَقَالُوا: مِم تضحك؟ فَقَالَ: هَكَذَا ضَحِكَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَقَالُوا: مِمَّ تَضْحَكُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: من ضحك رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ فَيَقُولُ: إِنِّي لَا أَسْتَهْزِئُ مِنْكَ وَلَكِنِّي على مَا أَشَاء قدير . رَوَاهُ مُسلم
