মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৯- সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামত পরবর্তী বর্ণনা

হাদীস নং: ৫৫৭২
প্রথম অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা
৫৫৭২। হযরত আনাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেনঃ কিয়ামতের দিন ঈমানদারদিগকে (হাশরের ময়দানে) আটক করিয়া রাখা হইবে।এমন কি ইহাতে তাহারা অত্যন্ত চিন্তাযুক্ত ও অস্থির হইয়া পড়িবে এবং বলিবে, যদি আমরা আমাদের রবের কাছে কাহারও দ্বারা সুপারিশ করাই তাহা হইলে হয়তো আমাদের বর্তমান অবস্থা হইতে মুক্তি লাভ করিয়া আরাম পাইতে পারি। তাই তাহারা হযরত আদম (আঃ)-এর নিকট যাইয়া বলিবে, আপনি সমস্ত মানবমণ্ডলীর পিতা। আল্লাহ্ নিজ হাতে আপনাকে সৃষ্টি করিয়াছেন ও জান্নাতে বসবাস করিতে দিয়াছিলেন, ফিরিশতাদের দিয়া সজদা করাইয়াছিলেন এবং সমস্ত জিনিসের নাম আপনাকে শিখাইয়াছিলেন, আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন, যাহাতে তিনি আমাদিগকে এই কষ্টদায়ক স্থান হইতে মুক্ত করিয়া প্রশান্তি দান করেন। তখন আদম (আঃ) বলিবেন, আমি তোমাদের এই কাজের উপযুক্ত নই। নবী (ছাঃ) বলেন, তখন তিনি গাছ হইতে (ফল) খাওয়ার গোনাহের কথা—যাহা হইতে তাহাকে নিষেধ করা হইয়াছিল স্মরণ করিবেন। (তিনি বলিবেন; বরং তোমরা পৃথিবীবাসীর জন্য প্রেরিত আল্লাহর সর্বপ্রথম নবী নূহের কাছে যাও। সুতরাং তাহারা সকলে নূহ (আঃ)-এর কাছে গেলে তিনি তাহাদিগকে বলিবেন, আমি তোমাদের এই কাজের উপযুক্ত নই। এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাহার ঐ গোনাহের কথা স্মরণ করিবেন, অজ্ঞতাবশতঃ নিজের ছেলেকে পানিতে না ডুবানোর জন্য আপন রবের কাছে যে প্রার্থনা করিয়াছিলেন। (তখন তিনি বলিবেন;) বরং তোমরা আল্লাহর খলীল ইবরাহীমের কাছে যাও। নবী (ছাঃ) বলেন; এইবার তাহারা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট আসিবে, তখন তিনি বলিবেন, আমি তোমাদের এই কাজের উপযুক্ত নই। এবং তিনি তাহার তিনটি মিথ্যা উক্তির কথা স্মরণ করিবেন এবং বলিবেন; বরং তোমরা মুসার কাছে যাও। তিনি আল্লাহর এমন এক বান্দা যাঁহাকে আল্লাহ্ তওরাত কিতাব দান করিয়াছেন। তাহার সাথে কথা বলিয়াছেন এবং তাহাকে নৈকট্য দান করিয়া রহস্যের অধিকারী বানাইয়াছেন। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, তখন সকলে হযরত মুসা (আঃ)-এর কাছে আসিলে তিনি বলিবেন, আমি তোমাদের এই কাজের উপযুক্ত নই। তখন তিনি সেই প্রাণনাশের গোনাহের কথা স্মরণ করিবেন যাহা তাঁহার হাতে ঘটিয়াছিল। বরং তোমরা আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং তাঁহার কালেমা ও রূহ—ঈসার কাছে যাও। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, তখন তাহারা সকলে হযরত ঈসা (আঃ)-এর নিকট আসিবে। তিনি বলিবেন, আমি তোমাদের এই কাজের উপযুক্ত নই। তোমরা বরং মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর এমন এক বান্দা, যাঁহাকে আল্লাহ্ তাঁহার আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ্ মাফ করিয়া দিয়াছেন।
রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন, তাহারা আমার কাছে আসিবে, তখন আমি আমার রবের কাছে তাহার দরবারে হাযির হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করিব, আমাকে তাঁহার কাছে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া, হইরে। আমি যখন তাহাকে দেখিব, তখনই তাঁহার উদ্দেশ্যে সজদায় পড়িয়া যাইব, আল্লাহ্ আমাকে যতক্ষণ চাহিবেন-এই অবস্থায় রাখিবেন। তারপর বলিবেন হে মুহাম্মাদ। মাথা উঠাও। আর বল, তোমার কথা শুনা হইবে। তুমি সুপারিশ কর, তাহা কবুল করা হইবে। আর প্রার্থনা কর, যাহা চাহিবে দেওয়া হইবে। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন, তখন আমি মাথা উঠাইব এবং আমার রবের এমনভাবে প্রশংসা-স্তুতি বর্ণনা করিব, যাহা তিনি সেই সময় আমাকে শিখাইয়া দিবেন। অতঃপর আমি শাফা'আত করিব, কিন্তু এই ব্যাপারে আমার জন্য একটি সীমা নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হইবে। তখন আমি আল্লাহর দরবার হইতে উঠিয়া আসিব এবং ঐ নির্দিষ্ট সীমার লোকদিগকে জাহান্নাম হইতে বাহির করাইয়া জান্নাতে প্রবেশ করাইব। তারপর আমি পুনরায়
ফিরিয়া আসিয়া আমার রবের দরবারে তাঁহার কাছে হাযির হওয়ার অনুমতি চাহিব, আমাকে অনুমতি দেওয়া হইবে। আমি যখন তাঁহাকে দেখিব, তখনই তাহার উদ্দেশ্যে সজদায় পড়িয়া যাইব এবং আল্লাহ্ যতক্ষণ চাহিবেন আমাকে এই অবস্থায় থাকিতে দিবেন। তারপর বলিবেন : হে মুহাম্মাদ। মাথা উঠাও। আর বল, তোমার কথা শুনা হইবে। সুপারিশ কর, কবুল করা হইবে। আর তুমি প্রার্থনা কর, যাহাই চাহিবে তাহা দেওয়া হইবে। তখন আমি মাথা উঠাইব এবং আমার রবের এমন প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করিব, যাহা আমাকে তখন শিখাইয়া দেওয়া হইবে। ইহার পর আমি শাফা'আত করিব, কিন্তু আমার জন্য এই ব্যাপারে একটি সীমা নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হইবে। তখন আমি আমার রবের দরবার হইতে বাহিরে আসিব এবং ঐ নির্দিষ্ট লোকগুলিকে জাহান্নাম হইতে বাহির করাইয়া জান্নাতে প্রবেশ করাইব। তারপর তৃতীয়বার ফিরিয়া আসিয়া আমার রবের দরবারে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি চাহিব। আমাকে তাঁহার কাছে উপস্থিতির অনুমতি দেওয়া হইবে। আমি যখন তাহাকে (রবকে) দেখিব, তখনই সজদায় পড়িয়া যাইব। আল্লাহর যতক্ষণ ইচ্ছা আমাকে এই অবস্থায় রাখিয়া দিবেন। তারপর বলিবেন হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। বল, যাহা বলিবে তাহা শুনা হইবে। শাফা'আত কর, তোমার শাফাআত কবূল করা হইবে। আর প্রার্থনা কর, যাহা প্রার্থনা করিবে তাহা দেওয়া হইবে।
রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন, তখন আমি মাথা তুলিব এবং আমার রবের এমন হাম্দ সানা করিব, যাহা তিনি আমাকে সেই সময় শিখাইয়া দিবেন। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন, তারপর আমি শাফা'আত করিব। এই ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলা আমার জন্য একটা সীমা নির্দিষ্ট করিয়া দিবেন। তখন আমি সেই দরবার হইতে বাহিরে আসিব এবং তথায় যাইয়া উহাদিগকে দোযখ হইতে বাহির করিয়া বেহেশতে প্রবেশ করাইব। অবশেষে কুরআন যাহাদিগকে আঙ্কাইয়া রাখিবে। (অর্থাৎ, যাহাদের জন্য কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী) চিরস্থায়ী দোযখবাস নির্ধারিত হইয়া গিয়াছে তাহারা ব্যতীত আর কেহই দোযখে থাকিবে না। বর্ণনাকারী হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) কুরআনের এই আয়াত عَسى أَن يَبْعَثك الله مقَاما مَحْمُودًا (অর্থাৎ, আশা করা যায়, আপনার রব অচিরেই আপনাকে 'মাকামে মাহমুদে' পৌঁছাইয়া দিবেন) তেলাওয়াত করিলেন এবং বলিলেন; ইহাই সেই 'মাকামে মাহমুদ' তোমাদের নবীকে যাহার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হইয়াছে। —মোত্তাঃ
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يُحْبَسُ الْمُؤْمِنُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُهَمُّوا بِذَلِكَ فَيَقُولُونَ: لَوِ اسْتَشْفَعْنَا إِلَى رَبِّنَا فَيُرِيحَنَا مِنْ مَكَانِنَا فَيَأْتُونَ آدَمَ فَيَقُولُونَ: أَنْتَ آدَمُ أَبُو النَّاسِ خَلَقَكَ اللَّهُ بِيَدِهِ وَأَسْكَنَكَ جَنَّتَهُ وَأَسْجَدَ لَكَ مَلَائِكَتَهُ وَعَلَّمَكَ أَسْمَاءَ كُلِّ شَيْءٍ اشْفَعْ لَنَا عِنْدَ رَبِّكَ حَتَّى يُرِيحَنَا مِنْ مَكَانِنَا هَذَا. فَيَقُولُ: لَسْتُ هُنَاكُمْ. وَيَذْكُرُ خَطِيئَتَهُ الَّتِي أَصَابَ: أَكْلَهُ مِنَ الشَّجَرَةِ وَقَدْ نُهِيَ عَنْهَا - وَلَكِنِ ائْتُوا نُوحًا أَوَّلَ نَبِيٍّ بَعَثَهُ اللَّهُ إِلَى أَهْلِ الْأَرْضِ فَيَأْتُونَ نُوحًا فَيَقُولُ: لَسْتُ هُنَاكُمْ - وَيَذْكُرُ خَطِيئَتَهُ الَّتِي أَصَابَ: سُؤَالَهُ رَبَّهُ بِغَيْرِ عِلْمٍ - وَلَكِنِ ائْتُوا إِبْرَاهِيمَ خَلِيلَ الرَّحْمَنِ. قَالَ: فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ فَيَقُولُ: إِنِّي لَسْتُ هُنَاكُمْ - وَيَذْكُرُ ثَلَاثَ كِذْبَاتٍ كَذَبَهُنَّ - وَلَكِنِ ائْتُوا مُوسَى عَبْدًا آتَاهُ اللَّهُ التَّوْرَاةَ وَكَلَّمَهُ وَقَرَّبَهُ نَجِيًّا. قَالَ: فَيَأْتُونَ مُوسَى فَيَقُولُ: إِنِّي لَسْتُ هُنَاكُمْ - وَيَذْكُرُ خَطِيئَتَهُ الَّتِي أَصَابَ قَتْلَهُ النَّفْسَ - وَلَكِنِ ائْتُوا عِيسَى عَبْدَ اللَّهِ وَرَسُولَهُ وَرُوحَ اللَّهِ وَكَلِمَتَهُ قَالَ: فَيَأْتُونَ عِيسَى فَيَقُولُ: لَسْتُ هُنَاكُمْ وَلَكِنِ ائْتُوا مُحَمَّدًا عبدا غفر اللَّهُ لَهُ ماتقدم مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ . قَالَ: فَيَأْتُونِي فَأَسْتَأْذِنُ عَلَى رَبِّي فِي دَارِهِ فَيُؤْذَنُ لِي عَلَيْهِ فَإِذَا رَأَيْتُهُ وَقَعْتُ سَاجِدًا فَيَدَعُنِي مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَدَعَنِي فَيَقُولُ: ارْفَعْ مُحَمَّدُ وَقُلْ تُسْمَعْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ وَسَلْ تُعْطَهْ . قَالَ: فَأَرْفَعُ رَأْسِي فأثني على رَبِّي بثناء تحميد يُعَلِّمُنِيهِ ثُمَّ أَشْفَعُ فَيَحُدُّ لِي حَدًّا فَأَخْرُجُ فَأُخْرِجُهُمْ مِنَ النَّارِ وَأُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ ثُمَّ أَعُودُ الثَّانِيَةَ فَأَسْتَأْذِنُ عَلَى رَبِّي فِي دَارِهِ. فَيُؤْذَنُ لِي عَلَيْهِ فَإِذَا رَأَيْتُهُ وَقَعْتُ سَاجِدًا. فَيَدَعُنِي مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَدَعَنِي ثُمَّ يَقُولُ: ارْفَعْ مُحَمَّدُ وَقُلْ تُسْمَعْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ وَسَلْ تُعْطَهْ. قَالَ: فَأَرْفَعُ رَأْسِي فَأُثْنِي عَلَى رَبِّي بِثَنَاءٍ وَتَحْمِيدٍ يُعَلِّمُنِيهِ ثُمَّ أَشْفَعُ فَيَحُدُّ لِي حَدًّا فَأَخْرُجُ فَأُخْرِجُهُمْ مِنَ النَّارِ وَأُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ ثُمَّ أَعُودُ الثَّالِثَةَ فَأَسْتَأْذِنُ عَلَى رَبِّي فِي دَاره فيؤذي لِي عَلَيْهِ فَإِذَا رَأَيْتُهُ وَقَعْتُ سَاجِدًا فَيَدَعُنِي مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَدَعَنِي ثُمَّ يَقُولُ: ارْفَعْ مُحَمَّدُ وَقُلْ تُسْمَعْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ وَسَلْ تُعْطَهْ . قَالَ: «فَأَرْفَعُ رَأْسِي فَأُثْنِي عَلَى رَبِّي بثناءوتحميد يُعَلِّمُنِيهِ ثُمَّ أَشْفَعُ فَيَحُدُّ لِي حَدًّا فَأَخْرُجُ فَأُخْرِجُهُمْ مِنَ النَّارِ وَأُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ حَتَّى مَا يَبْقَى فِي النَّارِ إِلَّا مَنْ قَدْ حَبَسَهُ الْقُرْآنُ» أَيْ وَجَبَ عَلَيْهِ الْخُلُودُ ثُمَّ تَلَا هَذِه الْآيَة (عَسى أَن يَبْعَثك الله مقَاما مَحْمُودًا) قَالَ: «وَهَذَا الْمقَام المحمود الَّذِي وعده نَبِيكُم» مُتَّفق عَلَيْهِ
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৫৫৭২ | মুসলিম বাংলা