মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৯- সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামত পরবর্তী বর্ণনা

হাদীস নং: ৫৫৭৯
প্রথম অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৭৯। আর হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণনায় আছে—তখন তাহারা বলিবে; যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের রব আমাদের কাছে না আসেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই স্থানে অপেক্ষা করিব। যখন আমাদের রব আসিবেন, তখন আমরা তাঁহাকে চিনিতে পারিব। আর হযরত আবু সাঈদের রেওয়ায়তে আছে-আল্লাহ্ তা'আলা জিজ্ঞাসা করিবেন তোমাদের এবং তোমাদের রবের মধ্যে এমন কোন চিহ্ন আছে কি, যাহাতে তোমরা তাহাকে চিনিতে পারিবে? তাহারা বলিবে, হ্যাঁ, তখন আল্লাহ্ তা'আলার পায়ের নলা উন্মোচিত করা হইবে (অর্থাৎ, আল্লাহর বিশেষ তাজাল্লী হইবে) তখন যেই ব্যক্তি নিষ্ঠার সহিত আল্লাহ্ তা'আলাকে সজদা করিত, শুধু তাহাকেই আল্লাহ্ সজদার অনুমতি দিবেন। আর যাহারা কাহারও প্রভাবে বা ভয়ে কিংবা মানুষকে দেখানোর জন্য সজদা করিত, তাহারা থাকিয়া যাইবে। তাহাদের মেরুদণ্ডের হাড়কে আল্লাহ্ তা'আলা একটি তক্তার ন্যায় শক্ত করিয়া দিবেন। বরং যখন যখনই সজ্দা করিতে চাহিবে, তখন তখনই পিছনের দিকে চিৎ হইয়া পড়িয়া যাইবে।

অতঃপর জাহান্নামের উপর দিয়া পুলসিরাত পাতা হইবে এবং শাফা আতের অনুমতি দেওয়া হইবে। তখন নবী-রাসূলগণ (স্ব স্ব উম্মতের জন্য) এই ফরিয়াদ করিবেন; হে আল্লাহ্ । নিরাপদে রাখ। নিরাপদে রাখ। মু'মেনগণ এই পুলসিরাতের উপর দিয়া কেহ চোখের পলকে, কেহ বিদ্যুতের গতিতে, কেহ বাতাসের গতিতে, কেহ পাখীর গতিতে এবং কেহ দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে আবার কেহ উটের গতিতে অতিক্রম করিবে। কেহ সহীহ-সালামতে বাঁচিয়া যাইবে। আবার কেহ এমনভাবে পার হইয়া আসিবে যে, তাহার দেহ ক্ষত-বিক্ষত হইবে এবং কেহ খণ্ড বিখণ্ড হইয়া জাহান্নামে পড়িবে। অবশেষে মু'মেনগণ যখন জাহান্নাম হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিবে, সেই মহান সত্তার শপথ যাঁহার হাতে আমার প্রাণ। তোমাদের যে কেহ নিজের হক্ বা অধিকারের দাবীতে কত কঠোর, তাহা তো তোমাদের কাছে স্পষ্ট। কিন্তু কিয়ামতের দিন মু'মেনগণ তাহাদের সেই সমস্ত ভাইদের মুক্তির জন্য আল্লাহর সাথে আরও অধিক ঝগড়া করিবে, যাহারা তখনও দোযখে পড়িয়া রহিয়াছে। তাহারা বলিবে, হে আমাদের রব! এই সমস্ত লোকেরা আমাদের সাথে রোযা রাখিত, নামায পড়িত এবং হজ্জ আদায় করিত। (সুতরাং তুমি তাহাদিগকে নাজাত দাও।) তখন আল্লাহ্ বলিবেন, যাও, তোমরা যাহাদিগকে চিন তাহাদিগকে দোযখ হইতে মুক্ত করিয়া আন, তাহাদের চেহারা-আকৃতি পরিবর্তন করা দোযখের আগুনের উপর হারাম করা হইবে। (অতএব, জান্নাতে প্রবেশের অনুমতিপ্রাপ্ত লোকেরা তাহাদের জাহান্নাম বাসী ভাইদিগকে দেখিয়া চিনিতে পারিবে।) তখন তাহারা দোযখ হইতে বহু সংখ্যক লোককে বাহির করিয়া আনিবে। অতঃপর বলিবে, হে আমাদের রব! এখন সেখানে এমন আর একজন লোকও অবশিষ্ট নাই যাহাদিগকে বাহির করিবার জন্য আপনি নির্দেশ দিয়াছেন। তখন আল্লাহ্ বলিবেন: আবার যাও, যাহাদের অন্তরে এক দীনার পরিমাণ ঈমান পাইবে তাহাদের সকলকে বাহির করিয়া আন। ইহাতেও তাহারা বহু সংখ্যক লোককে বাহির করিয়া আনিবে। তারপর আল্লাহ্ বলিবেনঃ পুনরায় যাও, যাহাদের অন্তরে অর্ধদীনার পরিমাণ ঈমান পাইবে তাহাদের সকলকে বাহির করিয়া আন। সুতরাং ইহাতেও তাহারা বহু সংখ্যককে বাহির করিয়া আনিবে । অতঃপর আল্লাহ বলিবেন: আবারও যাও, যাহাদের অন্তরে এক বিন্দু পরিমাণ ঈমান পাইবে তাহাদের সকলকেও বাহির করিয়া আন। এইবারও তাহারা বহু সংখ্যককে বাহির করিয়া আনিবে এবং বলিবে, হে আমাদের পরওয়ারদিগার! ঈমানদার কোন ব্যক্তিকেই আমরা আর জাহান্নামে রাখিয়া আসি নাই। তখন আল্লাহ্ তা'আলা বলিবেন, ফেরেস্তাগণ, নবীগণ এবং মু'মেনীন সকলেই শাফাআত করিয়াছেন, এখন এক আরহামুর রাহেমীন' তথা আমি পরম দয়ালু ব্যতীত আর কেহই অবশিষ্ট নাই। এই বলিয়া তিনি মুষ্টিভর এমন একদল লোককে দোযখ হইতে বাহির করিবেন যাহারা কখনও কোন নেক কাজ করে নাই। যাহারা জ্বলিয়া-পুড়িয়া কাল কয়লা হইয়া গিয়াছে। অতঃপর তাহাদিগকে জান্নাতের সম্মুখ ভাগের একটি নহরে ঢালিয়া দেওয়া হইবে, যাহার নাম হইল নিহরে হায়াত। ইহাতে তাহারা স্রোতের ধারে যেমনিভাবে ঘাসের বীজ গজায়, তেমনিভাবে তাহাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংঘটিত হইবে, তখন তাহারা উহা হইতে বাহির হইয়া আসিবে মুক্তার মত (চকচকে অবস্থায়) তাহাদের ঘাড়ে সীলমোহর থাকিবে। জান্নাতবাসীগণ তাহাদিগকে দেখিয়া বলিবে, ইহারা পরম দয়ালু আল্লাহর আযাদকৃত'। আল্লাহ্ তা'আলা ইহাদিগকে জান্নাতে প্রবেশ করাইয়াছেন, অথচ উহারা পূর্বে কোন আমল বা কল্যাণের কাজ করে নাই। অতঃপর তাহাদিগকে বলা হইবে, এই জান্নাতে তোমরা যাহা দেখিতেছ, উহা তোমাদিগকে দেওয়া হইল এবং এতদসঙ্গে অনুরূপ পরিমাণ আরও দেওয়া হইল। —মোত্তাঃ
وَفِي رِوَايَةِ أَبِي هُرَيْرَةَ فَيَقُولُونَ: هَذَا مَكَانُنَا حَتَّى يَأْتِيَنَا رَبُّنَا فَإِذَا جَاءَ رَبُّنَا عَرَفْنَاهُ وَفِي رِوَايَةِ أَبِي سَعِيدٍ: فَيَقُولُ هَلْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ آيَةٌ تَعْرِفُونَهُ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ فَيُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ فَلَا يَبْقَى مَنْ كَانَ يَسْجُدُ لِلَّهِ مِنْ تِلْقَاءِ نَفْسِهِ إِلَّا أَذِنَ اللَّهُ لَهُ بِالسُّجُودِ وَلَا يَبْقَى مَنْ كَانَ يَسْجُدُ اتِّقَاءً وَرِيَاءً إِلَّا جَعَلَ اللَّهُ ظَهْرَهُ طَبَقَةً وَاحِدَةً كُلَّمَا أَرَادَ أَنْ يَسْجُدَ خَرَّ عَلَى قَفَاهُ ثُمَّ يُضْرَبُ الْجِسْرُ عَلَى جَهَنَّمَ وَتَحِلُّ الشَّفَاعَةُ وَيَقُولُونَ اللَّهُمَّ سَلِّمْ سَلِّمْ فَيَمُرُّ الْمُؤْمِنُونَ كَطَرَفِ الْعَيْنِ وَكَالْبَرْقِ وَكَالرِّيحِ وَكَالطَّيْرِ وَكَأَجَاوِيدِ الْخَيْلِ وَالرِّكَابِ فَنَاجٍ مُسَلَّمٌ وَمَخْدُوشٌ مُرْسَلٌ وَمَكْدُوسٌ فِي نَارِ جَهَنَّمَ حَتَّى إِذَا خَلَصَ الْمُؤْمِنُونَ مِنَ النَّارِ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا مِنْ أحد مِنْكُم بأشدَّ مُناشدةً فِي الْحق - قد تبين لَكُمْ - مِنَ الْمُؤْمِنِينَ لِلَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لِإِخْوَانِهِمُ الَّذِينَ فِي النَّارِ يَقُولُونَ رَبَّنَا كَانُوا يَصُومُونَ مَعَنَا وَيُصَلُّونَ وَيَحُجُّونَ فَيُقَالُ لَهُمْ: أَخْرِجُوا مَنْ عَرَفْتُمْ فَتُحَرَّمُ صُوَرَهُمْ عَلَى النَّارِ فَيُخْرِجُونَ خَلْقًا كَثِيرًا ثُمَّ يَقُولُونَ: رَبَّنَا مَا بَقِيَ فِيهَا أَحَدٌ مِمَّنْ أَمَرْتَنَا بِهِ. فَيَقُولُ: ارْجِعُوا فَمَنْ وجدْتُم فِي قلبه مِثْقَال دنيار مِنْ خَيْرٍ فَأَخْرِجُوهُ فَيُخْرِجُونَ خَلْقًا كَثِيرًا ثُمَّ يَقُولُ: ارْجِعُوا فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ نِصْفِ دِينَارٍ مِنْ خَيْرٍ فَأَخْرِجُوهُ فَيُخْرِجُونَ خَلْقًا كَثِيرًا ثُمَّ يَقُولُ: ارْجِعُوا فَمَنْ وَجَدْتُمْ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ فَأَخْرِجُوهُ فَيُخْرِجُونَ خَلْقًا كَثِيرًا ثُمَّ يَقُولُونَ: رَبَّنَا لَمْ نَذَرْ فِيهَا خَيِّرًا فَيَقُولُ اللَّهُ شُفِّعَتِ الْمَلَائِكَةُ وَشُفِّعَ النَّبِيُّونَ وَشُفِّعَ الْمُؤْمِنُونَ وَلَمْ يَبْقَ إِلَّا أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ فَيَقْبِضُ قَبْضَةً مِنَ النَّارِ فَيُخْرِجُ مِنْهَا قَوْمًا لَمْ يَعْمَلُوا خَيْرًا قَطُّ قَدْ عَادُوا حُمَمًا فَيُلْقِيهِمْ فِي نَهْرٍ فِي أَفْوَاهِ الْجَنَّةِ يُقَالُ لَهُ: نَهْرُ الْحَيَاةِ فَيَخْرُجُونَ كَمَا تَخْرُجُ الْحِبَّةُ فِي حَمِيلِ السَّيْلِ فَيَخْرُجُونَ كَاللُّؤْلُؤِ فِي رِقَابِهِمُ الْخَوَاتِمُ فَيَقُولُ أَهْلُ الْجَنَّةِ: هَؤُلَاءِ عُتَقَاءُ الرَّحْمَن أدخلهم الْجنَّة بِغَيْر عمل وَلَا خَيْرٍ قَدَّمُوهُ فَيُقَالُ لَهُمْ لَكُمْ مَا رَأَيْتُمْ وَمثله مَعَه . مُتَّفق عَلَيْهِ
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৫৫৭৯ | মুসলিম বাংলা